০১.
পূর্ব আষাঢ়ে দক্ষিণা বয়,
সেই বৎসর বন্যা হয়।
০২.
মঙ্গলে ঊষা বুধে পা,
যথা ইচ্ছা তথা যা।
০৩.
পাঁচ রবি মাসে পায়,
ঝরা কিংবা খরায় যায়।
০৪.
বামুন বাদল বান,
দক্ষিণা পেলেই মান।
০৫.
বেঙ ডাকে ঘন ঘন,
শীঘ্র হবে বৃষ্টি জান।
০৬.
আউশ ধানের চাষ,
লাগে তিন মাস।
০৭.
খনা বলে শুন কৃষকগণ
হাল লয়ে মাঠে বেরুবে যখন
শুভ দেখে করবে যাত্রা
না শুনে কানে অশুভ বার্তা।
ক্ষেতে গিয়ে কর দিক নিরূপণ,
পূর্ব দিক হতে হাল চালন
নাহিক সংশয় হবে ফলন।
০৮.
যদি বর্ষে ফাল্গুনে
চিনা কাউন দ্বিগুণে।
০৯.
যদি হয় চৈতে বৃষ্টি
তবে হবে ধানের সৃষ্টি।
১০.
চালায় চালায় কুমুড় পাতা,
লক্ষ্মী বলেন আছি তথা।
১১.
আখ, আদা, পুঁই,
এই তিনে চৈতি রুই।
১২.
চৈত্রে দিয়া মাটি,
বৈশাখে কর পরিপাটি।
১৩.
দাতার নারিকেল, বখিলের বাঁশ,
কমে না বাড়ে বারো মাস।
১৪.
সোমে ও বুধে না দিও হাত,
ধার করিয়া খাইও ভাত।
১৫.
ভরা হতে শুন্য ভাল যদি ভরতে যায়,
আগে হতে পিছে ভাল যদি ডাকেমায়।
মরা হতে তাজা ভাল যদি মরতেযায়,
বাঁয়ে হতে ডাইনে ভাল যদি ফিরে চায়।
বাঁধা হতে খোলা ভাল মাথা তুলে চায়,
হাসা হতে কাঁদা ভাল যদি কাঁদে বাঁয়।
১৬.
জৈষ্ঠতে তারা ফুটে,
তবে জানবে বর্ষা বটে।
১৭.
কি করো শ্বশুর লেখা জোখা,
মেঘেই বুঝবে জলের রেখা।
কোদাল কুড়ুলে মেঘের গাঁ,
মধ্যে মধ্যে দিচ্ছে বা।
কৃষককে বলোগে বাঁধতে আল,
আজ না হয় হবে কাল।
১৮.
বাঁশের ধারে হলুদ দিলে,
খনা বলে দ্বিগুণ বাড়ে।
১৯.
গাই পালে মেয়ে
দুধ পড়ে বেয়ে।
২০.
শুনরে বাপু চাষার বেটা,
মাটির মধ্যে বেলে যেটা।
তাতে যদি বুনিস পটল,
তাতে তোর আশার সফল।
২১.
যদি বর্ষে মাঘের শেষ,
ধন্য রাজার পূণ্য দেশ।
২২.
মাঘ মাসে বর্ষে দেবা,
রাজ্য ছেড়ে প্রজার সেবা।
২৩.
চৈতের কুয়া আমের ক্ষয়,
তাল তেঁতুলের কিবা হয়।
২৪.
আমে ধান, তেঁতুলে বান।
২৫.
সাত হাতে, তিন বিঘাতে
কলা লাগাবে মায়ে পুতে।
কলা লাগিয়ে না কাটবে পাত,
তাতেই কাপড় তাতেই ভাত।
২৬.
ডাক ছেড়ে বলে রাবণ,
কলা রোবে আষাঢ় শ্রাবণ।
২৭.
কি কর শ্বশুর মিছে খেটে,
ফাল্গুনে এঁটে পোত কেটে।
বেড়ে যাবে ঝাড়কি ঝাড়,
কলা বইতে ভাঙবে ঘাড়।
২৮.
ভাদরে করে কলা রোপন,
সবংশে মরিল রাবণ।
২৯.
গো নারিকেল নেড়ে রো,
আম টুকরো কাঁঠাল ভো।
৩০.
সুপারীতে গোবর, বাঁশে মাটি,
অফলা নারিকেল শিকর কাটি।
৩১.
খনা বলে শুনে যাও,
নারিকেল মূলে চিটা দাও।
গাছ হয় তাজা মোটা,
তাড়াতাড়ি ধরে গোটা।
৩২.
যদি না হয় আগনে পানি,
কাঁঠাল হয় টানাটানি।
৩৩.
বিশ হাত করি ফাঁক,
আম কাঁঠাল পুঁতে রাখ।
গাছ গাছি ঘন রোবে না,
ফল তাতে ফলবে না।
৩৪.
বার বছরে ফলে তাল,
যদি না লাগে গরু নাল।
৩৫.
তাল বাড়ে ঝোঁপে,
খেজুর বাড়ে কোপে।
৩৬.
এক পুরুষে রোপে তাল,
অন্য পুরুষি করে পাল।
তারপর যে সে খাবে,
তিন পুরুষে ফল পাবে।
৩৭.
নিত্যি নিত্যি ফল খাও,
বদ্যি বাড়ি নাহি যাও।
৩৮.
চৈত্রেতে থর থর
বৈশাখেতে ঝড় পাথর
জ্যৈষ্ঠতে তারা ফুটে
তবে জানবে বর্ষা বটে।
৩৯.
জল খেয়ে ফল খায়,
যম বলে আয় আয়।
৪০.
দিনের মেঘে ধান,
রাতের মেঘে পান।
৪১.
বেল খেয়ে খায় পানি,
জির বলে মইলাম আমি।
৪২.
আম খেয়ে খায় পানি,
পেঁদি বলে আমি ন জানি।
৪৩.
শুধু পেটে কুল,
ভর পেটে মূল।
৪৪.
চৈতে গিমা তিতা,
বৈশাখে নালিতা মিঠা,
জ্যৈষ্ঠে অমৃতফল আষাঢ়ে খৈ,
শায়নে দৈ।
ভাদরে তালের পিঠা,
আশ্বিনে শশা মিঠা,
কার্তিকে খৈলসার ঝোল,
অগ্রাণে ওল।
পৌষে কাঞ্ছি, মাঘে তেল,
ফাল্গুনে পাকা বেল।
৪৫.
তিন নাড়ায় সুপারী সোনা,
তিন নাড়ায় নারকেল টেনা,
তিন নাড়ায় শ্রীফল বেল,
তিন নাড়ায় গেরস্থ গেল।
৪৬.
আম লাগাই জাম লাগাই
কাঁঠাল সারি সারি-
বারো মাসের বারো ফল
নাচে জড়াজড়ি।
৪৭.
তাল, তেঁতুল, কুল
তিনে বাস্তু নির্মূল।
৪৮.
ঘোল, কুল, কলা
তিনে নাশে গলা।
৪৯.
আম নিম জামের ডালে
দাঁত মাজও কুতুহলে।
৫০.
সকল গাছ কাটিকুটি
কাঁঠাল গাছে দেই মাটি।
[কৃতজ্ঞতা: খনার বচন, নারীগ্রন্থ প্রবর্তন, ঢাকা
পঞ্চম সংস্করণ
১১ জানুয়ারি, ২০০৭, ২৮ পৌষ, ১৪১৩]