ভারতবর্ষ বা আরবের দেশগুলাতে অনেক মুসলিম নারী ২৪/৭ ঘরের ভেতরে অবস্থান (পর্দা) করেন; ইউরোপের দেশগুলাতে সম্ভবত এটা সম্ভব না। কোন ধর্মীয় বিধান মানুষ পালন করবে কি করবেনা সেটা নির্ধারনের ক্ষেত্রে আবহাওয়া একটা নিয়ামক হইতে পারে।
আলবেনিয়া, বসনিয়া এবং কসোভো ইউরোপের মুসলিম প্রধান দেশ। এর বাইরে অন্যান্য দেশেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিম বাস করেন। খোঁজখবর নিয়ে দেখেছি এসব দেশের প্রচণ্ড ধার্মিক মুসলিম নারীরা সবসময় ঘরে অবস্থান করেননা।
ভারতবর্ষ এবং আরবের আবহাওয়া বছরের উল্লেখযোগ্য সময় তপ্ত থাকে। ফলে মানুষ ঘরে অবস্থান করে আরামবোধ করে। এই অঞ্চলগুলোতে ঘর হচ্ছে প্রধান ঠিকানা। ঘর থেকে বের হয় যখন 'দরকার' হয়। পড়ালেখা, চাকরি, ব্যবসা, প্রেম, ইত্যাদি হইলো 'দরকার' এর উদাহরণ।
কিন্তু ইউরোপে বাসাবাড়ির উদ্দেশ্য আলাদা। মানুষ মূলত বাইরে থাকে, দরকারে ঘরে আসে। সেই দরকারটা যেমন রাতে ঘুমানো। তুষারপাত হইলে অবশ্য ২৪ ঘন্টা ঘরে আটকে থাকে।
এই ঘরবিমুখতার কারণ কি? ইউরোপের দেশগুলোতে সূর্যের আলোর অভাব, বিশেষ করে শীতের দিনগুলোতে। ফলে ঘরের মধ্যে একটা গুমোট, বিষণ্ন, অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থা বিরাজ করে। এখানে আপনি পুরো একটা দিন ঘরে কাটালে বিষণ্ণ এবং অসুস্হ অনুভব করবেন।
কর্মব্যস্ত একটা সপ্তাহ শেষে বাংলাদেশে মানুষ ঘরে শুয়ে বসে কাঁটিয়ে সতেজ হয়। এখানে উইকেন্ড অন্য জিনিষ। মানুষ ঘুরতে যায়। সন্ধ্যায় পানশালায় কাটায়। বয়ষ্ক মানুষেরাও ঘরে আটকে থাকেনা। তারা কুকুর নিয়ে বের হয়, পার্কে যায়। ইংল্যান্ডে স্লাউ শহরে দেখতাম দক্ষিণ এশীয় বয়ষ্ক মানুষজন সিটি সেন্টারে বেঞ্চিতে বসে সময় কাটাচ্ছেন। এমনকি ঘরের মধ্যে রান্নাবান্না করার প্রচলন কম। সুস্বাদু খাবার তৈরির দায়িত্ব রেস্টুরেন্টগুলোর।
গবেষণায় দেখা গেছে, তুষারপাতের সময় যখন মানুষকে ঘরে থাকতে হয়, তখন ডিভোর্স, আত্মহত্যার হার বেশি।
বাংলাদেশের মানুষ যে মদ খায়না এটার পেছনে ধর্ম যেমন একটা বড় কারণ, আবহাওয়াও সম্ভবত একটা নিয়ামক। ইউরোপে বিষণ্ণ আবহাওয়ায় মদ মানুষকে প্রফুল্ল করে তোলে যেটা বাংলাদেশের মত দেশে দরকার হয়না।
বাংলাদেশে যে প্রচুর মুসলিম নারী পর্দার অংশ হিসেবে ঘরে অবস্হান করেন সেটা কি কেবলই ধর্ম প্রভাবিত, নাকি আবহাওয়া ফ্যাক্টরও কাজ করে, সেটা নিয়ে সিরিয়াস গবেষণার সুযোগ আছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৫৬