এই পোস্টটি কিছুদিন আগে কিংবা ১২.০৬.২০১৪ তারিখে বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৪ শুরুর দিন দিলে ভাল হতো। তারপরও এখন যেহেতু চারিপাশের বিশ্বকাপ ফুটবলের আমেজ বা উত্তাপ ছড়িয়ে আছে, তাই পোস্টটির মূল্য এখনো অনেক বেশী।
মোটামুটি সব বড় টিমের খেলা হয়ে গেছে। টানটান উত্তেজনা অনুভব করা যাচ্ছে। আজ স্পেনের জন্য ফাইনাল বা জীবন-মরণ। কারণ আজ হারলে, গতবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিদায় ঘণ্টা বেঁজে উঠবে। মানে প্রথম রাউন্ড থেকে ছিঁটকে পড়বে। এ বড়ো হতাশার হবে ! আশা করি, তারা আজ ঘুরে দাঁড়াবে।
খেলা বিশ্লেষণ বা কোন দল নিয়ে অলোচনা করাটা আমার পোস্টের বিষয় নয়। যেহেতু বিশ্বকাপ নিয়ে লিখছি, তাই দু’চার কথা না বললেই নয়। চার বছর পরপর আমরা মেতে উঠি বিশ্বকাপ নিয়ে। সেটা ফুটবল হোক আর ক্রিকেটই হোক। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-অফিস-আদালত-পাড়া-মহল্লা-শহর-গ্রাম সব জায়গায় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় বিশ্বকাপ। এর মধ্যে বিশ্বকাপ ফুটবল একটু আলাদা। স্বল্প সময় আর টানটান উত্তেজনায় ভরপুর বিশ্বকাপ ফুটবল সবার কাছে বেশী জনপ্রিয়। এ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে আমাদের দেশেও। বাংলাদেশে। ঘরে ঘরে। বাড়ির ছাদে আর দেয়ালে দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে উন্মাদনা। ব্যানার-ফেস্টুন-পোস্টারে পোস্টারে ভরে যায় রাস্তার অলি-গলি।
বিভিন্ন দলের সর্মথকরা তার প্রিয় দলের পতাকা বাড়ির ছাদে বা দোকানে টাঙ্গিয়ে, দলে সাথে তথা বিশ্বকাপের সাথে একাগ্রতা প্রকাশ করে। এর কোন খারাপ দিক আমি দেখতে পাই না। চার বছর পরপর প্রায় ত্রিশ বা পঁয়ত্রিশ দিনের জন্য বিশ্বকাপ খেলা হয়। এ সময়টুকু তারা একটু আনন্দ করে। কারণ যে দেশে বিশ্বকাপ খেলা অনুষ্ঠিত হয়, সবার পক্ষে মাঠে উপস্থিত থেকে প্রিয় দলের পতাকা হাতে নিয়ে খেলা দেখা সম্ভব হয়না। তাই বাড়ির ছাদে পতাকা টাঙ্গিয়ে বা জার্সি গায়ে জড়িয়ে তাদের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ করে। মাঝে মাঝে যে মাত্রারিক্ত হয় না, সেটা অস্বীকার করছি না। কিন্তু সার্বিক ভাবে বিষয়টি গ্রহণযোগ্য। আগামী বিশ্বকাপ যে উনি বা সে দেখতে পারবেন, তার নিশ্চয়তা কিন্তু কেউ দিতে পারি না। কারণ, যে কোন সময় আমরা মারা যেতে পারি।
পতাকা উত্তোলনের সাথে দেশপ্রেম জড়িত বা দেশের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা প্রকাশ পায়, সেটা বলা যায় না। দেশাত্মবোধ ব্যাপারটি সম্পূর্ণ অন্তঃস্থ। কেউ দেশের পতাকা বাড়ির ছাদে টাঙ্গালেই যে, দেশের প্রতি শ্রদ্ধা আর না টাঙ্গালে দেশের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করে, সেটা ভাবা উচিত নয়। তাহলে একটা বিষয় না বলে পারছি না। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের প্রধান মতিউর রহমান নিজামী চেয়েছিল, বাংলাদেশের পতাকা পুড়ে পাকিস্তানের পতাকা বাংলা ঘরে ঘরে উড়ুক । কিন্তু পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হবার পর তিনি বাড়িতে আর গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা টাঙ্গিয়েছে। তার মানে কি? উনি বাংলাদেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, প্রকৃত দেশপ্রেমিক না উনার দেশাত্মবোধ বেশী ???
আসলে জোড় করে কিছু আদায় করা যায় না। বিশেষ করে সম্মান। মন থেকে যেটা আসবে সেটাই আসল ও দীর্ঘস্থায়ী। তাই জোড় করে, আইন করে স্বাধীনতা দিবস বা বিজয় দিবসে পতাকা উত্তোলন করতে হবে আর বিশ্বকাপ আসলে প্রিয় দলের পতাকা উত্তোলন করা যাবে না, সেটা এক কথা নয়। দু’টির উদ্দেশ্য বা মর্মাথ সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।
প্রথম আলোর ১১.০৬.২০১৪ তারিখে প্রকাশিত একটি খবরের মাধ্যমে জানলাম, যশোরের জেলা প্রসাশকের নির্দেশে মাইকিং করে, তার মানে আইন করে সব পতাকা চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে নামিয়ে ফেলতে বলেছেন। ব্যাপারটি সহজভাবে মেনে নিতে পারিনি। আমি জীবনে কোনদিন বাংলাদেশের পতাকা ছাড়া অন্য কোন দেশের পতাকা কিনি নাই। যতটুকু মনে পড়ে, একবার আমার এক ব্যাচের কিছু ছাত্র আমার প্রিয় দলে পতাকা বারান্দায় টাঙ্গিয়ে দিয়েছিল। তাও কয়েক ঘণ্টার জন্য। কারণ, আমার বকা বা অনুরোধে পড়া শেষ করে যাবার সময় সেটি নিয়ে গিয়েছিল। তাই বলে, অন্যরা একটু আনন্দ করতে পারবে না !! বিশ্বকাপ শেষ হলে, তারা তা এমনি নামিয়ে ফেলবে। শুধুশুধু এরমধ্যে দেশাত্মবোধ জড়িয়ে বিশ্বকাপের আমেজ বা উন্মাদনাকে হত্যার করার কোন মানে নেই।
বিশ্বকাপের উত্তেজনা আর আনন্দময় সময়টুকু সবার ভাল কাঁটুক, দূর্বল হৃদয়সম্পন্ন সমর্থনরা বেশী উত্তেজনামলূক খেলা পরিহার করুন, খেলা নিয়ে কেউ ঝগড়া-বিবাধে জড়িয়ে পড়বেন না এবং খেলায় হার-জিত থাকবে, তাই কোন অঘটনপটিয়সী ব্যক্তি কোন অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দিবেন না, সেটাই আশা করি।
সবাইকে বিশ্বকাপের শুভেচ্ছা।