somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাঁকে চিনেছি যেভাবে!

২০ শে জুলাই, ২০২২ রাত ১২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবি: জাহিদ রবিন

সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে চেনার আগে নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদকে চিনেছি।
গত শতাব্দির শেষ দশকের মাঝামাঝি সময়। তখন আমি খুব ছোট। টিভি দেখে বুঝে হোক বা না বুঝে হোক মজা পাই। বাড়িতে বিশ ইঞ্চি মনিটরের সাদা-কালো টিভি। চ্যানেল একটা হলেও নানা প্রকার অনুষ্ঠান। বড়দের মতো আমিও ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদি দেখার জন্য অধির আগ্রহে দিন গুণি। ধারাবাহিক নাটকের পর্বগুলো দেখার অপেক্ষায় থাকি। রাত আটটার বাংলার সংবাদ ও রাত দশটার ইংরেজি সংবাদের মধ্যবর্তী সময়ে ধারাবাহিক হলে দুটি নাটক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান হলে একটি প্রচারিত হত।
সেই সময়ে হুমায়ূন আহমেদের "এই মেঘ এই রোদ্র" নাটক প্রচারিত হতো। নির্দিষ্ট দিন নাটকের পর্ব শুরুর আগে অনুষ্ঠান ঘোষক এসে ঘোষণা দিতেন, এখন দেখবেন ধারাবাহিক নাটক এই মেঘ এই রোদ্র। রচনা হুমায়ূন আহমেদ। শ্রেষ্ঠাংশে..........।
এখান থেকে আমার সাথে হুমায়ূন আহমদের পরিচয়। এরপর জোছনার ফুল ধারাবাহিক দেখি। প্রতিটা পর্ব দেখার জন্য কিযে অস্থিরতা ও আগ্রহ সেটা অবর্ণনীয়।
সেই একই টিভি চ্যানেলে দেখি 'শ্রাবণ মেঘের দিন' ও 'দুই দুয়ারী' সিনেমা। তখন কিছুদিন পরে পরে এসব সিনেমা প্রচার করা হত। স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে কখনও কখনও 'আগুনের পরশমণি' প্রচারিত হত। নাটক বা সিনেমা যেটাই বলি না কেন, যতবার প্রচার ততবার হুমায়ূন আহমেদ নাম উচ্চারণ। সেই সময়ে হুমায়ূন আহমেদের নাটক বা সিনেমা দেখে এতোই ভালো লাগতো যে, হুমায়ূন আহমেদ নাম-টা হৃদয়ে গেঁথে যায়। হুমায়ূন আহমদের নাটক মানেই আলাদা এক ধারণের মজা। হুমায়ূন আহমেদ নাট্য জাদু দিয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন আমার শিশু মনে। সেই জাদুর শ্বাশ্বত আকর্ষণে হুমায়ূন আহমদের এমন কোনো নাটক বা সিনেমা আমি দেখি নি বলে মনে পড়ে না।
এবার আশি সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে কিভাবে চিনলাম।
বাড়ির পাশে এনজিও পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়। এককক্ষ বিশিষ্ট বৃহদাকার টিনশেড ঘর ভাড়া নিয়ে শিক্ষাদান কার্যক্রম চলে। একজন নারী শিক্ষক ত্রিশজন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাদান করেন। একটি টিনের ট্রাংকে কিছু বই রেখে এই ত্রিশজন শিক্ষার্থীদের জন্য সেখানে একটি পাঠাগার ছিল।
গ্রামে আমরা যারা বাল্যবন্ধু ছিলাম তাদের মধ্যে যারা এনজিওর ঐ স্কুলে পড়ালেখা করত তারা ঐ পাঠাগারের বই পড়ার সুযোগ পেত। আমরা যারা এনজিওর ঐ স্কুলে পড়াশোনা করতাম না আমরা সেখানের বই পড়ার সুযোগ পেতাম না। একারণে আমাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ তৈরি হয়। এনজিওর স্কুলে পড়াশোনাকারী বন্ধুরা প্রতি শুক্রবার বিকেলে ওদের স্কুল পাঠাগারে গিয়ে গান, নাচ ও আবৃত্তি শেখে। বর্হিরাগত শিক্ষার্থীদের ভেতরে প্রবেশ করার অধিকার ছিল না। যদি কখনও জানালার ফাঁক ফোকর দিয়ে ওদের নাচ, গান ও আবৃত্তি উপভোগ করার চেষ্টা করতাম টের পেলে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেওয়া হতো। এতে রাগে শরীর জ্বলে যেত। ওদের হাতে গল্পের নতুন নতুন বই দেখলে হিংসায় পুড়তাম।
এনজিও স্কুলের কার্যক্রম প্রায় শেষের দিকে। অন্যত্র চলে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এমন সময় আমাদের মধ্যে সিদ্ধান্ত হয় পাঠাগার লুট করার।
আমাদের তো পড়া শ্যাষ। তাছাড়া ইশকুল এহানে আর থাকপি লয় বলে এনজিও স্কুলের বন্ধুরা আমাদের পরিকল্পনার সাথে ঐক্যমত প্রকাশ করে।
পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শেষে কেউ নাচের ঘুঘুর নেয়। কেউ নেয় অন্যকিছু। তেমন কিছু না পেয়ে তিনটা বই নিয়ে বাড়ি ফিরি।
গতরাতের মহাকর্মের প্রাপ্তি হিসেবে সকালে দেখি বঙ্কিমচন্দ্রের 'কপালকুণ্ডলা', হুমায়ূন আহমদের 'কোথাও কেউ নেই' ও ইমদাদুল হক মিলনের 'আড়াল' এই তিনটে বই বিছানার নিচে অবস্থান করছে।
কপালকুণ্ডলা ও আড়াল বই দুটির মোড়ক নতুন। ভেতরে চকচকে কাগজে মসৃণ মুদ্রণ। কোথাও কেউ নেই বইটির মোড়ক ছেঁড়া। ভেতর পাতাগুলো মলিন। প্রচ্ছদে লেখকের নামের অর্ধেক ছিঁড়ে গেছে সেটা বুঝলাম ভেতরের পাতা দেখে।
কপালকুণ্ডলা দিয়ে পড়া শুরু করি। কয়েক পাতা পড়ার পর ভালো লাগে না। কিছু বুঝলে তো ভালো লাগবে!
হুমায়ূন আহমেদ বেশ পরিচিত নাম। টিভিতে মাঝে মাঝে এই নাম শোনা যায়। অপরিচিত স্থানে সামান্য পরিচিতির প্রতিও দুর্বলতা থাকে। আমারও তাই হলো। পড়া শুরু করি কোথাও কেউ নেই। মুনা, মামুন ও বাকের ভাই চরিত্রগুলোর মাধ্যমে নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদকে ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ হিসেবে আমার কিশোর হৃদয় দখল করে নেয়।
সেই থেকে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ আমার প্রিয় লেখক ও নাট্যকারদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ।
প্রয়াণ দিবসে এই শ্রেষ্ঠ মানুষটির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

-সোহাগ তানভীর
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:২১
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×