“ঈশ্বর এবং রাষ্ট্র” বইটির ইংরেজি নাম ছিল “গড এন্ড স্টেট”। অনেক ভেবে চিন্তে বাংলায় সোজাসুজি “ঈশ্বর এবং রাষ্ট্র” হিসেবেই রেখে দিলাম। বিষয়টাকে আর প্যাঁচানোর কোনো মানে দেখলাম না। কারণ নামের থেকে বইটির ভেতর অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটা একাধারে মার্কসবাদী বলি আর নিরাজবাদী বলি উভয় ধারার পাঠকের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বই। মিখাইল বাকুনিন বইটিতে ঈশ্বর সংক্রান্ত বিশ্বাসের নেপথ্যের কারণ সমূহ নিয়ে একেবারে খোলামেলা আলোচনা এবং সমালোচনা দুটোই করেছেন। এই আলোচনা সমালোচনার ক্ষেত্রে তাঁর কোনো রাখ ঢাক ছিলো না। কোনো কিছুকে তিনি পরোয়াও করেন নি। ধর্মকে তিনি একেবারে ভেতর থেকে সমালোচনা করেছেন। তার প্রত্যেকটি সমালোচনাই ছিলো যুক্তির ধারালো ছুঁরি দিয়ে তৈরি করা। ঈশ্বর কেন্দ্রিক এই চিন্তা কিভাবে আমাদের সমাজকে প্রতিনিয়ত পিছনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এবং এখানে রাষ্ট্রও যে একটা গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে বাকুনিন তার স্বরূপ উন্মোচন করে দেখিয়েছেন। বাকুনিন বইটিতে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, ঈশ্বরের ধারণার বিকাশ এবং এর কারণ এগুলো সম্পর্কে বুঝতে হবে। না পারলে দেখা যাবে আমরা কেবল নিজেদের নাস্তিক দাবি করে বসে আছি। কিন্তু কখনো সেই সত্যটিকে বের করতে পারবো না। মনে রাখতে হবে আমরা সব সময় একটা হুমকির মধ্যে আছি- ধর্মীয় কিম্ভুতকিমারদের দ্বারা আমাদের স্থান হারানোর হুমকি। এসব হুমকি বিভিন্ন জায়গায় কার্যকরও হচ্ছে। তাই প্রকৃত সত্যকে উন্মোচন করার কোন বিকল্প এখানে নেই।
বাকুনিনের এই উদ্বেগের কারণটি আমাদের গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে। বিজ্ঞান এত দূর পর্যন্ত অগ্রসর হলো কিন্তু তারপরেও ধর্ম কিভাবে তার পশ্চাৎপদ চিন্তা দ্বারা সমাজকে আজো টেনে ধরতে পারে? কিভাবে আজো ধর্ম তার শোষণমূলক প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে? ধর্মের এই শক্তির মূল খুঁজে বের করতে হবে এবং খুঁজে বের করে সেখানেই আঘাত করতে হবে। নইলে এই সমাজে কতিপয় মানুষের “ঈশ্বর” হয়ে উঠা এবং ঈশ্বর হয়ে রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের উপর ছড়ি ঘুরানোর শোষণমূলক ব্যবস্থার ইতি ঘটানো কোনো ভাবেই সম্ভব না। আমরা তখন মানবতার পানে অগ্রসর না হয়ে বরং পেছাতে পেছাতে পশুত্বের দিকেই চলে যাবো।
বইটি অনুবাদের পর আমি বারবার ভেবেছি, এত গুরুত্বপূর্ণ একটা বই এতদিন বাংলায় অনুবাদ করা হলো না কেন? বাংলাদেশে মার্কসবাদী লেখক পাঠক তো কম নয়। সে না হয় বাদ দিলাম। নিরাজবাদী লেখক পাঠকও কিন্তু ইদানিং কম তৈরি হয় নি। কিন্তু তারপরেও “গড এন্ড স্টেট” এর মত গুরুত্বপূর্ণ বইটি আড়ালেই পড়ে থাকলো কিভাবে? শুধু “গড এন্ড স্টেট” নয়, এরকম অনেক গুরুত্বপূর্ণ বই সঠিক পরিচর্যা বলি কিংবা আমাদের জানার সীমাবদ্ধতার কারণেই বলি তা আমাদের নাগালের বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
বইটি আমারও দৃষ্টি গোচর হতো না যদি না এ. কে. এম. শিহাব (বাংলাদেশের একজন এনার্কিস্ট এক্টিভিস্ট) বইটি সম্পর্কে আমাকে না জানাতেন। এজন্য প্রথম ধন্যবাদটি শিহাব ভাইকেই দিতে হবে। উনার উৎসাহ এবং উদ্দীপনায়ই আমি বইটি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করার অনুপ্রেরণা পাই।
সর্বোপরি আমার দুই অনুবাদ সহযোগী প্রবাল রায় প্রান্ত এবং রাগীব হাসানকে ধন্যবাদ না দিলেই নয়। দুজনেই অনুবাদের জগতে একেবারে নতুন ছিল। সে জায়গায় “গড এন্ড স্টেট” এর মতো বইটি নিয়ে তারা যেভাবে আগ্রহের সাথে কাজ করেছে তাতে আমি অভিভূত না হয়ে পারি নি।
আশা করছি পাঠকরা ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখে বইটি পড়বেন।
বইটি পাবেন অঙ্কুর প্রকাশনীর স্টলে। স্টল নং- ১৬৮-১৭০
অনুবাদক
সৌরভ দাস
শিক্ষার্থী
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
ময়মনসিংহ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৫৫