আমি কি রকম ভাবে বেচে আছি তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ
এই কি মানুষ জন্ম? নাকি শেষ
পুরোহিত-কঙ্কালের পাশা খেলা! প্রতি সন্ধেবেলা
আমার বুকের মধ্যে হাওয়া ঘুরে ওঠে, হৃদয়কে অবহেলা
করে রক্ত; আমি মানুষের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে
থাকি-তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখবো বলে। আমি আক্রোশে
হেসে উঠি না, আমি ছার পোকার পাশে ছারপোকা হয়ে হাটি,
মশা হয়ে উড়ি একদল মশার সঙ্গে;
খাটি অন্ধকারে স্ত্রীলোকের খুব মধ্যে ডুব দিয়ে দেখেছি দেশলাই জ্বেলে-
(ও-গায়ে আমার কোন ঘর বাড়ি নেই!)
আমি স্বপ্নের মধ্যে বাবুদের বাড়ির ছেলে
সেজে গেছি রঙ্গালয়ে, পরাগের মতো ফু দিয়ে উড়িয়েছি দৃশ্যলোক
ঘামে ছিল না এমন গন্ধক
যাতে ক্রোধে জ্বলে উঠতে পারি।
নিখিলেশ, তুই একে কী বলবি?
আমি শোবার ঘরে নিজের দুইহাত পেরেকে
বিধে দেখতে চেয়েছিলাম যীশুর কষ্ট খুব বেশি ছিল কিনা;
আমি ফুলের পাশে ফুল হয়ে ফুটে দেখেছি, তাকে ভাল বাসতে পারি না।
আমি কপাল থেকে ঘামের মতন মুছে নিয়েছি পিতামহের নাম,
আমি শ্মশানে গিয়ে মরে যাবার বদলে, মাইরি, ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
নিখিলেশ, আমি এইরকম ভাবে বেচে আছি,
তোর সঙ্গে জীবন বদল করে কোনো লাভ হলো না আমার- একি নদীর তরঙ্গে
ছেলবেলার মত ডুব সাতার? অথবা চশমা বদলের মতো
কয়েক মিনিট আলোড়ন? অথবা গভীর রাত্রে সঙ্গমনিরত
দম্পতির পাশে শুয়ে পুনরায় জন্ম ভিক্ষা? কেননা সময় নেই,
আমার ঘরের
দেয়ালের চুন-ভাঙ্গা দাগটিও বড় প্রিয়।
মৃত গাছটির পাশে উত্তরের হাওয়ার কিছুটা মায়া লেগে আছে।
ভুল নাম, ভুল স্বপ্ন থেকে বাইরে এসে দেখি
উইপোকায় খেয়ে গেছে চিঠির বান্ডিল, তবুও অক্লেশে
হলুদকে হলুদ বলে ডাকতে পারি। আমি সর্বস্ব বন্ধক দিয়ে একবার
একটি মুহুর্ত চেয়ে ছিলাম, একটি......., ব্যাক্তিগত জিরো আওয়ার;
ইচ্ছে ছিল না জানাবার
এই বিশেষ কথাটা তোকে। তবুও ক্রমশই বেশি করে আসে শীত,রাত্রে
এ-রকম জলতেষ্টা আর কখনও পেতো না, রোজ অন্ধকার হাতড়ে
টের পাই তিনটে ইদুর। ইদুর না মুষিক? তা হলে কি প্রতিক্ষায়
আছে অদুরেই সংস্কেরত শ্লোক? পাপ ও দুঃখের কথা ছাড়া আর এই অবেলায়
কিছুই মনে পড়ে না। আমার পূজা ও নারী-হত্যার ভিতরে
বেজে উঠে সাইরেন। নিজের দু'হাত যখন নিজেদের ইচ্ছে মতো কাজ করে তখন মনে হয় ওরা সত্যিকারের। আজকাল আমার
নিজের চোখ দুটোও মনে হয় একপলক সত্য চোখ। এরকম সত্য
পৃথিবীতে খুব বেশি নেই আর।
(সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১১:০৫