কয়েকদিন বৃষ্টির পরে আজ সূর্যদেবের মান ভেঙ্গেছে। এখানকার বৃষ্টি বড্ড কষ্ট খুঁড়ে তোলে। বেনী দোলানো ছোট্ট মেয়েটা মায়ের বকা খেয়ে ঘরের কোণে দুহাতে মুখ লুকিয়ে যেমন একটানা নীচু স্বরে কাঁদতে থাকে ঠিক তেমনটাই এখানে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি সারাদিন বিষাদের সুর গায়।
মিটিং শেষ করে বাইরে পা রাখতেই বহ্নির মন ভালো হয়ে গেলো। কি অদ্ভুত সুন্দর একটা দিন!! JUST PERFECT!!! হিমেল হাওয়ায় শীত শীত কাঁপন; চারিদিকের ইউক্যালিপ্টাসের বিষন্ন সবুজ সারির ফাঁকফোকর দিয়ে গায়ে রোদ পড়তেই ওম ওম লাগছে। রোদের লেপ জড়িয়ে হাঁটতে ভালোই লাগছে, মনে হচ্ছে বাতাসে ভাপা পিঠার গন্ধ।
লাইব্রেরীর সামনে একটা মেয়ে; রোদ পড়ে তার খোলা সোনালী চুলে এলোমেলো ঝিকিমিকি। পাখির মতো দুপাশে হাত ছড়িয়ে একটু উঁচু দেয়ালের ওপরে হাঁটছে; ঠিক যেমনটা ছোট্ট বহ্নি ধানক্ষেতের আইলে হাত মেলে টলোমলো পায়ে হাঁটতো।
পাশাপাশি সাইড ওয়াকে উদ্বিগ্ন ভঙ্গীতে হাঁটছে ওই স্বর্ণকেশীর বয়ফ্রেন্ড। খুব চিন্তিত; পড়ে না যায় তার ভালোবাসার মানুষটা। বহ্নি দেখতে দেখতেই মেয়েটা পা ফসকালো; ছেলেটা ওকে দুহাতে ধরে ফেলছে। মেয়েটার পা মাটি থেকে দু’তিন ইঞ্চি ওপরে; তার মুখ ঝুঁকে আছে ছেলেটার মুখের ওপরে। ছেলেটা এখোনো ওর কোমর জড়িয়ে আছে; সময় হঠাৎই থেমে গেছে। ওরা তাকিয়ে আছে পরষ্পরের দিকে; এ সেই চিরন্তন দৃষ্টি যা বলে “এইইই যে শোনো...আমাকে ধরো!!!”
অনেক আগে বহ্নি তার মানুষটাকে বলেছিলো “এই আমাকে ধরো!!”। সে তার পুরুষালী রুক্ষ হাত রেখেছিলো ওর থরোথরো আঙ্গুলে। “উহুউউ...না না আমাকে ধরো!!!” এবার মানুষটার চোখে একটু খুশীর ঝিলিক; সে তার লোমশ ভারী হাত রেখেছিলো বহ্নির কাঁধে। “ইশশ রে...আমার কাঁধ না আমাকে ধরো!”
মানুষটার চোখ মাতাল হয়ে গিয়েছিলো। টালমাটাল মানুষটা খসখসে দুহাতে ওর মুখ তুলে তার ওম ওম ভালুক বুকের কাছে নিয়ে এসেছিলো; ভরা দিঘীর তলের মতো ওর দুচোখে ব্যগ্র হয়ে ভালোবাসা খুঁজেছিলো। মনে হচ্ছিলো অনন্তকাল ওরা পরষ্পরের দিকে তাকিয়ে আছে। লজ্জা আর নীলাভ গালের খোঁচা খোঁচা না কামানো দাড়ির ঘষায় লাল হওয়া বহ্নির ঠোঁটে নেমে এসেছিলো তার একটু পুরু সুন্দর ঠোঁট জোড়া। খুব তৃষার্ত মানুষ যেমন জলে চুমুক দেয় ঠিক সেভাবে মুখ নীচু করে মানুষটা আদর করেছিলো।
তাকে অবাক করে বহ্নি বলেছিলো “আরে বোকা...এতো আমার মুখ.....আমাকে ধরো!” মানুষটা মরিয়া হয়ে জাপটে ধরেছিলো ওকে; একে একে স্পর্শ করেছিলো ওর চুল, ওর কানের লতি, ওর নাকের ডগা, ওর গলা, বুকের ভাঁজ, ওর কোমরের বাঁক, ওর শঙ্খসাদা উরু , ওর আলতা পরা পায়ের পাতা। আর...আর একে একে বহ্নি বলেছিলো “না না না.....আমার শরীর না....তুমি আমাকে ধরো...”
ওরা পারলো; মাত্র কৈশোর পেরোনো ওই ছেলেমেয়ে দুটো পারলো। “তুমি কেন পারলে না আমার মানুষটা?” বহ্নিকে ধরা হলো না আজও মানুষটার!!!
© শিখা রহমান
ছবিঃ আমার আঁকা
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৫