১.
- দ্যাখো দ্যাখো পাহাড়ের ওপরে কি সুন্দর সব গরু ছাগল চরে বেড়াচ্ছে!! একটু আগেতো অনেকগুলো ঘোড়াও দেখলাম।
- হুম...ইশশ্ এই ছাগলগুলিকে রোষ্ট করে খেতে না জানি কতো মজা!!!
রুপা হতাশ চোখে পাশে গাড়ী চালাতে থাকা তার মানুষটার দিকে তাকালো। আশ্চর্য!! খাওয়া দাওয়া ছাড়া কি সুমনের আর কোন চিন্তা নেই?
গাড়ী ছুটছে ক্যালিফোর্নিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিখ্যাত সর্পিল হাইওয়ে ওয়ান ধরে। গন্তব্য এলিফ্যান্ট সিল ভিউপয়েন্ট; সমুদ্র উপকূল ঘেঁষা ওদের ছোট্ট শহর থেকে প্রায় তিরিশ মাইল উত্তরে। রুপার বিয়ের এক বছর হয়ে এলো। আজ শনিবার; সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে দুজনে এদিকে সেদিকে বেড়াতে বের হয়। ক্যালিফোর্নিয়াতে সুমন প্রায় পাঁচ বছর ধরে আছে; মাস্টার্স ডিগ্রী আর চাকরী এই অঙ্গরাজ্যেই। অনেক কিছুই ওর দেখা; কিন্ত রুপার মুগ্ধতা এখনো কাটেনি।
চারপাশে সবুজের আধিপত্য; দিগন্ত রেখার ওপরে ঝকঝকে নীল আকাশ। পেঁজা পেঁজা শাদা মেঘ; যেন কোথাও কার্পাসের ফল ফেটেছে। নীলের বুকে সবুজ ঢেউতোলা পাহাড়ের সারি। কোথাও পাহাড়েরা একটু পাথুরে; কোথাও পাহাড়ের গায়ে সবুজ গাঢ় পোলকা ডট। হালকা সবুজ, কলাপাতা সবুজ, পতাকা সবুজ, কালচে সবুজ; পৃথিবীর এই টুকরো তৈরীর সময় নির্ঘাত ঈশ্বরের রঙের ঝুলিতে সবুজ বাদে বাকী সব রঙ শেষ হয়ে গিয়েছিলো। রুপার ইচ্ছে করছে সবুজ পাহাড়ের গায়ে সারি সারি কৃষ্ণচূড়া ফোটাতে; দিগন্ত জুড়ে আঁকা হতো বাংলাদেশের পতাকা। উহহহ্ কি দারুন লাগতো!!
উচ্ছসিত হয়ে বলতে গিয়েও রুপা কথাটা গিলে ফেললো। দেখা যাবে এত্তো সুন্দর ভাবনাটার ফর্দাফাই অবস্থা। সুমন হয়তো বলবে “কৃষ্ণচূড়া না...তার চেয়ে বরং লালশাক লাগাও...মাঝে মাঝে তুলে খাওয়া যাবে।“
২.
বড্ড খাওয়া পাগল সুমন; খাবার যে অনেক পরিমানে খায় তা নয় তবে খাওয়ার ব্যাপারে খুবই শৌখিন। যে রুপা বিয়ের আগে তেমন রান্নাই করেনি আমেরিকাতে এসে একবছরের মধ্যেই অনেক রকম রান্না শিখে নিয়েছে; শুধু সুমনের জন্যই শিখেছে। নতুন কিছু বা পছন্দের কোন পদ রান্না করে টেবিলে দিলে মানুষটা কি যে খুশী হয়!! চোখে মুখে হাজার ওয়াটের বাতি জ্বলে ওঠে। রান্না যেমনই হোক খুব তৃপ্তি করে খায়। খাওয়ার সময় পাশে বসে চুপচাপ দেখতে রুপার বড় ভালো লাগে। খাওয়া শেষ করে মাঝে মাঝে বলে “ওপরে আল্লাহ আর নীচে রুপা আমাকে খাওয়াইলো!!!” কি যে ফাজিল!!
বাইরে ধাবমান সুন্দরের দিকে চোখ রেখে রুপা ভাবছিলো সম্পর্কের শুরুর কথা। সুমনতো তার খাদ্যপ্রীতি লুকানোর কোনরকম চেষ্টাই করেনি। বাসর রাতে ঘরে ঢুকে শেরওয়ানীর বোতাম খুলতে খুলতে প্রথম কথাই হলো “তোমাদের বাবুর্চির নাম কি বলতো?” রুপা লজ্জা ভুলে অবাক হয়ে চোখ তুলে তাকাতেই “না মানে এতো ভালো কাচ্চি বিরিয়ানী অনেক দিন খাইনি...কাচ্চি বিরিয়ানী কিন্তু সবাই ভালো পারে না। এই বিরিয়ানী রান্না একটা আর্ট।“
বিদেশে থাকে বলে রুপাকে দেখার দু’সপ্তাহের মধ্যেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো। বিয়ে ঠিক হবার পরে একবার মাত্র শুধু ওরা দুজনে দেখা করেছিলো। “আপনার নামটা আমার খুব ভালো লেগেছে।“ রুপার মুখ একটু লাল “বাবা রেখেছেন...তবে এটাতো ডাকনাম।“ “ভালো নাম...শুনলেই পদ্মার রুপালী ইলিশের কথা মনে পড়ে...সর্ষে ইলিশ আমার খুব প্রিয়!!!” এখন বাড়াবাড়ি মনে হলেও তখন সহজ সরল মানুষটাকে বেশ লেগেছিলো।
এলিফ্যান্ট সিল ভিউপয়েন্টে খাড়া সমুদ্রপাড়ে কাঠের আর কাঁটাতারের বেড়া; ত্রিশ চল্লিশ ফিট ওপর থেকে দেখা যাচ্ছে সারি সারি সিল। মনে হচ্ছে অনেকগুলো বিশাল সিমেন্ট রঙ্গা বস্তা পড়ে আছে সমুদ্র উপকুলে। খুব ধীরেসুস্থে হেলেদুলে কয়েকজন আগানোর চেষ্টা করছে।
- আহারে!!! দেখেছো বিশাল শরীর নিয়ে সীলগুলোর কি কষ্ট হচ্ছে!!
- ঠিক বলেছো...ব্যাটাদের কি সাইজ দেখলে...একটা রান্না করলে পুরা পাড়া খাওয়ানো যাবে।
আবারো খাওয়া! রুপার ইচ্ছা করছে বেড়ার ওপরে উঠে সমুদ্রে ঝাঁপ দেয়।
৩.
আজ রবিবার। মানুষটা খেতে ভালোবাসে বলে ভোরে উঠে রুপা রান্না শুরু করেছে। দুপুরে টেবিলে ভুনা খিচুড়ি, কাঁচামরিচ পেয়াজ দিয়ে সরিষার তেলে মাখা আলু ভর্তা, ইলিশ মাছের কড়কড়া ভাজি, চাক চাক বেগুন ভাজা, আর চ্যাপা শুটকির চোখে জল আনা প্রচন্ড ঝাল ভর্তা। সব সুমনের খুব পছন্দের খাবার; দেখেই রুপাকে জড়িয়ে ধরলো “আমার লক্ষী বউটা...তুমি এত্তো ভালো কেন বলতো?” ঠোঁটের ওপরে ঠোঁট চেপে বসতেই রুপা ছাড়িয়ে নিলো “খেতে বসতো...সব ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে...”
- আচ্ছা দাঁড়াও খেয়ে নেই... তুমিতো আছোই খাবার পরে মিষ্টিমুখ করার জন্য...
- ধ্যাত!! খালি আজেবাজে কথা...খাওতো...
- একটা কৌতুক বলি শোন...এক বামুন গিয়েছে বিয়ে বাড়ীতে। খেতে খেতে শুয়ে পড়ে হাঁসফাঁস করছে। বোঝাই গেল, আর খেতে পারছে না! একজন বললেন ‘ঠাকুরমশাই! একটা হজমের বড়ি দি! কি বলেন?’ অতিকষ্টে উত্তর এলো ‘হজমের বড়ি যদি খাওয়ার জায়গা থাকতো হে, তা হলে তার বদলে আমি আরও ১০ টা পান্তুয়া খেতাম।‘ শুনেছ এটা আগে?
- শুনিনি…এই সব ফালতু খাওয়ার জোক্স আমার জানা নেই…
- কাকে ফালতু বলছো? এটা মুজতবা আলীর লেখা; খুব খাদ্যরসিক ছিলেন। একবার চাঁদনী রাতে তাজমহল না দেখতে গিয়ে তিনি রেস্তোঁরায় বসে রামপাখীর মাংস খাচ্ছিলেন। জিজ্ঞেস করাতে বলেছিলেন ‘বাপু হে! ওই তাজমহল, কড়কড়ায়তে-মড়মড়ায়তে করে খাওয়া যায় না। তাই যাই নি!’
রুপা জিজ্ঞাসা করবে না করবে না ভেবেও বলে ফেললো “রামপাখীটা কি?” সুমন মাছের কাঁটা বাছতে বাছতে বিজয়ীর হাসি দিলো “রামপাখী হলো মুরগী…” সুমনের এখন কথার ফ্লো চলে এসেছে “ইলিশ মাছ ভাজা দাওতো আরেক পিস। শোনো মাছ তিন প্রকার। উত্তম, মধ্যম ও অধম। উত্তম মৎস্য হচ্ছে প্রায় কাঁটাবিহীন। মধ্যম মৎস্যে কিছু কাঁটা থাকে। আর অধম মৎস্য হলো প্রচুর কন্টক হইলেও উত্তম রূপে ভর্জিত হইলে অতীব উপাদেয়। মানেটা হলো, কাঁটা মাছ কড়কড়ে করে ভেজে খেতে পারো! ইলিশ হলো অধম মৎস্য।”
"আচ্ছা তোমার কি খাবার ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে গল্প নেই?” রুপার স্বরে একটু উষ্মা “অন্য কথা বলো...অফিসে কি হলো?”
- সেদিন রবার্ট জিজ্ঞাসা করছিলো উইকেন্ড কেমন গেলো। বললাম যে আমাদের বাংলাদেশিদের দাওয়াত পার্টি ছিলো। ব্যাটা বলে কি " 'তোমাদের তো দেখি প্রায়ই উইকেন্ডে পার্টি থাকে। এইসব পার্টিতে তোমরা কি একটিভিটিজ করো?' আমিও একটু লোভ লাগালাম ‘আমরা মজার মজার সব বাংলাদেশী খাবার রান্না করে খাই।’ সে বলে আর কি করি আমরা...ড্যান্সিং? ক্যারিওকি? জানায়ে দিলাম ‘We eat a lot of food and then we just talk more about foods.’ হা হা হা!!!
খাওয়া শেষ; রুপা রাগ সামলাতে না পেরে উঠে গেলো “তোমার জন্য মিষ্টি কিছু রান্না করিনি আজ।”
- আরে নো প্রবলেম!!! বাসায় কি গুড়া দুধ আছে?
- না... কন্ডেন্সড মিল্ক আছে? কেন বলতো? রুপা একটু অবাক।
- ওতেও চলবে। ছোটবেলায় গুঁড়া দুধের সাথে অনেক চিনি মিশিয়ে একটু পানি দিয়ে ঘন করে খেতাম....এখনও যখনি খাই মনে মনে বলি ‘ওরে দুধ গোলা রে! তুঁহু মম শ্যাম সমান!!’
- তোমার কাছে তো দুধ গোলাই অমৃত মনে হবে। তুমি কি আর রাধা কৃষ্ণর প্রেম বুঝবে?
রুপাকে রাগলে এতো সুন্দর দেখায়। ঠোঁট ফুলে যায়; একটু গোল মুখের গাল দুটো আরো ফোলে; রাগে চোখ ছোট করে ভুরু কুঁচকে তাকায়। সুমনের রুপার রাগ দেখে মজা লাগছে; ইচ্ছা করছে ফোলা গাল দুটো টিপে দিতে। আরেকটু রাগানোর জন্য সে গান ধরে “লুচির কোলে পড়ল চিনি/ যেন শ্যামের কোলে সৌদামিনী!”
৪.
রবিবারটা বেশ ঢিলাঢালা গেলো। এই উইকেন্ডে কোন দাওয়াত ছিলো না। বিকেল নামতে রুপা টিভি ছেড়ে বসলো। বাংলা চ্যানেলে কি একটা নাটক হচ্ছে...নায়কতো ফুল হাতে প্রেমে হাবুডুবু...কঠিন সব ভালোবাসার বানী ছাড়ছে। রুপা মনে মনে বলল “ব্যাটা!! বিয়ের পরেতো বলবি কিসের গোলাপ ফুল...কুমড়াফুল ভাজি করো।“ দুপুরের রাজকীয় খাওয়ার পরে সুমন একটু শুয়েছিলো। টিভির আওয়াজে গড়াগড়ি ছেড়ে রুপার পাশে এসে বসলো। নাটকে বেশ জটিল অবস্থা এখন...নায়ক খাবার টেবিলে তার চশমা পড়া রাগি মাকে প্রেমিকার কথা বলার চেষ্টা করছে।
- আরে দ্যাখো কি বড় বড় কই মাছ!!! কতোদিন কই মাছ খাই না...এই কইগুলা সাইজে এতো বড়...আমার মনে হয় এইগুলো থাইল্যান্ডের কইমাছ? ঠিক না?
রুপার ইচ্ছা করছে ডাক ছেড়ে কাঁদে “নাটকের এই ক্রিটিক্যাল দৃশ্যে কথা না শুনে তোমার চোখ গেলো টেবিলের কই মাছের দিকে?”
গলা চড়ে গেছে বেশ; বোঝাই যাচ্ছে রুপা ভালো রেগেছে। সুমন পুরো চুপ। এখন কথা বললে খুব ঝগড়া হবে। রাতের খাওয়াও চুপচাপ হলো। সুমন টুকটাক কথা চালাতে চাইলেও রুপা কথা আগায়নি; গম্ভীরমুখে শুতে এলো। সুমন শেষ চেষ্টা করলো “তুমি না হাসলে মনে হয় পুরো বাসার ওপরে পাথর চেপে বসে আছে...একটু হাসো না...আমি দুঃখিত...প্লিজ প্লিজ হাসো!!!” “কাল সকালেই ঠিক হয়ে যাবে…এখন ঘুমাই প্লিজ!”
৫.
বাচ্চাটা একদম একটা পুতুল; টমেটোর মতো লাল লাল গাল; ঝকঝকে নীল পুতির মতো চোখ। বার বার চেয়ারে উঠছে আর নামছে। অনেক রাত, প্রায় রাত তিনটা; বাচ্চাটার ঘুম নেই কেন? রুপা জুবুথুবু হয়ে হাসপাতালের এমারজেন্সি এরিয়াতে বসে আছে। খুব টেনশন হচ্ছে; সুমন ঠিক আছে তো? কাল রাতে কেন যে এতো রাগারাগি করলো রুপা?
বুকে ব্যথা হচ্ছে বলে সুমন রাত দুটোর দিকে রুপাকে ডেকে তুলেছে। ছোট শহরে হাসপাতাল মিনিট পনেরোর ড্রাইভের মধ্যেই; গভীর রাতে আজ তেমন ভিড়ও নেই। ভাগ্যিস রুপা মাস তিনেক আগে ড্রাইভিং লাইসেন্সটা নিয়েছিলো। এসে বুকে ব্যথা বলা মাত্র হাসপাতালে ছোটাছুটি; সুমনকে চলমান বেডে শুইয়ে একগাদি যন্ত্রপাতি লাগিয়ে ভেতরে নিয়ে গেলো।
বাচ্চাটা খেলা থামিয়ে রুপার দিকে তাকিয়ে আছে; চোখাচোখি হতেই হাসলো। রুপা হাত নেড়ে হাসি দিলো। রুপার কি কখনো এমন একটা বাবু হবে? যদি সুমনের কিছু হয়...নাহ্ ও ভাবতেই পারছে না; চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল ঝরছে। বাচ্চাটা ভয় পেয়েছে; ঠোঁট বেকে যাচ্ছে। রুপা তাড়াতাড়ি চোখের জল মুছে ফেললো।
- তোমার হাসব্যান্ডের হার্ট অক্ষত আছে...এখনো তোমার জন্যই ধুকপুক করছে ইয়াং লেডি...চিয়ার আপ...এতো ভয় পেয়েছো কেন? খুবই রসিক একজন বয়স্ক ডাক্তার “ইসিজি একদম নরমাল। He has the heart of a horse.”
- তাহলে বুকে ব্যথা হলো কেন? ও যে বলছিলো অনেক ব্যথা।
- Acidity...শুনলাম তোমরা নাকি ডিনারে অনেক খাওয়া দাওয়া করেছো…অনেক মজার সব স্পাইসি খাবার!! সপ্তাহ খানেক আর এইসব ভারী মশলাদার খাবার খেতে দিও না। আশা করছি এই সময়ের মধ্যেই ও সুস্থবোধ করবে।
৬.
বাসায় ফেরার পরে সুমন একটু চিন্তায় ছিলো। রুপা কি খাওয়া নিয়ে বকাবকি করবে? এ ব্যাপারটা নিয়ে রুপা অবশ্য একদম চুপ; দেশে বাবা মা বা এখানে বন্ধুদেরও বলেনি। সপ্তাহ গড়িয়ে আবারো আরেকটা উইকেন্ড; এ কদিন ডাক্তারের কথা মতো খাওয়ার মেনু খুব সাদামাটা। আর সুমনও ভয়ে কোন পছন্দের রান্নার আবদার করেনি।
সপ্তাহান্তে শনিবার সকালে নাস্তার টেবিলে ভুনা গরুর ঝাল ঝাল মাংস, চালের আটার রুটি আর সবজি। গরুর মাংস সুমনের সবচেয়ে প্রিয়। তুলে দিতে নিতেই “রুপা আজ গরু খেতে ইচ্ছা করছে না…সবজি দিয়ে রুটি খাই?” রুপা আসলেই অবাক “কেন? তুমি যেভাবে পছন্দ করো সেভাবেইতো রেঁধেছি…খাবে না কেন? একটু খাও।“ “আচ্ছা এক টুকরা দাও…তুমি কষ্ট করে রেধেছো।“ রুপার স্বরে উদ্বিগ্নতা “শরীর খারাপ নাতো…এসিডিটি?” “না না ঠিক আছি…বসতো…ছুটির দিনে রান্না করে এতো সময় নষ্ট কর যে কেন?”
সুমনের শরীরটা আজ মনে হয় আসলেই ভালো নেই; বের হতে চাইলো না। দুশ্চিন্তায় রুপা একাই তাড়াহুড়ো করে গ্রোসারী শপিং সারলো। বাসায় ফিরে আনাজপাতি তুলতে গিয়ে হঠাৎই রান্নাঘরে কাউন্টারের ওপরে গোলাপ ফুলের উঁকি। একটাই গোলাপ কলি; রক্তের মতো তাজা লাল; পাপড়ি গুলো এখনো পরষ্পরের খুব অন্তরঙ্গ। শ্যামলা কান্ড জলের স্পর্শ পেলে এই পাপড়িরা ডানা মেলবে; ঘনিষ্ঠতা আড়মোড়া ভেঙ্গে সুবাস ছড়াবে। সাথে শঙ্খশাদা কার্ড। হাতের ব্যাগগুলো নামিয়ে রুপা কার্ড খুললো।
“শোন আমার রুপা নামের সোনার মেয়ে!!
অনেকদিন বিদেশে একা একা থেকেছি। যখনি মন খারাপ হতো খেলে ভালো লাগতো। সেই থেকে খাবারের প্রতি ঠিক ভালোবাসা নয়, আসক্তি।
তবে ভেবে দেখলাম এখনতো আর আমি একা নই। খাবারের কাছে মন ভালো করার জন্য আশ্রয় নিতে হবে কেন? তুমি আছো না আমার রহস্যময় জলখাবার!!
রহস্যময় জলখাবার, তোমাকে আমি খেতেই পারছি না।
তোমাকে আমি...তোমাকে আমি, আচ্ছা করে সাপটে নিয়ে তুলে ঠোঁটের কাছে রাখতে চাই,
জলখাবার, জলখাবার ভুলে
বিষম খেয়ে মরেছি আমি সেই দিনই তো, যখন তোমার হলাম।
রহস্যময় জলখাবার, তোমার দিকে যখনই মন দিলাম
তুমি দিয়েছ স্বপ্ন, যাদু, তুমি দিয়েছ বানানো সব গল্প...”
লেপটে যাচ্ছে ক্ষুদে ক্ষুদে লাল অক্ষরে বন্দী ভালোবাসা। বড় বড় ফোঁটায় চোখের নোনা জল রক্তিম ভালোবাসা ছড়াচ্ছে শাদা কাগজে।
শিখা (১৮ই মার্চ, ২০১৬)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১৮ ভোর ৫:৫০