১৮৫৩ সালের অক্টোবর মাসে তুরস্কের নিয়ন্ত্রিত দারদানেলিস প্রণালী দিয়ে যুদ্ধ জাহাজ চলাচলের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং তুরস্কের খ্রিষ্টানদের রক্ষার অজুহাতে অটোমান সাম্রাজ্যের তুর্কি এলাকায় রাশিয়া আক্রমণ চালালে ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সূচনা হয়। রাশিয়ার সঙ্গে এই যুদ্ধ চলে তুরস্ক তথা উসমানিয় বা অটোমান সাম্রাজ্যের মিত্রশক্তি ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং সারডিনিয়ার। ১৮৫৬ সাল পর্যন্ত এই ক্রিমিয়ার যুদ্ধ চলে।
রাশিয়া তুরস্কে আক্রমণ চালালে ব্রিটেন এবং ফ্রান্স তুরস্কের সাহায্যে এগিয়ে আসে। ১৮৫৪ সালের সেপ্টেম্বরে মিত্রশক্তি ক্রিমিয়ায় অবস্থিত রাশিয়ার সেভাস্তোপোল নৌ ঘাঁটিতে আক্রমণ চালায়। উদ্দেশ্য ছিল রাশিয়ার নৌ শক্তিকে অচল করে দেয়া। দুই মাসের মধ্যে তারা আলমা নদী, বালাকলাভা এবং ইনকারমান এই তিনটি যুদ্ধে জয় লাভ করে। বালাকলাভার যুদ্ধ খুবই সাহসী লড়াই বলে চিহ্নিত, কিন্তু লাইট ব্রিগেডের ৬৭০ জন অশ্বারোহী সৈনিক বিভ্রান্তিকর আদেশের কারণে ভুল করে সরাসরি রাশিয়ার গোলন্দাজ বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। সারডিনিয়া মিত্রজোটে যোগ না দেয়া পর্যন্ত এই যুদ্ধ ১৮৫৫ সালের বসন্তকাল অবধি বন্ধ থাকে। এরপর মিত্রবাহিনী সেভাস্তোপোল দখল করে নেয়।
বর্তমান ক্রিমিয়ার ম্যাপ
যুদ্ধের চেয়ে রোগে ভুগেই এ যুদ্ধে বেশি সৈন্যের ক্ষতি হয়। ক্রিমিয়ার যুদ্ধে নার্সিং ইতিহাসে বৈপ্লবিক উন্নয়ন ও পরিবর্তন ঘটেছিল। অপ্রতুল চিকিৎসা সেবা ও সৈন্যদের দুরাবস্থার মধ্যে ৩৮ জন সেবিকাসহ সেবার আলো হাতে নিয়ে পাশে এসে দাড়ান আধুনিক নার্সিং’এর অগ্রদূত ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। তিনি তাদের জন্য যথাযথ হাসপাতাল গড়ে তোলেন। ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল দিনের বেলা কাজ করে রাতে মোমবাতি হাতে আহতদের খোঁজ খবর নিতেন।
ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল
অস্ট্রিয়া আক্রমণ করতে পারে এই ভয়ে রাশিয়া সন্ধি প্রস্তাবে সম্মতি প্রদান করে। প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার পর ১৮৫৬ সালে এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। চুক্তির শর্ত অনুসারে রাশিয়াকে কিছু এলাকা তুরস্কের হাতে ছেড়ে দিতে হয়। অন্যান্য দেশের যুদ্ধ জাহাজের মতো রাশিয়ার যুদ্ধ জাহাজের ওপরও কৃষ্ণ সাগরে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তুরস্কের খ্রিষ্টানদের জানমালের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করে মৈত্রী জোটের দেশগুলো।
ক্রিমিয়ার যুদ্ধকে বলা হয় প্রথম যুদ্ধ যার সংবাদ সে সময়ে প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ছিল এবং সে যুদ্ধে ছবি তোলা হয়েছিল। ক্রিমিয়া এখন ইউক্রেনের অংশ আর সারডিনিয়া পরবর্তীতে ইটালির অংশ হয়ে যায়।
♦ ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সময় ফটোগ্রাফার Roger Fenton কর্তৃক তোলা কয়েকটি ছবিঃ
যুদ্ধের একটি ক্যাম্প
যুদ্ধের আরেকটি ক্যাম্প
যুদ্ধে ব্যবহৃত কয়েকটি জাহাজ কোসাক সাগরের (বালাকলাভায়) তীরে নোঙ্গর অবস্থায়
অটোমান/তুর্কি কমান্ডার ইসমাইল পাশা (বসা অবস্থায়)
একটা আক্রমণ সফলভাবে সম্পন্ন করার পর কাউন্সিল বৈঠকে [ডান থেকে] লর্ড র্যাগলেন (ব্রিটিশ বাহিনী), ওমর পাশা (অটোমান বাহিনী) এবং মারেকাল পেলিসিয়ার (ফরাসি বাহিনী)
ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সমতল'এ এক কপি
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১২ রাত ১১:২৯