somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কটকার খাল (ভৌতিক গল্প)

২৯ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রহমত মিয়া অনেক দিন হলো মাছ ধরে নদীতে খালে-বিলে।মাছ যারা ধরে তাদের সবার-ই কোন না কোন ভৌতিক ঘটনা আছে।রহমত মিয়ারও আছে কিন্তু এগুলো শুধু অন্যের কাছে বলার জন্য গল্প।

রহমত মিয়া জীবনে কোনদিন ভয় পায় নাই এবং পাওয়ার সম্ভাবনাও কম।

এইতো সেবার হিন্দুপাড়ার শ্বশানের পাশের নদীতে মাছ ধরতে যেয়ে লক্ষিন্দর এতবার ডাকার পরও তার দিকে ফিরে না তাকিয়ে দিব্যি মাছ ধরে বাড়ি ফিরেছে।লক্ষিন্দর রহমত মিয়ার বন্ধুলোক ছিলো যাকে গত বছর ঐ শ্বশানে পোড়ানো হয়েছিলো।।

এমন ছিটেফোটা অনেক ঘটনাই রহমত মিয়ার জীবনে ঘটেছে,কিন্তু কোনদিন ভয় তো দূরে থাক তার বুক কাপেনি পর্যন্ত।
কটকার খালের কথা অনেক শুনেছে রহমত মিয়া,সেখানে নাকি বড় বড় মাছ পাওয়া যায়।তবে দিনের বেলার চেয়ে নাকি রাতে গেলে নিরিবিলি পরিবেশে ভালো মাছ পাওয়া যায়।কিন্তু ওই খালের বেশ দূর্নামও আছে।আজ পর্যন্ত নাকি ঐ খালে কেউ রাতে মাঝ ধরতে যেয়ে ফিরে আসেনি।।

কিন্তু রহমত মিয়ার এতে কিছুই যায় আসে না,এসব তার কাছে শুধুই গল্প।।তবুও তার বউ যখন শুনলো রহমত মিয়া ঐ খালে মাছ ধরতে যাবে বলে ঠিক করেছে সে বাধ সাধলো।তাকে যখন কিছুতেই বোঝাতে পারলো না রহমত মিয়া তখন সে বলল ঠিক আছে আমি সাথে কাউকে নিয়ে যাবো,একা যাবো না।
কিন্তু এই তল্লাটে এমন কেউ যে নাই কটকার খালে তার সাথে যাওয়ার মত,তা রহমত মিয়া একটু পরেই টের পেলো।যাকেই বলে সে-ই দৌড়ে পালায়।জিদ চেপে যায় রহমত মিয়ার।সিদ্ধান্ত নেয় সে একাই যাবে আজ রাতে।।
বউকে কিছু না জানিয়ে জাল আর বইঠা নিয়ে রাত আনুমানিক ১০ টার দিকে বের হয় ঘর থেকে সে।ততক্ষণে সারা গ্রাম ঘুমে বিভোর।চারিদিকে কি নিদারুণ নিস্তব্ধতা।তার মাঝে একা একা রহমত মিয়া হেটে চলে নদীর দিকে।একটুও বুক কাপে না তার।।
নদীর পাড়ে পৌছে নিঃশব্দে নৌকায় উঠে বইঠা বাওয়া শুরু করে সে।গন্তব্য কটকার খাল।।।।
সামনে দিয়ে কিছুক্ষণ বেয়ে যাওয়ার পর নদী ডানে ও বামে দুদিকে বাক নিয়েছে।বামে গেলে কটকার খাল আর ডানে বউবাজার।বামে এক কটকার খাল ছাড়া আর কিছু না থাকায় ঐদিকে লোকজনের যাতায়াত কম।।
বাকেঁর প্রায় কাছে চলে এসেছে রহমত মিয়া,এমন সময় দেখল হঠাৎ আতশবাজির মত বউবাজার থেকে একটা নৌকা সোজা কটকার খালের দিকে যাচ্ছে।সে একটু অবাক হলো এতরাতে আবার কে নৌকায় করে কোথায় যায়।জোরে হাক ছাড়ে রহমত মিয়া "ঐ মাঝি কই যাও??"
অপাশ থেকে ভাঙ্গা গলায় মাঝির নির্লিপ্ত উত্তর কানে যায় রহমত মিয়ার "মাছ ধরইতে কটকার খালে"।
উত্তর শুনে মনে মনে খুশি হয় রহমত মিয়া,যাক একজন সঙ্গী তবু পাওয়া গেলো।আবারো হাক ছাড়ে রহমত মিয়া "চল এক লগে যাই"।কিন্তু রহমত মিয়ার ডাকে থামে না মাঝি,নিঃশব্দে বইঠা বেয়ে যায়।বোকা রহমত মিয়া একবারও ভাবে না,পানির শব্দ ছাড়া নিঃশব্দে বইঠা বাওয়া কি সম্ভব।।।।।
বাক ঘুরে কটকার খালে পৌছায় রহমত মিয়া।অন্ধকারে মাঝির নৌকা খুজতেই চোখে পড়ে নৌকা।মাঝির দিকে তাকতে দেখতে পায় শুধু সাদা চাদর,যা দিয়ে এই গরমের মধ্যেও কেন মাঝি মাথা জড়ায় রেখেছে বোধগম হয় না রহমত মিয়ার।
আর কোন কথা না বলে জাল বের করে খালের মধ্যে ফেলে সে।খালের নিস্তব্ধতার মাঝে শুধু রহমত মিয়ার জাল টানার শব্দ শোনা যায়,ওদিকে মাঝি যে ঠায় বসে আছে রহমত মিয়ার দিকে কটকট চোখে তাকিয়ে তা খেয়াল করে না রহমত মিয়া।।
২বার জাল উঠানোর পরের বার জালে জোরে টান অনুভব করে রহমত মিয়া।কোন বড় মাছ ধরা পড়ল ভেবে ব্যস্ত হয়ে পড়ে রহমত মিয়া।কিন্তু এমন কি বড় মাছ যে টেনে যেন উঠাতেই পারছে না সে।মাঝি কে ডাকার জন্য পিছনে তাকাতে গিয়ে দেখে মাঝি ঠিক তার পিছনেই দাড়িয়ে আছে।
একটু খটকা লাগে রহমত মিয়ার।সে তো মাঝি কে ডাকে নাই তাহলে মাঝি বুঝলো কিভাবে যে রহমত মিয়া তাকে ডাকবে এখনি???

অনেক প্রশ্ন মাথায় ঘুরলেও রহমত মিয়া মাঝি কে কিছুই জিগেস করে না,শুধু তাকিয়ে ভালোভাবে দেখার চেষ্টা করে।লোকটা পাগল নাকি;মাথাও চাদরে ঢেকে রেখেছে কেন???ব্যাপারটা অস্বাভাবিক মনে হয় না রহমত মিয়ার কাছে।
মাঝিকে বলে "হাত লাগাও মাঝি মনে হয় বড় মাছ"।মাঝি রহমত মিয়ার দিকে না তাকিয়েই একটানে জাল উঠায় নৌকায়।রহমত মিয়ার চোখ বড় বড় হয়ে যায়,সে পারল না আর এত ভারি জিনিস মাঝি একা কিভাবে তুলল??
জাল তুলে দিয়ে মাঝি চুপচাপ বসে পড়ে পাটাতনের উপর।রহমত মিয়া এতক্ষণ মাঝির দিকে তাকিয়ে ছিলো,এবার জালের দিকে তাকিয়ে আরেক দফা তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে জালে মাছের বদলে সাদা কাপড়ে আগা গোড়া মোড়া লাশের মত একটা বস্তু।

এ কি ঝামেলা।রহমত মিয়া ভাবতে থাকে কেন কেউ আসে না এখানে।লাশটা খুলে দেখার ইচ্ছা হয় তার।আর কিছু না ভেবেই লাশের মাথা আন্দাজ করে কাপড় খোলা শুরু করে রহমত মিয়া।খুলেই আবছা আলোয় একটা মুখ দেখতে পায় সে।পাশে কেউ এসে দাড়িয়েছে বুঝে সেদিকে তাকায় রহমত মিয়া।।
মাঝিকে দেখতে পায়।মুখ থেকে চাদর সরিয়ে ফেলেছে মাঝি।।রহমত মিয়ার দিকে তাকিয়ে হাসছে মাঝি।ভারি রাগ হয় রহমত মিয়ার।মাঝির দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে লাশের দিকে তাকায় সে।
কিন্তু একি!!!লাশ চোখ মেললো কিভাবে??
দুইটা হলুদ চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছে রহমত মিয়ার দিকে লাশটা।ভারি রাগ হয় রহমত মিয়ার,সেই সাথে বুকটাও একটু জানি কেপে উঠে।দুইটা হলুদ চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে থাকা লাশটার চেহারা হুবহু মাঝির মত।।জোরে শব্দ করে হাসতে থাকা দুইজন একই চেহারার মানুষের কাছ থেকে পালায় যেতে চায় সে।কিন্তু কোন এক অদৃশ্য শক্তি তার শরীর বেধে রেখেছে যেন।
জ্ঞান হারায় রহমত মিয়া।গ্রামে তার আর ফেরা হয় না।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:০৩
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×