
ঘটনা -১
ছেলেটির নাম নাবিল ( ছদ্মনাম ) আমাদের এলাকায় থাকে । এইবার নবম শ্রেণীতে উঠেছে এবং বেশ ভাল একটা স্কুলে পড়ে । কিছুদিন আগেও বেশ ভালভাবে চলাফেরা করত , পড়াশোনায় মন ছিল । কিন্তু হঠাৎ করেই কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যায় । অল্পতেই রেগে উঠে । সবসময় খিটখিটে মেজাজে থাকে । দিনের অনেকটা সময় বাইরে বাইরে থাকে ।পড়ালেখায় আস্তে আস্তে পুরোপুরি অমনোযোগী হয়ে যায় । মা-বাবা কিছু বললে উল্টো জিনিসপত্র ভাঙ্গাচোরা করে । ঘরে যতক্ষন থাকে কম্পিউটারের সামনে ফেসবুক নিয়ে বসে থাকে । হঠাৎ করেই তার হাতখরচ প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যায় । প্রত্যেকদিন টাকার জন্যে মা-বাবাকে চাপ দিতে থাকে । টাকা না পেলে জিনিসপত্র ভাঙ্গচুর সহ বেপরোয়া হয়ে উঠে সে । মা-বাবা কিছুতেই কিছু করতে পারেন না , কারন এতদিন অতিরিক্ত আদর দিয়ে বড় করেছেন । একপর্যায়ে সে চাহিদামতো টাকা না পেয়ে ঘরের বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা সরাতে থাকে । এমন কি একদিন আলমারির চাবী ভেঙ্গে ১০,০০০ টাকার মত নিয়ে যায় । চোখের সামনে ছেলেকে এইরকম বদলে যেতে দেখে তার মা-বাবা রীতিমতো আতংকিত হয়ে পড়েন । অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে এমনকি কঠোর শাস্তি দিয়েও কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না ।এমনকি সে এতদিনে ঘরের পাশাপাশি সুযোগ পেলে বাইরে থেকেও টাকা/জিনিসপত্র সরাতে থাকল । এর মধ্যে একদিন তাদের কাছে মাথায় বাজ পড়ার মত খবর এল । এক দোকান থেকে তার বাবার কাছে খবর এল সে নাকি একটা কাপড়ের দোকান থেকে একটা শার্ট লুকিয়ে সরাতে গিয়ে ধরা খেয়েছে । এলাকায় তার বাবার অনেক সম্মান ছিল । ছেলের এরকম ঘটনায় তিনি কেঁদে ফেললেন । একমাত্র ছেলে হওয়ায় ছোটবেলা থেকে অতিরিক্ত আদর দেওয়ার এবং ছেলেকে ভালভাবে গাইড না দেয়ার কুফল তিনি তখন আস্তে আস্তে বুঝতে পারছেন । দোকানে গিয়ে টাকা দিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে আনলেন । এই ঘটনার পর সে বেশ কিছুদিন ভাল হয়ে । তারপর যেই লাউ সেই কদু ।
ছেলের এইরকম বদলে যাওয়ার পেছনের রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে তার মা-বাবা একসময় জানতে পারেন সে একই এলাকার সপ্তম শ্রেণীতে পড়া একটা মেয়ের সাথে প্রেম করে , এবং ঐ মেয়েকে দামী মোবাইল কিনে দেয়া সহ ঐ মেয়ের পেছনে অনেক টাকা খরচ করে । সবকিছু জেনে তারা তো রীতিমতো স্তব্ধ হয়ে যান । ঘটনা পুরোপুরি জানাজানি হয়ে যাওয়ার পরে ছেলে তো আর কাউকে পরোয়া করে না । সে মেয়েকে বিয়ে করতে চায় বলে বাসার সবাইকে , নাহলে পালিয়ে যাবে বলে হুমকি দেয় । এতটুকুন ছেলের মুখে এই বয়সেই বিয়ে করার কথা শুনে সবাই তো থ হয়ে যায় । এরপর এ নিয়ে নানারকম গন্ডগোল - ক্যাচালের পর মেয়েটা একদিন এক কান্ড করে বসে ! তাদের ২ তলা থেকে এক লাফ দিয়ে নিজের ঠ্যাং নিজেই ভেঙ্গে ফেলে ।

আচ্ছা নাবিল আপাতত থাকুক নাবিলের মত চলুন এখন অন্য আরেকটি ঘটনা থেকে ঘুরে আসা যাক ।
ঘটনা-২
মেয়েটির নাম ইমি( ছদ্মনাম )। ক্লাশ এইটে উঠেছে এবার । সদা হাস্যোজ্জল , ছটফটে , দুরন্ত , প্রাণোচ্ছল মেয়েটাকে হঠাৎ করে কেমন যেন মনমরা , বিষন্ন , চিন্তিত একট মেয়েতে রূপান্তরিত হয়ে যেতে দেখেন তার মা-বাবা । সারাদিন কম্পিউটারের সামনে ফেসবুক নিয়ে বসে থাকে । আর কিছুক্ষন পরপর মোবাইলে আলাপ । প্রথম দিকে তেমন গুরুত্ব না দিলেও আস্তে আস্তে চিন্তিত হয়ে পড়েন ইমির মা-বাবা । ঐ দিকে ফেসবুকে থেকে দশম শ্রেণীতে পড়া একটা ছেলের সাথে বেশ খাতির হয় ইমির । সেই খাতির থেকে প্রথমে বন্ধুত্ব এবং এরপর ধীরে ধীরে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে তারা । তাদের কারও পরিবারের মা-বাবা বা অন্য কেউ বুঝার আগেই হঠাৎ একদিন ধুম করে পালিয়ে যায় ইমি ঐ ছেলেটার সাথে । মাথায় যেন বজ্রপাত পড়ে ইমির মা-বাবার । পাগলের মত দিশেহারা হয়ে যান তারা । ভেবে পান না কি করবেন ।মান-সম্মানের ভয়ে বলতেও পারেন না কাউকে কিছু । তারপর অনেক খুঁজাখুঁজি, চেষ্টা করে একসময় ইমিকে জোড় করে নিয়ে আসেন তার মা -বাবা । ঐ দিকে প্রেমিকা হারানোর বেদনায় পরদিন হারপিক খেয়ে ফেলে ঐ ছেলেটা । ( ছিহ : খাবি তো খা , হারপিক কেন অন্যকিছু খেতে পারল না



ঘটনা-৩
এই ঘটনাটা একটু বেশি করুণ । ছেলেটি নবম শ্রেণীতে পড়ত । নাম তারেক ( ছদ্মনাম ) । সে যে ব্যাচে প্রাইভেট পড়ত ঐ ব্যাচের একটি মেয়েকে সে ভালবাসত । তো ঐ মেয়েটিকে অন্য আরেকটি ছেলে ভালবাসত । এ নিয়ে তারেক এবং ঐ ছেলেটার মধ্যে একদিন প্রচন্ডরকম বাগবতিন্ডা ও ঝগড়া হয় । এর সূত্র ধরে তারেক তার বন্ধুদের নিয়ে ঐ ছেলেটিকে পরের দিন রাস্তায় পেয়ে মারধর করে । এর কিছুদিন পরের ঘটনা । ঈদের কিছুদিন আগে মার্কেট করার জন্যে তারেক একা একা গিয়েছিল । সে সময় ঐ ছেলেটি তার বন্ধুবান্ধব সহ ঘুরছিল । তারা তারেক কে একা পেয়ে একটি গলির ভেতর টেনে নিয়ে তাকে মারতে থাকে । এর মধ্যে হঠাৎ ঐ ছেলেটি তারেকের পেটে ছুরি ঢুকিয়ে ফেলে । তারপর তারা পালিয়ে যায় । তারেকের চিৎকারে লোকজন এসে তারেক কে হাসপাতালে নিয়ে যায় , কিন্তু কিছুক্ষনের ভেতর ই সে মারা যায় । পরে ঐ ছেলেগুলোকেও পুলিশ গ্রেফতার করে ।
কিছু কথা -----------------------------------------
উপরের তিনটি ঘটনা গত কয়েক মাসে আমার জানা সত্যি ঘটনা । এরকম কত রকম ঘটনাই ঘটছে । কৈশোরের অতিরিক্ত আবেগ , প্রেম একটা কিশোর/কিশোরীর জীবনে কতটা বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিতে পারে এইগুলো তার কিছু উদাহরন । তাদের পরিবারকে ফেলে দিতে পারে অসহনীয় দুর্ভোগে । হিন্দী সিরিয়াল , সিনেমার আগ্রাসন এবং আরও নানা কারনে বর্তমানে কিশোর-কিশোরীদের কাছেও প্রেম একটি ফ্যাশনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে ।গার্লফ্রেন্ড /বয়ফ্রেন্ড না থাকলে যেন নিজেদের স্ট্যাটাস ই থাকে না । কিছুটা বুঝতে শিখলেই পোলাপাইন এখন জি এফ খুঁজে





কৈশোর বয়সটা অনেক আবেগের , তাই অভিভাবক দের উচিত তাদের সন্তান রা কি করছে তা সম্পর্কে ভালভাবে খোঁজখবর রাখা ।