When you take a tree that is rooted in the ground, and transfer it from one place to another, the tree will no longer bear fruit. And if it does, the fruit will not be as good as it was in its original place. This is a rule of nature. I think if I had left my country, I would be the same as the tree... Abbas Kiarostami.
দেশের প্রতি, নিজস্ব জাতির প্রতি এবং সত্ত্বার প্রতি মানুষটির টান ঠিক এমনই ছিল...হ্যাঁ বলছি সেই মানুষটির কথা যিনি চলচ্চিত্রকে কাব্যিকভাবে উপস্থাপন করেছেন। চলচ্চিত্র যার কাছে ছিল ঠিক গভির অনুভূতিসম্পন্ন জীবনবোধের কবিতা। ইরানিয়ান চলচ্চিত্রে এক কবিরই নামান্তর ছিলেন আব্বাস কিয়ারোস্তামি। অনেকে সিনেমা নির্মাণের কাজ করেন বিনোদনের অংশ হিসেবে কিন্তু নান্দনিক এই মানুষটির সিনেমা বানানোর উদ্দেশ্য ছিল একেবারে ভিন্নধর্মি। সিনেমা তার কাছে জীবনদর্শন তুলে ধরারই যেন একটা মাধ্যম ছিল। মহান এই ইরানিয়ান পরিচালক ২২ জুন, ১৯৪০ সালে তেহরানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শিল্পী হিসেবে শৈশবে তার অভিষেক হয়েছিল পেইন্টিং দিয়ে এবং ১৮ বছর বয়সে তিনি একটি পেইন্টিং কম্পিটিশনে জিতে গিয়েছিলেন। ইউনিভার্সিটি অফ তেহরান স্কুল অফ ফাইন আর্টসে পড়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। পেইন্টিং এবং গ্রাফিক ডিজাইনে পড়াশোনা করেছিলেন এবং শিক্ষা জীবনে আর্থিক সহায়তার জন্য ট্রাফিক পুলিশের কাজও করেছিলেন বেশ কিছুদিন। শিক্ষাজীবন শেষ করার পরে, ডিজাইনার এবং ইলাস্ট্রেটর হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন তিনি। ১৯৬০ সাল পর্যন্ত কিয়ারোস্তামি অ্যাডভার্টাইজিং, কমার্শিয়াল তৈরি, পোস্টার ডিজাইন, ফিল্মের জন্য ক্রেডিট লাইন তৈরি এবং বাচ্চাদের বইয়ে ছবি আঁকার কাজ করেছিলেন। ১৯৬৯ সালে যখন ইরানিয়ান নিউ ওয়েভ শুরু হয়েছিল দারিউশ মেহেরজুইসের ফিল্ম ‘দ্য কাউ’ এর হাত ধরে, কিয়ারোস্তামি সেই সময়ে ইন্সটিটিউট ফর ইন্টেলেকচ্যুয়াল ডেভেলপমেন্ট অফ চিলড্রেন অ্যান্ড ইয়াং অ্যাডাল্ট’স এ ফিল্ম মেকিং ডিপার্টমেন্ট তৈরি করার কাজে সাহায্য করেন। এই ফিল্ম মেকিং ডিপার্টমেন্টের নাম ছিল কানুন। পরবর্তীতে এই কানুন থেকে অনেকগুলো উঁচু মাপের ইরানিয়ান সিনেমা বানানো হয়েছিল। প্রায় পাঁচ বছর পর্যন্ত আব্বাস ডিপার্টমেন্টটি চালান এবং বাচ্চাদের জন্য শিক্ষামূলক সিনেমা বানানোর এক পর্যায়ে একটি অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তাকে মূল ধারার সিনেমা জগতে পা ফেলতে সাহায্য করেছিল। কানুনের প্রথম প্রযোজনা এবং কিয়ারোস্তামির প্রথম ফিল্ম মাত্র ১২ মিনিটের শর্ট ফিল্ম ব্রেড অ্যান্ড অ্যালে (১৯৭০) ছিল । এটি মূলত একটি নিওরিয়ালিস্টিক শর্টফিল্ম ছিল। প্রথম ফিল্ম সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন: “ব্রেড অ্যান্ড অ্যালে আমার প্রথম অভিজ্ঞতা ছিল সিনেমার জগতে এবং আমার মতে এটা অনেকবেশি কঠিন ছিল। শুধুমাত্র সিনেমাটোগ্রাফার বাদে, আমাকে ভীষণ ছোট একটি বাচ্চা, একটি কুকুর এবং অপেশাদার কিছু মানুষ নিয়ে কাজ করতে হয়েছিল। যদিও সিনেমাটোগ্রাফারটি প্রায় সবসময় অভিযোগ করে যেত। তবে যাই হোক না কেন, সিনেমাটোগ্রাফারের চিন্তা একদিক দিয়ে ঠিকই ছিল কারণ আমি চিরাচরিত ফিল্মমেকিং এর পন্থাগুলো অবলম্বন করেছিলাম না যেগুলোতে সে অভ্যস্ত ছিল।”
১৯৭০ সালের পর থেকে কিয়ারোস্তামি নিজস্ব আলাদা ধাঁচে ফিল্ম মেকিং এর কাজ শুরু করেছিলেন। এরপরে ১৯৭২ সালে তিনি ব্রেকটাইম তৈরি করেন। ১৯৭৩ সালে দ্য এক্সপেরিয়েন্স এবং ১৯৭৪ সালে দ্য ট্রাভেলার তৈরি করেন তিনি। ১৯৭৫ সালে কিয়ারোস্তামি দুটো শর্টফিল্ম পরিচালনার কাজ করেন সো অ্যাম আই এবং টু সল্যুশনস ফর ওয়ান প্রবলেম। ১৯৭৬ সালের প্রথম দিকে তিনি কালারস নামের একটি ফিল্ম তৈরি করেন এবং এরপর পরই এ ওয়েডিং স্যুট। কিয়ারোস্তামির প্রথম ফিচার ফিল্ম ছিল রিপোর্ট(১৯৭৭) যার পরিব্যাপ্তি ছিল ১১২ মিনিট। যদিও কিয়ারোস্তামি তার জীবনে অনেক সিনেমা তৈরি করেছিলেন, কিন্তু একটা সময়ের ব্যবধানের পরই বিশ্ব চলচিত্র অঙ্গনে মানুষ তাকে চিনতে শুরু করেছিল। ব্রেড অ্যান্ড অ্যালে বানানোর পর একে একে ২০ টা ফিল্ম তৈরি করেন তিনি, যার সবগুলোই ভিন্ন ভিন্ন ঘরানার ছিল, কোনটা ফিকশন ছিল তো কোনটা শিক্ষামূলক, ডকুমেন্টারি এবং টেলিভিশনে দেয়ার উদ্দেশ্যে বানানো ফিল্ম। ১৯৯০ সালের আগ পর্যন্ত তার সিনেমাগুলোকে কখনো ইরানের বাইরে প্রদর্শন করানো হয়নি। ১৯৯০ সালে অ্যান্ড লাইফ গো’জ অন (১৯৯২) এবং থ্রু দ্য অলিভ ট্রিজ (১৯৯৪) নিউইয়র্ক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখানোর মধ্যে দিয়েই তার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পদচারণা শুরু হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই পৃথিবীব্যাপি খ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি এবং ১৯৯৭ সালে আরও বেশি সাফল্য অর্জন করেছিলেন যখন তার ফিল্ম টেস্ট অফ চেরি কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের সর্বোচ্চ পুরষ্কার পা’ম ডি ওর জিতে নিয়েছিল। তিনিই প্রথম কোন ইরানিয়ান পরিচালক ছিলেন যাকে এতো বড় সম্মাননা দেয়া হয়েছিল।
শুধুমাত্র সমালোচকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না, কিয়ারোস্তামি তার সমসাময়িক সময়ের অনেক গুণী ব্যাক্তিদের কাছ থেকেও যথেষ্ট শ্রদ্ধা এবং প্রশংসা লাভ করেছিলেন। আকিরা কুরোসাওয়া একবার এক জায়গায় বলেছিলেন, “আমি বিশ্বাস করি ইরানিয়ান ফিল্মমেকার আব্বাস কিয়ারোস্তামির প্রত্যেকটা কাজই অনন্যসাধারণ। শুধুমাত্র কয়েকটি শব্দে আমার অনুভূতিগুলো ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। আমি আপনাকে অনুরোধ করবো তার ফিল্মগুলো দেখতে; এবং আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন কী বলতে চেয়েছিলাম আমি (এএফআই ২০০১)।” বিখ্যাত এই ইরানিয়ান চলচ্চিত্রকার পরিচিত ছিলেন বিশেষ কিছু থিম এবং সিনেমাটিক টেকনিক ব্যবহার করার কারণে যেগুলো তার কাজের বিশেষত্ব ছিল। বাচ্চাদেরকে মূল চরিত্র হিসেবে গ্রহণ এবং গ্রাম্য এলাকাকে গল্পের মূল পটভূমি হিসেবে তৈরির মধ্যে দিয়ে নিজেকে আর সবার থেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করেছিলেন তিনি। নিজের কাজকে ডকুমেন্টারির মধ্যে দিয়ে আরও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করতে ভালবাসতেন তিনি এবং কখনো কখনো সমকালীন ইরানিয়ান কবিতাকে সংলাপ, মুভির শিরোনাম এবং নিজের চলচ্চিত্রের অন্যতম উপাদান হিসেবেও ব্যবহার করতেন। যদিও আব্বাস কিয়ারোস্তামিকে সত্যজিত রায়, ভিট্টোরিও ডি সিকা, এরিক রোহমার এবং জ্যাকস টাটিদের সাথে তুলনা করা হত, তারপরেও তার ফিল্মে আলাদা ধরনের এক স্টাইল দেখা যায় যা তার নিজস্ব আবিষ্কার ছিল, যাকে কিয়ারোস্তামিয়ান স্টাইল বলা হয়। ব্রেড অ্যান্ড অ্যালের শুটিং এর সময় কিয়ারোস্তামির সাথে তার অভিজ্ঞ সিনেমাটোগ্রাফারের এই বিষয় নিয়ে ঝামেলা বাঁধে যে কীভাবে ছোট্ট ছেলেটিকে এবং আক্রমণাত্মক কুকুরটিকে চিত্রায়িত করা হবে। সিনেমাটিতে ছেলেটির বাড়ির পথে আসার আলাদা আলাদা শট নিতে চেয়েছিল সিনেমাটোগ্রাফার এবং বাড়িতে ঢোকার সময়ে তার হাতকে ক্লোজ আপ করতে চেয়েছিল এবং এরপরেই কুকুরটির শট ধারণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু কিয়ারোস্তামি মনে করেছিল যদি এই তিনটি দৃশ্য একই সাথে ধারণ করা যায় তাহলে সেটা আরও অসামান্য পর্যায়ে যাবে। অবশেষে ঐ একটা শট নিতে তিনি চল্লিশ দিনের মতো সময় লাগিয়েছিলেন। পরবর্তীতে এই ব্যাপারে কিয়ারোস্তামি বলেছিলেন যে সিনটি ভেঙ্গে ভেঙ্গে ধারণা করা হলে ছন্দপতন হবার সম্ভাবনা রয়েছে এবং ফিল্মের গঠন এর ফলে বিগড়ে যাবে। এই কারণে তিনি সেই সিনটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ সিন হিসেবেই দেখতে চেয়েছিলেন। অন্যান্য পরিচালকদের মতো পরিচালনার ক্ষেত্রে মারামারির আতিশয্য বা লার্জ স্কেল প্রোডাকশনে তাড়া করে নিয়ে বেড়ানোর জটিল সিন পরিহার করেছিলেন তিনি। তার বদলে তিনি স্বতন্ত্র ধারাতে সিনেমাগুলোকে তৈরি করেছেন। সিনেমার ব্যাপারে তার সিনেমাটোগ্রাফারের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন: “চিরাচরিত যে পন্থায় সে ফিল্ম তৈরিতে অভ্যস্ত আমি সেই প্রচলিত ধারা কখনই মানতে চাইনি।” আব্বাস কিয়ারোস্তামি নিজস্ব স্টাইলে বদ্ধপরিকর হয়ে সর্বপ্রথম কাজ শুরু করেছিলেন তার কোঁকার ট্রিলজিতে। তিনি সিনেমা তৈরি করার নতুন ধারাকে নিজের মধ্যে ধারণ করে পরিচালনার বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে এগিয়েছিলেন।
টেন নামের সিনেমাতে কিয়ারোস্তামি নিজে উপস্থিত না থেকে চলন্ত এক গাড়ির সাহায্যে পুরোটা শুট করেছিলেন। তিনি অভিনেতাদের বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ঠিক কী করতে হবে এবং একটি ক্যামেরাকে ড্যাশবোর্ডে রেখে পুরো তেহরান জুড়ে ঘুরিয়ে সেই ফিল্মের শুটিং এর কাজ করেছিলেন। কিয়ারোস্তামির সৃষ্টি ফিল্মের এক অন্য সংজ্ঞা দিয়েছিল। জামশেদ আক্রামির মতো ফিল্ম প্রফেসরের মতে, সমকালীন অন্যান্য ফিল্মমেকারদের থেকে একেবারে ভিন্নপথে গিয়ে কিয়ারোস্তামি তার দর্শকদের সিনেমাতে যোগসূত্র বাড়িয়ে ফিল্মকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে সিনেমার দৈর্ঘ্যকে কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি, আক্রামির মতে যা শৈল্পিক অভিব্যাক্তির আরও বিশুদ্ধ ধরন ছিল। কিয়ারোস্তামির সিনেমাতে সেলফ রেফারেন্সিং একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। স্টিফেন ব্র্যান্সফর্ডের মতে কিয়ারোস্তামির সিনেমাতে অন্য পরিচালকদের রেফারেন্স পাওয়া যায় না বরং তারই কাজের অসংখ্য রেফারেন্স থাকে। ব্র্যান্সফর্ড বিশ্বাস করতেন, তার ফিল্মগুলো চলতি দ্বন্ধের উপরে নির্মাণ করতেন তিনি, তার যে কোন ছবিতে এরকম বিষয়ই উপস্থাপন করতেন এবং আংশিকভাবে প্রত্যেক সিনেমাতেই তার পূর্ববর্তী কোন সিনেমার ছোঁয়া রাখতেন। কিয়ারোস্তামি তার সিনেমাগুলোর সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছিলেন: “একজন শিল্পী কোন জিনিসকে ডিজাইন এবং তৈরি করার কাজটি করে থাকে নিজস্ব চিন্তাচেতনাকে উপস্থাপনের একটা বিশেষ অংশ হিসেবে অথবা নিজের অনুভূতি কিংবা ধারণা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে। বিশিষ্ট ফার্সি কবি রুমি এবং হাফেজ তাদের কাজগুলোকে এমনভাবে তৈরি করে গিয়েছিলেন যে এত বছর পরেও স্থান, কাল এবং অবস্থা নির্বিশেষে তারা এত সতেজ এবং অর্থবহ হয়ে রয়েছে।” কিয়ারোস্তামি এমন এক যুগের সিনেমা তৈরির কারিগর ছিলেন যখন “ইরানিয়ান নিউ ওয়েভের” সূচনা হয়েছিল। ইরানিয়ান সিনেমার এই মুভমেন্টের শুরু হয়েছিল ৬০ এর দশকে। ১৯৬৪ সালে হাজির দারিওশের দ্বিতীয় সিনেমা সার্পেন্ট’স স্কিনের মাধ্যমে এই মুভমেন্টের শুরু হয়েছিল যা ডি এইচ লরেন্সের লেডি চ্যাটার্লি’স লাভার অবলম্বনে তৈরি হয়েছিল। ইরানিয়ান এই নিউ ওয়েভ মুভমেন্টের দুইটি ধাপ ছিল, ফার্স্ট ওয়েভ এবং সেকেন্ড ওয়েভ। ইরানিয়ান নিউ ওয়েভের ফার্স্ট ওয়েভ প্রচলিত সিনেমার জগতকে পাল্টিয়েছিল মূলত ইরানিদের সমাজের বিভিন্ন অবস্থাকে উপস্থাপনের মধ্যে দিয়ে। এই মুভমেন্টের সাথে সম্পর্কিত প্রথম সিনেমা হচ্ছে দারিউশ মেহেরজুইয়ের দ্য কাউ। নাসের তাকভাইয়ের পিস ইন দ্য প্রেসেন্স অফ আদারস এবং সোহরাব শহিদ সালেসের এ সিম্পল ইভেন্ট এবং স্টিল লাইফ এই মুভমেন্টের অংশ হিসেবেই তৈরি হয়েছিল। ইরানিয়ান এই নিউ ওয়েভের অগ্রপথিক ছিলেন হাজির দারিউশ, দারিউশ মেহেরজুই, মাশুদ কিমিয়ায়, নাসের তাকভি, ইব্রাহিম গোলেস্তান, সোহরাব শহিদ সালেস, বাহরাম বেইজেই এবং পারভেজ কিমিয়াভি যারা নিজস্ব ধাঁচে রাজনৈতিক এবং দার্শনিক মতাদর্শের আলোকে কাব্যিক ভঙ্গিতে সিনেমা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এর পরবর্তীতে আরও কিছু সিনেমা তৈরি হয়েছিল যাদেরকে আলাদাভাবে ইরানিয়ান সেকেন্ড নিউ ওয়েভ বলা হয়ে থাকে। ইরানিয়ান নিউ ওয়েভের এই সিনেমাগুলোর সাথে ইতালিয়ান নিওরিয়্যালিজমের সাদৃশ্য ছিল অনেকখানি। ইসলামিক বিপ্লবের পরে জন্ম নেয়া এই সেকেন্ড ওয়েভের পরিচালকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আমির কাদেরি, আব্বাস কিয়ারোস্তামি, জাফর পানাহি, মাজিদ মাজিদি, মোহসেন মাখমালবাফ, সামিরা মাখমালবাফ, আসগার ফরহাদি এবং হোসেন সাহাবি। এই সময়ের পরে আব্বাসকে আর পেছনে ঘুরে তাকাতে হয়নি এবং তার অর্জনের মুকুটে ভিন্নধর্মি এক একটা সৃষ্টি নতুন পালক শুধু জুড়ে দিয়েই গেছে। আব্বাস কিয়ারোস্তামি তার জীবদ্দশাতে অনেক অনেক সিনেমা নির্মাণ করে গেছেন যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হচ্ছে রিপোর্ট, ফার্স্ট কেস, সেকেন্ড কেস, টুথএক, অর্ডার্লি ওর ডিসঅর্ডার্লি, কোরাস, হোয়ার ইজ দ্য ফ্রেন্ডস হোম, অ্যান্ড লাইফ গো’জ অন, থ্রো দ্য অলিভ ট্রিজ, টেস্ট অফ চেরি, হোমওয়ার্ক, ক্লোজ আপ, লাইফ অ্যান্ড নাথিং মোর, দ্য উইন্ড উইল ক্যারি আস, ফাইভ প্রভৃতি। গুণী এই পরিচালক তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করার পর গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে প্যারিসের একটি হাসপাতালে ৪ জুলাই, ২০১৬ তারিখে পরলোকগমন করেন। কিন্তু মৃত্যুর পরেও কিয়ারোস্তামি বেঁচে থাকবেন তার কাজের মধ্যে দিয়ে, তার সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে, সর্বোপরি তার সিনেমারুপ মানবতার মধ্যে দিয়ে ঠিক তাঁর বলা ঐ কথাটির মতোই, “A movie is about human beings, about humanity.”
**** এই লেখা সম্পূর্ণ রূপে আমার… পূর্বের কোন লেখার সাথে মিলে গেলে তা একান্তই co-incidence….no resemblance. আশা করি পোস্টটি ভালো লাগবে !!!!