“Fear of a name increases fear of the thing itself.”
ভয় বা Fear মানুষের এক সহজাত প্রবৃত্তি। মনস্তাত্ত্বিক ভাষাতে একে অনেক সময় বলা হয় Phobia…clinical psychology তে যা Anxiety Disorder নামেও পরিচিত। গ্রীক “Phobos” এর মানে Fear… যেখান থেকে আজকের Phobia র উৎপত্তি। কিছুতেই ভয় নেই এমন মানুষ হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না...। ভয় পেতে চাইলে ভয়ের কারণ থাকা লাগে না, সেটা প্রকৃতিগতভাবে somehow চলেই আসে। আজকে বিখ্যাত মানুষদের বিচিত্র ভয় বা Phobia নিয়ে কথা বলব....ঠিক বিখ্যাত মানুষদের সুপ্ত ব্যাধির পর্বগুলোর মত।বিখ্যাতদের কেউ ডিম দেখে ভয় পেত তো কেউ বিড়াল দেখে...আজকে এই ছোট্ট সিরিজের প্রথম পর্ব দিলাম..... তবে প্রথমেই সুকুমার রায়ের ‘ভয় পেয়ো না’ কবিতাটা শেয়ার না করে পারলাম না, এই পোস্টটা লিখতে গিয়ে মাথায় বারবার এই কবিতাটায় ঘুরপাক খাচ্ছিল---
“ ভয় পেয়ো না, ভয় পেয়ো না, তোমায় আমি মারব না—
সত্যি বলছি কুস্তি ক'রে তোমার সঙ্গে পারব না।
মনটা আমার বড্ড নরম, হাড়ে আমার রাগটি নেই,
তোমায় আমি চিবিয়ে খাব এমন আমার সাধ্যি নেই!
মাথায় আমার শিং দেখে ভাই ভয় পেয়েছ কতই না—
জানো না মোর মাথার ব্যারাম, কাউকে আমি গুঁতোই না?
এস এস গর্তে এস, বাস ক'রে যাও চারটি দিন,
আদর ক'রে শিকেয় তুলে রাখব তোমায় রাত্রিদিন।
হাতে আমার মুগুর আছে তাই কি হেথায় থাকবে না?
মুগুর আমার হাল্কা এমন মারলে তোমায় লাগবে না।
অভয় দিচ্ছি, শুনছ না যে? ধরব নাকি ঠ্যাং দুটা?
বসলে তোমার মুণ্ডু চেপে বুঝবে তখন কাণ্ডটা!
আমি আছি, গিন্নী আছেন, আছেন আমার নয় ছেলে—
সবাই মিলে কামড়ে দেব মিথ্যে অমন ভয়পেলে। ”
1. Keanu Reeves:
The Matrix, Speed খ্যাত এই অভিনেতা অনেক মারমুখী action সিনেমা এবং রোম্যান্টিক সিনেমার অন্যতম অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে দর্শকদের কাছে। মারমুখী action সিনেমা করে বলে কি Keanu র কোন Phobia নেই? আছে...সে Nyctophobia / Scotophobia তে আক্রান্ত... যাকে fear of darkness বলা হয়ে থাকে। ব্যক্তিগত জীবনে তার জীবনে একটি বড় দুর্ঘটনার আঘাত যার মূল কারণ হিসেবে উল্লেখিত...তার girl friend গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিল এবং সেটি ঘটেছিল তাদের মেয়ে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আঠার মাসের মাথায়... তারপর থেকে Keanu র মধ্যে দুর্ঘটনা, অন্ধকার, মৃত্যু প্রভৃতির প্রতি এক ধরণের ভয় কাজ করা শুরু করে!
2. Madonna :
পপ সম্রাজ্ঞী হিসেবে সে অধিক পরিচিত কিন্তু অভিনয় জীবনেও তার সচল উপস্থিতি দেখা যায় এত বয়স হওয়ার পরেও। Stage কাঁপানো এই মানুষটির Astraphobia / Brontophobia রয়েছে...যাকে সহজ ভাষায় fear of thunder and lightning বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ ঝড় এবং বজ্রপাতে অত্যন্ত পরিমাণে ভয় পেয়ে যায় সে!
3. Johnny Depp:
Charlies in the Chocolate Factory র মেয়েলী চেহারার Willy Wonka থেকে শুরু করে Pirates of the Caribbean সিরিজের মাথা নষ্ট Captain Jack Sparrow… অথবা Sweeney Todd এর সেই ভয়াবহ নাপিতের চরিত্র--কি পারে না অদ্ভুত অভিনয় দক্ষতাসম্পন্ন এই লোকটা...For portraying any type of role he is the boss!! এই versatile মানুষটির কিসে ভয় কাজ করে জানেন? সার্কাসের জোকার !! অর্থাৎ তার Coulrophobia রয়েছে... fear of clowns. জোকারদের প্রতিকৃতিকে ভয় করার অন্যতম কারণ হিসেবে সে উল্লেখ করে তাদের মিথ্যা হাসি এবং রং বেরঙের মুখ... Johnny ভাবে তাদের এরকম চেহারা বা হাবভাবের পিছনে অন্ধকার জগতের কোন কিছু লুকিয়ে রয়েছে এবং তা স্বাভাবিক নয়, শয়তানি ভাব সম্পন্ন!! এই কারণে এই ধরণের Clown এর ভয় থেকে বাঁচতে সে তার আশে পাশে Clown Paraphernalia রাখে !!
4. David Beckham:
Beckham সাহেবের যে মানসিক একটা সমস্যা রয়েছে অনেক আগেই বলেছিলাম একটা পোস্টে... এবং তার নাম Tourette’s Syndrome… সে সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জিনিস পছন্দ করে, সন্নিবেশহীন কোন কিছু তার পছন্দ নয়!! David Beckham এর ভয়ের কারণটাও এই সংশ্লিষ্ট...Ataxophobia...fear of untidyness. Beckham কোন অগোছালো এবং নোংরা ধরনের পরিবেশ ভয় পায়! এই কারণে তার সব কিছু নিখুঁত হওয়া চায় !!
5. Woody Allen:
Woody Allen নিজের ক্ষেত্রে এক জ্বলজ্বল করা উজ্জ্বল নক্ষত্র...সিনেমাতে তার contribution আকাশছোঁয়া। এই মানুষটির Panophobia রয়েছে... fear of everything বলে যাকে… অর্থাৎ সে সব কিছু দেখেই ভয় পায়, বা সব কিছুর মুখোমুখি হতে। উচ্চতা থেকে শুরু করে, বদ্ধ জায়গা, পোকামাকড়, উজ্জ্বল রং, লিফট অথবা রৌদ্রজ্জ্বল পরিবেশ... সব কিছুতেই সে ভয় পায়। Allen মনে করে তার এই সবকিছুর প্রতি ভয়ের মূল কারণ শয়তানের কোন কারসাজি হতে পারে! তার কার্যাবলিও কিছুটা অস্বাভাবিক ধরণের যেমন তার গোসলের পরিত্যক্ত পানিকে একটি নির্দিষ্ট ছিদ্র দিয়েই বাড়ি থেকে নির্গমন হতে হবে অথবা তার সকালের নাস্তার কলা ৭ টি অংশেই কেটে দিতে হবে...বেশি কিংবা কম নয়! ৪০ বছর ধরে সে psychoanalysis এর উপর রয়েছে এসব কারণে!
6. Nicole Kidman:
অস্ট্রেলিয়ান বংশোদ্ভূত এই অভিনেত্রীর ব্যাপারে নতুন করে ভূমিকা দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই…ব্লন্ড এই অভিনেত্রী অভিনয় জগতে নিজস্বই একটা জায়গা তৈরি করে রেখেছেন...। তিনি সরীসৃপে ভয় পান না, বা মাকড়সাতেও ভয় নেই তার, এমনকি ভূতের ভয়ও তিনি পান না... তার ভয় কিসে জানেন? প্রজাপতিতে... তার Lepidopterphobia রয়েছে, মানে হল fear of butterflies… প্রচণ্ড পরিমাণে ভয় পান তিনি প্রজাপতিকে। তার কাছে প্রজাপতি একটা বিদঘুটে জীব ! তার Mottephobia ও রয়েছে... মানের মথের ভয়। ঘরের দরজাতে প্রজাপতি বা মথ বসে থাকতে দেখলে সে ঐ ঘরে সেদিন আর প্রবেশ করেন না !
7. Alfred Hitchcock:
Psycho, Vertigo, Rear Window এরকম সব masterpiece সিনেমার পরিচালক এবং থ্রিলারের জনক হিসেবে খ্যাত হিচকক আজও পর্যন্ত তার সৃষ্টিগুলোর জন্য এক অন্য আসনে উপবিষ্ট হয়ে আছেন। Hitchcock তার সিনেমাগুলো দিয়ে সারাজীবন অন্য মানুষকে thrill এবং shocking একটা অনুভূতির মধ্যে বেঁধে রেখেছিলেন। ভয় ধরানো সিনেমার জনক নিজের কি কোন কিছুতে ভয় ছিল না? কিসে ভয় পেত জানেন সে......ডিম দেখে !! তার Ovophobia ছিল...... fear of eggs. সে কোনদিন ডিম খাননি এবং সারাজীবনে ছুঁয়েও দেখেননি। তার মতে ডিম এক বীভৎস ধরণের জিনিস...তার আশেপাশে ডিমের উপস্থিতি পর্যন্ত তিনি চাইতেন না !
8. Oprah Winfrey:
বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীদের মধ্যে অনন্য এক নারী। তার The Oprah Winfrey Show দিয়েই তিনি বাজিমাত করেছেন মিডিয়াতে। তার তুলনা শুধু সে নিজেই। তার Chiclephobia রয়েছে... fear of chewing gums বলে যাকে. তিনি কোন ধরণের chewing gum তার আশেপাশে কেউ চাবালে বা সেটার গন্ধ পেলে তা একেবারে সহ্য করতে পারেন না। যখন সে কিশোর বয়সে পদার্পণ করেছিলেন তখন তার দাদী chewing gum চিবিয়ে ক্যাবিনেটে আটকিয়ে রাখতেন... যেখান থেকে Oprah এর মূলত chewing gum এর উপর ঘৃণা জন্মায়। তিনি যে বিল্ডিং এ শুটিং করে থাকেন তার শো এর, সে বিল্ডিং এর কারও chewing gum চাবানো যাবে না এমনকি আনাও যাবে না, এই শর্ত তৈরি করে দেন !
9. Gustavo Eiffel:
Eiffel একজন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন এবং Eiffel Tower এর স্থপতি। Eiffel সাহেব কিসে ভয় পেতে জানেন? উচ্চতা... তার Acrophobia ছিল... fear of heights! অথচ Eiffel প্যারিসের যে টাওয়ারটির জন্য এত খ্যাতি পেয়েছিলেন... সেটি তার সময়ে বিশ্বে সব থেকে উঁচু স্থাপনা ছিল !
10. George Washington:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম এই প্রেসিডেন্টের সম্পর্কে কে না জানে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনকও বলা হয়ে থাকে তাকে। সে অনেক যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং ব্রিটিশ শাসন থেকে মার্কিনদের মুক্তও করেছিলেন। নির্ভীক এই মানুষটি ভয় পেত কিসে জানেন? তাকে যেন কেউ জ্যান্ত কবর না দেয় ! Taphephobia… fear of burying alive বলে এটিকে. সে তার কাছের লোকজনকে বলে গিয়েছিলেন... তার মৃত্যুর দুইদিন পর্যন্ত যেন খেয়াল করা হয়, তাকে কবর যেন না দেয়া হয়... যদি তিনি বেঁচে থাকেন...!!!
11. Richard Nixon:
আমেরিকার ৩৪ তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন ইনি... ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির জন্য যিনি বিশেষভাবে স্মরণীয়। মানুষটি হাসপাতালকে প্রচণ্ড পরিমাণে ভয় পেতেন... তার Nosocomephobia ছিল... fear of hospitals. তিনি ভাবতেন যে, একবার যদি সে হাসপাতালে যান তাহলে আর জীবন্ত অবস্থায় ফিরে আসতে পারবেন না। ১৯৭৪ সালে তার প্রচুর রক্তক্ষরণের ঘটনা ঘটেছিল... তার পরেও সে হাসপাতালের মুখ দেখার কথা মাথায় এনেছিলেন না এবং কেউ তাকে হাসপাতালে প্রথমে নিয়ে যেতে পেরেছিল না। পরে তাকে ভয় দেখানো হয়েছিল, যদি সে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে না যায়, তাহলে এভাবেই রক্তক্ষরণ হতে হতে তার অবধারিত মৃত্যু ঘটবে। তখন বাধ্য হয়ে তিনি হাসপাতালে যান!
12. Sigmund Freud:
Neurologist, Psychoanalyst কি নামে পরিচিতি নাই তার... আজকে মনস্তত্ত্বের জটিল সব বিষয়গুলোকে যে মানুষটি এক অন্য আঙ্গিকে নিয়ে গেছেন তার ভীতি ছিল কিসে জানেন? অস্ত্রে এবং ফার্ন উদ্ভিদে। সে নিজেই এর সম্পর্কে বলে গেছিলেন... “Fear of weapons is a sign of retarded sexual and emotional maturity.” আর ফার্ন উদ্ভিদের ক্ষেত্রে ছোট থেকেই এক আলাদা ধরণের ভয় কাজ করত তার যার ব্যাখ্যা সে কখনও কাউকে বলেননি... কোনদিন সে ফার্ন উদ্ভিদ ছুঁয়ে দেখেননি এমনকি খাদ্য রূপে গ্রহণও করেননি !
13. Billy Bob Thornton:
অভিনেতা, পরিচালক, সঙ্গীতশিল্পী কি হিসেবে পরিচয় তৈরি করেননি তিনি? Versatile এই মানুষটির অনেক কিছুতেই ভয় রয়েছে। প্রথমত, তার Chromophobia রয়েছে... যাকে fear of bright colors বলা হয়। তিনি উজ্জ্বল বর্ণ দেখে ভয় পান!! দ্বিতীয়ত, তার পুরাতন যুগের ফার্নিচারের উপর ভয় কাজ করে। ১৯৫০ সালের আগের তৈরি কোন ফার্নিচারের কাছে নিয়ে গেলে তিনি খেতে, কোন জিনিস পান করতে এমনকি শ্বাসও নিতে পারেন না ! সর্বশেষে Johnny Depp এর মত, তারও জোকারের প্রতি ভয় কাজ করে... Coulrophobia!
14. Nikola Tesla:
ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজম এবং ইলেকট্রনিক্স এর জগতে এই মানুষটির কোন দ্বিতীয় উত্তরসূরি নেই। পদার্থবিজ্ঞানে মানুষটির গুরুত্ব অপরিসীম। Tesla মানুষকে এবং সে সব জিনিস কখনও ছুঁয়ে দেখতেন না যাতে তিনি সন্দেহ করতেন যে জীবাণু রয়েছে... Germaphobia ই আক্রান্ত ছিলেন তিনি ! টেসলা অনেক ঘন ঘন এই কারণে নিজের হাত পরিষ্কার করতেই থাকতেন। Germaphobia র পাশাপাশি তার অলঙ্কারের উপরও এক ধরণের phobia কাজ করত, বিশেষত তিনি মুক্তোর কানের রিং অনেক বেশি ভয় পেতেন... মুক্তো দেখলেই তার মাথা খারাপ হয়ে যেত!
15. Napoleon Bonaparte:
ফ্রান্সের এই সম্রাটের ইতিহাসে পরিচিত তার অনন্য নেতৃত্বের জন্য। নির্ভীক এই নেতা বিড়াল দেখে এতই ভয় পেতেন যে বিড়াল দূর থেকে দেখলেও তার গা হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে পড়ত ! Ailurophobia ছিল তার... fear of cats. যদিও এটা কখনও জানা যায়নি, নেপোলিয়ন বিড়াল দেখে এত বেশি ভয় পেতেন কেন, শুধু এটুকুই জানা যায় একটা ছোট্ট বিড়ালের দেখা পেলেও তার ভয়ের সীমা থাকত না। শুধু নেপোলিয়ন নয়, হিটলার, মুসোলিনি, জুলিয়াস সিজার এর ও একই সমস্যা ছিল... মিয়াঁও !
তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট
**** এই লেখা সম্পূর্ণ রূপে আমার… পূর্বের কোন লেখার সাথে মিলে গেলে তা একান্তই co-incidence….no resemblance. আশা করি পোস্টটি ভালো লাগবে !
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৫