বাসায় যখন প্রথম মুঠোফোন আসে তখনকার কথা স্পষ্ট মনে আছে।সবকিছু পরিবর্তন করে দেয়ার ক্ষমতা নিয়ে আমাদের বাসায় প্রবেশ করে নকিয়া-২১০০ মডেলের মুঠোফোন।
আমরা বাইরের লোকদের জিজ্ঞাসা করি-"কেমন আছেন?"কিন্তু নিজের বাবা মা কে কখনো জিজ্ঞাসা করা হয় না তারা কেমন আছে। আমরা ধরেই নিয়েছি বাবা মা রা সবসময় ভাল থাকে। মোবাইল ফোন আমাদের এই প্রশ্ন করার সুযোগ করে দিয়েছিল।বাবা যখন মা কে ফোন দিত আমরা দুই ভাই-বোন কথা বলতাম। নিজের বাবাকে "কেমন আছো" বলতে কেন জানি সংকোচ হত,লজ্জা হত। যাকে এই প্রশ্ন কখনো করা হয় নি,তাকে সেই প্রশ্ন করতে হচ্ছে শুধু মোবাইলে কথা বলতে কেমন লাগে এটা দেখার জন্য!
শৈশবের সেই মুঠোফোন আমাকে অবাক করতেই থাকলো। এটা দিয়ে কথা বলার জন্য টাকা লাগে।মিনিট সাতটাকা। টাকা মোবাইলে ভরাতে হয়। মোবাইলে টাকা কিভাবে ভরায় এবং ভরানো টাকা কোথায় যায় এটা খুব জানার ইচ্ছা ছিল। বাবা রাগী মানুষ দেখে কখনো জানতে চাওয়ার সাহস হয় নি।
অবসরে মোবাইলে গেমস খেলা যেত,রিংটোন শোনা যেত।৫৫৫ এ কল দিলে এক নারী কন্ঠ কথা বলতো।এই কথায় টাকা খরচ হত না।আমি প্রতিদিন শুনতাম। কাউকে কাউকে কল দিলে এক নারী বলতো-"একটু পরে আবার চেষ্টা করুন"। আমরা একটু পর আবার চেষ্টা করতাম। আমাদের চেষ্টায় কোন কমতি ছিল না।
এখনকার সদ্য জন্মানো শিশুরা কখনই অনুভব করতে পারবে না হুট করে এমন কিছু হাতে পেলে কেমন লাগে। নবম শ্রেণিতে প্রথম যখন পার্সোনাল মোবাইল ইউজ করার অনুমতি পেলাম ওই মূহূর্তের অনুভূতি তারা কখনই পাবে না। কয়েকমাস আগে আমার এক কাজিন হয়েছে।ছোট বাচ্চা কথা বলতে পারে না,এটাই স্বাভাবিক। তার বাবা দেশের অপরপ্রান্ত থেকে তার ছেলের কন্ঠ শুনতে চায়। আমরা তার ছেলেকে কাঁদাই।তিনি কন্ঠ শুনতে পান।তিনি খুশি হন। যে শিশু জন্ম নিয়েই ফোন দিয়ে কান্না করে সেই শিশু কখনই বুঝবে না মুঠোফোনে কতটা আবেগ ছিল।
মুঠোফোন বেঁচে থাক
বেঁচে থাক মুঠোফোনকে ঘিরে আমাদের আবেগের গল্পগুলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৬ রাত ৮:৩০