উইকিলিকসের নথিতে জানা যাচ্ছে কিভাবে অন্যতম শীর্ষ জঙ্গি সিদ্দিকুর রহমান বাংলাভাইর খাস সাগরেদ কামারুলকে (মাহতাব খামারু) তারেকের টেলিফোনে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় রেব! নথিটি এমন সময় প্রকাশ হলো যখন জঙ্গি সহযোগিতায় শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টায় ২১ আগস্টের গ্রেনেড মামলায় তার বিচারের প্রস্তুতি চলছে।
বিএনপি বরাবর তারেক চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র দাবি করে গ্রেনেড হামলায় তাকে ফাঁসাতে সরকার ষড়যন্ত্র করছে দাবি করে আসছে! তারেককে আগামীতে বাংলাদেশের ভবিষ্যত নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা-তদবিরও করে যাচ্ছে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলটি। কিন্তু উইকিলিকসের নথিসমগ্রের তথ্যমতে ঢাকাস্থ মার্কিন কূটনীতিকরা বিএনপির পারিবারিক রাজনীতির ভবিষ্যত উত্তরসূরিকে জঙ্গি মদদদাতাসহ নানান বিপদজ্জনক অভিধায় চিহ্নিত করে ওয়াশিংটনকে সতর্ক করে লিখেছেন তারেক যাতে সেদেশে ঢুকতে না পারেন!
বর্তমান সরকারের নানা ব্যর্থতায় বিশেষ করে নিয়ন্ত্রণহীন অকল্পনীয় দ্রব্যমূল্যে অতিষ্ট মানুষজনের নেগেটিভ সহানুভূতি নিয়ে বিএনপি যখন সরকারকে ফেলে দেবার আন্দোলনের কসরত করছে তখন উইকিলিকসের বোমশেল যেন তাদের মুখের মধ্যে বড়মাপের আঘাত! যেকোন অভিযোগকে সরাসরি ‘মিথ্যা, অপপ্রচার, উদ্দেশ্য বা ষড়যন্ত্রমূলক’ শব্দাবলীতে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়াতে বিশেষ দক্ষ-অভিজ্ঞ(!) বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অবশ্য এসব গোমরফাঁকের জন্যে উইকিলিকস বা সংশ্লিষ্ট মার্কিন দূতদের নিন্দা করেননি। সহজ নিন্দা করেছেন সেসব দেশি মিডিয়ার। যারা রিপোর্টগুলো ছাপার মতো বেয়াদবি-বেশরিয়তি কাজ করছে!
এখন যে প্রশ্নটি সামনে আরও বেশি চলে আসবে তা হলো, খালেদা জিয়ার পারিবারিক দূর্নীতির ভবিষ্যত কাণ্ডারিকে এভাবে ফের বিএপি আর বাংলাদেশের ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টা-তদবিরের বিষয়াদি দেশের মানুষের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা! বাংলাদেশের ক্ষমতায় যেতে থাকতে নাকি আবার জনসমর্থনের পাশাপাশি আমেরিকা-ভারতেরও আর্শীবাদ লাগে!
আর এখানে ঢাকার মার্কিন কূটনীতিকরা তার ব্যাপারে লিখছেন, অবাঞ্ছিত সব বিশেষণ! মোস্ট ওয়ান্টেড নিষিদ্ধ মানুষজনের পোর্টফলিওতেই তা শুধু ব্যবহার হয়! যদ্দুর জানা যায় এরআগে এ ধরনের বিশেষণসহ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেইন সাঈদী আর সেই বিতর্কিত পুলিশ অফিসার কোহিনুর মিয়ার ক্ষেত্রেই আরোপ করা হয়েছিল!
তারেকের ব্যাপারে ঢাকায় কাজ করা সবশেষ মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি তার দেশকে লিখেছেন, ‘বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান জিয়াউর রহমানের কুখ্যাত বড় ছেলে এবং মায়ের উত্তরসূরি’, ‘ভয়ঙ্কর রাজনীতিক এবং দুর্নীতি ও চুরির মানসিকতাসম্পন্ন সরকারের প্রতীক’ উল্লেখ করে তাকে বাংলাদেশে মার্কিন স্বার্থের প্রতি হুমকি হিসেবেও দেখানো হয়। ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর ওয়াশিংটনে পাঠানো রিপোর্টে রাষ্ট্রদূত তারেক রহমানকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দুষ্টু এবং ভয়ঙ্কর পুত্র অভিহিত করেন।
মারিয়ার্টির রিপোর্টে তারেকের বিরুদ্ধে দূর্নীতির বিনিময়ে দেশের মন্ত্রিত্ব বিক্রির অভিযোগও করা হয়। এতে বলা হয়, ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট গঠন ও নির্বাচনে জয়লাভে কৌশলগত বুদ্ধির প্রয়োগের কৃতিত্ব তার। ৬০ জনের মন্ত্রিপরিষদের এক-তৃতীয়াংশই তিনি পূরণ করেছেন বা বিক্রি করেছেন। সমালোচকরা বলেন, তিনি খুবই নির্দয়, দুর্নীতিগ্রস্ত, একাডেমিক পড়াশোনার অবস্থাও খুব ভালো নয়, রাজনীতিতে অপরিপক্ক। `হাওয়া ভবন` নামে একটি বাসা থেকে তিনিই মূলত সরকারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতেন। ওই ভবনকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল তার `ছায়া সরকার`।
খালেদা জিয়ার ব্যাপারে মারিয়ার্টির রিপোর্টে বলা হয়, সমালোচকরা তাকে অলস, অশিক্ষিত হিসেবে চিহ্নিত করেন। তবে দলের মূল ক্ষমতা তার হাতেই।
উইকিলিকসের নথিতে সহি তারেকনামাসমূহ ঢাকাস্থ তৎকালীন মার্কিন মারিয়ার্টি ছাড়াও কূটনীতিক হ্যারি কে টমাস (যাকে অনেকে তখন মজা করে ডাকতেন, কালা জাহাঙ্গীর!), বিউটেনিস, গীতা পাসি প্রমুখের বরাত দিয়ে এসেছে। নথির এসব তথ্য সমগ্রের অনেক কিছুই দেশের মিডিয়ার লোকজন জানতেন। এসবের ছিটেফোটা কিছুটা বিচ্ছিন্নভাবে কোন কোন মিডিয়াতেও ছাপা হয়েছে।
আবার তারেক চরিত্রের নানা কলঙ্ক চাপা দিতে দেশের মিডিয়ার কারা কারা কিসের কিসের বিনিময়ের আশায় লম্বা টিভি ইন্টারভ্যুসহ নানান মিশনে মাঠে নামেন, আবার পরে বিগড়েও যান, সে কিসসাও ওয়াকিফহালদের নজানা নয়।
সাধারনত কূটনীতিকরা সংশ্লিষ্ট দেশের যেখানে যাকিছু খবর পান সেসব নিয়ে দায়িত্বশীলদের সঙ্গে বৈঠকে পাওয়া বক্তব্য জুড়ে দিয়ে রিপোর্ট যার যার দেশে পাঠান । তারেকনামার নানা তথ্যে তৎকালীন প্রধানন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকীর নানা উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয়েছে। এমন একটি রিপোর্টেই উঠে এসেছে ড সিদ্দিকী বলছেন কী করে ছেলে তারেকের দূর্নীতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছেন তাঁর মা খালেদা জিয়া! ২০০৬ সালে খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রীত্বের মেয়াদ ফুরোবার পর বিদেশ চলে যান ড কামাল সিদ্দিকী। এরপর আর দেশে ফিরেছেন এমনটা জানা যায়নি। আর কী তার নিজের দেশে নিরাপদ ফেরা হবে কোনদিন?
সহি তারেকনামা’র আরও কতিপয় চুম্বক তথ্যঃ সরকারি ক্রয় এবং রাজনৈতিক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রায়ই ঘুষ চাইতেন তারেক। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, ঘুষ কেলেঙ্কারি, অর্থ আত্মসাৎ ও কর ফাঁকি অনেক মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও তিনি মুক্তি পেয়েছেন। সর্বোচ্চ আদালতের সঙ্গে গভীর আঁতাতের মাধ্যমে তারেক বিচার প্রক্রিয়ায় কারসাজি করতে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার তার জামিন আটকানোর যে চেষ্টা করেছিল তাকে জয় করতে সক্ষম হন।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে কোটি কোটি ডলার অর্জনের দায়ে গুরুতর অভিযোগ এনেছে। তার বিরুদ্ধে কয়েকটি চাঁদাবাজির মামলাও রয়েছে। যেগুলো বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে এক রিপোর্টে রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি মার্কিন কোম্পানি সিমেন্সের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণসহ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত কয়েকটি মামলার সংক্ষিপ্ত সার তুলে ধরেন। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে সিমেন্স মামলার বিবরণে মরিয়ার্টি বলেন, ওই প্রত্যক্ষদর্শী তারেক ও তার ভাই কোকোর কাছে সিমেন্সের কাছ থেকে নেওয়া ঘুষ পৌঁছে দেন।
সিমেন্সের চুক্তির কাজের মোট অর্থ থেকে প্রায় ২ শতাংশ ঘুষ নেন তারেক। যা মার্কিন ডলারে পরিশোধ করা হয়। মামলাটি এখন মার্কিন বিচার বিভাগ এবং এফবিআইও দেখভাল করছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বরাত দিয়ে মরিয়ার্টির রিপোর্টে বলা হয়, এসব ঘুষ ও চাঁদাবাজির বাইরেও তারেক ব্যাপক অর্থ তছরুপে জড়িত ছিলেন। কয়েকজন সহচরের মাধ্যমে তিনি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ফান্ডের ৩ লাখ ডলার আত্মসাৎ করেন। দুদকের বরাতে মরিয়ার্টি আরও বলেন, তারেক ছিলেন ওই তহবিলের সহ-স্বাক্ষরদাতা। ওই ফান্ডের অর্থ দিয়ে তিনি নিজ শহরে একটি জমি কিনেছেন। এছাড়া ওই তহবিলের অর্থ তিনি ২০০৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপির সদস্যদের মধ্যেও বিলি করেছেন।
আরও বলা হয়, বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের মধ্যে ছিল আরেক `ছায়া সরকার`। হাওয়া ভবনে বসে এ সরকার চালাতেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন দল ও জোটের উচ্চপর্যায়ের বেশ কয়েক নেতা।
এমন আরো হাজার হাজার শব্দ উঠে এসেছে উইকিলিকসের সহি তারেকনামার ফর্দে ফর্দে!
উল্লেখ্য তারেককে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জন্য বিপদজ্জনক, সেদেশে প্রবেশের অনুপোযুক্ত ঘোষণার মতো এর আগে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেইন সাঈদী আর বিএনপির প্রিয় পুলিশ অফিসার কোহিনুর মিয়ার ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
৯/১১’এর যুক্তরাষ্ট্র সরকার সারা দুনিয়ায় তাদের বিবেচনায় চিহ্নিত যে সব ব্যক্তিকে বিপদজ্জনক চিহ্নিত, নো ফ্লাই প্যাসেঞ্জারস তালিকাভূক্ত করে, সে তালিকায় বাংলাদেশ থেকে শুধু জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেইন সাঈদীনাম ছিল।
তখন তারা ওই তালিকাটি বাংলাদেশের সিভিল এ্যাভিয়েশন্সকে পাঠিয়ে অনুরোধ করে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রগামী কোন বিমানে যাতে উঠতে দেয়া না হয় সাঈদীকে।
বিমানের একটি সূত্রে তালিকাটি পেয়ে তখন রিপোর্টটি করলেও জামায়াত অন্তর্ভূক্ত চারদলীয় সরকার পরে বিষয়টি চেপে যায়। কিন্তু ওই তালিকায় নাম ওঠার পর থেকে সাঈদি তার ওয়াজ ব্যবসার লাভজনক গন্তব্য (!) যুক্তরাষ্ট্রে আর কখনও যেতে পারেননি। পরবর্তীতে এই সূত্রে যুক্তরাজ্যের রাজ্যের বাজারটিও তার জন্যে হারাম-নিষিদ্ধ(!) হয়ে যায়।
ঢাকার মার্কিন দূতাবাস পরবর্তিতে পুলিশ অফিসার কোহিনুর মিয়াকেও সেদেশের ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। শামসুন্নাহার হলে ছাত্রীদের আর রাজপথে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের টর্চারের কারণে কোহিনুর মিয়া তখন বিশেষ আলোচিত-সমালোচিত বিএনপির বিশেষ পছন্দের(!) পুলিশ অফিসার।
ওই সময় তাকে যুক্তরাষ্ট্রে একটি প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত হলেও তিনি প্রত্যাখ্যাত হন। ঢাকার মার্কিন দূতাবাস ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে বলে তার মতো মানবাধিকার লংঘনকারী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ভিসা পেতে পারেন না।
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:০৮