ভারত-বাংলাদেশ লড়াইটা তাই বাইরে থেকেই দেখতে হবে আমাকে। এই ভারতের বিপক্ষেই আমি দুবার ম্যাচ-সেরা হয়েছি। আছে দুটি টেস্ট ফিফটিও। এই ম্যাচ আমাকে পেছনে ফিরিয়ে নিতেই পারে।
তবে সত্যি বলছি, আমার থাকা না থাকা বড় ব্যাপার নয়। একজন খেলোয়াড় একটা টিমকে জেতাতে পারে না। দরকার যত বেশি সম্ভব খেলোয়াড়ের ভালো পারফরম্যান্স। ভারতের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য অনেক। ভারতের এক-দুজন খেলোয়াড়ই ম্যাচ জেতাতে পারে। আমাদের বিষয়টা ভিন্ন। তামিম-সাকিব ম্যাচে পার্থক্য গড়তে পারে, এটা ঠিক। কিন্তু আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার একটা দল হয়ে খেলা।
যত বেশি সংখ্যক খেলোয়াড় জ্বলে উঠবে, ততই আমাদের জন্য ভালো। তাহলে আমরা যেকোনো দলকে হারাতে পারি। এই জিনিসটা গত এক-দেড় বছরে আমরা দেখে এসেছি। বিশ্বকাপেও ধারাবাহিকতা থাকবে আশা করি। আজ প্রথম ম্যাচে এটা আরও বেশি দরকার। আমার না থাকাটা আমার জন্য কষ্টের, হতাশার। তবে আমার কিছু করার নেই।
দুর্ভাগ্যই বলব, আজ আমার মাঠে থাকা হবে কি না, জানি না। জাতীয় দলের সাবেকদের একটি করে টিকিট দিয়েছে বোর্ড। আমিও একটিই পেয়েছি। আমার বাবা এসেছেন খেলা দেখার জন্য। তাঁকে তো খেলা দেখার ব্যবস্থা করে দিতে হবে, আমারটাই দিয়ে দেব। আরেকটা টিকিট পেলে আমি মাঠে যেতে পারব। নইলে বাসাতেই দেখব। কিছু করার নেই। অনেক সাবেক খেলোয়াড় থাকবেন মাঠে, আমি যেতে পারলে খুশি হতাম।
যেখানেই থাকি, প্রতিটা বল, প্রতিটা মুহূর্তেই দলের সঙ্গে থাকব। আমার বিশ্বাস, ফল ভালো হবে। অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ভারতের বিপক্ষে আমি ভালো খেলি কেন? আমি ব্যাপারটা সেভাবে দেখি না। হয়তো এটা হতে পারে, ভারতীয় দলে তারকা খেলোয়াড় অনেক বেশি। এটাই আমাকে তাতিয়ে দেয়। তবে শুধু ভারত নয়, সব ম্যাচেই আমার একই রকম প্রস্তুতি থাকে। কানাডার সঙ্গে যেমন, ভারতের সঙ্গেও তা-ই।
ভারতের এবারের দলটি তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার মিশেল এবং সবাই পারফরমার। এখন ভারতীয় দলে যে-ই আসছে, সে-ই পারফর্ম করছে। এখন ওদের ক্ষুধাটাও অনেক বেশি। পারফরম্যান্সের লেভেলটাও খুব বেড়ে গেছে। ভারতের বর্তমান দলটা এতই ভারসাম্যপূর্ণ যে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়, পারফর্মার, বিগ শট খেলার কুশীলব, বিশ্বমানের বোলার—সব দিক থেকেই শক্তিশালী। এই দলের যুবরাজ সিং কেন জানি আমাকে খুব পছন্দ করে। এই সফরে মাঠে তো আর ওর সঙ্গে দেখা হচ্ছে না। তবে মাঠের বাইরে দেখা হলে নিশ্চয়ই কথা হবে।
সে যা-ই হোক, ভারতকে হারানোর স্বপ্ন আজ আবার আমরা দেখছি। সন্দেহ নেই ভারতই ফেবারিট। তবু ওদের আমরা হারাতে পারি। আমাদের দরকার স্নায়ু ঠিক রাখা। হ্যাঁ, প্রতিটি ভারতীয় খেলোয়াড়ই শট খেলতে পারে। আমাদের চিন্তা করতে হবে, ওরা মারবে, কিন্তু আউট হতে দরকার একটি মাত্র বল। প্রতীকী অর্থে যদি এভাবে বলি, শেবাগ কী করবে, সেটা না ভেবে আমাদের বোলারদের ভাবতে হবে নিজের সেরা বলটা নিয়ে। অর্থাৎ , প্রতিপক্ষ নয়, নিজের সেরাটা দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের বেশি ভাবতে হবে।
আর একটা কথা, শুধু সাকিব-তামিমের আশায় থাকা চলবে না। আমার বিশ্বাস, আমরা সবাই আমাদের সেরাটা দিতে পারলে কেউই আমাদের সামনে দাঁড়াতে পারবে না। আজ এটাই দেখতে চাইব। যেখানেই থাকি, সাকিবদের জন্য শুভকামনা।
বন্ধুরা, ভালো খেলো। সেরাটা দিয়ো। তাহলে হারলেও বিন্দুমাত্র কষ্ট পাব না।
মাশরাফি বিন মুর্তজা লিখছেন প্রথম আলোয়
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ৩:৫৬