এই ছবি নির্মানের ১১ বছর পর সত্যজিৎ এর সিকোয়েল হীরক রাজার দেশে ও ৯০-এর দশকের গোড়ায় সন্দীপ তৃতীয় পর্ব গুপী বাঘা ফিরে এল করেন। সম্প্রতি সন্দীপ এর একটি চতুর্থ পর্ব করতে চান বলে সংবাদমাধ্যমে ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন।
[গুপি গাইন বাঘা বাইন ছবির পোস্টার]
মূলত ছোটদের জন্য নির্মিত হলেও গুপী গাইন বাঘা বাইন সব বয়সের দর্শকদেরই উপভোগ্য।
ছবির মূল আকর্ষণ সত্যজিৎ রচিত গানগুলি, সাড়ে ৬ মিনিটের ভূতের নৃত্যের একটি দৃশ্য ও ভারতীয় স্টাইলে নির্মিত বিশেষ কয়েকটি স্পেশাল এফেক্ট। মুক্তির ছয় মাসের মধ্যে ছবিটি সারা বাংলায় শুধু জনপ্রিয়তাই অর্জন করে না, বাংলার জনপ্রিয় সংস্কৃতির একটি স্থায়ী আইকনে পরিণত হয়। দেশ বিদেশ মিলিয়ে এই ছবিটি অনেক গুলি পুরষ্কারও পেয়েছে।
• শ্রেষ্ঠ পরিচালনা পুরস্কার, নয়াদিল্লি, ১৯৬৮
• রাষ্ট্রপতি স্বর্ণ ও রৌপ্য পদক, নয়াদিল্লি, ১৯৭০
• সিলভার ক্রস, অ্যাডেলেইড, ১৯৬৯
• শ্রেষ্ঠ পরিচালক, অকল্যান্ড, ১৯৬৯
• মেধা পুরস্কার, টোকিও, ১৯৭০
• শ্রেষ্ঠ ছবি, মেলবোর্ন, ১৯৭০
গল্পাংশ
গল্পের দুই নায়ক গুপী ও বাঘা সঙ্গীতের অনুরক্ত, অথচ সাংগীতিক প্রতিভাহীন। এই কারণে গুপীর গ্রাম আমলকী ও বাঘার গ্রাম হরতুকী থেকে তারা বিতাড়িত হয়। পথে এক বনে দুজনের সাক্ষাৎ হয় ও সেখানে ভূতের রাজা তাদের তিনটি বর দেন। প্রথম বরে তারা যখন ইচ্ছে মনোমতো খাবার পেতে সমর্থ হয়; দ্বিতীয় বরে দু-জোড়া জুতো ও দু-জনের হাতে হাতে তালি দিয়ে দেশবিদেশ ঘোরার ক্ষমতা পায় ও তৃতীয় বরে তাদের সঙ্গীত প্রতিভা উন্নতি করে ও লোককে গান শুনিয়ে অবশ করে দেওয়ার ক্ষমতা পায় তারা।
এরপর দু-জনে শুন্ডী রাজ্যের রাজাকে গান শুনিয়ে তাঁর সভাগায়ক হয়ে সেখানেই থেকে যায়। শুন্ডীর প্রতিবেশী হাল্লা শুন্ডীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে, তারা গুপ্তচরের বেশে হাল্লায় যায় ও হাল্লার রাজা ও মন্ত্রীদের সততা ও সঙ্গীত প্রতিভা দিয়ে পরাস্ত করে যুদ্ধ থামিয়ে দেয়।
এরপর শুন্ডীর রাজকন্যা মণিমালার সঙ্গে গুপীর ও হাল্লার রাজকন্যা মুক্তামালার সঙ্গে বাঘার বিয়ে হয়।
চরিত্রসমূহ
• গুপী – তপেন চট্টোপাধ্যায়
• বাঘা – রবি ঘোষ
• শুন্ডী/হাল্লার রাজা – সন্তোষ দত্ত
• জাদুকর বরফি – হরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়
• হাল্লার প্রধানমন্ত্রী – জহর রায়
• হাল্লার সেনাপতি – শান্তি চট্টোপাধ্যায়
• হাল্লার গুপ্তচর – চিন্ময় রায়
• আমলকীর রাজা – দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
• গুপীর বাপ – গোবিন্দ চক্রবর্তী
• ভূতের রাজা – প্রসাদ মুখোপাধ্যায় (এই চরিত্রে কণ্ঠদান করেন স্বয়ং সত্যজিৎ রায়)
আরো একটি কথা যেটা আগে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, বলিউডের বিখ্যাত খলনায়ক, পার্শ্ব চরিত্রাভিনেতা এবং পরিচালক টিনু আনন্দ এই ছবিতে সত্যজিৎ রায়ের, পরিচালনায় সহকারী ছিলেন।
আরো একটি কথা বলে রাখি, সত্যজিৎ রায়ের যে সব ছবি আমেরিকার রসায়নাগারে ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে, তার মধ্যে “গুপি গাইন ও বাঘা বাইন”ও রয়েছে। এবং এই ছবিটির ডিজিটালাইজেশনের কাজ ইতি মধ্যে শেষ হয়েছে, এবং সেই ডিজিটাল প্রিন্টটির টিভি রাইটস বর্তমানে “স্টার জলসা মুভিজ”এর কাছে রয়েছে।
তথ্য সূত্রঃ আনন্দ বাজার পত্রিকা, উইকিপিডিয়া এবং বিজয়া রায়ের “আমাদের কথা”।