দূর্ঘটনার সাথে সাথে উদ্ধারকাজে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল । দায়িত্ববোধের বাইরে আর্মি, দমকল, পুলিশ অসাধারণ মানবিক বোধের পরিচয় দিয়েছেন। ঘটনাস্থলে কৌতুহলী, উৎসুক, উদ্বিগ্ন জনতাকে অসীম ধৈর্য্যের সাথে তারা মোকাবেলা করেছেন।
তাদেরকে স্যালুট।
কিন্তু ... কিন্তু এবং কিন্তু ...
এর বাইরে একদল ''তরুণের'' কথা আমি বলতে চাই।
ঘটনার প্রথম রাতেই চমকে উঠি- বিডি সাইক্লিস্ট গ্রুপসহ আরও কয়েকটি গ্রুপের ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে।
তারা লিখলো, আমরা সাভার যাচ্ছি।
আমার হাসি পেলো, তারা সাভার যাচ্ছে। হা হা হা। সাথে গোটা দশেক টর্চ আর কিছু শুকনো খাবার । পুনরায় হা হা হা এবং হো হো হো।
এরপর টিভি দেখে আমার চোখ কপালে উঠলো। একদল তরুণ ধ্বংসস্তুপের উপর উঠে গেছে। জীবনের মায়া তুচ্ছ করে তারা চিপাচাপা দিয়ে ''জীবিত'' মানুষ খুঁজছে। শুধু তাই নয়, তারা বাইরে এসে চিৎকার করে জানাচ্ছে, ভেতরে জীবিত মানুষ আছে। ওদের বাতাস লাগবে, অক্সিজেন লাগবে, পানি লাগবে।
কয়েকজনকে দেখলাম, ঝুকিবহুল জায়গায় দাঁড়িয়ে, বড় বড় কাগজে ''পানি'', ''হাতুড়ি'', -ইত্যাদি লিখে ভবণের সামনে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন।
এরপর সাভারের দিকে একটা 'কাফেলা' তৈরী হলো। পানি, বিস্কুট, শুকনো খাবার নিয়ে ছেলেপেলে সাভারে ছুটলো।
এইসব অনামা, অখ্যাত তরুণদের জন্য সাভার পৌছানো খুব সহজ ছিল না।
তারা সেলিব্রেটি নন, দলীয় কর্মী নন, টকশোর ''বান্ধা'' অতিথি নন।
যতদূর পারলো তারা গাড়িতে গেলো, বাকিটা হেঁটে।
অবার্চীন, অবুঝ তরুণদের আরেকটি দল, জীবনের মায়া ভুলে ধ্বংসস্তুপের সম্ভাব্য সকল ফাঁক ফোকর দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলো। তারাই বাইরে খবর বয়ে আনলো, ভেতরে অসংখ্য জীবিত মানুষ আছে। তাদের 'অক্সিজেন' লাগবে।
ঢাকার সকল স্টোর ফাঁকা হয়ে গেল। লাজ ফার্মার মতো নিরেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ১০০০ টাকার অক্সিজেন সিলিন্ডার ৮৩০ টাকায় দেয়া শুরু করলো।
ম্যাজিকটা কোথায়? শুধু বললেই হবে, এই অক্সিজেন সাভার যাবে।
প্রশেফশাল বাহিনী ব্যাপক মাত্রায় ঝুঁকি নেবে না, নেয়া উচিতও নয়।
আর রাজনৈতিক ''তরুণ প্রজন্ম'' তো হিসাব আর মিডিয়া কাভারেজের বাইরে কোনো কাজ করে না, করবেও না, করেও নাই।
এর বাইরে এইসব ''অবুঝের দল'' এলোমেলোভাবে গত কয়েকদিনে যা করলো, তার ফল হয়েছে দুটি :
১. এতো ভয়াবহ দূঘর্টনার পরও দুই হাজারেরও বেশি জীবিত মানুষ উদ্ধার হয়েছে। আজই উদ্ধার হয়েছে ১০০ জীবিত মানুষ। আমার জানা মতে, এমন ঘটনা বাংলাদেশে পূর্বে কখনো ঘটেনি। এটা রেকর্ড।
২. এইসব তরুণদের কেউ কেউ আহত কিংবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের কেউ কেউ হাসপাতালে।
সেনাবাহিনী, দমকল, পুলিশ- দায়িত্ব পালনের জন্য এদেরকে আমি স্যালুট জানাবো।
কিন্তু এইসব তরুণদের আমি স্যালুট দেবো না।
এদের কাউকে আমি সামনে পেলে পায়ের ধুলো নেবো।
সেই ধুলো নিজের মাথায় ছোঁয়াবো।
সেই ধুলো আমার দুই কণ্যা সন্তানের গায়ে মেখে দেবো।
এতো পবিত্র ধুলো- আমি আর কোথায় পাবো ?