আমি আমার পদত্যাগপত্রে সুনির্দিষ্ট ৬টি কারণ তুলে ধরেছি। কারণগুলো হচ্ছে ...
১. ইউল্যাবের সামনে যৌননিপীড়নের ঘটনাটি ব্লগে প্রকাশিত হবার পর ১১ মে ২০১২ তারিখে ইউল্যাব রেজিস্ট্রারের নামে প্রথম বিবৃতি প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়েছিল, ইউল্যাব রাত ৯টা ৩০ মিনিটে বন্ধ হয়ে যায় কাজেই রাত ৯. ৫০ মিনিটের ঘটনার জন্য ইউল্যাবের কেউ দায়ী নয়। দায়িত্বজ্ঞানহীন এই বিবৃতিতে -যৌনহয়রানির বিষয়টি মুখ্য না হয়ে সংশ্লিষ্ট অনলাইন একটিভিস্টদের কর্মকান্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। যা ছিল অনাকাঙ্খিত এবং অগ্রহণযোগ্য।
২. এরপর ইউল্যাব তদন্ত কমিটি গঠন করে। ব্লগারদের সোচ্চার দাবির মুখে দুইজন ব্লগারকে সেই তদন্ত কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। এজন্য ইউল্যাবের পক্ষ থেকে দুই ব্লগারের ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া হয়। ভোটার আইডি কার্ড এবং পাসপোর্টের স্ক্যান কপি পাঠানোর পরই সেই তদন্ত কমিটিতে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যদিও তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্য কারা, কী তাদের পরিচয় - তার কিছুই আমাদের জানানো হয়নি।
৩. তদন্ত কমিটির প্রথম বৈঠকটি সদস্যদের পূর্ব অনুমতি ছাড়া ভিডিও করা হয়, যা ছিল পুরোপুরি অনৈতিক।
৪. তদন্ত কমিটির একজন বিশেষ ব্লগার প্রতিনিধির ফেসবুক স্টাটাসের উল্লেখ করে তার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় মিটিংয়ে। তাকে মানসিকভাবে দুর্বল করার চেষ্টা করা হয়। অপ্রাসঙ্গিকভাবে তার সিভিক সেন্স নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। যদিও সেই ব্লগারের সকল তথ্য ইউল্যাব কর্তৃপক্ষকে আগেই পাঠানো হয়েছিল এবং ইউল্যাব কর্তৃপক্ষ সেটি গ্রহণ করে উক্ত ব্লগারকে মিটিংয়ে যোগদানের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। একজন প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাকে প্রকাশ্যে হেয় করার মাধ্যমে ইউল্যাবের আন্তরিকতা আবারো প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
৫. তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে পূর্ব অনুমতি ব্যতিরেকে এবং খসড়া চিঠিতে স্বাক্ষর গ্রহণ ছাড়াই যৌননিপীড়ন বিরোধী স্টিকি পোস্টটি মুছে ফেলার জন্য সামহোয়ার ইন... কর্তৃপক্ষকে মেইল পাঠানো হয়। এখানেও সততা এবং আন্তরিকতা পুনরায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
৬. সবশেষে, সম্প্রতি ইউল্যাবের ডেপুটি ডিরেক্টর নাসিমা খন্দকার একটি ব্লগে বিভ্রান্তিমূলক একটি লেখা প্রকাশ করেন একাধিক বিশেষ নিকে। বিতর্কিত এই লেখাটি তিনি আমাকে প্রেরণ করেন এবং বিদ্রূপ করে বলেন : 'কি আর করবেন? বসে বসে পড়েন!' শুধু তাই নয়, তিনি ফেসবুকসহ অন্যান্য অনলাইন এক্টিভিস্টদেরও দিনভর এই লেখাটি বিলিয়ে বেড়ান। তার ওই লেখায় যৌননিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী ব্লগারদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ভন্ডামি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। হুমকির সুরে বলা হয়, এই আন্দোলনের জন্য সকল ব্লগারকে মাশুল গুণতে হবে। ওই লেখায় যৌননিপীড়ন বিরোধী আন্দোলনকারীদের কেবল নয়, একইসঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম সারির জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোকেও নগ্নভাবে আক্রমণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ''দাদা, মনে আছে একবার বায়তুল মোকাররমের খতিবের কাছে গিয়ে তওবা করেছিলেন।" সর্বোপরি, কবে- কোন দেশে- ব্লগিংয়ের কারণে ব্লগারকে জেলে যেতে হয়েছে সেই নজির টেনে ভীতি সঞ্চারের চেষ্টাও করা হয়েছে সেখানে। ব্লগারদের প্রতিবাদের মুখে পরে তিনি তার ব্লগ ও ফেসবুক থেকে লেখা ও মন্তব্য মুছে ফেললেও প্রযুক্তিগত সুবিধা ব্যবহার করে একজন ব্লগার নাসিমা খন্দকারের সন্দেহজনক অনলাইন অ্যাকটিভিটির পুরো চিত্র তুলে এনেছেন - (Click This Link)।
পুরো ঘটনাপ্রবাহ থেকে এটি স্পষ্ট, যৌননিপীড়ককে শনাক্ত করার চেয়ে এই নিয়ে আন্দোলনকারী, ঘটনার ভিকটিম ইত্যাদি বিষয়ে ইউল্যাব অতিরিক্ত স্পর্শকাতরতা প্রদর্শন করছে। আরো স্পষ্ট করে বললে, যৌননিপীড়ক সেই অপরাধীরা ইউল্যাবের ফোকাসে নেই, ফোকাসে আছে যৌন নিপীড়নবিরোধী আন্দোলনকারীরা। এই অবস্থায় তদন্তের ফলাফল সহজেই অনুমেয়।
................................................................................
পুনশ্চ: ১. তদন্ত কমিটিতে যুক্ত হবার পর থেকে আমি এই সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো কথা বলেনি। কেননা তদন্ত কমিটির সকলে আমরা প্রতিশ্রুত ছিলাম, তদন্ত চলাকালীন সময়ে আমরা কোনো বিষয়ে কথা বললে, সেটি সকলের অনুমোদন নিয়েই বলবো। কাজেই তদন্ত কমিটি সংক্রান্ত ব্লগারদের শত প্রশ্নের মুখে আমাকে নীরবতা অবলম্বন করতে হয়েছে।
২. ইউল্যাব কর্তৃপক্ষ অবশ্য আমার পদত্যাগপত্র পেয়ে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে মেইল করেছেন। কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছি।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১২ রাত ২:৪২