“যাবে না ? চল, যাই। ছেলেমেয়েগুলা কত কষ্ট করে আয়োজন করছে, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হতে হবে না!”
আমার জ্বরাক্রান্ত স্ত্রীর চোখের দিকে তাকিয়ে আমি প্রচন্ড খুশি আর গর্ব অনুভব করলাম। তারপরেও, খুশি গোপন করে বললাম, “এই জ্বর নিয়ে যাবা ?”
সে আমার কথার জবাবে বলল, “তাড়াতাড়ি কর, শুরু হয়ে যাবে তো”। আমার ক্লান্ত, অসুস্থ স্ত্রীর উজ্জ্বল চোখের দিকে তাকিয়ে আর দেরি না করে প্রস্তুত হতে শুরু করে দিলাম। অতঃপর দুইজন সাবওয়েতে চড়ে বসলাম।
সেভেন্টি থার্ড এর মুখ দিয়ে বের হবার আগেই শুনতে পেলাম শ্লোগান। বের হতেই দেখতে পেলাম তরুণ তরুণী, মধ্যবয়স্ক নর নারীর হাতে প্ল্যাকার্ড আর মুহুর্মুহু শ্লোগানে তারা সেভেন্টি থার্ড স্ট্রীট এ জানিয়ে দিচ্ছে শাহবাগের আন্দোলন এর সাথে একাত্মতার কথা।

কিছু বিদেশি অবাক হয়ে জানতে চাচ্ছে কি হচ্ছে, কেন হচ্ছে ? কেউ কেউ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা হচ্ছে জানতে পেরে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ, এর পর হেঁটে চলে যায়। কেউ বা দাঁড়িয়ে থাকে, বুঝতে চায়।

একের পর এক চলতে থাকে শাহবাগের সেইসব শ্লোগান,
“ক” তে কাদের মোল্লা, তুই রাজাকার, তুই রাজাকার,
“ন” তে নিজামী, তুই রাজাকার, তুই রাজাকার,
ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, রাজাকারের ফাঁসি চাই,
আমাদের দাবী একটাই, রাজাকারের ফাঁসি চাই।
ইত্যাদি।

আমরাও অংশ নিলাম প্রতিবাদ সমাবেশে। বন্ধুদের মেসেজ পেতে থাকি, কোন দিকে আছি, জানতে চায়। তারাও এসে গেছে আজ ! কতদিন দেখা নাই, সে ও আজ এসে গেছে। ঐ তো দূরে আমার ই ছোট ভাই এর হাতে প্ল্যাকার্ড, মুখে শ্লোগান। গর্বে বুকটা আরো ভরে গেল। আরো কত নাম না জানা ভাই বোন চোখে আগুন আর হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে শ্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন! প্রচন্ড ঠান্ডা বাতাস, বা পুরু বরফ কিছুই আজ তাদের দমাতে পারছে না।

শাহবাগে অবস্থানকারী সহযোদ্ধা ভাই বোনেরা, আপনারা জেনে রাখুন, সারা বিশ্বের অসংখ্য প্রবাসী ভাইবোনেরা আপনাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। কারন, আপনাদের দাবী যুক্তিসঙ্গত, যুগোপোযোগী। যারা মানুষের অসহায়তার সুযোগ নিয়েছে, করেছে ধর্ষণ আর হত্যা, তাদের এই পৃথিবীতে যেমন নেই কোন সম্মান বা বাঁচার অধিকার, তেমনি মৃত্যুর পরের জীবনেও আশা করি তারা তাদের পাপের উপযুক্ত শাস্তি পাবে।
সারাবিশ্ব জুড়ে অসংখ্য বাংলাদেশি আজ সেই সমস্ত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবীতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। অচিরেই হয়ত সমস্ত বিশ্বের মানুষ ও জানতে পারবে ছদ্মবেশিদের কথা, যারা ৭১ এ চালিয়েছে গণহত্যা, ধর্ষণ আর লুঠতরাজ । সত্য সারাবিশ্বের কাছে উন্মোচিত হবার পথে। বিশ্ববাসী কোনদিন ই যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে ছিলনা। এবার ও থাকবে না ইনশাআল্লাহ। সত্যের জয় হবেই।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:১৭