গ্রিমোরিস
বিখ্যাত ভৌতিক গল্পকার এইচ, পি, লাভক্রেফট তাঁর বহুল আলোচিত বই দ্যা নেক্রোনোমিকন এ কথিত গ্রিমোরিস শব্দটির খুঁটিনাটি বিশ্লেষন করেছিলেন। শব্দটি এসেছে ফরাসী গ্রামেরি শব্দ থেকে ... যার অর্থ সোজা বাংলায় দিক-নির্দেশনা।
এইচ, পি, লাভক্রেফট (১৮৯০-১৯৩৭)
গ্রিমোরিসই হচ্ছে ব্ল্যাক ম্যাজিকের যাবতীয় নিয়মকানুনের সত্যিকারের গাইড বই। শুধু তাই নয় এতে রয়েছে সুপারন্যাচারাল পাওয়ার এই যেমন ধরুন পিশাচ (demon), দেবদূত (angels) এবং দৈত্য-দানোর পুঙ্খানোপুঙ্খ বর্নণা।
ডেমন নাম সিথুলু (লাভক্রেফটের বর্ণিত)
বেশিরভাগ গ্রিমোরিসই লিখিত বা সম্পাদিত হয়েছিল ১২৫০ থেকে ১৭৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। অথচ সে সময়ে এ ধরণের বই লেখা বা নিজের কাছে রাখা ছিল ভয়াবহ এক ব্যপার। ডাকিনীবিদ্যা চর্চার জন্য বিচারের সম্মুখিন হয়া ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ব্যপার...... যেটা বেশিরভাগ সময় শেষ হত মৃত্যুদন্ডের মধ্য দিয়ে। সবচেয়ে মজার ব্যপার হচ্ছে এত কঠোর নজরবন্দির পরও সেই সময়ের গ্রিমোরিসগুলো এখনো অক্ষত অবস্থায় আছে। কারণটা কি আন্দাজ করুন তো দেখি...... মঠগুলো তাদের লাইব্রেরিতে ওগুলো সংরক্ষণ করেছে নিদর্শনস্বরুপ।
ম্যাজিকাল আচার অনুষ্ঠান (হুমমম)
বেশির ভাগ গ্রিমোরিসেই রয়েছে সুসংগঠিত ম্যাজিকাল আচার নীতি। তাহলে চলুন আমরাও (আমার মত যাদের মাথার কয়েকটা স্ক্রু নেই) দেখে নেই আচার পদ্ধতীগুলো।
প্রথম ধাপ
একজন ম্যাজিশিয়ানকে আচার অনুষ্ঠান শুরু করার আগে অবশ্যই শারিরীক এবং মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে নিতে হবে। আচার-অনুষ্ঠানের উপর ভিত্তি করে প্রস্তুতিও ভিন্ন ভিন্ন রকম হত...... কোনটার জন্য উপোস তো কোনটার জন্য শীতের সকালে ঠান্ডা জলে স্নান আবার কোনটার জন্য সারা রাত জেগে প্রার্থনা। তবে বেশির ভাগ গ্রিমোরিসই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার উপর বিশেষ জোর (জোড় নয়) দিত।
দ্বিতীয় ধাপ
এই ধাপে ম্যাজিশিয়ানকে তার অনুষ্ঠান সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি প্রদান করা হত (ধাপ গুলো গুরুগম্ভির ভাষায় লেখার আপ্রাণ চেষ্টা নিশ্চয় পরিলক্ষিত হচ্ছে) যেমন ধরুন চক, একটা লৌহ দন্ড, একটা ছুরি অথবা একটা জাদুদন্ড। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সব জিনিসগুলোকেও অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করে নেওয়া হত।
আসুন তবে এবার একটু এগুলোর প্রস্তুতি পর্বে চোখ ফেলি। উদাহরণস্বরুপ, ছুরিটিতে কোন বিশেষ লিপি খোদাই করা থাকতে হবে, রড বিশেষভাবে তৈরি হবে, জাদু
দন্ডের প্যাটার্ন হবে নির্দিষ্ট বর্নণানুসারে। এছাড়াও জিনিসগুলোকে হতে হবে কুমারী (virgin) অর্থাৎ পূর্বে ব্যবহৃত না এরুপ ...... এক কথায় আনকোড়া।
তৃতীয় ধাপ
এই ধাপে রয়েছে বলয় বা চক্র তৈরির কাজ। চক্রটি সাধারণভাবে আঁকা হতে পারে আবার বিভিন্ন ম্যাজিকাল সিম্বল-চরিত্র দিয়ে সাজানো থাকতে পারে। মজার ব্যপার হচ্ছে এই যে, চক্রটি কিন্তু ম্যাজিকের বলয় থেকে মুক্ত। এটাকে ম্যাজিশিয়ানের সেফ হাউস বলা যেতে পারে অর্থাৎ ম্যাজিকের মাধ্যমে ওখানে সুপারন্যাচারাল পাওয়ারের উদ্ভব হবে তার প্রভাব থেকে চক্রটি মুক্ত।
শেষ ধাপ
এই শেষ ধাপটিকে বলা যায় মাল্টিডাইমেনশনাল। কারণ অনুষ্ঠেয় ম্যাজিকের উপর ভিত্তি করে এর পালন রীতিও পালটে যায়। এই ধাপটির জন্যই মুলত গ্রিমোরিসের এত কদর। গাইড বুকটি এ ধাপে ব্যপক কাজে আসে। এর মধ্যে বর্ণিত সুত্রানুযায়ী ম্যাজিশিয়ানরা অগ্রসর হতে থাকে...... এটা জরুরী। এ সময় আরো একটা বই বা অন্য কিছুর দরকার হয় যার মাধ্যমে আগত সুপারন্যাচারাল পাওয়ার ম্যাজিশিয়ানের প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশ করতে পারে।
সতর্কিকরণঃ গ্রিমোরিসে এটা স্পষ্টভাবে বলা আছে প্রত্যেকটি ধাপ ঠিক রীতি অনুযায়ী অবশ্য পালনীয়। একটু ভুলের মাশুল হতে পারে নৃশংস মৃত্যু।
ফাউঃ
কালা এবং সাদা জাদুর মধ্যে পার্থক্য
সত্যিকার অর্থে, কালা এবং সাদা জাদুর অনুষ্ঠান রীতির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। পার্থক্যটা নিহিত রয়েছে জাদুটা কি উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে সেখানে। কারো ভালর উদ্দেশ্যে যদি জাদু টা ব্যবহৃত হয় তাহলে সেটা সাদা জাদু। এর বিপরীতটাই কালা জাদু।
(চলবে)
অদ্ভুতুড়ে সিরিজ
আটলান্টিস
এল ডোরেডো
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০০৯ সকাল ১১:৩৯