ঠিক কতটা পথ পাড়ি দিয়েছি অমর একুশে বই মেলা ২০১৪ তে আসার জন্য " সে কথা আমার ঈশ্বর জানেন । " বলা চলে আগ্রহ করে বই মেলায় এবারই প্রথম যাওয়া হয়েছে ।
বই মেলা আসার জন্য এত পথ পাড়ি দেয়া !! এটা আমার জন্য বিস্ময়কর !! আরো বিস্ময়কর একা একা বই মেলায় চলে যাওয়া !! যাবতীয় অলসতা , দীর্ঘ ভ্রমনের কান্তি কাটিয়ে
১৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল বেলা , ভিড় কম থাকতেই বই মেলা ঘুরে ফেলবো এরকম ইচ্ছা ছিল আমাদের টিমের ।কিন্তু প্রোগাম চেইঞ্জ হয়ে গেলো । শুক্রবারে আমরা বনবাদাড়ে ঘুরতে যাব এরকম টা ঠিক হয়ে গেলো । তাহলে বই মেলায় যাওয়ার কি হবে ? পহেলা ফাল্গুনে তাই হয়ে গেলাম দলছুট । দলের অন্যান্য সদস্যরা তখনো ঢাকা এসে পৌঁছাননি । তাই ১৩ ফেব্রুয়ারি একাই যেতে হবে ।
১৩ ফেব্রুয়রি যে বসন্তের প্রথম দিন কথাটা মাথায় রাখতে হবে । তাই
আমার বাসন্তি ড্রেস টি গায়ে চড়িয়ে রওনা দিয়ে দিলাম । বিকাল চারটায় শাহবাগে নামতেই ফুলের দোকানে তাজা ফুলের গন্ধে মন উদাশ হয়ে গেলো ।
সকল বয়সের নারীরা ফুলের ব্যান্ড মাথায় দিয়ে নিচ্ছে । এই ফুলের ব্যান্ড এবারের বসন্ত উতসবের নতুন সংযোজন , তাই না ? আগে কিন্তু দেখিনি ।
খালে ১০০ , খালে ১০০ , ওই সুন্দর ফুলের ব্যান্ডের দাম ।মেয়েরা অনেকেই বয়ফ্রেন্ডের সাথে , কেউ কেঊ দল বেঁধে , কেউ কেউ বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে সবাই বাসন্তি শাড়ি আর ফুলের ব্যান্ড ! পুরা উতসব !
বিদেশিরা খুব মজা পাচ্ছে । তারা ছবি তুলছে । আমিও মজা পাচ্ছি । কিছু পাবলিক আছে নিজে মজা করতে পারেনা ,কারণ তারা নীরস অবিদারি । কিন্তু অন্যদের মজা দেখে মজা পায় । আমি এই গোত্রীয় । :!>
শাহবাগ থেকে হেঁটে হেঁটে বই মেলায় যেতে হয়েছে কারণ টি , এস, সির পর আর রিকশা যেতে দেয়না । মেয়েদের মাথার ফুল , সুন্দর সিল্কি চুল , বাসন্তি শাড়ি , হাতের চুড়ি ,ছেলেদের পাঞ্জাবী , ফুটপাথের নানা রকম বই , বাঁশি ওয়ালা , পুতুলের পসরা দেখতে দেখতে মেলায় চলে এলাম ।
বই মেলায় গিয়ে যেটা দেখলাম এখানে মোটামুটি আগে থেকে বই এর নাম আর স্টল নম্বর জানা না থাকলে বই কেনা এক অসম্ভব বিষয় ।আগে থেকে একটা হোম ওয়ার্ক করা থাকলে ভাল হতো । মোবাইলে আরজু পনি আপুর পোস্ট খুলে স্টল নম্বর দেখে এগিয়ে গেছি । পরিচিত বই গুলো নজরে পড়ে অনেক ভাল লেগেছে । থ্যাঙ্কস আরজু পনি আপু ।
এক দোকানে দেখি ভয়াবহ ভিড় । ব্যপার টা কি ? অহ ! এটা অন্য প্রকাশ স্টল । বই বিক্রেতারা সবাই হলুদ টিশার্ট পরা হিমু । হুমায়ূনের বই এর অসম্ভব বিক্রি দেখলাম । বেশিরভাগ মানুষ দেয়াল কিনছে । আমি স্রোতে মিশে গিয়ে ২ কপি বই কিনতে পারলাম । হুমায়ুনের সবচেয়ে ছোট বাচ্চা নিনিত কে দেখলাম । খুব ফ্যাসান দস্তুর ( ওর খালা নাকি ?? শাওনের সাথে চেহারায় মিল আছে ) মেয়ের সাথে । নিনিত কে দেখে অনেক ভাল লেগেছে ।
সবাই অন্য প্রকাশ স্টলের ছবি তুলছে । কারণ এটা অন্য ভাবে তৈরী করা । উপরে একটা জানালা করা আছে । সেখানে জানালায় হুমায়ূন আহমেদ ।
আগে একবার যখন মেলায় এসেছিলাম তখন অনেক স্টল দেখেছিলাম যেগুলি কেমন রাজবাড়ির মত তৈরী করা । তখন রীতি মত বিস্মিত হয়েছিলাম । এবার অন্য প্রকাশ ছাড়া আর কোন স্টল তৈরীতে ভিন্নতা দেখলাম না । নাকি আমি মিস করেছি ?
সন্ধ্যা পেরিয়ে অন্ধকার গাঢ় হচ্ছে । হলুদ ফুলপরীর মত মেয়েদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে । আমার ফেরার পালা । কিন্তু একটা বই দেখে রেখেছিলাম । আদী প্রকাশনিতে । শব্দ , ব্যাধি ,ভ্রম । সেই আদীকে আর খুজে পেলাম না , হারিয়ে ফেললাম । এমন হতেই পারে । বই টা প্রথম দেখাতেই কিনে নেয়া দরকার ছিল ।
কি কি বই কিনলাম তার একটা ছবি দেই ।
এবার ফেরার জন্য হন্টন । বই মেলার বাহিরে অনেক অনেক বই । সেগুলির মধ্যে বেশ মূল্যবান বই দেখতে পেলাম । পুরো রাস্তা জুড়ে বই ছাড়াও নানা রকম দ্রব্যসামগ্রীর পসরা বসে গেছে ।
এখানকার আইসক্রীম দেখলাম একেবারে ফ্রেস । কারণ প্রচুর বিক্রি হচ্ছে । কাল বোরখা পরা মিডল এজডদের ও ( মানে আমার থেকে ও বেশি বয়সী ) বাহির থকে বই কিনছেন । ফেরার সময় নজরে এল স্কার্ফ পরা মেয়েদের মাথায় ও ফুলের ব্যান্ড । তাদের কে বেশ সুন্দর লাগছে । অহ , তাহলে তো আমিও একটা লাগিয়ে নিলে বেখাপ্পা লাগতোনা ।
পুরা ৩ ঘন্টা হাঁটাহাঁটি আর এ কয়টা বই এর এত ওজন কেন ?? জান কাবাব প্রায় ।কারণ অনেক দিন হাঁটিনি । পাগুলি ডিজইউজ এট্রোফি হয়ে যাবার ঝুঁ কিতে ছিল । সেই মানুষের জন্য একদিনে বেশি হয়ে গেছে । আর ঢাকা শহরে চলতে গেলে নিজের গাড়ি না থাকলেই নয় । মন্ত্রী মিনিস্টার হলে আরো ভালো হয় । সবার রাস্তা বন্ধ করে তাদের চলে যাবার সুযোগ দেয়া হয় । উহ , এবার যে কি সুযোগ গেল । হায় ভোট যুদ্ধ ছাড়াই এম , পি ।মিনিস্টার বিনা যানজটে রাস্তায় চলাচলের কি সুযোগ সুযোগ টা চিনতে পারলাম না । :-<
এখন কপালে আছে কষ্ট কর জার্নি । তাও এরকম উতসবের দিনে , কেউ গাড়ি পায়না ফেরার জন্য । অবশেষে বাড়ি ফিরে এলাম ।
তবে একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম , ব্লগ এ ছোট লেখা পড়ে পড়ে বড় বড় উপন্যাস পড়া আর ধৈর্যে কুলায়না । সহজে মনযোগ হারিয়ে যায় । আরেকটা ব্যাপার হল দেশিয় লেখকদের প্রতি মমত্ব তৈরী হয়েছে । বিশেষ করে ব্লগারদের লেখার প্রতি । কারণ যা বই কিনলাম সেগুলির বেশির ভাগই ব্লগারদের ।
কেউ কেউ আছে যাবতীয় সুখের ঘটনার সাথে একটা দুঃখ যোগ থাকে । যাই হোক, এটা ও মন্দ না । বই মেলায় গিয়ে অনেক ভাল লেগেছে । বিশেষত , কেম্নে কেম্নে বসন্ত উতসবে চলে যাওয়াটাই ছিল ভাল লাগার মুল কারণ ।
১ম ছবিটা গুগলের । যারা যেতে পারেননি তাদের জন্য ।ফুলের মুকুট দেখতে কেমন বুঝানোর জন্য ।