আগের অংশটুকু
কতিমন
শফিকের মনে পড়ছিল সেই দিনটার কথা।
সেদিন তাদের নিস্পন্দ দেহ থেকে রক্ত আর অশ্রূর নোনা গন্ধ ভেসে আসছিল। পড়ে ছিল দুটো লাশ। কৃতকর্মের দলিল হিসেবে দেহের আনাচে ক্ষত আর আঘাতের চিহ্ন ছিল তাদের। উপড়ে নেয়া চোখের ফাঁকা কুঠুরী থেকে বাজছিল প্রতিশোধের সঙ্গীত। জিহবার খন্ডিত অংশে রক্ত আর লালা জমে স্বাক্ষী দিচ্ছিল পাপ এবং প্রায়শ্চিত্তের।
শফিক ছিল সেখানে।
শফিক চোখ ভরে দেখছিল প্রচুর রক্ত আর ক্লেদ। তার হাত ছিল রক্তে মাখামাখি, একটা ভালো কাজ ঘটতে দেখছে বলে তার মন হালকা হয়েছিল। তার চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে ছিল একজন সৎ এবং গর্বিত খুনী। সমাজের চোখে বিশেষ সম্মানের আসনেই অধিষ্টিত হবার বাসনা ছিল তার চোখে। শুধু অন্ধ, গোঁয়ার আইনের রক্তচক্ষুই যা সমস্যা। তাই তাদের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে লাশদুটোর যথাযথ ব্যবস্থা করা দরকার পড়েছিল।
-খামোখা কেন নিষ্ঠুর, লোভী পেশাদার খুনীদের সাথে জেলের এক কামরায় থাকতে হবে আমাকে? আমি বৈষয়িক কারণে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বা লোভের বশে খুন করি নি। আমি ন্যায়বিচারের উদ্দেশ্যে খুন করেছি। পাপের শাস্তি দিয়েছি তাদেরকে। এর জন্যে আমি সমাজের তৈরি জড়ভরত আইনের শিকার হতে রাজী নই, আর যদি তা হতেও হয়, মানুষজন যেন আমাকে ভুল না বোঝে, একজন মহান ন্যায়বিচারক হিসেবে দেখে, এটাই আমার চাওয়া।
বলছিল ছেলেটা।
-আমার নাম মেনন। খুব সাধারণ একটা জীবন আমার। সাধারণ চিন্তাভাবনা। আমার আশেপাশের ঝলমলে ছেলেমেয়েরা কতকিছু করে বেড়ায়! ছবি আঁকে, গান গায়, রাজপথে মিছিল করে, পুলিশের বাড়ি খায়, শীতের সময় চারশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে যায় শীতবস্ত্র নিয়ে। আমি এসব কিছুই করি না। এ নিয়ে বেশ একটা হতাশা আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল। কিন্তু এখন আর এসবের কিছুই অবশিষ্ট নেই। আমার সাধারণ জীবন এখন আর মোটেও হেলাফেলা করার মতো না। আমি তাদের কাতারে, কিংবা বলা যায় তাদের চেয়েও কয়েক পা এগিয়ে গেছি দুটো হত্যাকান্ডের মাধ্যমে। এখন আমি আর স্রেফ ভীড়ের মধ্যে মিশে যাওয়া আনস্মার্ট একটা ছেলে না। আমার মধ্যেও গর্ব করার মতো ব্যাপার আছে। কারেন্টের বিল দিতে গিয়ে ব্যাংকের সামনে লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর সময় পেছন থেকে কেউ অযথা ধাক্কাধাক্কি করলে আমি শীতল দৃষ্টি হেনে তাদেরকে সাবধান করে দিতে পারি। আমি খুন করেছি এক রক্তপিপাসু নিষ্ঠুর দম্পতিকে। যারা তাদের এগার বছর বয়সের কাজের মেয়েটাকে খুন্তির ছ্যাকা দিতো, গরম পানি ঢেলে দিতো গায়ে, তার স্পর্শকাতর অঙ্গে, গৃহস্বামী আদরের নামে তার লালসা মেটাতো, আর গৃহকর্ত্রী তা দেখেও না দেখার ভান করতো।
মেনন বলছিল।
শফিক তাকে অভয় দেয়। আরো বলে যেতে বলে।
- তারা সম্পর্কে আমার খালা-খালু। আমার সাথে তাদের আচরণ অবশ্য যথেষ্টই হৃদ্যতাপূর্ণ। খুনের পরিকল্পনা মাথায় আসার আগ পর্যন্ত আমি তাদেরকে সুখী, সজ্জন, সচ্ছল জনগোষ্ঠীর আলোকিত অংশ ভাবতাম। তাদের বাসায় নিয়মিত যাওয়া আসা ছিলো আমার। ভালোই সময় কাটত। গোল বাঁধলো নতুন কাজের মেয়েটি বাসায় আসার পর। মানুষের পশুরূপ, পিশাচমন যে কখন কীভাবে প্রকাশিত হয়, তা অনুমান করা দুষ্কর! মেয়েটির নাম কতিমন। সে যখন এই বাসায় প্রথম এসেছিল, নিটোল লাবন্যভরা শ্যামলা ত্বক আর উচ্ছল হাসিতে সবাইকে আপন করে নেবে, বাড়ির একজন সদস্য হিসেবেই গণ্য হবে এমনটাই ভেবেছিলাম আমি। কিন্তু কী থেকে কী হয়ে গেল!
ব্যাপারটা আমার প্রথম নজরে আসে কতিমন এ বাড়িতে আসার সপ্তাহখানেক পরে। আমি বৈকালিক আড্ডা দিতে তাদের বাসায় গিয়েছিলাম। চা দিতে একটু দেরি হওয়াতেই সে কী ভীষণ চোটপাট শুরু করলেন খালা! খালুও তার সাথে তাল মিলাচ্ছিলেন। তাদের এই হঠাৎ ক্ষেপে যাওয়ায় আমি বেশ অপ্রতিভ হয়ে পড়ি। কথাবার্তা চালাতে তেমন উৎসাহ পাই না। তবে তারা বেশ উৎসাহ ভরে বলছিলেন নতুন আসা কাজের মেয়েটা কীভাবে তাদের হাড়মাস জ্বালিয়ে খাচ্ছে। আমিও হ্যাঁ-হু করে সাড়া দিচ্ছিলাম। চা দিতে এসে কাপ থেকে একটু ছলকে পড়তেই ঠাস করে তাকে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলেন আমার খালা। সেদিন আমি ব্যথিত এবং অবাক হলেও কোন প্রতিবাদ করতে পারি নি, আমি পারতাম না আমার অতি সাধারণত্বের কারণে। কখনই পারি নি স্রোতের বিপরীতে সাঁতরানোর সাহস করতে, বিরুদ্ধ হাওয়ার প্রবল ঝাপটায় চিৎকার করে কথা বলতে।
এর পরে বেশ কিছুদিন যাই নি তাদের বাসায়। একসময় এই পলায়নপরায়নতা থেকে নিজেকে রক্ষা করতেই হয়তো আবার গেলাম। তারাও আমার যথোচিত সমাদর করলেন। আমি মনে মনে অপেক্ষা করছিলাম কতিমনের জন্যে। চাইছিলাম সেদিনের ঘটনাটা যেন নেহায়েত একটা “ইমপালসিভ মোমেন্ট” হয়ে থাকে। অনেকসময় এরকম হয় না, মানুষ রাগের বশে ভুল করে বসে, পরে আবার অনুতপ্ত হয়। আমি এই দুজনকে ভালোবাসতাম। আমি চাইছিলাম কতিমনের প্রতি তাদের স্নেহ প্রকাশিত হোক আর আমি একটা অস্বস্তিকর অনুভূতি থেকে নিজেকে মুক্তি দিই। আমার অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হতে থাকলো। কতিমন এলো না। চায়ের পেয়ালা হাতে খালা নিজেই এলেন।
-কী ব্যাপার খালা, কতিমন কোথায়?
জিজ্ঞেস করলাম আমি।
-আর বলো না! কামচোরা শয়তান একটা। অসুখের ভান করে শুয়ে রয়েছে।
-কতদিন ধরে অসুখ?
-এইতো কদিন হবে।
-ডাক্তার দেখান নি?
-আরে রাখো ডাক্তার! এদের সহজে কিছু হয় না। বললাম না, কামচোরা ক্ষুদে শয়তান একটা। মটকা মেরে পড়ে রয়েছে ঘরের ভেতর।
আমি তাকে দেখতে যেতে চাইলে তাদের ভেতর কেমন যেন অস্বস্তিকর অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, এবং তারা ব্যাপারটি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করলেন। আমিও আমার প্রিয় সঙ্গী- পলায়নপরতার প্রবোধে আর বেশি আগ না বাড়ার সিদ্ধান্ত নিই। ব্যাপারটা হয়তো বা সেভাবেই চুকে বুকে যেতো, যদি না আমি বেসিনে হাত ধুতে যাবার সময় মেয়েটির কাতর আর্তনাদ শুনতে না পেতাম। তার আর্তধ্বণি শুনে মোটেই মনে হচ্ছিলো না সে ধোঁকা দেবার জন্যে শুয়ে আছে। পর্দার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখি, তার সারা শরীরে কেমন যে ফোশকা পড়ার দাগ। -কতিমন, কীভাবে হলো এমন?
আমার জিজ্ঞাসার জবাবে কিছু বলার শক্তি চিলো না তার। ততক্ষণে পরিস্থিতি বুঝে খালা চট করে চলে এসেছে সেখানে।
-আরে বলো না, ছেরি পানি ঢালতে গিয়ে নিজের গায়ে ঢেলে কী এক অবস্থা করেছে!
-এ তো ভয়াবহ অবস্থা! আর আপনি বললেন সে কাজ চুরি করতে শুয়ে আছে?
মুখে একটা চিন্তিত ভাব এনে খালা বললেন,
-হ্যাঁ অবস্থার বেশ অবনতি হয়েছে দেখছি। আমরা অবশ্য ডাক্তার ডাকার কথা ভাবছিলাম। আজকে রাতেই ডাক্তার ডেকে আনব।
বলে আমাকে ঠেলেঠুলে ও ঘর থেকে সরিয়ে নিলেন তিনি। আমি আবারও পরাজিত হলাম নিজের বিবেকের কাছে। জয়ী হলো পলায়নপরতা।
এভাবে আর কতদিন? কতদিন বিবেককে বেশ্যা বানিয়ে সমাজপতিদের রঙমহলে খেমটা নাচ নাচানো? আর কত পালিয়ে বেড়ানো? আর কত নিচে নামা? আমি নামতে নামতে সমাজের নিকৃষ্টতম অংশের শিশ্নচোষক হয়ে গেছি। তারা কেড়ে নিয়েছে গ্রাম্য বালিকার ভানহীন হাসি, তাকে করেছে তাদের কামনা আর নিষ্ঠুরতার বশংবদ, আর আমি...আমার নীরবতা কি তাদের অপরাধের আজ্ঞাবহ না? খিকখিক করে কারা যেন হাসছিল। হাসছিল শ্যামলিমা, হাসছিল বসুন্ধরা, হাসছিল প্রতিবাদী কিশোর-কিশোরী, গলার রগ ফুলিয়ে স্লোগান দেয়া তরুণ…
ব্যঙ্গের হাসি। ম্লান এবং করুণ।
আর হাসছিল ক্ষমতাবানেরা, নির্যাতকেরা।
নাহ, আমি আর নিজেকে বিকিয়ে দেবো না, সঁপে দেবোনা বিবেককে। আরেকবার যদি আর একটা অনাচার দেখি...
সেই মাহেন্দ্রক্ষণে আমি খুনের সিদ্ধান্ত নেই। পৃথিবী আমায় চিনবে এখন, আমি হবো নতুন আলোর ঝাণ্ডাধারী। সবাই আমায় কুর্ণিশ করবে। সম্ভ্রম করবে।
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজ হাতে নিয়ে একটি খবরে আমার চোখ আটকে যায়,
"রাজধানীর সবুজবাগে গৃহপরিচারিকার ওপর ন্যাক্কারজনক নির্যাতন। আটক গৃহকর্তা এবং গৃহকর্ত্রীর জামিন মঞ্জুর"।
নামগুলো আমার খুব পরিচিত!
হ্যাঁ, এরকমই তো হবার কথা! সচ্ছলেরা সাচ্ছন্দ্যে অত্যাচার করবে, গরম পানি ঢেলে দেবে, খুন্তি দিয়ে খোঁচাবে, যৌন নির্যাতন করবে সবুজ গ্রাম্য বালিকার ওপরে, অতঃপর কিছু টাকা জামিন দিয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যাবে! নাহ, এবার আর ওসব হতে দিচ্ছি না আমি। আমার চৌকস বন্ধুদের অযথা আন্দোলন শুরু করার আগেই ফলপ্রসু কিছু একটা করবো। হ্যাঁ, হত্যা করবো তাদের। চরম কষ্ট দিয়ে। এছাড়া তাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত কোনভাবেই হতে পারে না।
আমি যখন খালুর কলার ধরে তার মাথা দেয়ালে ঠুকে দিলাম, খালার চোখে তখন বিস্ময়।
-হাসপাতালে পাঠাইছেন, না? খুব জ্বর সেজন্যে? ভাবছেন আমি কিছু বুঝি না?
খালুর অন্ডকোষে কষে একটা লাথি মারলাম আমি। সে আপাতত কিছুক্ষণের জন্যে অচল। খালার দিকে নজর দেয়া যাক এবার। বটি নিয়ে তার পিছু ধাওয়া করলাম। মোটা মানুষ, অল্পতেই হাঁপিয়ে উঠলেন। যখন বুঝলেন যে দৌড়ে আর লাভ নেই, আত্মসমর্পণ করলেন।
-বাবা শোনো, হ্যাঁ আমার ভুল হয়েছে...
-চুপ মাগী। আর একটা কথাও না।
খুন দুটো আমি করেছিলাম ঘোরের মধ্যে। হঠাৎ সংবিৎ ফিরে পাওয়ার পর আমি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়লাম। একটা ন্যায্য বিচার করা হয়েছে, এই বোধের বদলে অজানা একটা ভয় আমাকে তাড়িয়ে বেড়াতে লাগল। তাদের শূন্য চোখের দৃষ্টিতে যেন আমার জন্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। নাহ, এমনটা হলে তো চলবে না। আমি তো জাত বদমাশ সাইকো স্বাভাবের খুনী না। আমি কাজ করেছি মঙ্গলের জন্যে। আমি তো দূর করতে চেয়েছিলাম এইসব অন্যায়, পাপ, অপরাধ, তাই না শফিক ভাই?
শফিক মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়েছিল।
-আমি দরোজা খুলে নিচে নেমে গেছিলাম। খুবই অনুচিত কাজ ছিল সেটা। খুনের সময় কেউ এরকম অদ্ভুত কাজ করে? আসলে করে। কারণ, সিনেমায় যেমন দেখায় ব্যাপারগুলি অত তাড়াতাড়ি হয়ে যায় না। মানুষের জান বের হয়ে যেতে সময় লাগে। দুটো মানুষকে খুন করা মোটেও সোজা কাজ না। আমার চা আর সিগারেট খাবার তেষ্টা পেয়েছিল। তাই নিচে নেমেছিলাম। নিচে নামতে গিয়ে আপনার সাথে দেখা। আমি জানি না আপনি কেন এসেছিলেন। আপনিও কি তাদের খুন করতে চেয়েছিলেন? জানি না। তবে আপনাকে দেখে মনে হলো আমি আপনাকে অনেকদিন ধরে চিনি। আপনি অপরিচিত কেউ নন। আপনাকে বিশ্বাস করা যায়।
শফিক আর মেনন একসাথে ঢুকেছিল ঘরে। দরোজা কেন বন্ধ, সেই চিন্তা তাদের মাথায় এলো না। তারা কলিংবেলে চাপ দিলো।
ভেতর থেকে দরজা খুলে দিয়েছিল কেউ একজন।
-আরে মেনন? কেমন আছো তুমি বাবা? অনেকদিন পর এলে। ভালো সময়ে এসেছো। তোমার খালুজান তোমাকে ফোন করার কথা ভাবছিলো। কী যেন ক্রিকেট ম্যাচ হচ্ছে, দুজনে মিলে দেখবে বেশ, এসো! আমি একটু ব্যস্ত থাকবো। কতিমনের খুব জ্বর। দেখার কেউ নেই।
শফিক ভড়কে গিয়েছিল। মেনন তাকে এসব কী বলে নিয়ে এসেছে এখানে? কোথায় সেই রক্তাক্ত হত্যাদৃশ্য? কোথায় প্রতিশোধের মঞ্চায়ন? কোথায় ন্যায়ের প্রদীপ? আর মেননই বা কোথায়? বজ্জাতটা পালিয়ে গেছে?
হ্যাঁ এমনটাই তো হওয়ার কথা! খালা-খালুরা চিরজীবন সজ্জন থেকে যাবেন, কতিমনকে সামান্য জ্বরের জন্যে হাসপাতালে পাঠাবেন, কোন অছিলায় মারধোর করবেন না, আর শফিক বেওকুফ অপেক্ষায় থাকবে কবে তারা ভয়ানক কিছু করেন আর কখন তাদেরকে খুন করে হিরো হবো! ড্রয়িংরুমের ভেতর থেকে টিভি চলার শব্দ ভেসে আসছে। সেদিনের ক্রিকেট খেলায় বাংলাদেশ ভালো করছিল। ঘরের ভেতর থেকে খালু তাদেরকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছিলেন। একটা সুন্দর সচ্ছল বাংলাদেশী সন্ধ্যা।
"কতিমনের জ্বর কি খুব বেশি?"
শফিক জিজ্ঞেস করেছিল।
এই হলো শফিকের জীবন। লেখক শফিক বার্নার্ড তুঘলক। তার জীবন যতটা না রক্তের, মাংসের আর মদের, তার চেয়েও বেশি গানের, গল্পের আর স্বপ্নের। এই করে করে হয়ে গেল সাইত্রিশ বছর বয়েস। আর কদিন পরে তার বয়স হবে আটত্রিশ। তার জন্যে কেউ কেক কাটবে না, পুরোনো প্রেমিকারা ঘরের কাজের ফাঁকে, স্বামীর সোহাগিনী আর সন্তানের কড়া অভিভাবক হয়ে কাটিয়ে দিবে আরো একটি ব্যস্ত দিন। শফিক বার্নার্ড তুঘলকের কথা তাদের মনে পড়বে না। শফিকের ইচ্ছে করে এই পরাজিত নির্বিকারত্বের জীবন থেকে বের হয়ে আসতে। লেখালেখিটা চালিয়ে যেতে হবে, যেহেতু এখনও এখান থেকে টাকাপয়সা আসছে কোনো না কোনোভাবে। সুন্দর থাকতে থাকতে শেষ হয়ে যেতে হবে। আর পান করতে হবে প্রচুর মদ, ভালো মদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৩৬