চুম্বনের সময় দীপ্তিময়ীর অভিব্যক্তি খুবই আবেগঘন থাকে। সে দুহাত দিয়ে আমার গলা পেঁচিয়ে ধরে, চোখ বন্ধ করে মাথাটা একদিকে কাত করে রাখে। তখন তাকে দেখে মনে হয় সে যেন চুমুক দিয়ে আমার প্রাণরসসমস্ত শুষে নিয়ে আমাকে ছিবড়ে বানিয়ে ছেড়ে দিবে। প্রথমে সে শুরু করে কোমলভাবে। ঠোঁটে ঠোঁট লাগলো কী লাগলো না, কিছুক্ষণ পরে সে ঠোঁট কামড়ে ধরে। তার সমস্ত শরীর ধীরে ধীরে ছন্দিত স্পন্দনে আমাকে গ্রাস করে নিতে থাকে। বাইরে থেকে তাকে দেখলে মনে হতে পারে সে কোন গভীর উপাসনায় মগ্ন। চুমুপর্ব শেষ করে যখন আমি তার শরীরের বৃত্ত-উপবৃত্তে স্পর্শক হয়ে ছুঁয়ে থাকি তখন তার শরীর কাঁপতে থাকে। আমার চুল সাঁপটে ধরে সে গোঙাতে থাকে অল্প অল্প।
কিন্তু আজ দীপ্তিময়ীর কী হলো? তার শরীরে প্রবিষ্ট হবার সাথে সাথেই সে কেঁদে উঠলো ফুঁপিয় ফুঁপিয়ে। আমি অবাক হয়ে তাকালাম। ব্যাকুল হয়ে সুধোলাম, "কাঁদছো কেন? কী হয়েছে তোমার?"। দীপ্তিময়ী ফোঁপাতে ফোঁপাতে মাথা নাড়িয়ে জানালো তার কিছু হয় নি। কিছু না হলে মানুষ এমনি এমনি কাঁদবে কেন? আমি তার শরীর থেকে বিযুক্ত হয়ে তার চোখের দিকে তাকালাম। চোখে চোখ রাখার পর তার কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেলো। সে ঠোঁট কামড়ে ধরে প্রাণপন চেষ্টা করছে কান্না সামলাতে। তবুও দুপাশে মাথা নেড়ে আমাকে বোঝাতে চাইছে, কিছু হয় নি। আমার রমনেচ্ছা মিইয়ে গেলো। আমি তাকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেসে যাবার সুযোগ দিলাম। কাঁদুক সে। জানি না কত শতাব্দীর জমে থাকা অভিমান বুকে পুষে রেখেছিলো সে। কাঁদো দীপ্তিময়ী, কাঁদো।
কিন্তু তার এই কান্না ছিলো ক্ষণিকের। আমার বুক থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে ঠোঁটে কষ্টজর্জিত একটি হাসি এনে সে আমাকে নতুন করে সঙ্গম শুরু করার আহবান জানালো। হায় দীপ্তিময়ী! তুমি কি এতই পর হয়ে গেছো আমার, যে অনুভূতির সম্মিলনে একীভূত হবার পরিবর্তে গেরস্থালি কর্মের মতো জীর্ণ হয়ে যাওয়া নিরাবেগ সঙ্গমে আহবান করছো? তুমি কি আমাকে প্রেমিক ভাবতে পারছো না আর? আমি কি তোমার সেই স্বামী যে স্ত্রীর রন্ধনকলা আর রাতের বেলা রতিকলা দুটোকে এক নিক্তিতে মেপে ঝানু ব্যবসায়ীর মতো প্রাপ্য বুঝে নিয়ে গোঁফে তা দিয়ে হাসে? দীপ্তিময়ী, আমি জানি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, আমাদের সম্পর্কের মাঝে কখনও কর্দম, কখনও বরফপিণ্ড জমে দূরত্ব বাড়িয়েছে। কখনও নীরব কান্নায় কখনও সরব অভিমানে বর্ণহীন ক্ষ্যাপাটে আঁধার এসে মুছে দিয়েছে রাতের রঙ। দুপুরের অলস সময়টা জলে ভেজা ভীরু চড়ুইয়ের মত গুটিয়ে ছিলো ঘরের এক কোণে, নিস্প্রভ। কই তখন তো তুমি কাঁদো নি! কান্নার কারণ সুধোবো বলে যখন তাকিয়েছি তোমার দিকে, তখন তোমার চোখে আশ্চর্য স্থিরতা। সেই চোখ নীরবে বলে দেয়, তোমার কান্নার কারণ আমাকেই খুঁজে নিতে হবে, বারবার প্রশ্ন করে কোনো লাভ নেই। এই মৌন বচন মেনে নিয়ে বিছানা থেকে নেমে, হারিয়ে যাই আমাদের অন্তর্লীন রৌদ্রনগরে।
এ কী! এখানে এত কুয়াশা কেনো? কুয়াশাজগতে হাঁটতে গিয়ে দিক ভুল হয়ে যায় বারেবার। পথহারা হলে চলবে না। এখানেই লুকিয়ে আছে দীপ্তিময়ীর অশ্রূ উপাখ্যান। এই কুয়াশাজগতের অন্ধিসন্ধিতে আমাদের সম্পর্কের যাবতীয় ঘটনা লিপিবদ্ধ আছে। কবে প্রথম চুমু, কবে শেষ আদর, কবে প্রথম হাত ধরা, কবে কেমন ঝগড়াঝাটি, কথা না বলে থাকা, সব গচ্ছিত আছে এখানে। বড় বিচিত্র এই সম্পর্ক নগর। এর এবড়ো থেবড়ো পথে হোঁচট খেয়ে হাঁটতে হাঁটতে কত কিছুই দৃশ্যমান হয়! অনেকদিন পর এলাম। আগে নিয়মিত আসা হতো এখানে। তখন এটা ছিলো রোদনগরী। আমাদের সম্পর্কের ওমে প্রজ্জলিত হতো নক্ষত্ররাজি, আলো বিলাতো অকৃপণ। খোলা হাওয়ায় আমাদের চুল উড়তো। জীবনের সমস্ত সৌন্দর্য নেমে আসতো এ ধরায়। আমরা হাসতাম, গাইতাম, ভালোবাসতাম। আমাদের জুড়ি মেলা ভার ছিলো। আর আজ, আমি একা এই ধূসর শহরে।
কিছুক্ষণের মধ্যে আমার চোখে এই গুমোট বাধা ধূসরতা সয়ে যায়। কাঁটা বিছোনো পথে সাবধানে হাঁটতে শিখে নিজেকে ক্ষতবিক্ষত হওয়া থেকে বাঁচিয়ে চলি। এখানে পুষ্পবৃক্ষে থরে থরে সাজানো আছে আনন্দ, অশ্রূফোয়ারা থেকে অক্লান্ত প্রবাহিত হচ্ছে কান্নাকাহন। আনন্দ আজ রহিত থাক, আমি অনুসন্ধান করি কান্নার। দীপ্তিময়ী কেন কেঁদেছিলো আমাকে জানতেই হবে।
ভবঘুরের মতো হাঁটতে থাকি, হাঁটতেই থাকি দীর্ঘক্ষণ ধরে। কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না কান্নার ফোয়ারা। বড় ক্লান্ত, অবসন্ন লাগে। কেউ কি নেই পথ দেখাবার? বিশ্রাম নেবার জন্যে একটা পাথরের ওপর বসি। কিছুটা বুঁজে এসেছিলো চোখ, হঠাৎ একটা হল্লায় তন্দ্রা ভেঙে যায়। কারা যেন পাথরটির কাছে এসে হৈ হুল্লোড় করছে। কয়েকজন হাওয়াই মনের ফূর্তিবাজ তরুণ। ওরা এখানে এলো কী করে? তারা আমাকে দেখে বিদ্রূপ করে এই আনন্দনগরে এসে বোকার মত হেঁটে-ঘুমিয়ে সময় নষ্ট করার জন্যে।
-আরে বন্ধু! এখানে এসে কেউ ঘুমোয় নাকি? এসো আনন্দ করি। চলো পান করি জীবনের ঐশ্বর্য। আমার সন্ধানে খুব ভালো অমৃতসুধা আছে।
-দুঃখিত, বন্ধুরা। আমি এখানে অন্য কাজে এসেছি। সুধাপানের সময় আমার নেই। হাঁটতে হবে আরো বহুদূরের পথ।
-তো কী এমন রাজকার্য নিয়ে এসেছো শুনি?
-আমার স্ত্রী... সে হঠাৎ করে খুব কেঁদে উঠেছিলো। কেন কেঁদেছিলো তার কারণ জানতে এসেছি।
শুনে তারা আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায়। স্পষ্টতই ব্যাপারটা তাদের পছন্দ হয় নি।
-আরে মেয়েমানুষের মেজাজমর্জির কোন ঠিক আছে না কি? কখন খিলখিল করে হাসবে, কখন ফোঁসফোঁস করে কাঁদবে, কখন ঢঙ করে কথা বন্ধ রাখবে বোঝা বড় দায়। তারপরেও এসেছো যখন খোঁজ পেয়ে যাবে ঠিকই। তার আগে তোমার দরকার প্রাণশক্তি। এসো না! কয়েক ঢোক খাও আমাদের সাথে।
আমি দোনোমনা করতে লাগলাম।
-কিন্তু ঠিক...
তারা বুঝতে পারলো এটাই মোক্ষম সময় আমাকে কবজা করবার! আমাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই হ্যাঁচকা টানে উঠিয়ে নিয়ে চলা শুরু করলো। আমার মধ্যেও দ্বিধার ভাবটা কেটে গেলো। ঠিকই তো, কয়েকঢোঁক খেলে কী এমন ক্ষতি হবে! দীপ্তিময়ীকে জানতে না দিলেই হলো। ওরা গলা ছেড়ে গান গাইছে,
"সিংগিং ইন দ্যা রেইন
সিংগিং ইন দ্যা রেইন
হোয়াট আ গ্লোরিয়াস ফিলিং
আই এ্যাম হ্যাপি এগেইন!"
আমার নিজেকে বেশ সুখী সুখী লাগে। আমিও তাদের সাথে গলা মিলাই। কিছুদূর হাঁটার পরে একটা পানশালা পড়লো। আমরা হৈহৈ করে ঢুকলাম সেখানে। সেখানে মাত্র একজন পরিচারিকা রয়েছে উর্দি পরা। তার মুখ ঢাকা। আমাদের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলো কী কী লাগবে। পরিচারিকার কণ্ঠটা আমার খুব চেনা চেনা লাগে। কোথায় যেন শুনেছি এই কণ্ঠ, কিছুতেই মনে করতে পারি না। অবশেষে হাল ছেড়ে দিয়ে জুলজুল করে তাকিয়ে থাকি সরবরাহকৃত পানীয়ের দিকে। বড্ড তেষ্টা পেয়েছে আমার। প্রথম কয়েক চুমুক আমরা নিঃশব্দেই খাই। ধীরে ধীরে আমাদের মধ্যে স্ফূর্তির একটা ভাব জাগ্রত হয়। আমরা পরস্পরের সাথে পরিচিত হই এবং পৃথিবীর সমস্ত কিছুকে তুচ্ছ করে আরো বেশি করে গিলতে থাকি। আমি ভুলে যাই আমার মাত্র কয়েক ঢোঁক পান করার কথা ছিলো।
-তো ভ্রাতা, তুমি তো দেখছি ভীষণ বউন্যাওটা হয়েছো। বউ কবে কেঁদেছিলো না হেঁচকি তুলেছিলো তাতেই অস্থির হয়ে এতদূর পথ পাড়ি দিয়ে এসেছো!
খোঁচা দেয় তারা আমাকে। আমিও খোঁচা খেয়ে ক্ষেপে উঠি।
-কে বলেছে আমি বউ ন্যাওটা হ্যাঁ? আমি ওসব কিছুই পরোয়া করি না। দুনিয়াটা হলো এক বিশাল ফূর্তিক্ষেত্র। এখানে নেশা ছাড়া আর ভালো কিছু নেই। সম্পর্ককে গ্লোরিফাই করা ওসব নীতিবাক্যের আমি থোরাই কেয়ার করি।
আমি ভুলে যাই যে আমার কেবলমাত্র দু-তিন ঢোঁক পান করার কথা ছিলো। আমি ভুলে যাই দীপ্তিময়ীর অশ্রূসজল চোখে কত না বলা কথা ব্যক্ত হয়েছিলো। আমি ভুলে যাই এই হৃদয়নগরে শুধুমাত্র আমাদের দুজনের থাকার কথা ছিলো। এইসব ধড়িবাজ মদগ্রস্থ ছেলেপুলে কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে আমাদের হৃদয়কে অধিগ্রহণ করে তাবু খাঁটিয়ে বসেছে টেরই পাই নি । আমি এখন নেশায় মশগুল। নেকাবে আবৃত পরিচারিকার ডাক পড়ছে আমাদের টেবিলে বারবার। আমি নেশারাঙা চোখে তার দিকে তাকিয়ে কী যেন খোঁজার চেষ্টা করি, কিন্তু নেশার ঘোরে ঠিক ঠাহর করে উঠতে পারি না। আর এদিকে নরক গুলজার করা শোরগোলে ওদিকে মনোযোগ দেয়ার সুযোগও আসে না। আমরা মদ খেতে খেতে খিস্তিখেউড় করতে থাকি। এখানে মদের যোগান অফুরান। আমাদের পকেটে টাকাও বেশুমার।
-নিজের পকেটের টাকা থিকা মদ খাই, আমারে ঠেকায় এমন সাহস কার! কোনো ছিচকাঁদুনে মাইয়ার ফিঁচফিঁচানি দেখার টাইম নাই আমার। এই যে তোরা, তোরাই আমার প্রকৃত বন্ধু। আর বাকিসব মিছা।
আমি বন্ধুদের আলিঙ্গন করতে যাই, কিন্তু টলমল পায়ে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করতে না পেরে হোঁচট খেয়ে পড়ি। আর সেই সাথে শরীরের অভ্যন্তরীন সকল কল-কবজা যেন বমিরূপে উদগত হলো। এতে আমার নব্যপ্রাপ্ত বন্ধুরা ক্ষেপে গিয়ে আমাকে লাথি মারা শুরু করলো। আমার চোখের দৃষ্টি তখন ঘোলাটে। নেশার ঘোরে লাথি-ঘুষি কিছুই টের পাচ্ছি না। এমন এক সময়ে পানশালার পরিচারিকাটি আবার এলো আমাদের টেবিলে আর কিছু লাগবে কী না জানতে। ততক্ষণে যুবকের দল আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমার নেশাও কাটতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে। নেকাবে আবৃত পরিচারিকার চোখটাকে হঠাৎ করেই আমি চিনতে পারি।
দীপ্তিময়ী!
শরীর তার ব্যথা জানান দিচ্ছে ধীরে ধীরে। কুয়াশা আরো গাঢ় হয়ে জড়িয়ে ধরছে আমায়। এক হাত দূরের দৃশ্যও কিছু দেখা যাচ্ছে না। কোথায় হারালো দীপ্তিময়ী? আমি চিৎকার করে ডাকতে থাকি তাকে। কোনো সাড়া মেলে না। বিফল মনোরথে ভগ্ন হৃদয়ে হাঁটতে থাকি পরাজিত সৈনিকের মতো। এসেছিলাম দীপ্তিময়ীর কান্নার উৎস খুঁজতে, আর চলে যাচ্ছি দুর্বৃত্তদের কারসাজিতে সবকিছু ভুলে গিয়ে মাতলামি করে লাঞ্চনার শিকার হয়ে। আমার মন গভীর অনুশোচনায় ভুগতে থাকে। দীপ্তিময়ীর কাছে কাতর অনুরোধ করি একটিবারের জন্যে হলেও দেখা দিতে।
পথিমধ্যে আবারও সেই দুর্বৃত্ত যুবকদের দলের সাথে দেখা হয়ে যায় আমার। তারা আমার কাছে ক্ষমা চায় বেহেড মাতাল হয়ে কৃতকর্মের জন্যে এবং আরো একবার মাতাল হবার আহবান জানায়। আমি সরোষে তা প্রত্যাখ্যান করি। তাদের প্রতি আমার ক্ষোভ এজন্যে নয় যে তারা মাতাল অবস্থায় আমাকে মেরেছে। মাতাল অবস্থায় এমনটা হতেই পারে। তাদের ওপর নয়, আমার নিজের প্রতিই নিজের ঘৃণা জাগে তাদের কথায় প্ররোচিত হয়ে মদ্যপান করার জন্যে। দীপ্তিময়ীর সাথে আমার দূরত্ব সৃষ্টি হবার মূল কারণটাই তো এটা, এই নেশা আর লাফাঙ্গা অকর্মণ্য, নেশাখোর যুবকদের সাথে মেলামেশা করা। আমি তাদেরকে ধাওয়া করে এই হৃৎঅঞ্চল থেকে তাড়িয়ে দেই। এখন এই জায়গাটা কেবল আমার আর দীপ্তিময়ীর। কুয়াশা কেটে যেতে থাকে। দূরে তার ছায়া দেখা যায়। গত কয়েকদিনের স্মৃতি আমার মনের মধ্যে ঘাঁই মারতে থাকে। মাতাল হয়ে বাসায় ফেরা, অকারণেই ঝগড়াঝাটি। নেশা কেটে গেলে কথা বন্ধ। একই ঘরে থেকেও আমরা যেন দুই সমান্তরাল পরাবাস্তব জগতের অধিবাসী। যেখানে একে অপরের সাথে দেখা হবার কোন সম্ভাবনাই নেই। আমাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। তারপর হঠাৎ একদিন...এক বৃষ্টির রাতে সমস্ত অর্গল ভেঙে তাকে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দেয়া। আমাদের কন্ঠস্বর কথা বলে নি, কথা বলেছিলো ঠোঁটযুগল।
হৃৎঅঞ্চলে রোদ নেমে আসে। দীপ্তিময়ী এখন আমার থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে। আমি কাছে গিয়ে তার কাঁধে হাত রাখি। সে এখন আর নেকাব পরে নেই। হাওয়ায় তার চুল উড়ছে। আমার স্পর্শ পেয়ে সে তাকায় এক নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিতে। কী ছিলো না সেই দৃষ্টিতে! দূরত্ব মোচনের আকাঙ্খা, জমিয়ে রাখা অভিমান, চুম্বন অভিলাষ, ব্যক্তিত্বের সংঘাতের মূলোৎপাটন...
ধীরে ধীরে তার সমস্ত অর্গল ভেঙে যাওয়ার আনন্দই কি ছিলো হঠাৎ কান্নায় ভেঙে পড়ার কারণ?
আমরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসি। তারপর দুজনে হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে বের হয়ে আসি আমাদের রৌদ্রকরোজ্জল হৃৎঅঞ্চল থেকে। এবার ভালো করে তালা মেরে যাই, যেন উটকো লোকজন সেখানে আর না ঢুকতে না পারে।
দীপ্তিময়ী কাঁদছে। আমি চুম্বনের ইচ্ছা রহিত রেখে শুনতে থাকি অশ্রূত অনুভূতিদের অশ্রূগাঁথা।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:৩৮