somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্ফুটনবিন্দু

২৭ শে মে, ২০১৪ রাত ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শাহীনের শরীরের মাংসগুলো ভীষণ তড়পাচ্ছে কদিন যাবৎ। যেন বেরিয়ে আসতে চায় শরীরের শৃঙ্খল থেকে। ব্যাপারটা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে শাহীনের মনে হলো সে এ কদিন বড্ড বেশি মাংস খেয়ে ফেলেছে ঘরোয়া আয়োজনে বা বিভিন্ন উৎসবে। সে জন্যেই হয়তো বা শরীরে কিছু বাড়তি মাংস যোগ হয়েছে। স্থান সংকুলানে সমস্যা হচ্ছে বলেই তারা এমন করছে। শরীর তার স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় কদিন পরেই তা ঠিক করে নেবে। এই ভেবে সে দুশ্চিন্তা করা আপাতত স্থগিত করে দিয়ে আমিষজাত খাদ্য গ্রহণে সংযমী হবার কথা ভাবে। কিন্তু দিনকে দিন তড়পানি বেড়েই চলে। মনে হয় যে শরীর থেকে ছিটকে যাবে। এটাকে অবশ্য শক্তিমত্তার প্রকাশও মনে করা যায়, সে ভাবে। শক্তি বৃদ্ধির ফলে এই অনাস্বাদিত কিলবিলে মাংসল অনুভূতি। এই বাড়তি শক্তি, বাড়তি মাংস দিয়ে ফলদায়ক কী করা যেতে পারে এই চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়ে শাহীন। অপেক্ষাকৃত শক্তিধর কাউকে পাঞ্জাযুদ্ধে আহবান করবে? দেয়ালে ঘুষি মারবে? ভারী বস্তু উত্তোলন করবে? এসব ভাবতে গিয়ে শরীর অতিক্রম করে মনের মধ্যেও আলাদা জোশ চলে আসে তার। তার চিন্তাভাবনা হয়ে ওঠে ধ্বংসাত্মক এবং বেপরোয়া। সে ঠিক করে এরপরের সুযোগেই এই বাড়তি শক্তির একটা বিলিবন্টন করে ফেলবে। অপেক্ষা করতে থাকে হাইজ্যাকারদের কবলে পড়ার, বা পকেটমারকে হাতেনাতে ধরার যাতে সে ঝাঁপিয়ে পড়তে মুখিয়ে থাকা মাংসপেশীগুলোকে শান্ত করতে পারে।
তাকে খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হলো না। নৈরাজ্যের শহরে শাহীনের কাঙ্খিত বস্তু একটু চোখ কান খোলা রাখলেই সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। বড় রাস্তার মোড়টা পার হতে গিয়ে সে একদিন দুজন রিকশাঅলার মধ্যে বেদম মারামারি দেখতে পেলো। জনতা খুশিমনেই বৃত্তাবদ্ধ হয়ে দেখছিলো নৃশংস এই লড়াই। আর এসব দেখে শাহীনের মাংসপেশিগুলো যেন চিৎকার করে উঠলো একযোগে, "আমাদের কাজে লাগাও, শান্ত করো, তৃপ্ত করো"। শাহীন তাদের কথাকে গুরুত্ব দিয়ে শার্টের হাতা গুটিয়ে চললো ব্যাপারটার একটা সুরাহা করতে। দৌড়ে তাদের কাছে পৌঁছুতে গিয়ে পায়ের এবং কোমড়ের পেশীগুলো ব্যবহৃত হবার উল্লাসে অশ্লীলভাবে হেসে উঠলো। ততক্ষনে একজন রিকশাঅলা অপরজনকে পেড়ে ফেলেছে। মাটিতে শুইয়ে কিল ঘুষি দিয়ে যাচ্ছে প্রবল। শাহীনের হাতের মাংসগুলো ততক্ষণে প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। সামনে কর্মব্যস্ত সময়। তড়পাচ্ছে তারা খুব। এই ছিটকে পড়লো বলে!
অবিশ্বাস্য যে আশঙ্কাটা গত কয়েকদিন যাবৎ শাহীন পুষে রেখেছিলো তাকে সত্য প্রমাণিত করে গোড়ালি থেকে এক টুকরো মাংস খসেই পড়ে গেলো। ছিটকে পড়লো। কমে এলো শাহীনের চলার গতি। অপ্রস্তুত ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে রইলো বিবাদমান দুই শ্রমজীবির সামনে। তামাশা দেখতে ছেদ পড়ায় বিরক্ত জনতার ধমকে বাধ্য হয়ে শাহীনকে চলেই আসতে হলো সেখান থেকে। খুব ইচ্ছে ছিলো তার গোড়ালির মাংসটুকু নিয়ে আসবে। তা আর হলো না। ওটা ততক্ষণে ছোঁ মেরে নিয়ে গেছে একটা নেড়ি কুকুর।
মাংসেরা এখন তড়পানো বন্ধ করে নতুন খেলায় মেতে উঠেছে। তাদের মধ্যে এক নতুন ধরণের আন্তসংযোগ খেয়াল করছে শাহীন। খুব ধীরে ধীরে তরঙ্গায়িত হয়ে বার্তা চলে যাচ্ছে উরুর মাংসপেশী থেকে কাঁধ আর গলার সংযোগস্থলে, পুরুষাঙ্গ থেকে পেটে। তারা যেন ফিসফিসিয়ে কী বলছে, কীসের যেন ষড়যন্ত্র করছে। আরেকটু খেয়াল করে চাপা হাসির শব্দ শুনতে পেলো শাহীন। এইতো, এবার তাদের কথাবার্তাও বেশ শুনতে এবং বুঝতে পারছে সে।
-এই লোকটা একদম উজবুক, বুঝলি না? একটু গরম হয়ে উঠে স্লেজিং করলাম, কিছু এনজাইমের ক্ষরণ ঘটালাম আর সে ভাবতে শুরু করলো যে তার শরীরে অসীম শক্তি এসে ভর করেছে। সে সুপারম্যান হয়ে গেছে।
-এর কাছে থাকার কোন মানে হয় না। একে তো উজবুক, তার ওপর দুর্বল। গোড়ালির মাংসটা ভালোই করেছে সময়মত সঁটকে পড়ে। আমাদের যে কবে এই সৌভাগ্য হবে!
-সময়মতো ঠিকই সরে পড়বো দেখিস। ও বেচারা আর কতদিন গোপন রাখবে? গোড়ালির অর্ধেকটা তো গেছে। সেটা না হয় জুতো পরে ঢেকে রাখতে পারবে, কিন্তু মুখের মাংস যখন খসে পড়বে তখন কী করবে?
শাহীন আতঙ্কিত হয়ে তাদের সমস্বরে হাসির শব্দ শুনতে পায়। সে চেষ্টা করে বিদ্রোহী মাংসদলের বিরুদ্ধে নিজের কর্তৃত্ব জাহির করে হুমকি দিয়ে কিছু বলতে। জবাবে আরো উচ্চস্বরে হাসির শব্দ আর টিটকিরির বাণ ছুটে এলে সে পিছু হটে। ঠিক কী কারণে মাংসদল এরকম ফাঁদ পাতলো এবং ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলো সে বুঝে উঠতে পারে না। নিজের দেহটা রক্ষা করতে এখন থেকে যথেষ্ট হ্যাপা পোহাতে হবে বোঝাই যাচ্ছে। শাহীন শুয়ে শুয়ে তার পরবর্তী প্রতিরোধব্যবস্থা সম্পর্কে ভাবতে থাকে। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে যে এটা একটা ফাঁদ ছিলো। প্রথমে টগবগ করে ফুটে উঠে তাকে উদ্দীপ্ত করে বা ক্ষেপিয়ে তুলে অতঃপর কোন বিশেষ ঘটনার সম্মুখীন করে যখন সে উত্তেজনার চরম সীমায় পৌঁছে যাবে সে সুযোগে দেহ থেকে ছিটকে যাওয়া। এভাবে ধীরে ধীরে তাকে মাংসশূন্য করা, এটাই তাদের মাস্টারপ্ল্যান। কী ভয়ংকর! তারা কেন এরকম করছে? ভাবতে গিয়ে মাংসগুলোর চরম অসহযোগিতায় তার দেহ শিথিল হয়ে আসে। সে ঘুমিয়ে পড়ে।
স্বপ্ন দেখে সে, তার মাথা থেকে মগজ বের হয়ে থলথলে পায়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। আহবান করছে সমস্ত মাংসপিন্ডকে বের হয়ে আসার। তার দেহ যেন অতি উচ্চ স্ফূটনাঙ্কের একটি বস্তু। প্রচন্ড তাপ দেয়া হচ্ছে তার শরীরে। সূর্যটা যেন কেয়ামতের দিনের মতো মাথার এক হাত ওপর থেকে অগ্নিবর্ষণ করে যাচ্ছে। দেহ ফুটছে কিন্তু গলছে না। অসহনীয় উত্তাপ সহ্য করে তার দেহের মাংসগুলো টিকে আছে। অপেক্ষা করছে কোন অলঙ্ঘনীয় আহবানের। কে সেই পরাক্রমশালী সূত্রধর? মস্তিষ্ক। তার আহবানে ফেটে ফেটে পড়ছে শরীর, ছিটকে ছিটকে পড়ছে মাংস। বুকের একাংশ বিস্ফোরিত হয়ে হৃৎপিণ্ড উন্মুক্ত হয়ে গেছে। ধড়াস ধড়াস শব্দে প্রানস্পন্দন শুধু নয় ধ্বংসের সঙ্গীতও রচিত হচ্ছে। হৃৎপিন্ডটা যাবে না ওখান থেকে। সে মজে আছে খেলায়। প্রাণের সলতেকে কোনক্রমে জ্বালিয়ে রেখে ছুড়ে ফেলছে অন্যান্য সব রসদ। টানটান হয়ে আছে উরুর চামড়া, সামান্য স্পর্শেই তা ছিঁড়ে গিয়ে অন্ত্যস্থ মাংস, চর্বি, আর যাবতীয় স্নেহজাতীয় পদার্থ ছিটকে পড়ে শামিল হচ্ছে মাংসের মিছিলে। তারা সবাই শাহীনের অবশিষ্টাংশকে ঘিরে মিছিল করছে, নাচছে আর ব্যঙ্গাত্মক শ্লোগান দিচ্ছে। "আমরা তোমার নই আর, ছিলাম না কখনও", "মাংসহীন কদাকার, কী হবে তোমার এবার?" ধীরে ধীরে শাহীনের দেহ মাংসশূন্য হতে থাকে। বুকের ভেতর হাহাকার জাগানো শূন্যতায় হৃৎপিন্ডটা হাহা করে হাসতে হাসতে স্পন্দিত হতে থাকে।

ঘুম থেকে উঠে শাহীনের প্রথমেই মনে হয় তার গোড়ালির মাংসশূন্য অংশটা ঢেকে রাখতে হবে। কাউকে টের পেতে দেয়া যাবে না। ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করা বেশ ঝঞ্ঝাটের হবে। কারণ এটা কোন সাধারণ ক্ষতচিহ্ন না। এখানে স্রেফ একফালি শূন্যতা। এ যুগের মানুষ বড় বিটকেলে বুদ্ধির। তারা ঠিকই আঁচ করে নেবে আদতে কী ঘটেছে বা ঘটতে যাচ্ছে। শাহীনকে উজবুক আর দূর্বল ঠাওরে মাংসদল যে কী ভয়ংকর পরিকল্পনা করেছে তা বের করে নিতে খুব একটু সময় লাগবে না। ইদানিং তাদের ভয়ডর অনেক কমে গেছে। শাহীনকে তোয়াক্কাই করে না। নিজেদের মধ্যে নির্বিঘ্নে আলাপ চালিয়ে যায়। আজকে সকালেই তো বলছিলো, বেচারা গোড়ালির মাংসপিণ্ডটা অতি উৎসাহ দেখাতে গিয়ে কুকুরের উদরস্ত হলো। এবার আর তা হবে না। বাকিরা সুযোগ পেলেই আলোখেকো বোকা পোকার মত যেখানে সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়বে না। তারা আগে দেখে নেবে অবতরণের সুবন্দোবস্ত আছে কী না। যদি কোন সাহসী এবং দশাসই মানুষের শরীরে গিয়ে জমতে পারে তাহলে আর ঠেকায় কে! মাংসের দলের কেউ কেউ আবার সেবামূলক কার্যে আগ্রহ প্রকাশ করে। তাদের মতে, সত্যিকারের ক্ষতিগ্রস্ত কোন মানুষ যাদের মাংসের অভাবে কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে, তাদের শূন্যস্থান পূরণ করাটাই শ্রেয় হবে। তবুও এই অকেজো লোকটার শরীরে ঘাঁটি গেড়ে থাকা আর না। আর এজন্যে তাদেরকে যা করতে হবে তা হলো, তাকে যথেষ্ট পরিমাণ প্রণোদনা যুগিয়ে উদ্দীপ্ত করা এবং তার ধারাবাহিকতায় যথাযথ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে উদ্দীপনার চরম বিন্দুতে পৌঁছে গেলে ঝাঁপ দিয়ে কাঙ্খিত স্থানে চলে যাওয়া।
এতসব কিছু জেনে শাহীনও বেশ সতর্ক রেখেছে নিজেকে। যত যাই ঘটুক, কোনভাবেই চরম উত্তেজিত হওয়া যাবে না। কোন পরিস্থিতিতেই না। তাহলেই সর্বনাশ ঘটে যাবে। মাংসগুলি ঝাঁপতালে ছন্দিত হয়ে পুনঃস্থাপিত হবে অন্য কারো শরীরে। শরীর ঠান্ডা রাখার জন্যে শাহীন খুঁজে পেতে কদুর তেল লাগায় সারা দেহে আচ্ছামতো। স্নেহবহুল খাদ্য বর্জন করে যদ্দুর সম্ভব। তারপরেও মাঝেমধ্যে সে বিদ্রোহের আগমনধ্বনি শুনতে পায়। ফিসফিসিয়ে কারা যেন করে যায় তাকে মাংসহীন করে ফেলার অভিসন্ধি। তারা এখন আরো সতর্ক এবং চতুর। সামান্য কোন সুযোগ পেলেই তা লুফে নেবে। সুযোগ পেতে খুব একটু সময় লাগে না। শাহীনের এক বন্ধুর ছেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ভরপেট বিরানি আর সফট ড্রিংকস খেয়ে, সুন্দরী মেয়েদের দেখে সে ভুলতেই বসেছিলো তার জীবনের মাংসঘটিত প্রতিকূল অবস্থার কথা। প্রায় পিঠখোলা ব্লাউজ পরিহিত স্বচ্ছ শিফনের শাড়ী পরা একজনকে দেখে তার শরীরের একটা অংশ উত্থিত হবার কালেই বিড়ম্বনাটা ঘটে। সে টের পায় তার শরীরে অসহ্য তাপ। মাংসগুলো যেন মেইলট্রেনের ডেলি প্যাসেঞ্জার। পিক টাইমে ট্রেইনে ওঠার জন্যে হুড়োহুড়ি শুরু করেছে। তার শরীর কাঁপতে শুরু করে ভয়ংকর উত্তেজনায়। দাঁতে দাঁত বাড়ি খায় কম্পনসংযোগে। কন্ঠনালীর ভেতর থেকে কে যেন বুনোস্বরে চিৎকার করে উঠতে চায়। দেহের ভেতরের জমিনে ভূমিকম্পের মত প্রলয়। খোলাপিঠের মেয়েটি তাকে দেখে এগিয়ে আসে সহযোগিতার জন্যে,
"কী হয়েছে আপনার? শরীর খারাপ লাগছে?"
"হ্যাঁ, মানে একটু বেশি খাওয়া দাওয়া হয়ে গেছে কী না অনেকদিন পর, আমার আবার গ্যাসের সমস্যা, আর তাছাড়া গরমটাও যা পড়েছে...হেহে হেহে হেহে"
শাহীনের অসংলগ্ন আচরণ এবং কথাবার্তায় মেয়েটি অবাক হলেও সবকিছু বুঝতে পেরেছে এমন একটা ভাব করে একমত হবার ভান করে ব্যাপারটা চুকিয়ে দিয়ে বিরক্তমুখে চলে যায়। তার ইচ্ছে ছিলো কিছুক্ষণ ফ্লার্ট করার। চলে যাওয়ার সময় সে বুঝতেও পারলো না শাহীনের পশ্চাদ্দেশ থেকে কিছু মাংস সন্তর্পণে বেরিয়ে গিয়ে তার স্তনে সেঁধিয়ে গিয়েছে। তার ব্লাউজ ফেটে যৌবন উপচে পড়ে। আর ছেলে ছোকড়ারা তা দেখে অশ্রূত সিটি বাজায়। সে না বুঝলেও শাহীন তার মাংসহীনতার নতুন অধ্যায়টা বেশ ভালোই বুঝতে পারে চেয়ারে বসতে গিয়ে পশ্চাতে ব্যথা অনুভব করে। সে ভাবে, "যাক, তাও পাছার ওপর দিয়ে গেছে। পেনিসের ওপর দিয়ে গেলেই তো গেছিলাম।"
অবশ্য তার পুরুষাঙ্গ কারণে অকারণে উত্থিত হওয়া আর প্রস্রাব করা ছাড়া কোন কাজেই আসে নি। ছাব্বিশ বছর বয়স হয়ে যাবার পরেও সে এখনও কারো সাথে সঙ্গম করে নি। খুব শীঘ্রই যে করবে সে সম্ভাবনাও নেই। ওদিকে সফল অভিযান শেষে তার মাংসদল একে অপরের সাথে আলোচনায় মেতে ওঠে। একাংশ বলে, এবারে আরো বেশি পরিমাণ মাংসের স্থানান্তর হওয়া উচিত ছিলো। আরেক অংশ জানায় যে মাংস পরিবহনের সাথে শারীরিক উত্তেজনার কোনরকম রৈখিক সম্পর্ক নেই বিধায় ঠিক কোনবার কতটুকু মাংস পরিবাহিত হবে এটা বলা দুষ্কর। তার পুরুষাঙ্গ কিছু বলতে চাইলে সবাই তাকে থামিয়ে দেয় এই বলে যে, পুরুষাঙ্গ না থাকলে সে আর কোনকিছুতেই আকুতি বা উল্লাস প্রকাশ করবে না, উত্তেজিত হবে না। ফলে অন্যান্য মাংসপিণ্ডরা অসুবিধায় পড়ে যাবে। তাই পুরুষাঙ্গের অবস্থান হবে সবার শেষে। সবাইকে চলে যাবার ব্যবস্থা করে দিয়ে তারপর সে যাবে। শাহীন এসব শুনে ভাবে "যাহ শালা, এখন থেকে পেশাব করা ছাড়া পেনিসকে দিয়ে কোন কাজই করাবো না। এই শালাকে অবলম্বন করেই বাকি মাংসগুলো চলে যাবার পাঁয়তারা করছে।“ কিন্তু ভাবলে হবে কী! কোন একজন জ্ঞানী ব্যক্তি না বলেছিলো "চামড়ার নলই সকল ক্ষমতার উৎস!" কথাটা একেবারে ফেলনা নয়, শাহীন বেশ বুঝতে পারে।

শাহীন ইদানিং শরীর গরম করে এমন খাবার একদম খায়ই না বলতে গেলে। তারপরেও সিনেমা দেখতে গিয়ে সে হারিয়েছে বুকের একখণ্ড মাংস, পাওনাদারের সাথে ঝগড়া করতে গিয়ে কনুই এর মাংস গাপ হয়ে গেছে। এখন তাকে এই গরমের মধ্যেও ফুলহাতা শার্ট পরে থাকতে হয় সবসময়। সে বুঝতে পারে না তার শরীরের মধ্যে কেন এসমস্ত কাণ্ড ঘটে চলেছে। সে বুঝতে পারে না তার কী এমন খামতি, যার কারণে মাংসেরা তাকে দুর্বল আর বেকুব ঠাউরে চলে যেতে চাইছে। সে ২৬ বছর বয়সের একজন স্বাস্থ্যোজ্জ্বল যুবক। ভালো চাকুরি করে। তার গলদটা কোথায়! ডাক্তারের কাছে যাবার কথা ভেবেছে সে। তাতে ভয়ানক ফল হয়েছে। টের পেয়ে মাংসমণ্ডলী হুমকি দিয়েছে এমন করলে তারা শরীরের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে তাকে মৃত্যুবরণে বাধ্য করবে। এমনিতে তার শরীরের কলকব্জাগুলো ভালোই কাজ করছে। কোথাও কোন সমস্যা নেই। শুধু স্নেহজাত খাবার বেশি খেলে বা কোনকিছুতে উত্তেজিত হলে তবেই ফাঁকতালে মাংসগুলো সঁটকে পড়ার ধান্দা করে। শেষতক নাচাড় হয়ে সে মাংসদিগের কাছে অনুনয় করে বসলো, "কেন এমন করছো আমার সাথে? আমার কী দোষ? আমি কী অপরাধ করেছি যে তোমরা আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাইছো?"। মাংসদল বেশ দার্শনিক একটা উত্তর দেয়। "দেখো, তুমি আসলে কী? আমাদের সমষ্টিই তো তুমি। আমাদের থাকা না থাকার ওপর তোমার তুমিত্ব কিছু বদলাবে না। কারণ এখানে "আমরা" আর "তুমি" সমার্থক। কোন সুন্দরী তরুণীর বক্ষ বা মাঝবয়েসী পুরুষের পেটে তোমার মাংস-চর্বি লেগে থাকা মানে সেটা তো তোমারই একরকম স্থানান্তর! আমরা যাওয়া মানেই তোমার যাওয়া। আর কে না চায় বদল, হাওয়াবদলের মত দেহবদলও ভালো একটা অভিজ্ঞতা। হ্যাঁ, তোমাকে উজবুক বা দূর্বল বলাটা সাময়িক উত্তেজনার বশেই ছিলো। তবে একঘেয়েমি থেকে কত ভয়ংকর কিছুই না হতে পারে বলো?"
এসব শুনে শাহীন বুঝতে পারে ব্যাপারগুলো বেশ ঘোঁট পাঁকিয়ে উঠেছে। এসব থেকে সহজে নিষ্কৃতি নেই। আর তাদের কথাও ঠিক তারা আর সে এখানে মিলেমিশে একাকার। তারা চাইছে দেহান্তরিত হতে, আর তাদের সমষ্টিই তো সে। তাহলে তার নিজের দেহের পক্ষে কেউ বা কারা আছে, যারা চাইছে না এই স্থানান্তর। কে বা কারা তারা?
শাহীন দিন দিন দূর্বল হয়ে পড়ছে। ইদানিং তার মাংসগুলো স্নায়বিক উত্তেজনা বা চর্বিজাতীয় খাবারের সৃষ্ট উত্তাপের মুখাপেক্ষী থাকে না। সুযোগ পেলেই ঝাঁপ দিয়ে চলে যায় অন্যের শরীরে। শরীরের অধিকাংশ অঙ্গই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। অন্তস্থঃ বহিস্থঃ নির্বিশেষে সব অঙ্গই। এখন একটা মোক্ষম সময় অনুধাবনের। কারা দেহান্তরের পক্ষে আর কারা বিপক্ষে! মেথড অফ এলিমিনেশন প্রয়োগ করে সহজেই এর খোঁজ পাওয়া গেলো। সম্পূর্ণ অক্ষত আছে কেবল তার পুরুষাঙ্গ আর মস্তিষ্ক। তবে কি তারাই এতদিন যুঝে গেছে তার পক্ষে? মানুষের, বিশেষ করে বলতে গেলে পুরুষের জীবন কি তবে পুরুষাঙ্গ চালিত এক মগজযান? সে কি এই অনুসিদ্ধান্ত থেকে পরিচালিত দীর্ঘ ব্যবহারিক পরীক্ষার একটা গিনিপিগ? সঠিক প্রশ্নটি করতে পারে নি বলেই এতদিন সে সঠিক উত্তর পাচ্ছিলো না। প্রশ্নের সন্ধান পেয়ে এবার সে সাগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে উত্তরের জন্যে। মস্তিষ্ককে স্টিমুলেট করার জন্যে প্রচুর গাঁজা আর শিশ্নকে শাবল বানানোর জন্যে ভায়াগ্রা। সাথে প্রচুর মধু আর মাংস খাবে। তারপর দেখা যাবে...

মস্তিষ্কের ভেতর যেন অনেকগুলো রঙধনু ঢুকে গেছে। চোখ বন্ধ করেও সে কেবল রঙ আর রঙ দেখছে। ডিজে পার্টিতে এক হাজার টাকা দামের টিকেট কিনে নিয়ে প্রচুর হাসছে সে, নাচছে আর লাফাচ্ছে। ডিজে পার্টিকেই সে তার পরীক্ষার জন্যে শ্রেয়তর স্থান ভেবেছে, কারণ এখানেই যৌনতন্ত্র আর মগজ স্টিমুলেটরের প্রকৃত পরীক্ষা হয়। আর এখানে প্রায় সবাই ঘোরগ্রস্ত থাকে বলে তার মাংসিক শূন্যতা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাবে না। হ্যাঁ, মাংস আর মধু কাজ শুরু করেছে। তার শরীর উত্তপ্ত হয়ে স্ফুটনবিন্দুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত গাঁজার প্রভাবে মস্তিষ্ক তড়পাচ্ছে। বন্ধু, তুমি ছিটকে পড়বে কী? ভায়াগ্রার প্রভাবে মহাউত্থান ঘটেছে তার। ঐ যে একজোড়া ছেলে-মেয়ে নাচছে, মেয়েটার পরনে যৌনাবেদনময়ী পোষাক। শিশ্ন, তুমি খসে পড়বে কী? সে ছুটে গিয়ে মেয়েটিকে চুমু খেলো। তার সঙ্গের ছেলেটা খিস্তি করে উঠে ঘুষি মারলো তাকে। ব্যস! এবার শুরু হবে আসল পরীক্ষা। প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে পাল্টা ঘুষি মারতে গিয়ে শাহীন খেয়াল করলো তার শরীর থেকে তীব্রগতিতে মাংস অবক্ষিপ্ত হচ্ছে। তার হাত, পা, উরু, পাছা, বুক, কাঁধ সবখান থেকে মাংস বুলেটের গতিতে ছিটকে পড়ছে এর ওর গায়ে। ডিজে ক্লাবের সদস্যেরা এমন মজার সঠিক সমঝদার। তারা কোন প্রশ্ন করলো না, তাদের মধ্যে কোন ভাবান্তর হলো না। মজা দেখবে বলে তাকে নগ্ন করে একটা খাঁচার মধ্যে পুরে রাখলো তারা। ততক্ষনে শরীরের সবখানের মাংসই ভীষণ রোষে নিক্ষিপ্ত হয়ে গেছে পুরো ক্লাবের সব সদস্যদের মাঝে। নতুন মাংসের সন্ধান পেয়ে ক্লাবের সদস্যরা মহা খুশি। তাদের মধ্যে হল্লা বেড়ে চলেছে। তারা আরো মাংসের দাবীতে গান ধরেছে নতুন। এখনও শাহীনের অস্থিসর্বস্ব দেহতে কিছু মাংস বাকি আছে। মাথার এবং পুরুষাঙ্গের। সবাই অপেক্ষা করছে কোনখান থেকে নতুন মাংস আসে। অনেক সময় পার হয়ে যায়। ডিজে ক্লাবের সদস্যরা নাচতে নাচতে ক্লান্ত। নতুন মাংসের আগ্রহে তাদের চোখ চকচক করছে। শাহীন তাদের দিকে তাকিয়ে কূটিল হাসি হাসে। সে তার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছে তখনই যখন তার হৃৎপিণ্ডটি উড়ে যায়। সেটা উড়ে খুব বেশিদূর যেতে পারে নি। এবং কেউ সেটার প্রতি কোন আগ্রহও দেখায় নি। সবাই শিকারীচোখে তাকিয়ে আছে তার মস্তিষ্ক আর পুরুষাঙ্গের দিকে। কোনটা আগে খসে পড়ে! ডিজে ক্লাবে তখন স্টয়িক ব্লিসের গান চলছে,
"দেখোনা এই যে আমি..."
ক্লাবের সব সদস্য তার দিকে তাকালে এই গানটার প্রতিধ্বণি হতে থাকে অবিরত সবার মাঝে।
"এই যে আমি..."
"এই যে আমি..."
"এই যে আমি..."
সবার হঠাৎ করে মনে হয় এই যে যৌনগ্রন্থি আর বিকারগ্রস্ত মস্তিষ্কের সমন্বয়ে তৈরি হৃদয়হীন এই পাষাণ কঙ্কাল এটাই মূল সে বা তারা। বাকি সব মাংসবিদ্যা, যা তারা এতদিন নিজের মত করে জেনেছে, সব ভুল। এর মাংস, তার মাংস, তাদের মাংস, ভোগবাদী সমাজে এই মাংস বিকিকিনির হাটে কোনটাই নির্দিষ্ট কারো নয়, শুধুমাত্র যৌনাঙ্গ আর মস্তিষ্ক ছাড়া। তবে জায়গাটা যদি ডিজেক্লাব না হয়ে টেলিভিশনের কোন টকশো হতো, কে জানে মস্তিষ্কটাও খসে পড়তো কী না! শাহীন তার উত্থিত পুরুষাঙ্গে হাত বোলাতে বোলাতে ভাবে এই পরীক্ষাটা পরে করে দেখতে হবে। আপাতত সে ডিজেক্লাবের হঠাৎ বেড়ে যাওয়া তাপমাত্রাটা নিয়ে ভাবে।

যাক, অন্যদের মাংসও স্ফুটনবিন্দুতে পৌঁছে যাচ্ছে তাহলে!

#প্রোফেসর শঙ্কুর গল্পভাবনা থেকে অনুপ্রানিত হয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৪ রাত ১২:২৮
৫৫টি মন্তব্য ৫৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×