থেকো আগ্নেয় শহরে অপেক্ষমান
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আমাদের অবরুদ্ধ শহরে হেমন্তের হিমেল প্রশান্তিময় হাওয়া প্রবেশ করতে গিয়ে গোত্তা খেয়ে অপ্রস্তুত হয়ে যায়। সে দেখে এই শহরে মানুষের শ্বাসনালী পুড়ছে, মানুষের গা থেকে গ্রিলড খাদ্যবস্তুর উৎকট গন্ধ বেরুচ্ছে। আর সেখানে হামলে পড়ে মাংস খুবলে খাচ্ছে আগুনপোকা। আগ্নেয় শহরে স্বজনের উৎকন্ঠা আর শোকের তাপ যুক্ত হয়ে বাড়িয়ে দেয় স্ফুটনাঙ্ক। আর তাই, অনলবর্ষী কৌটোর উৎক্ষেপন আর উল্লাসের ধাক্কা সয়েও ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে শহর এবং শহরবাসী। তারা এক আশ্চর্য কঠিন পদার্থ। অজস্র অগ্নুৎপাতের পরেও ফোটে না, গলে না, আরো আগ্নেয় উৎসবের সুযোগ করে দেয় কেবল। পালা-পার্বণের মতো চলে আসে অনলঋতু, চারিদিকে পেট্রলের পুষ্প, ককটেলের বৃক্ষ। এমন বিরুদ্ধ পরিবেশে হেমন্ত, নবান্ন, শীতের সকালের মিঠে রোদ, এসব শব্দ হাস্যকর হলেও তাত্ত্বিকভাবে বেঁচে থাকে।
বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের ফলে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে শহরবাসীর মধ্যে বিভাজিত প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। গোলাপি মসনদে বসা রাণীর নির্দেশে মহান সচিব যখন দুয়েকটা যানবহন ভাঙা অপ্রতুল বোধ করে আরো বৃহত্তর নাশকতার নির্দেশ দেন, স্বাভাবিকভাবেই বোমাবাজির হোতা হিসেবে তার নাম চলে আসে। দলের সাঙ্গপাঙ্গরা তখন ব্যাপারটিকে লঘু করতে স্মরণ করিয়ে দেয় যে আরো এক যুগ আগে প্রতিপক্ষের নির্দেশে এমনতর ঘটনায় এর চেয়ে বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলো। তাই এই ঘটনার লঘুতা তাদের মধ্যে প্রশান্তির সুবাতাস এনে দেয়। তারা হেমন্তসন্ধ্যার ওম উপভোগ করে পেট্রোলপুষ্প পকেটে নিয়ে। আরেকদলের উল্লাসও কম না। প্রতিপক্ষের কুকীর্তি তাদেরকে কিছু ব্যালট উপহার দেবে এই সুখস্বপ্নে মজে থেকে তারা হ্রদের ধারে বসে বাদাম চিবোয়। এদেরকে বাদ দিলে, অবশ্য এদের বাদ দিলে যারা থাকে তাদের প্রতিক্রিয়াকে ধর্তব্য বলে অন্তত এই মুহূর্তে উভয় দলের কেউই মনে করে না। এখানে মিলে যায় তাদের মিত্রতা, অদৃশ্য চিয়ার্সে নরক থেকে চিয়ারগার্লরা নেমে এসে উদযাপন শুরু করে এই শহরে। রাত্তির ঘনিয়ে এলে বাসায় না ফেরা মানুষটির জন্যে স্বজনদের উৎকন্ঠাকে নিছক বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে ধরে নেয়া যায়।
এখন সন্ধ্যা মানেই সন্দেহের কাল। বিকেলের ক্ষয়ারোদ ফুরিয়ে সন্ধ্যা নামলে বন্ধ্যা হয়ে যায় আলোককেন্দ্রগুলো। আঁধারে পথ হারানোর বা মরণঘাতী পেট্রলপুষ্পের কবলে পড়ার সম্ভাবনা জোরদার হয়। তাই সন্ধ্যা নামলে শারমীন তার বেসরকারী অফিসের চাকুরে স্বামীর জন্যে উৎকন্ঠামিশ্রিত অপেক্ষা শুরু করে। সাধারণত শিমুল ছয়টার মধ্যেই ঘরে ফেরে। আজ ছয়টা পার হয়ে পাঁচ মিনিট পনের সেকেন্ড, এখনও ফিরলো না। শারমীন উদ্বিগ্ন হয় কিছুটা। অবরুদ্ধ শহরের একজন সুখী বাসিন্দা নওশাদ, তার ছোট ভাই, ক্লাশ বন্ধ থাকার কারণে যে মনের সুখে কম্পিউটারে সিনেমা দেখে নিজেকে শিল্পোন্নত করছে, সে বোনের অকারণ উদ্বেগ দেখে তাকে সাহস দেয়,
-আরে এত অল্পে উতলা হলে চলবে? রাস্তায় জ্যাম নেই এখন বটে, কিন্তু বাস পাওয়াও তো মুশকিল, সেটা ভাববে না? চলে আসবে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই। ধৈর্য্য ধর।
সাড়ে ছটা বেজে গেলেও শিমুল না ফিরলে শারমীন টেলিভিশনের হাস্যরসাত্মক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে মজে থাকার বৃথা চেষ্টা বাদ দিয়ে ফোন করে। ফোন বাজছে। রিং। রিং। রিং। রিং...
চারবার রিং হলো এখনও ধরছে না কেন? সে তো সাধারণত তিনবারের মধ্যেই ধরে। বাহিরের উচ্চ কোলাহলের কারণে শুনতে পাচ্ছে না? কিন্তু ফোনের ভাইব্রেশন অন থাকার কথা তো! আর সে পরেও আঁটোসাঁটো পকেটঅলা প্যান্ট। টের না পাবার কোন কারণ নেই। চতুর্থ আর পঞ্চম রিংয়ের মাঝের যতকিঞ্চিৎ সময়টাতে ভাবনার ঝড় বয়ে যায় শারমীনের মনে।
রিং। রিং।
কেটে গেলো ফোন। ধরলো না কেন? ফোন মিউট হয়ে গেছে কোনভাবে? ভাইব্রেশন বন্ধ হয়ে গেছে? শিমুলের বিলম্বের সাথে ফোন না ধরা, এই দুই মিলে তার মনে এক পশলা অন্ধকারের বৃষ্টি ঝরায়। আবার ডায়াল করার সাহস হয় না তার। যদি ফোন না ধরে? আরো আধা ঘন্টা অপেক্ষা করে ফোন করার সিদ্ধান্ত নেয় সে। বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে আর জোর করেও মন বসানো যাচ্ছে না। সে খবরের চ্যানেল দেয়। নওশাদও সিনেমা দেখা বন্ধ করে খবর দেখতে বসে।
রাজধানী পেরিয়ে মফস্বঃল, রাজপথ থেকে মহাসড়ক, সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে সহিংসতা। জেলাওয়ারী আহত, নিহত আর ধ্বংসের সংখ্যায় কেউ যেন পিছিয়ে থাকতে চায় না। সাড়ে সাতটা বেজে গেছে। উদ্বেগাকুল মুখে সে ফোনটা হাতে নেয়। ডায়াল করে শিমুলের নাম্বারে। ছয়টা সুদীর্ঘ রিং এর শব্দ হয়। কেউ ধরে না। ওদিকে টিভিতে ব্রেকিং নিউজ দেখাচ্ছে,
"শাহবাগে বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ। ১৯ যাত্রী দগ্ধ"। শিমুলের বিলম্ব, ফোন না ধরা এসব মিলিয়ে যে জটিল অবস্থার উদ্ভব হয়েছিলো তাকে আরো বাড়িয়ে দেয় খবরটি। কারণ মতিঝিল থেকে মিরপুরে আসতে হলে শাহবাগ হয়েই তো আসতে হয়!
পোড়া মানুষদের কোন তালিকা পাওয়া যায় না। শুধু কিছু সংখ্যা-১৯ বা ১৮ লুকোচুরি খেলতে থাকে তাদের সাথে। সংখ্যাগুলোর অফুরন্ত দম। টিভির টেলপে ছুটে চলে বিরতিহীন। সংখ্যাগুলো কৌশলী। অশ্রু, অপেক্ষা, উৎকন্ঠা; কোন কনভার্টার দিয়েই তাদেরকে সংখ্যাবাচক শব্দ থেকে নামবাচকে পরিবর্তিত করা যায় না। ফোন বেজে চলে শিমুলের নাম্বারে, কেউ ধরছে না। নওশাদ সন্ধ্যার এই সময়টায় সিনেমা দেখার বিরতিতে চা সংযোগে টিভি দেখে খানিক। তার ভেতর উপলদ্ধি জাগ্রত হয় , সিনেমা দেখার বিরতিটা প্রলম্বিত করা উচিত উৎকন্ঠিত বোনের সাথে থেকে তাকে সাহস যোগানোর জন্যে।
-চিন্তা করো না আপা। দুলাভাই ঐ বাসে নেই।
-তুই কী করে বুঝলি যে নেই?
তার কাঁপা কাঁপা কন্ঠে আশাবাদে আকুতি ফুটে ওঠে।
-যদি থাকতো, তাহলে ফোন করলে ফোন অন পেতে না। এই দুর্যোগে ফোন বিকল হয়ে যেতো, বা পুড়ে যেতো। দুলাভাই যদি আক্রান্তদের কেউ হয়ে থাকেন, তাহলে এতক্ষণে কেউ না কেউ তার পাশে আছেই। যদি থেকে থাকে, তার উদ্দেশ্য সৎ হলে ফোনটা রিসিভ করে কথা বলবে। আর অসৎ হলে ফোনটা বন্ধ করে কেটে পড়বে। অর্থাৎ দুলাভাইয়ের যদি কিছু হয়ে থাকে তাহলে হয় তুমি ফোনটা বন্ধ পাবে, নয়তো কেউ না কেউ ফোনটা ধরবে। রিং হচ্ছে, কেউ ধরছে না এমন হবে না।
নওশাদের কথায় শারমীন কিছুটা ভরসা পায়। আর কিছুক্ষণের মধ্যে আহতদের তালিকা টিভিতে প্রকাশ করা হলে সেখানে শিমুলের নামটা না দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেলে। টিভির কড়িৎকর্মা সাংবাদিকেরা ততক্ষণে অগ্নিদগ্ধদের সম্পর্কে সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশ করতে অকুস্থলে চলে গিয়েছে। পোড়া-আধাপোড়া মানুষের চিৎকার আর বিলাপে এক বিভৎস পরিস্থিতি।
সচিত্র প্রতিবেদনের নিচে মোবাইল কোম্পানিগুলোও জায়গা করে নিয়েছে ব্যবসায়ের দখল নিতে। "এই ভিডিওটি আপনার মোবাইলে পেতে "পোড়ামানব" লিখে "***" নাম্বারে ডায়াল করুন"।
কেটে যায় আরো পাঁচটি মিনিট। তিনশ সেকেন্ড। ঘড়ির কাঁটা দুইটি খুনী নর্তকীর মত আট আর বারোতে অবস্থান নিয়ে নিজের নির্দয় অবস্থানটা জানান দেয়া শুরু করেছে। আটটা বেজে গেছে। দুর্বৃত্তরা গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে। এখান সেখান থেকে আরো বাস পোড়ানোর খবর আসছে। শারমীনের উৎকন্ঠা বেড়ে চলে। শিমুল এখনও ফোন ধরছে না। নওশাদকেও এবার উৎকন্ঠা পেয়ে বসে। নিজেকে প্রবোধ দেয়ার জন্যেই হয়তোবা সে তার চর্চিত প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যা ব্যবহার করে স্বগোতোক্তি করে বা শারমীনকে শোনায়,
-স্ট্যাটিসটিক্যালি এ্যানালাইজ করলে দেখতে পাবে, এক দিনে একই শহরে দুটো বড় অগ্নি বিষয়ক দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম। আজকে একটা বড় ঘটনা ঘটেছে, পরবর্তীটা ঘটতে একটা বড় পজ লাগবে। আজকে আর কিছুই হবে না। তুমি নিশ্চিত থাকো।
-সবখানে কি আর থিওরি খাটে?
-না, তা খাটে না। তবে তোমাকে প্রবাবিলিটির কথা বলছি। তুমি আমাকে বলো, বাসে পেট্রোল বোমা ছোড়ার ফলে একসাথে উনিশজন অগ্নিদগ্ধ হবার ঘটনা শেষ কবে ঘটেছে? অনেকদিন আগে না? আর আজকে একটা ঘটলো। ডেনসিটি আর ফ্রিকোয়েন্সি হিসেব করে দেখো। আজকে আর এরকম ঘটনা ঘটবে না। আর যদি ঘটেও, দুলাভাইয়ের ফেরার রুটে ঘটবে না। একদিনে একই জায়গায় একইরকম ঘটনা একই বা কাছাকাছি সময়ে ঘটবার প্রোবাবিলিটি কেমন? হিসেব করে এক্সাক্ট ফিগারটা বলা কঠিন, তবে খুব সামান্য এটা বলা যায়।
বিপন্ন মানুষের কাছে সামান্য অবলম্বনও অনেক। তাই পরিসংখ্যান আর সম্ভাব্যতার হিসাবে আশ্বস্ত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা আরেকপ্রস্থ চায়ের সাথে বিনোদনধর্মী অনুষ্ঠান দেখতে থাকে। সেই সাথে ফোন বেজে চলা এবং না ধরার ব্যাপারে নওশাদের প্রণীত সন্তোষজনক ব্যাখ্যা তো আছেই! শারমীনের মন চায় ফোন করতে, ভয় হয়। যদি না ধরে? যদি ফোনটা বন্ধ পায়? যদি অন্য কেউ ধরে কোন দুঃসংবাদ দেয়? দামী ফ্লেভারের চা বিস্বাদ লাগে। বিনোদনে বিবমিষা জাগে। সে আবারও চ্যানেল পাল্টে খবর দেয়।
"শাহবাগ মোড়ে এলোপাথাড়ি গোলাগুলি, আরো চারটি বাসে আগুন। বিশজনের বেশি অগ্নিদগ্ধ"
ব্রেকিং নিউজে নওশাদের আস্বস্তকারী থিওরি মুখ থুবড়ে পড়লে শারমীনের কম্পমান হাত ফোনটা হাতে নিতে গিয়ে চায়ের কাপ উল্টে দেয়। গরম চায়ের স্পর্শে নওশাদের হাত জ্বলে যায়। "উফ মা গো!" বলে সে দগ্ধস্থানে পানি দিতে ছুটে গেলে টিভিতে শরীরের পঁচিশ শতাংশ পুড়ে যাওয়া একজনের আর্তনাদে সে থমকে দাঁড়ায়। গরম চায়ের উত্তাপে হাতের সামান্য অংশ জ্বলে যাওয়া আর পেট্রোলবোমার আঘাতে শরীরের এক চতুর্থাংশ ঝলসে যাওয়া মানুষটির সাথে নিজের তুলনা অজান্তেই চলে আসে। শিউড়ে ওঠে সে। পরক্ষণেই মাথা থেকে চিন্তাটা ঝেঁটিয়ে বিদায় করে শীতল পানির স্পর্শ আরাম নেয়। অতকিছু ভাবতে নেই। অতকিছু ভাবলে এ অবরুদ্ধ শহরে বেঁচে থাকা যাবে না। সে তাকিয়ে আছে শারমীনের আতঙ্কিত ফ্যাকাশে মুখের দিকে।
-ফোন বন্ধ কেন?
হাহাকার করে ওঠে সে?
-কী বলছে?
-বলছে যে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
-আরে নেটওয়ার্কের সমস্যা। এখন সবাই ট্রাই করছে তো। তাই জ্যাম লেগে গেছে।
আরো কয়েকবার ডায়াল করার পরে অবশেষে শারমীন শিমুলকে পায়। নিষ্ঠুরভাবে রিং হতে থাকে ফোন, প্রাপক অবিচল। এবার শারমীন নিজেই নিজেকে শুনিয়ে সান্ত্বনা দেয়,
-ফোনটা মনে হয় সাইলেন্ট হয়ে আছে। ভাইব্রেশনটাও বন্ধ করা। তাই টের পাচ্ছে না। কিন্তু সে ফোন করছে না কেন? সম্ভবত ব্যালান্স নেই। কালকে রাতেই তো বলছিলো কার্ড ভরতে হবে। ভুলে গেছে ভরতে। বড় ভুলোমন তার। কিন্তু দেরী করছে কেন এত?
উৎসাহ পেয়ে এবার নওশাদও যোগ দেয়,
-আরে প্রাইভেট অফিসগুলো কী রকম খাটিয়ে মারে জানো না? গত মাসেই তো আসতে একবার দশটা বাজালো, মনে নেই?
-একবার না, দুবার।
-হ্যাঁ সেই। আজকেও তেমন কোন কাজে আটকা পড়েছে। আর জানোইতো জুন ফাইনালের সময় অফিসগুলোতে কী রকম চাপ থাকে।
-কিন্তু এখন তো নভেম্বর মাস।
-ওহ! তা হোক। তবে কাজের আবার জুন-নভেম্বর কী।
আরো দশ মিনিট কেটে যায় নীরব অসহিষ্ণুতায়। ওরা সিদ্ধান্ত নেয় দশ মিনিট পরপর ফোন করবে। রাত দশটা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। তারপর যা হোক কিছু একটা করা যাবে। ততক্ষণ শিমুলের ভুলোমন, অফিসের চাপ, যৌক্তিক এবং পারিসংখ্যিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে তার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ইত্যাদির মাধ্যমে ঘরে না ফেরাকালীন সময়টায় তাকে বাঁচিয়ে রাখবে। অবরুদ্ধ শহরে অগ্নিচোখে হন্তারকেরা তাকিয়ে থাকলে, পেট্রোলাগ্নির আঁচে স্বজনদেরকে ভাঁপ ওঠা সুস্বাদু খাবার বানাতে চাইলে এটুকু ঘরোয়া প্রতিরোধের মাধ্যমে নিজেদের প্রবোধ না দিলে পরাজয়টা বড্ড আগেভাগেই স্বীকার করা হয়ে যায়। প্রবল প্রতিপক্ষের কাছে হেরে যাওয়াটা হয়তোবা সময়ের ব্যাপার, তারপরেও জানালা খুলে দিলে আগুনের হলকার বদলে হেমন্তের বাতাসই আসে এখনো। শারমীন জানালা খুলে দিয়ে পথের দিকে তাকিয়ে থাকে। হেমন্তের হিমেল হাওয়া তার শরীরে পরশ বুলিয়ে যেন দু:সময়ের সাথী হতে চায়। দূরে তবে দৃষ্টিসীমার মধ্যে বড় রাস্তাটায় ভীষণ শোরগোল, আগুন, পুড়ছে যানবাহন। টিভিতে প্রচারিত হচ্ছে বেড়ে চলা সংঘাতের খবর।
দশ মিনিট হয়ে গেছে। শারমীন রিডায়াল করে অসংখ্যবার ফোন করা নাম্বারটায়। "দুঃখিত, এই মুহূর্তে মোবাইল সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না"। নেটওয়ার্কের সমস্যা এতক্ষণ ধরে থাকার কথা না। চার্জ ফুরিয়ে গেছে মনে হয়। শারমীন ভাবে। তাদের চার্জারটা মনে হয় নষ্ট ছিলো। চার্জ হয়নি ঠিকমতো। তাহলে তো ফুরিয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। তারপরেও খতিয়ে দেখা দরকার। ড্রয়িংরুমে গিয়ে সে চার্জারটায় কানেকশন দেবার আগে ইচ্ছাকৃতভাবেই সেটাকে হাত থেকে ফেলে দেয়। এবার চার্জ না হবার সম্ভাবনাই বেশি। তার হাত থেকে চার্জারটা তুলে নিয়ে নিজের ফোনে ঢিল করে লাগিয়ে চার্জ দিয়ে নওশাদ ফলাফল নিরীখ করে স্বস্তির হাসি হাসে,
-দেখলে তো আপা, এটা নষ্ট! দুলাভাইয়ের ফোনে চার্জ হয়নি ঠিকমতো। তাই এতক্ষণে বন্ধ হয়ে গেছে।
টান দিয়ে প্লাগ খুলে ফেলে সে।
বেআব্রু আশা আর সঙ্গোপন হতাশার প্রতীক হয়ে চার্জারটা লুটিয়ে থাকে ঝাট না দেয়া নোংরা মেঝেতে।
৫৩টি মন্তব্য ৫৩টি উত্তর
পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন
আলোচিত ব্লগ
ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।
ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!
সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন
কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী
ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)
সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)
সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন