কার কাছে সেই কলম আছে?
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
অনেকদিন ধরে কিছু না লিখতে পারার কষ্ট একজন লেখকই কেবল অনুভব করতে পারেন। এই রোগের রাইটার্স ব্লক নামক একটা বাহারী নাম থাকলেও প্রতিষেধকের সন্ধান মেলেনি এখনও। হিতাকাঙ্খীদের সদুপদেশের অভাব অবশ্য হয় না কখনও,
"যাও একটু হাওয়া বদল করে আসো"
"লেখালেখি করার কোনো চেষ্টাই করো না। এমনিই লেখা আসবে"
"জীবনকে নিয়ে গভীরভাবে ভাবো..." ইত্যাদি।
শৌভিক এসব এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দেয়। হাওয়া বদল করলে কলমে কালি ভরবে না, লেখালেখি করার চেষ্টা না করলে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরে যাওয়াই ভালো, আর জীবন নিয়ে গভীর ভাবনা! ভাবা তো যায় কত কিছুই, তা লেখাতে অনুদিত করতে পারাটাই সমস্যা।
অক্টোবরের এক হেমন্তবিকেলে শীতশীত আবহাওয়ায় শৌভিকের ইচ্ছে হলো তার এক লেখক বন্ধুর সাথে বিরাজমান সমস্যা নিয়ে কোন পানশালায় আলোচনা করতে । এমনিতে এ্যালকোহল সে খুব একটা নিতে পারে না, তবে জীবনের এমন চরম হতাশার লগ্নে কয়েক পেগ গিলে বমি করে উগড়ে দিয়ে শিথিল শরীরে সময়ের সিঁথি কাটা আরামদায়কই হবে। রায়াহানকে প্রস্তাবটা দেয়াতে সে লুফে নিলো একেবারে। সে আবার এসব ব্যাপারে না বলাটা অভদ্রতা মনে করে।
পানশালার ম্লান আলোয় দু বন্ধুর চিয়ার্স শুরু হলো রাইটার্স ব্লককে শাপ শাপান্ত করে। এমনিতে লেখার সময় তারা অবশ্য বেশ সুশীল ভাষা প্রয়োগ করে, তাদের মতে এটাই শুদ্ধ সাহিত্যের নিদর্শন। বৃত্তের বাইরের কিছু হাংরিয়ালিজম প্রভাবিত ক্ষ্যাপাটে তরুণের 'অভব্য' লেখার সমালোচনা করে শৌভিক বেশ কিছু প্রবন্ধও লিখেছে। বাস্তব জীবনে, বিশেষ করে পান করার সময় এসবের তোয়াক্কা করলে চলে না।
-রাইটার্স ব্লকের মায়েরে বাপ!
শৌভিকের এহেন প্রতিক্রিয়ায় সোৎসাহে রায়হান চ বর্গীয় শব্দ দিয়ে চালিয়ে যেতে থাকে চাকা। আজকে অনেক দূরে চলে যাবে তারা এ্যালকোহলের উড়ালগাড়িতে করে।
রায়হানের জন্যে ব্যাপারটা স্রেফ একটা আনন্দ উপলক্ষ্য, শৌভিকের জন্যে তা না। রায়হান আকন্ঠ গিলে বার থেকে বের হয়ে ফূর্তির ভঙ্গিতে সিগারেট কিনে ধোঁয়া ওড়ানোর চেষ্টা করবে চঞ্চলা মেঘের সাথে পাল্লা দিয়ে। আর শৌভিকের জন্যে সব শেষে এটা আরেকটি বিষণ্ণ সন্ধ্যা।
বিষ তার অন্ন।
তার বিষ অন্য।
তাই সে বিষণ্ণ।
-লিখতে পারছিস না এতে এতো উতলা হচ্ছিস কেন? কবেই বা লিখতে পারতি? লিখিস তো সব বালছাল।
এ্যালকোহলের প্রভাবে রায়হানের বোলচাল পাল্টে যায়।
-বালছাল লিখি আর তোমার সোনার বিচি লিখি তাতে তর কী? একটা লেখা শেষ করার কী যে আনন্দ! কতদিন সে আনন্দ থেইকা বঞ্চিত আমি!
কেঁদে ফেলে শৌভিক।
-আরে দোস্ত, লেখালেখির আনন্দ ছাড়াও আরো আনন্দ আছে জীবনে। আমার সাথে আইছো, মজা লইবা। ঐসব ফ্যাঁচফ্যাঁচানি কান্দন তোমার লুতুপুতু বান্ধবীদের সাথে যায়া কইয়ো। লও আরো এক পেগ লও। বোতলটা শেষ করা লাগবো।
-বাল! বমি করলে তুই পরিষ্কার করবি?
-তরে বেশি কইরা মিশায়া দিতাছি। খা। দেখবি একটা সোবার ফিলিংস হইবো। পেটেও হান্দায়া যাইবো ঠিকঠাক।
-দে শালা!
মেশানোর ব্যাপারে রায়হানের বেশ দক্ষতা আছে। শৌভিক যখন আরো চেয়ে নেয় তার কাছ থেকে তখন তার বেশ গর্বের একটা অনুভূতি হয়।
-লেখালেখির গুষ্টি মারি। এখন থিকা প্রতিদিন তোর সাথে বসুম। দিজ ইজ হ্যাভেন ম্যান। আই ডিডন'ট আন্ডারস্ট্যান্ড বিফোর। ইউ মাই নিগা। মাদারফাকিং নিগা। হাগ মি ডুড!
বাঙালি মাতালরা সলিলকেলি করলে পরে আশ্চর্য দক্ষতায় সাবলীলভাবে ইংরেজি বলতে পারে।
-ইংলিশ চুদাবিনা বাইঞ্চোত। তোর ইংলিশের উপ্রে আমি মুতি।
-দোস্ত আসলেই তো মোতা চাপছে রে। বাথরুমটা কোনে?
নাহ! শেষতক আর পারা গেলো না। কঠিন প্রতিজ্ঞা আর দক্ষ মিশ্রণও শৌভিকের পাকস্থলীর তরল-গরল-মুরগীর সাথে সহজেই যুদ্ধজয় করে সবাইকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করলো ওয়াশরুমের বেসিনে। নেশা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করলো তার। পানশালাটা যে কোন ইন্দ্রপুরী না এবং এখানকার কেবিনের খাটে অজস্র ছাড়পোকা, বাসায় গিয়ে একটা সতেজ স্নান আর ফোমের বিছানা একান্তই দরকার এ বোধ তার মধ্যে দ্রুতই জাগ্রত হলো। রায়হানও ততক্ষণে কিছুটা ধাতস্থ হয়েছে। বন্ধুর শোচনীয় দশা দেখে করুণার উদ্রেক হয়েছে।
-একা একা যেতে পারবি তো?
-পারলেই বা কী? একরাত আমার সঙ্গে থাক না!
-ওকে, থাকবো। তবে আরো অল্পবিস্তর পানের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
-আবারও!!
-বেশি না। দুইটা বিয়ার নিমু। একটা তোর, একটা আমার। পেট থিকা তো সব ফালায় দিসোস। এখন আরো কিছু যোগ না করলে এ্যালকোহলের প্রতি অসম্মান করা হয়। নে চল!
শুক্রাবাদ থেকে বনানী। অনেকদূরের পথ। ট্যাক্সিক্যাবে দুই বন্ধু কিছুক্ষণ খুব মৌজমাস্তি করার পর কেমন যেন ঝিমিয়ে আসে। শরীরের ওপর তো কম ধকল যায় নি। শরীরের ওপর তো অত দখল নেই তাদের। যেমন আছে কলমের ওপর। অবশেষে তারা বিকেলের আয়োজিত কাঙ্খিত আলোচনা বিলম্বে হলেও শুরু করতে পারে। বেশ লেখকসুলভভাবেই।
-কলমটাকে কম ধকল দেই নাই দোস্ত। কত আজেবাজে লেখা লেখসি। এর ওর নামে কুগীত গাইসি। কিন্তু ভালো লেখাও তো লেখসি। ভালোবাসার অবিনশ্বরতা নিয়ে আমার ঐ গল্পটার তো তুই খুব প্রশংসা করেছিলি। এখন কোথায় সে আমি? কোথায় আমার কলম?
-আমি তোকে আজকে একটা কলম কিনে দেবো। বিয়ারটা খোল। খেয়ে দেখ, ভালো লাগবে। খাটি জার্মান জিনিস। ১২.২% এ্যালকোহল। ঠান্ডা থাকতেই খা।
এবার আর আপত্তি করে না শৌভিক। তার মনে পড়ে জার্মান দেয়াল ভাঙার পরে এক পূর্ব জার্মানকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো,
"দেয়াল কেন ভাংলেন আপনারা? নিশ্চয়ই মহান জাতীয়তাবাদ, ভ্রাতৃত্ববোধ..."
"আরে রাখেন! পশ্চিম জার্মানিতে দেদার বিয়ার খেতে পারবো এজন্যে।
মৃদু হেসে বিয়ারের কয়ানে চুমুক দেয় সে। স্বাদটা প্রথমে একটু তেতো লাগলেও কিছুক্ষণ পর বেশ হালকা লাগে তার।
-কী রে, জিনিসটা ভালো না?
-বেশ ভালো। আমি আরেকটা খাবো।
-খা। কোন সমস্যা নেই। এই গাড়িটা একটু থামান তো।
ট্যাক্সিচালককে নির্দেশ করে রায়হান।
-আবার কী হলো?
-ফার্মেসিতে যাচ্ছি। কিছু ঔষুধ কিনতে হবে।
ফার্মেসি থেকে ফিরে এসে রায়হান শৌভিকের মনোবেদনার ব্যাপারে দৃষ্টিপাত করে।
-চিন্তা করিস না দোস্ত। তোকে আমি একটা ভালো কলম কিনে দেবো বলেছি তো! সেই কলম দিয়ে তুই লিখতে বাধ্য!
-কী সব পদ্য করছিস। ভালো লাগছে না এসব এখন। আবার ভালো লাগছেও জানিস! অনেকেই অনেকরকম কথা বলেছে, সান্ত্বনা দিয়েছে, কিন্তু কেউ কলম কিনে দেবার কথা বলে নি। যদিও তুই কথাটা রূপকার্থে বলেছিস, তারপরেও আমার খুব ভালো লাগলো। হয়তোবা আমার পরের গল্পের প্রথম লাইনই হবে এমন, "তোকে একটা কলম কিনে দিবো। সেই কলম..." যাক এখন জট পাকিয়ে যাচ্ছে চিন্তাগুলো। বাসায় গিয়ে পরে ভাববো।
-আমি কিছু লাইন যোগ করি, "একটা কলম আমিও নেবো। আমারও কলম দরকার। কলমিলতার তৈরি কলম, বুনোফুলের সুঘ্রাণ মাখানো কলম, বন্ধুত্বের পরশ মাখানো কলম। আমাদের দুজনের কাছেই থাকবে সে কলম। শৌভিক, আমিও ভীষণ কষ্টে আছি রে। আমি লিখছি ঠিকই কিন্তু সব বুলশিট। তোকে দিয়ে যদি একটা ভালো লেখা লিখিয়ে নিতে পারি, সেই আনন্দ আমাকেও ছুঁয়ে যাবে। কলমের পর তুই'ই যে আমার পরম বন্ধু।
-আমরা বাঁচার জন্যে লিখি না। লেখার জন্যে বাঁচি। আমাদের লিখতে না পারার কষ্ট এত খেলো না। আমাদের নিয়ে খেলো না হাস্যরত করুণাগদগদ সমাজ! উই উইল কামব্যাক! তাই না রায়হান?
-একদম। ফাক সোসাইটি!
-এসব কথা আমাদের মধ্যে আগে হয় নি কেন?
-সবকিছুরই একটা সময় থাকে। উপযুক্ত সময় বেছে নিতে হয়। আমরা লিখতে পারি বা না পারি, এই সময়টা অক্ষয় হয়ে থাকবে। হয়তো বা বহুদিন পরে কোন লেখার পটভূমিকা হবে এই রাত, এই পানীয়, এই বাহন...ওহ এসে গেছি! বিল কত হলো?
*
-খুব ঘুম পাচ্ছে রে রায়হান। আজকে আর আড্ডা বা লেখালেখির চিন্তা বা বিষাদবর্ণন কিছু না।
-তুমি ঘুমুতে পারবে না বাউন্ডুলে, কবি না কবিতা কে বেশি পাগল তার হিসাব নেবার দরকার আছে।
-কবীর সুমনের গানের মডিফিকেশন তো ভালোই করলি! যাক, এখন আমি ঘুমুতে যাবো। একটা ভালো ঘুম না হলে খুব বাজে রকমের হ্যাংওভার হবে।
-তুই ঘুমাতে পারবি না। তোকে ঘুমাতে দেয়া যাবে না। ঘুমুলেই তোর মৃত্যুর ভয়। আই এ্যাম ড্যাম ফাকিং সিরিয়াস। আপ অন গড।
-মানে কী! কী বলিস এইসব?
-মানে হইলো কী, আমি যখন ফার্মেসি থেকে নেমে গিয়েছিলাম না, তখন কয়েকটা রিভোট্রিল ট্যাবলেট কিনেছি। এ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ড্রাগ। প্যানিক এ্যাটাকের জন্যেও উপযোগী। সমস্যা হলো, আমি তোর বিয়ারের সাথে বেশ হাই ডোজের রিভোট্রিল মিশিয়ে দিয়েছিলাম। এখন এ্যালকোহল জিনিসটাও কিন্তু অনেকটা একই কাজ করে। দুই মিলে কী হয় জানিস? সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমকে আক্রান্ত করে। দুইটা আলাদাভাবে নিলে সমস্যা নাই। তবে একসাথে নিলেই প্রবলেম। বিশ্বাস হয় না? এই দেখ নেট ঘেঁটে বের করছি,
Do not drink alcohol while taking clonazepam. This medication can increase the effects of alcohol. It can even lead to death.
ড্রাগস ডট কম থেকে নেয়া। দেখলিই তো! তোর ব্রেইন অকেজো হয়ে যাবে। নার্ভাস সিস্টেমের সিগন্যালগুলো ঠিকঠাক কাজ করবে না। ঘুম অবশ্য ভালোই হবে। তবে জেগে না ওঠার একটা প্রবল সম্ভাবনা আছে।
-আমি মারা যাচ্ছি? মারা যাচ্ছি আমি?
-যদি ঘুমিয়ে যাস, তবে মারা যাবার একটা সম্ভাবনা থাকে প্রবল। বেঁচে থাকা নিশ্চিত করতে হলে তোকে ব্রেইন এ্যাকটিভেট রাখতে হবে। কথা বলতে হবে। কফি খেতে পারিস। আর সবচেয়ে ভালো হয় একটা গল্প লিখলে। গল্প লেখা একটা হাইপার ক্রিয়েটিভ কাজ। এতে ব্রেইন ফাংশন সচল থাকে। নিউরন থেকে চিরনিদ্রার সংকেত আসে না।
-তুই কেন এমন করলি? কেন এমন করলি কুত্তার বাচ্চা?
-গালাগালি করছিস কেন? আমি তোকে বলেছিলাম না একটা কলম কিনে দেবো? সেই কলমটা দিয়ে তুই অনর্গল লিখতে পারবি? এই হলো সেই কলম। জীবন-মৃত্যু-আর ঘুমের শীর্ষবিন্দুতে কি থাকবে তুই নির্ধারণ কর। তোর কাছে না লেখার জন্যেই জীবন? তাহলে জীবন বাদ। একটা ভালো লেখা লিখতে পারার পর না তুই মরেও শান্তি পাবি বলেছিলি একদিন? তাহলে মৃত্যু বাদ। আর ঘুম? ঘুমোতে চাইলে ঘুমো! গুডনাইট!
-আমি সারারাত জেগে থাকলে বেঁচে থাকতে পারবো তো?
-আবারও বেঁচে থাকার কথা বলছিস? আগে তো লেখা, তারপর না বাঁচা! হতাশার হাওয়াই মিঠাই অনেক খাইয়েছিস মানুষকে। ভালো বিকিকিনি করছিলি। আর কলমটাকে বিকিনি পরিয়ে বেআব্রু করে রেখেছিলি। ওসব ভন্ডামি ছাড়ো এখন সোনা। লিখো,যাও লিখো!
রায়হানের বাক্যবাণে পর্যুদস্ত হয়ে শৌভিক ভগ্ন অবস্থায় ল্যাপটপের সামনে গিয়ে ওয়ার্ড ফাইল ওপেন করে।
-কেমন লাগছে শৌভিক? সবকিছু অসাড় হয়ে যেতে দিস না। লিখতে থাক। লিখতে লিখতে সাইড এফেক্ট কেটে যাবে। আর আমি তো আছিই সাথে। এসবক্ষেত্রে সাথে একজন না থাকলে বিপদ হতে পারে।
-তুই আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যা! আই নিড ইমিডিয়েট মেডিক্যাল এ্যাটেনশন।
-সেটা অবশ্যই একটা উন্নততর বিকল্প। বাট লিসেন মাদারফাকার, দেয়ার আর আদার ওয়েজ ফর রেমিডি। খুব তো লিখতে পারছিস না বলে কেঁদেকুঁদে বেড়াচ্ছিলি! এখন লেখ শুওরের বাচ্চা। বাঁচার জন্যে লেখ। রেমিডি হিসেবে লেখালেখিটা যেখানে সুযোগ হিসেবে আছে, তাহলে ডাক্তারের কাছে যাবি কেন? তোর কলম তোর ডাক্তার।
-আমার মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। আমি...আমি মারা যাচ্ছি।
-তো যা না! মরতে, ঘুমোতে, বাঁচতে লিখতে কেউ মানা করে নি। নিজের পছন্দমত বেছে নে। তুই যদি আর দুই মিনিটের মধ্যে লেখা শুরু না করিস, তাহলে আমি দরজা লক করে দিয়ে ঘুমুতে যাবো। আর তুই ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকবি ভেজিটেবল হয়ে।
-শেষ একটা কথা, আমার ওপর তোর কোন রাগ আছে? কেন এমন করছিস?
-শেষটাই তো শুরু বন্ধু! রাগের কথা যদি বলিস, তাহলে অনেক কথাই এসে যায়। সন্ধিপত্র প্রকাশনে আমার পাঠানো পান্ডুলিপি নাকচ করে দিয়েছিলো কে? তুই। অস্বীকার করে লাভ নেই। আমি জেনে ফেলেছি। তা সেটা হতেই পারে। হয়তো বা জেলাসি, হয়তো বা আমি অত ভালো লিখতামও না তখন।
-স্যরি...
-তুই অনেক বড় লেখক হয়ে গেছিস এখন। তোর লিখতে না পারার খবরটা পত্রিকায় ছাপা হয়। তোর মধ্যে নাকি সুইসাইডাল প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে। আমি অত ভালো লেখক না। আমার লেখাতে বা না লেখাতে কারো কিছু এসে যায় না। আমার ছাড়া। শোন, তোকে অনেক পেইন দিয়েছি। এখন সত্যি কথাটা বলি। বিয়ারের সাথে রিভোট্রিল আমি মেশাই নি। তোর শরীরে রিভোট্রিল যায় নি। শুধু এ্যালকোহল। তারপরেও আমি তোর ওপর চাপ সৃষ্টি করে কিছু একটা লেখাতে চেয়েছিলাম। আমি তোকে এবং তোর লেখাকে সত্যিই ভালোবাসি অনেককিছুর পরেও। রিভোট্রিল খেয়েছি আমি। ড্রাগস আর এ্যালকোহলের সাইড এফেক্টে মস্তিষ্ক অসাড় হয়ে সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম বিকল হবার সম্ভাবনা আমার, তোর না। এতক্ষণ নিজেকে জাগ্রত রাখতে পেরেছি প্রচন্ড প্রেষণা আর অনুভবের তাড়ণায়। তোর সাথে কথা বলে, বচসা করে ব্রেইন এ্যাকটিভেট রেখেছি। আর দেখেছি চরমতম সংকটময় মুহূর্তে একটা লেখা তোকে বাঁচিয়ে তোলার রসদ যোগাতে পারে কী না। পারে না। তুই অনেক ভালো লেখক হলেও আর্নেস্ট হেমিংওয়ের মত আত্মহত্যা করার মুরোদ নেই। আমার আছে। তাই জীবনের এই ক্রান্তিলগ্নেও আমি জেগে থেকে আমার রাইটার্স ব্লক কাটাবো। তোকে বলেছিলাম না, সবকিছুর একটা উপযুক্ত সময় আছে? শিল্পের জন্যে জীবন, এই মহান বোধকে ধারণ করার জন্যে এমন একটা সময়ই দরকার ছিলো আমার। তুই যা, আমি লিখতে বসবো এখন। কলমটা দিয়ে যা! এটা এখন আমার। শুধুই আমার।
ঘুম টুঁটে গেলে ভয় কেটে গেলে এক অনাস্বাদিত লজ্জার বোধ নতজানু করে রাখে শৌভিককে। গভীর মগ্নতায় লিখতে থাকা রায়হানের কাঁধে হাত রেখে সে বলে,
"এই কলমটা, ঠিক এই কলমটাই আমি খুঁজছিলাম। জানি, এটা পেতে আরো দেরী হবে আমার। এখনও সে যোগ্যতা হয় নি। তুই আজ রাত জেগে থাক, লিখতে থাক ইচ্ছেমত। খবরদার ঘুমোবি না! কলমটা হারিয়ে যাবে তাহলে। আর এটা হারিয়ে গেলে তোর কাছ থেকে ছাড়া আর কার কাছ থেকে পাবো বল?"
রায়হান ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে হাসে, ঘুমে চোখ বুজে আসছে। কিন্তু ঘুমোনো বিপদজনক হতে পারে। মৃত্যু, জীবন, ঘুম আর রাসায়নিক পদার্থের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাকে জিততেই হবে! সে লিখে যায়।
হয়তোবা সেটাই ছিলো তার লেখার সত্যিকারের শুরু অথবা মিথ্যামিথ্যি শেষ!
#বিশেষ ধন্যবাদ সালেহ তিয়াসকে।
৭৬টি মন্তব্য ৭৬টি উত্তর
পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন
আলোচিত ব্লগ
ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।
ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!
সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন
কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী
ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)
সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)
সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন