somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লেডটা দাও নিহিলা

২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


*
আমার সুরক্ষার জন্যে একটা ব্লেডই যথেষ্ট। পাতলা করে কাটা এক ফালি ধারালো ধাতব টুকরো, ব্যস! আর কিছু লাগবে না। দিনে দিনে তৈরি হয়েছে অনেক শত্রু;পথে-ঘাটে, কর্মস্থলে। পাড়ার সদ্য গোঁফ গজানো ছেলেটা দলবল নিয়ে শাসিয়ে গিয়েছে যার সাথে আমার জীবনে দুই একবারের বেশি কথা হয় নি। এত সহজে ছেড়ে দেবো নাকি? এত সহজে ছেড়ে দেবো সবাইকে? তোমাদের অপমানের তীর আমাকে বিক্ষত করেছে, বিঁধে গিয়েছে মর্মমূল পর্যন্ত। তোমাদের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের চাবুক আমার পিঠ ছিলে-ছুবড়ে শিরীষ কাগজের মতো রুক্ষ করে দিয়েছে। ব্যায়ামাগার থেকে শরীরমন্ত্র আর রান্নাঘর থেকে আমিষকল্প তোমাদের শক্তিশালী হাতের মুষ্টিতে জুড়ে গিয়ে আমার মুখে কতবার অংকন করেছে রক্তের মানচিত্র তার ইয়ত্তা নেই। আমি ভুলিনি কিছুই।
ভুলতে চাইলে ঘুমের ভেতর রাতের আঁধার সর্প হয়ে পেঁচিয়ে ধরে স্বপ্নমাঝে,
ভুলতে চাইলে তপ্ত আকাশ ঊনুন জ্বালায় মাথার ওপর সকাল-সাঁঝে।
আমি দংশিত হয়েছি, আমি দগ্ধ হয়েছি। শরীরের ভেতর এখনও সরিসৃপের মত ঘুরে বেড়ায় অপবোধের স্প্লিন্টার, তোমাদের অপরাধ আর জিঘাংসা আমার মনের বনে পোচারদের মত সবুজতার চোরাকারবার করে পাঠিয়ে দিচ্ছে দূর সীমান্তে, যেখানে হলুদ আকাশের নীচে তান্ডবনৃত্য নাচে নেড়েমাথা খুনীদের স্লাটি স্ত্রীরা। কিভাবে ভুলবো আমি? অনাহুত হেমন্তবাতাস শীতশিষ দিয়ে কানে কানে এখন আর ওম উদ্বোধনের আবাহন করে না, হিসহিসিয়ে বলে যায় "মরে যাও অথবা শোধ নাও"। মরে যাওয়াটা আমার এক বহুলচর্চিত অভ্যাস, কিন্তু এই শিল্পে দক্ষ হয়ে উঠতে পারিনি আমি এখনও। বারবার মরে যেতে গিয়ে হেরে যাই শুধু। তাই ভুলতে না পারার অভিশাপকে শাপ হিসেবে নিয়ে আমি হন্তারকের হৃদয় প্রতিস্থাপন করি বুকের ভেতর।

*
নিহিলা, আমাকে জাগিয়ে দিও ভোর হলে। ব্লেডের পরিচর্যা করবো সকালের শুভ্র বিষণ্নতা গায়ে মেখে। ভালোমত ঘুম না হলে ওদের মোকাবেলা করার শক্তি হবে কী করে বলো? তাই আমাকে ভোরের আগে ডেকো না। আবার খুব বেশি বেলা করেও ঘুমুতে দিওনা আমায়। শরীর স্লথ হয়ে যাবে। নিহিলা, ওরা আসতে পারে যেকোন সময়, দলবেঁধে। পঙ্গপালের মত আকাশ আঁধার করে ডানা ঝাপটে ছুটে আসতে পারে তারা গভীর রাতে অথবা সুপ্রভাতে। আমি প্রস্তুত থাকবো, আমি প্রস্তুত করছি নিজেকে। তবে তোমার এসব দাঙ্গা-হাঙ্গামায় জড়ানোর কোন দরকার নেই সোনা। তোমার চোখে আমি ঘুমের কাঠি ছুঁইয়ে কুয়াশাপালংকে শুইয়ে দেবো। তুমি ঘুমুবে। ঘুমুবে বসুন্ধরার সকল শান্তি বুকে ধারণ করে। শান্তিটুকু তোমার থাক, শাস্তি না হয় আমিই নেবো, দেবো। নিহিলা, আমার প্রবঞ্চনার ইতিহাস তুমি শুনেছো রাতভর, আমার গুমড়ে কেঁদে ফেরা অপমানকে আদর দিয়ে লালিত্যে লালন করেছো, নির্ঘুম যন্ত্রণাকাতর রাতে মাথায় ঘুমপট্টি বেঁধে দিয়েছো ভিন্টেজ সিনেমার প্রেমময়ী নার্সদের মতো। তোমাকে আমি কোন বিপদের মুখোমুখি হতে দেবো না। আমি নিজেকে এবং তোমাকে সুরক্ষিত করতে শিখছি নিহিলা, খুব শিঘ্রই একদিন আসবে সম্মুখসমরের সময়, সেদিন আমার নৃশংস প্রতিশোধ দেখতে হবে না তোমায়, দেখতে হবেনা রক্তস্নাত, ঘর্মক্লান্ত অবয়বদের, তোমাকে ঘুম পাড়িয়ে দেবো আমি। আমি জিতে গেলে তোমাকে জাগাবো, তুমি আমার গলায় বরমাল্য পরিয়ে দেবে। একদিন না একদিন জয়ী আমাকে দেখবেই তুমি।

*
দিন ঘনিয়ে আসছে নিহিলা। তুমি প্রস্তুতি নাও দীর্ঘঘুমের। তার আগে আমাকে জাগিয়ে দিও। ওরা এলে আমাকে জাগিয়ে দিও। হয়তোবা অনেক রাত জাগতে হবে তোমার আরো। ওরা সম্ভবত রাতের বেলায়ই আসবে। রাত জেগে তোমার চোখের কোণে কালি জমবে, চিন্তা করো না এজন্যে। আমার কাছে জাদুর কাঠি তো আছেই, ছুঁয়ে দিলেই ঘুম আসবে, ক্লান্তি চলে যাবে, মুছে যাবে পিঁচুটি আর কালি। আর কিছুক্ষণ তুমি রবে না আমার জন্যে?
-এক প্রশ্ন কেন করো বারবার? তুমি তো জানোই আমি আছি এবং থাকবো। তোমাকে উত্তেজিত এবং বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। আজ আবার কী হলো?
আজ বলার মতো অনেক কিছুই হয়েছে। এমন সবকিছু, যেগুলো শুধুমাত্র নিহিলাকেই বলা যায় এবং নিহিলাকে না বলে আমার স্বস্তি নেই।
-ওরা যুদ্ধের ক্ষেত্র তৈরি করছে নিহিলা। আজকেও অফিসে আমাকে অপমান করেছে সে।
-কে? তোমাদের নতুন ম্যানেজার?
-হ্যাঁ। সে ছাড়া আর কে হবে! দুদিন হলো অফিস জয়েন করেছে, করে সারেনি, শুরু করেছে হম্বিতম্বি আর ফুটোচ্ছে কথার হুল। আমি অবশ্য কিছু বলি নি তাকে। নীরবে সয়ে গেছি। যেমনটা এ পর্যন্ত সয়ে এসেছি সবার ক্ষেত্রে। তবে তুমি তো জানোই, আমি ছেড়ে দেবো না কাউকেই। কাউকে না! ব্লেডটা তো আর এমনি এমনি কিনিনি! অনেকেই হয়তো দু টাকার এই সামান্য অস্ত্রটা দেখে না সিঁটকাবে। তবে তুমি তো আমার গেমপ্ল্যান জানো, তাই না নিহিলা? অবশ্য তুমি না জানলে আর কে জানবে? তুমি জানো এই ব্লেডটা কত ভয়ংকর অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে। রক্তের প্লাবন বইয়ে দিতে পারে। এত রক্ত আমি ঝরাবো ওদের সবার দেহ থেকে যে শহরে রক্তোচ্ছাস শুরু হবে। মানুষজন ভেসে যাবে রক্তের স্রোতে। ভেলা বানিয়ে পালিয়ে প্রাণে বাঁচতে চাইবে।
-আহ! তুমি এত বাজে বকোনা তো। বাড়িয়ে বলা আমার মোটেও পছন্দ না।
আমি জানি নিহিলা বাড়িয়ে বলা আর আতিশায্য পছন্দ করে না। তাই ওকে সবসময় সারবস্তুটাই বলে এসেছি। সবকিছু শুনে ব্লেড কেনার পরামর্শটা সেই দেয়। ব্লেডের সুবিধার দিকগুলি হলো- এটা সহজে পরিবহনযোগ্য, কেউ সন্দেহ করবে না, অস্ত্র হিসেব এটা অপ্রত্যাশিত বিধায় শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ভড়কে যাবে।

আমার প্রতিপক্ষরা
আমার প্রতিপক্ষ, বিশেষ করে বললে শত্রুর অভাব নেই কোন। তাদের এই দীর্ঘ তালিকার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিতে দিতে সম্মুখ সমরের সেই দিন চলে আসতে পারে। তাই আপাতত কয়েকজনের কথা বলি, যারা মহাযুদ্ধের দিন প্রতিপক্ষের নেতৃত্ব দেবে।
আমি ছোটবেলা থেকেই দুর্বল এবং শীর্ণকায়। সাততাড়াতাড়ি কোনকিছু বুঝে নিয়ে সেই অনুযায়ী কাজ করার মত চাতুরতাও ছিলো না আমার। এমন না যে আমি বোকা ছিলাম, কিছুটা মন্থর ছিলাম আর কী। আমার এই মানসিক আর শারীরিক দুর্বলতাগুলোর সুযোগে যা হয় আর কী, স্কুল আর মহল্লার গাব্দাগোব্দা ছেলেপুলেগুলো বিরক্ত করতো, ক্ষেপাতো, কখনও শারিরীক আঘাতও করতো। তাদের মধ্যে অনেকেই অবশ্য পরবর্তীতে বন্ধু হয়ে গেছে। অনেকের সাথে যোগাযোগ নেই। অনেকের সাথে মাঝেমধ্যে দেখা হয়ে যায় রাস্তায়। তাদের ছোটবেলার নাবুঝ অপরাধ ক্ষমা করে দেয়ার মত ঔদার্য আমার রয়েছে। আসলে ছিলো না অতটা, এটা নিহিলার অবদান। তবে সবাইকে ক্ষমা করে দেয়ার প্রশ্নই আসে না। নিহিলাও এ ব্যাপারে একমত। যেমন, যেই ছেলেটি ছোটবেলা থেকে আমার সাথে মস্করা করেছে, সবার সামনে ছোট করেছে, সব প্রতিযোগিতায় জিতে গেছে, সে যদি এখনও দেখা হলে নাক কুঁচকে ক্রুর হাসি হেসে আমার কাজ এবং ব্যর্থতা নিয়ে খোঁচা মেরে কথা বলে,
-কী রে রাজপুত্র! অফিসে যাচ্ছিস? অফিসে তোর রোল কত রে? ফার্স্ট হস তো? ঠিকমত কাজ করিস বাপধন, নাইলে টিসিমিসি খেয়ে যাবি, আমাদের শৈশবের কিন্ডারগার্টেনের বদনাম হবে।

আমি কেন সইবো?

অথবা পাওনার খোঁজে বারবার তাগাদা দেয়া সেই ব্যবসায়ী, এক মুহূর্তের জন্যেও যে টাকা ছাড়া অন্যকিছুর কথা ভাবতে পারে না, তা সে না পারুক আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু সবার সামনে টাকা চেয়ে হেনস্থা করে যদি,
-ঐ মিয়া! আর কত ঘুরাইবেন? নেয়ার সময় তো বড় মুখ কইরা অনেক কথা কইছিলেন। ক্ষ্যাম নাই কুত্তার বাঘা নাম তার। টাকা যদি না দিতে পারেন তো কয়া দেন, নাহয় ভিক্ষা হিসাবে ধইরা লমু নি, কিন্তু তাইলে আমারে জনস্বার্থে একটা কাজ করতে হইবো, সবার সামনে ঘাড় ধইরা নিয়া যায়া কমু, এই ফকিন্নীর পুতটারে ভুলেও কেউ টেকা ধার দিবেন না।

অনেক মানুষের সামনে এভাবে আমাকে অপমান করেছিলো সে। আমি কেন সইবো?

আর এই তালিকার সাম্প্রতিক সংযোজন, আমাদের অফিসের নতুন বস, যে আমাকে গত সাত দিনে চৌদ্দবার স্যাক করার হুমকি দিয়েছে, আমার মন্থরতাকে নিয়ে টিপ্পনি কেটেছে, পরিবারের ঔচিত্যবোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, তার নরম চামড়ায় ব্লেড চালিয়ে দেব সবার আগে।

আমার চামড়াও একসময় নরম ছিলো। খুব লাগতো আমার। এখন শক্ত হয়ে গেছে। চামড়ার কারবারী আমি খুব ভালোই জানি। প্রস্তুত হও নরম চামড়ার মানুষেরা!

*
ওরা আসছে! ওরা আসছে সরবে। ওরা একসাথে সবাই আসছে। আমি শুনতে পাচ্ছি...

আমি শুনতে পাচ্ছি ছোট্টবেলার গড়িয়ে চলা ছোট্টবল
কেমন করে আঘাত করে কেমনে ঝরায় চোখের জল
দেখতে পাচ্ছি হোঁৎকামুখো ব্যবসায়ীটার খুব তাগদ
হাসতে গিয়ে ফেলছি গিলে আনন্দ-হাসি সবই রদ
শুনতে পাচ্ছি বখে যাওয়া পাড়াতুতো ভাই পাড়ছে গাল
নিহিলাকে দেখে তারা বলেছিলো "এ দারুণ মাল!"
এসব শুনে, এসব দেখে করেছি আমি ভীষণ পণ
শোধটা এবার নিতেই হবে আর নয় যে স্মৃতি রোমন্থন।

-ওরা আসছে, আর তুমি এসময় ছড়া লিখছো? এটা ছড়া লেখার সময়?
নিহিলার কন্ঠে অসহিষ্ণুতা প্রকাশ পায়।
-এটাই ছড়া লেখার সময়। লিখে নিজেকে চাঙা করা আর কী! ভালো ছাত্রদের দেখো না, তারা পরীক্ষার আগের মুহূর্তে কিছু পড়ে না। রিলাক্স করে। আমিও তেমন করছি।
-কিন্তু তুমি তো ভালো ছাত্র না। আর তোমার মধ্যে মোটেই কোন রিলাক্সড অনুভূতি কাজ করছে না। আমার কাছ থেকে লুকোতে পারবে?
আমি মাথা গুঁজে লিখতে থাকি। নিহিলার কাছে কিছুই লুকোনো যায় না। ও সব জানে। সব বুঝে ফেলে।

আসছে ওরা, শুনতে পাচ্ছি বাজছে রণডম্বুর
আসছে ওরা শোধের পেয়ালা রক্তে টইটম্বুর
আসছে ওরা গভীর রাতে পাড়ায় যখন ঘুম নিঝুম
আসছে ওরা ছিনিয়ে নেবে আমার গোপাল, জবা, কুমকুম!

-মিটারে মিলছে না। তুমি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছো। খামোখা রিলাক্স থাকার ভান করো না। দরজায় কড়া নাড়ছে ওরা। ওঠো! ওঠো কাপুরুষ! এবারও যদি তুমি পালিয়ে যাও তোমাকে চিরকালের জন্যে ত্যাগ করবো আমি। এসব ছড়া লিখে অনেক বুঝ দিয়েছো আমাকে। ওঠো! ব্লেডটা নাও। আজ তোমাকে পারতেই হবে।

নিহিলা আমার গলা চেপে ধরে। আমার শ্বাসরোধ হয়ে আসে। নিঃশ্বাসের জন্যে নিস্ফল চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। ওর চামড়া আমার মতই শক্ত। আর নিস্তার নেই এবার।
-কই রে, লুজারটা গেলো কই! সে নাকি কি কিনছে! আমাদের সাথে যুদ্ধ করবে বলে! বাইর হও সোনার চান!
আমার ছেলেবেলার প্রাচীন উত্যক্তকারীর কন্ঠে তীব্র শ্লেষ।
-আরে ঐ হুমুন্দির পুতের কবুতরের কইলজা। অয় বাইর হইবো বইলা মনে করসেন? ক্ষ্যাম নাই কুত্তার বাঘা নামও নাই। একটা হাড্ডি দিয়েন ডাস্টবিন থিকা কুড়ায়া ওরে খাইতে। দেইখেন হাভাইত্যা কেমনে গাপুসগুপুস কইরা খায়!
পাওনাদার সুযোগ পেয়ে তার নোংরা মুখটা খুলতে ছাড়েনা।
-টোটালি ওর্থলেস পিস ওফ শিট। ফাকিং এ্যাসহোলটা আবার আমাদের সাথে পাল্লা দিতে চায়। হোয়াট আ জোক!
ম্যানেজারের জোক শুনে সবাই বেদম হাসতে থাকে।

-কী রে তুই যাবি না? যাবি না কাওয়ার্ড! যা দেখিয়ে দিয়ে আয় ওদেরকে তোর ব্রহ্মাস্ত্র।
নিহিলার এমন রূপ আর কখনও দেখিনি আমি।
-যাবো?
হঠাৎ করে ভীষণ দুর্বল আর বিপন্ন বোধ হতে থাকে আমার। তা দেখে নিহিলা তার সুর পাল্টায়।
-অবশ্যই যাবা সোনা। যাও এবং ওদের সবাইকে ব্লেড দিয়ে কেটে আসো। মাত্র তিনজন এসেছে। তিন পোঁচেই হয়ে যাবে। একটা দিবে গলায়, আরেকটা ঘাড়ে, আর শেষটা কপালের পাশের রগে। খুব সহজ কাজ। না পারার কিছুই নেই।

সে আমাকে ব্লেডটা এনে দেয়। ব্লেডটা হাতে নিয়ে আমি সমস্ত দুর্বলতা ঝেঁটিয়ে বিদেয় করি। চরম মুহূর্তের সামনে এসে একটু নার্ভাস হওয়াটা কোন ব্যাপার না। নিহিলা আমার দিকে তাকিয়ে হাসে। সে হাসিতে শরীরের আনাচে কানাচে প্রতিহংসার বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে। আমি তেতে উঠি। আমি ক্ষেপে উঠি। আমার মনে বিশ্বাস জন্মায়, আমি পারবো। ওদের ভীতচোখ দেখে বিশ্বাসটা অদম্য আকাঙ্খায় পরিবর্তিত হয়। আর কোন বাধা নেই, আর কোন শংকা নেই, নিশ্চিত সাফল্য, নিশ্চিত বিজয়। দ্যা সুইট স্মেল অফ সাকসেস! দ্যা ওল্ড ওয়াইন অফ রিভেঞ্জ! আমি নেশাতুর হয়ে প্রথম পোঁচটা দিই গলায়
-এইটা আমারে ছোটবেলা থেকে ত্যক্ত করার জন্যে, বুঝছোস?
কেমন তড়পাচ্ছে আমার বন্ধু কাটা মুরগীর মত দেখো!
ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে থাকা পাওনাদার আর বসের ঘাড়ে আর কপালে দুটো পোঁচ দেয়ার পরে আমার কেমন যেন অবসন্ন লাগে। এত সহজেই শেষ হয়ে গেলো? এত সহজ?

*
নিহিলা আর আমি। শুয়ে আছি পাশাপাশি। অবশ্য আমার পাশে না শুয়ে ও যাবেই বা কোথায়।
-আমরা সবাইকে মেরে পালিয়ে আসতে পেরেছি!
খুশি খুশি খুকী খুকী কন্ঠ তার।
-আমি পেরেছি অবশেষে নিহিলা! পেরেছি।
-হ্যাঁ। তোমার প্ল্যানটা আসলেই নিখুঁত ছিলো। সবকিছু থেকে বেরিয়ে আসতে এর থেকে ভালো কিছু ভাবা সম্ভব ছিলো না।
আমি কিছু বলতে গিয়ে পারি না। গলা থেকে ঘরঘর শব্দ হয়।
-এ্যাই, এখন কোন কথা বলোনা তো! গলা কেটে ফালি করে দিয়েছো এখন কথা বলা যায় নাকি! ঘাড় থেকেও রক্ত বেরুচ্ছে অবিরাম। আর কপালের রগটা ঠিকমতো কাটতে পারো নি। তাহলে আর এতক্ষণ এখানে শুয়ে কথা বলতে পারতে না। চলে যেতে অন্য কোথাও।
আমি কিছু বলার চেষ্টা করে আবারও ব্যর্থ হই শোচনীয়ভাবে।
-তুমি নিজেকে কেটেছো, রক্তাল্পনা দিয়ে নতুন নকশা করেছো সুন্দর। তুমি এখন সবার ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছো। আর কেউ তোমাকে অপমান করতে পারবে না। খোঁটা দিতে পারবে না। আঘাত করতে পারবে না। এই দেখ, আজরাঈল এসে উপস্থিত তুমি ভয় পেয়োনা একদম কেমন? আমি তোমার হাত ধরে আছি। তোমার সাথে আমিও যাবো।

জানি তো নিহিলা আমার সাথেই যাবে। আমাকে ছাড়া ওর গতি কী! আর কোথাও যে নিবাস গড়ার নেই ওর। আমার চোখ বুঁজে আসে। আমি নিহিলার অদৃশ্য হাত ধরে দৃশ্যান্তরে যাওয়ার প্রতীক্ষা করতে থাকি।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৩:৪১
৬৮টি মন্তব্য ৬৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×