আমাদের ঘুম কেড়ে নেয় ইউটোপিয়ান ভ্রান্তি...
যারা জেগেছে রাত, যারা চুমুক দিয়েছে মদের গেলাসে, তাদের বাহুলগ্না নারীর উগ্র সুবাস এবং অসংবদ্ধ নৃত্যের প্রলোয়ল্লাসে আকৃষ্ট হয়ে স্বপ্নগ্রস্থরা ঝাঁকে ঝাঁকে চলে আসে এই বৃহৎ অডিটোরিয়ামে। এখানে ইউটোপিয়ায় আক্রান্তদের জন্যে সর্বপ্রকার সুব্যবস্থা রয়েছে। যারা স্বপ্নে দেখেছিলো অপার্থিব আলোর রেখা অথবা শুনেছিলো বৃষ্টিপিয়ানোর সুর, ঘুম ভেঙে তাদের কেউ কেউ ছিটগ্রস্থের মত আচরণ করে। তাদের এই আচরণ প্রলম্বিত হলে, আরেকটা নাঘুমো দীর্ঘরাত কল্পরাজ্যের প্রলোভনে হাপিত্যেশ করে কাটিয়ে দিলে ভোরের আলোয় তারা দেখতে পায় কার্নিশে বসে আছে শকুনদম্পতি। তাদের দিকে চেয়ে আছে খরদৃষ্টিতে। আবার তাদের কেউ কেউ, সমঝদার অংশটি, নিজেদের রোগনির্ণয় করে নিরাময়ের আশায় চলে আসে এই ডিসটোপিয়ান অডিটোরিয়ামে।
এখানে ব্রাত্য গোলাপচারা জানে সংকটের দিনলিপি...
আমাদের সম্ভ্রান্ত সুখস্বপ্ন সম্ভ্রম হারিয়ে সম্ভ্যাব্যতার গণিতে অকার্যকর প্রমাণিত হলে এ্যানার্কিস্টরা সোল্লাসে চিৎকার করে ওঠে
'চিয়ার্স!'
হলঘরে জমা হয় স্বেতসুরার স্বেতস্রাব। আমরা তাতে অবগাহন করি, হেড়ে গলায় গেয়ে উঠি নৈরাজ্যসংগীত। আমাদের নাম স্থায়ীভাবে লিপিবদ্ধ হয় শরবিদ্ধ সম্রাটের শোচনালয়ে, আমাদের ডিসটোপিয়ান ঈশ্বরের দরবারে। কিছু স্বপ্নালু বোকা ইউটোপিয়ান হতচকিত বোধ কাটিয়ে ওঠার আগেই নবনিয়োগকৃত প্রহরীদের অতি উৎসাহী মহড়ায় লাঞ্চনার শিকার হয়ে চিরদিনের জন্যে প্রস্থানে বাধ্য হয়। সংস্ক্রিয়া সুচারুভাবে সম্পন্ন হলে সম্রাট সদম্ভ ভাষণ দেন,
"প্রিয় নৈরাজ্যবাদীরা, তোমাদের স্বাগতম আমার সুরম্য প্রাসাদে। এখন থেকে তোমরা এখানকার আজীবন বাসিন্দা। তোমরা জেনেছো ইউটোপিয়ান সমীকরণের অসারতা। তোমরা জেনেছো নৈরাজ্যের সৌন্দর্য এবং সৌকর্য। অভিবাদন তোমাদের। অভিবাদন পাপ এবং পঙ্কিলতাকে। অভিবাদন দুঃস্বপ্নতাড়িত সহিংসতা। ভালোবাসা অনুভূতিহীনতা, ধ্বংস কর স্বপ্নসুখের যৌথখামার। তার আগে নাচো এবং গাও। পান কর এবং উন্মত্ত হও!"
প্রবল হর্ষধ্বনিতে তার কন্ঠস্বর চাপা পড়ে যায়। তিনি সন্তুষ্টচিত্তে আমাদের প্রফুল্লতা দেখে বিরতি নেন কিছুক্ষণের জন্যে।
"তবে ভুলে যেও না তোমাদের কর্তব্য। আহলাদী সুখ এবং গেরস্থ জীবন এখানে সমাহিত। স্ফুটোনন্মখ ধাতবশিশ্ন দিয়ে ধর্ষণ কর ধরিত্রীকে। ভেঙে ফেলো সব আইনের কাঁচপুতুল।"
এ পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবকরা আমাদের কাছে মেনিফেস্টো বিলি করতে থাকে। আমরা মহান ডিসটোপিয়ান এ্যানার্কিস্ট সম্রাটের উদ্দেশ্যে আরেকবার জয়ধ্বনি করি। আমাদের উশৃঙ্খলতা সকল সীমা অতিক্রম করে। আমরা ভেঙে ফেলি পানপাত্র, সস্নেহে স্বমেহন করে ধর্ষণের প্রস্তুতি নিই। দেয়ালে সজ্জিত ধ্রুপদী তৈলচিত্রগুলোর ওপর বীর্যস্খলন করে পরবর্তী ঘোষণা শোনার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি।
"ভেবো না তোমাদের এই জাহির করা আচরনে আমি মুগ্ধ হয়েছি। আমার চাই আরো লুন্ঠিত সুখ, ধর্ষিত স্বপ্ন। যদিও তোমরা এই ডিসটোপিয়ান পৃথিবীতে স্থায়ীভাবে তালিকাভূক্ত হয়েছো, তারপরেও তোমাদের মুখোমুখি হতে হবে কঠিন পরীক্ষার। আমি যথেচ্ছভাবে একজনকে নির্বাচিত করব আজ। এখন আমোদ-প্রমোদ বন্ধ করে অভিযানের জন্যে প্রস্তুত হও। আমি তোমাদের ঈশ্বর"
আমাকেই ডাকা হবে এতশত জনের মধ্যে ভাবি নি। তার মুখোমুখি হবার সময় আমার মনে পড়ে গেল কবি আন্দালীবের একটি কবিতার কিছু পঙক্তি,
"শিস বাজাচ্ছো এ্যানার্কিস্ট
তুমি ফড়িঙের যৌথতা ভেঙে দিচ্ছো
প্রথাব্যঞ্জন"
-তুমি প্রস্তুত?
-ফর এনিথিং! এনিটাইম!
-আমি কীভাবে জানবো তোমার সমরশক্তির দক্ষতা, হৃৎপুস্তিকার লেখা মুছে দেয়ার জন্যে ইরেজার...
-আছে!
-প্রজাপতির ডানা, সপ্তসুরের ফিউশনে নেচে ওঠা সপ্তর্ষি, দক্ষিণা হাওয়ার তৈরী বায়ুবাহন...
-আমি ভেঙে দিতে পারি সব প্রথাব্যঞ্জন!
-কে তোমার প্রিয়, মাদার তেরেসা, চে গুয়েভারা, নেলসন ম্যান্ডেলা, জন লেনন...
আমি তার চোখে আমুদে টিটকিরি খেলে যেতে দেখি। সে আমাকে নিয়ে খেলছে। এখানকার, এই বিশাল হলঘরে ফুটে থাকা যৌনগন্ধী ফুলের মাতোয়াড়া সুবাসে এবং মৃত্যর মত রোমাঞ্চকর রাশান রুলেট খেলতে থাকা সতীর্থদের জীবনোল্লাসে আমি সহিংস হয়ে উঠি। তোয়াক্কা করি না কে সম্রাট কে প্রজা, কে ঈশ্বর!
-শোন মাদারফাকার, আই হেইট দেম। শান্তির মত উপাদেয় পান্তুয়া আর নেই জানি, কিন্তু আমি কোন ময়রা না। আমি ধ্বংস করতে চাই।
-কী ধ্বংস করতে চাও?
-যাবতীয় সৃষ্টি এবং অনাসৃষ্টি।
-ঈশ্বর তোমার সহায় হোক!
আমি আবারও রেগে উঠতে গিয়ে বুঝতে পারি যে সে রসিকতা করছে। উচ্চস্বরে হেসে আমি তার সাথে শামিল হই এযাবৎকালের তৈরী এক লাইনের সর্বশ্রেষ্ঠ কৌতুকটিতে।
আহ আনন্দ!
আমার পানপাত্রে সে আরো পানীয় ঢেলে দেয়। লাল রঙের উত্তেজক পানীয়। সেটা রক্ত না ঈশ্বরের অশ্রু, নাকি কুমারীর অনাস্বাদিত উরুসন্ধি থেকে নির্গত তরল নাকি উন্নতমানের ওয়াইন জানি না। ঢোকঢোক করে গিলে ফেলি।
-অভিযানে যাবার আগে একটু চাঙা হয়ে নাও। আরো লাগবে?
সশিশ্ন জিজ্ঞাসা তার। আমি আপত্তি করি না। আমাকে ঘিরে হিপহপ নাচে ক্রুশবিদ্ধ যিশু, অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্ষুধানাশী ক্ষারক, বিকলাঙ্গ শিশু আর বৃদ্ধদের দল আর বয়সের ভারে ন্যুব্জ কুঁজো ঈশ্বর।
-এরা কোত্থেকে এলো এখানে?
উত্তেজক পানীয় পান করার পর আমার নিজেকেই সম্রাট মনে হয়। আমি তাদেরকে কচুকাটা করার উদ্দেশ্যে মহামান্য এ্যানার্কিস্ট ঈশ্বম্রাটকে ধাক্কা দিয়ে সামনে এগুতে গিয়ে দেখি আমার কোমড়ে সুতো বাঁধা।
-ধীরে! এখনও সবাইকে পরাভূত করার শক্তি দেয়া হয় নি তোমাকে। বিকলাঙ্গ শিশু অথবা অথর্ব বৃদ্ধদের জন্যে তুমি ঠিক আছো, তবে ঈশ্বর এবং তার প্রেরীত পুরুষদের সাথে লড়াই করার যোগ্যতা এখনও অর্জন করো নি।
প্রচন্ড রাগে ফুঁসতে থাকি আমি। শুধুমাত্র শিশু এবং বৃদ্ধদের নিয়ে তো যে কেউ যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। আর ঈশ্বর? সেতো নিজেই নিজেকে নিয়ে তটস্থ নানারকম অনুভূতির দংশনে। উফ! কোমড়ের রশিটা শক্তভাবে লেগে আছে।
-শোনো, ঈশ্বরের সঙজ্ঞা আপেক্ষিক। এখন আমিই তোমার ঈশ্বর। তোমাকে আমি পরিচালিত করব। তোমার সীমা আমি নির্ধারণ করব। তবে চিন্তার কিছু নেই। রশিটা অনেক বড়। তুমি অনেকদূর যেতে পারবে নয়া রিক্রুট। যাও! ঝাঁপিয়ে পড় তোমার সমস্ত ধ্বংসস্পৃহা নিয়ে। আমরা ডিসটোপিয়ান পৃথিবী কায়েম করব।
সবাই একসাথে শেষ বাক্যটির প্রতিধ্বনি করে। আমি আর এক পেয়ালা পানীয় পান করে ছিটকে বেরুই অডিটোরিয়াম থেকে।
Welly, welly, welly, welly, welly, welly, well. To what do I owe the extreme pleasure of this surprising visit?
হাহা! আমাকে দেখে কেউ বুঝতে পারছে না আমি কী। বুঝবে কী করে? নিপাট ভদ্দরলোকের মত পোষাক পরিধান করে আছি। হাঁটছি দৃপ্ত পদক্ষেপে। পাশে দাঁড়ানো পুলিসের গাড়িটা একটা ট্যাক্সিক্যাবের কাজগপত্তর পরীক্ষা করতে ব্যস্ত। ছিন্নমূল শিশুরা ডাস্টবিন থেকে ময়লা কুড়োচ্ছে গভীর মনোযোগে, আমার দিকে কারো নজর নেই।
শহরের এই এলাকাটা সন্ধ্যায় খুব জমজমাট থাকে। আমি আমার অন্তর্গত হিংস্রতা অনুভব করে আনন্দ পাই। জিঘাংসু দৃষ্টিতে তাকাই যাবতীয় সৃষ্টিযজ্ঞের দিকে।
খিক খিক খিক!
এইখানে আবাসিক এলাকায় নিরাপত্তার ঘেরাটোপে বন্দী হয়ে কেউ জীবন চুদাচ্ছে। অভিজ্ঞ বাঞ্চোতরা পুরোনো দিনের গান গেয়ে ঢেকুরস্য কুকুর অথবা কুকুরস্য ঢেকুর হয়ে বুদবুদিয়ে উড়ে যাচ্ছে ইউতোপিয়ানো আহা কী মধুর শব্দ ই্যউঠোপিয়ানো মেঘমুত্রের দেশে। এইখানে সূর্যটা পশ্চিম দিকে একটু হেলান দিলে সবাই বালেশ্বরের প্রার্থনায় মেতে উঠবে। একই সাথে প্রজন্মান্তিক পতিতারা বের হবে জরাগ্রস্থ জরায়ু নিয়ে। পতিতাদের আমার ভালো লাগে। ওদেরকে জোর করে ডিসটোপিয়ান হলরুমে নিয়ে যেতে হয় না। মাগী, মাগীর দালাল, ছিনতাইকারী সবাইকে নিমন্ত্রণ জানাতে হবে। দশজঙ্কে নিয়ে যেতে পারলে আমি কমিশন পেতে পারি ডেস্টিনির আবালগুলার মত। হেহেহে! এই ডেস্টিনিগুলাকে অবশ্য গোণায় ধরি না আমি। ওদের প্রোডাক্টের ওপর আমি ছ্যাড়ছ্যাড় করে প্রস্রাব করে দিবো।
হেই হেই হেই ভ্রাদার! ভ্রাদার হইলো ভ্রাতা যোগ ব্রাদার। ভ্রাদার, তোমার বড়বুকঅলা বউয়ের ভাতার হব আমি আজকে রাতে। ফোরপ্লে স্কিপাবো। ডিরেক্তো। সরাসরি রসারসি। রাত নামছে রাত! ঘুম আসছে ঘুম! স্বপ্ন? স্বপ্ন দেখা ভালো। স্বপ্নদোষ হওয়াও স্বাভাবিক শরীরবৃত্তিক আচরণ। তবে আমাদের ডিসটোপিয়ান হলরুমে আসতে হলে ফরজ গোসল করার দরকার নাই। ইউঠোপিয়ান দিদ্র্রিমস! আচ্ছা কোন প্যাথেটিক হোমিওপ্যাথ এই টার্মটা বানাইছিলো? তার চোদনেচ্ছা দেখে আমি অবাকাকলাশ হয়ে যাই। অনেক্ষণ ধরে খেচি না। আমার এরশাদটা খাড়া হয়ে রীতিমত পেইন দিচ্ছে। ভালো মাগী টাগী থাকলে একটা কুইকি দেয়া যাইতো। কারো বাসায় ঢুইকা পড়া যায় অবশ্য। এ্যালেক্স এবং তার ড্রুগসদের মত। আমার অবশ্য ড্রুগস নাই। ড্রাগস নেয়া যাইতে পারে। অবশ্য সেক্সের চেয়ে বড় ড্রাগস আর কী আছে? ঢুইকা পড়ব নাকি কারো বাসায়? খাসা একটা মিল্ফেটোমিন দেখা যায় জানলা দিয়া। নাহ যাই গা,
'ফাক!'
রশিতে টান পড়ল কেন? বোচাকোদা ঈশ্বম্রাট তো বললো রশিটা অনেক বড়। তাইলে এরকম কেন হইলো? ওহ মনে পড়ছে। আমাকে তো একটা এ্যাসাইনমেন্ট দিছিলো। ওটা শেষ করার পরে যাবতীয় এ্যালেক্সিজম। একটা পিয়ানো কনসার্ট হইবো শহরের সবচেয়ে সুশীলাভ প্রান্তে। উঁ, সভ্য ভব্য হয়ে যেতে হবে। নো স্ল্যাং। ওখানে আজকে মোৎসার্ট বাজিয়ে শোনাবে কমবয়সী এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তবে আমার জন্যে যাওয়া সহজ। কারণ, আমি ওখানেই কাজ করি। রক্ষণাবেক্ষণের। অনেকদিন ধরে সুরের ভড়ঙ আর সৃষ্টির আবেশে মশগুল হয়ে থাকা স্বপ্নাদিষ্ট মানুষদের দেখে বিরক্ত হয়েছি। নিখিল বাংলাদেশ ডিসটোপিয়ান সমিতির সদস্য হবার পরে আর এসব সহ্য করতে হবে না। এমন অনেক রাত কেটেছিলো আমার সুখস্বপ্ন দেখে আতঙ্কিত হয়ে সারারাত জেগেছি। এখন থেকে আর ঘুমুবো না, স্বপ্ন দেখবো না। জেগে থাকবো, জেগে থাকবো এ্যাড্রিনালিনের প্রবাহে, এখনও অনেক কিছু নষ্ট করা বাকি, নষ্ট হওয়া বাকি...
সুত্রধরদের বিবাদে জর্জরিত জগৎ...
ডিসটোপিয়ান হলরুমে ঈশ্বম্রাট বসে আছেন চিন্তিত ভঙ্গীমায়। রশিগুলো ঠিকঠাক কাজ করছে না। তবে কী অন্য কেউ আছে? মহাবিশ্বের কোনখান থেকে কেউ কি সূতোযন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ নেবার চেষ্টা করছে? এরকম তো হবার কথা না! যাবতীয় ধর্মগ্রন্থ এবং ঈশ্বর এবং প্রেরীত পুরুষদের বন্দী করে রাখা হয়েছে এখানে। কেউ কেউ বেশ পোষ মেনে গেছে। তারা নাচছে, গাইছে, পান করছে। তারা কী গোপন কোন চাল চালছে? মনে হয় না। কিন্তু কোন একটা গড়বড় হয়েছে বোঝা যাচ্ছে। নব্য নিয়োগকৃত ডিসটোপিয়ানটার জন্যে বরাদ্দ দড়িটা ছোট হয়ে আসছে। পিয়ানো কনসার্টের ভেতরে ঢুকে নৈরাজ্য সৃষ্টি না করে সে সুর শুনছে। মহাবিশ্বের কোথাও মহাশক্তিশালী কেউ আছে কী না, কিংবা থাকলেও তার তৈরী নীতিমালা ইউটোপিয়ান কী না আবার নতুন করে যাচাই করা দরকার। তিনি তার প্রধান সহকারীকে ডাকলেন।
-কোথাও একটা গোলমাল হচ্ছে। চারধর্মের প্রধানকে ডাকো তো।
-ওদেরকে ডেকে লাভ নেই। আমাদের সংঘাত ওদের সাথে না। ওরা নিজেরাই তো নিজেদের মধ্যে সংঘাত করে চলেছে। ওরা আমাদেরই লোক। হাহাহা!
-তাহলে সমস্যাটা কে করছে?
-হায় ঈশ্বর! আপনি কেন সর্বজ্ঞাত নন? ঈশ্বররা কী এরকমই হয়? অবশ্য ঈশ্বরদের দেখেছি মোটামুটি সবাইকেই। আপনি বা তার ব্যতিক্রম হবেন কেন?
-তুমি আমার মধ্যে ক্রোধ সঞ্চারিত করছো!
-ঈশ্বর মাত্রই ক্রোধান্বিত এবং লোভী।
-আমরা মনুষ্যসৃষ্ট ঈশ্বরকে বন্দী করেছি, আমরা আমাদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এখন বাজে কথা না বলে একটা সমাধানের পথ খোঁজো।
-আপনি কি নিশ্চিত যে ঈশ্বরকে বন্দী করতে পেরেছেন? এখানে যারা আছে তারা আসল ঈশ্বর তা কী করে বুঝলেন বলুনতো? হয়তোবা আমরা প্রকৃত ঈশ্বর খুঁজে পাই নি, হয়তোবা এখানে যারা আছে তারা নকল, কিংবা তারা যদি আসলও হয় তাহলে অন্য কোথাও অন্য কেউ আছে...
-আরে এটাইতো আমি জিজ্ঞাসা করছি তোমাকে এতক্ষণ!
-হাহাহা! দেখুন, যদি থেকেও থাকে সেরকম কেউ, তো লড়াই করুন। শক্তিমানেরা জয়ী হয় সর্বত্রই। এটা মানুষ এবং ঈশ্বর দুই প্রজাতির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
*
আরে! পিয়ানোর কনসার্ট শেষ হয়ে গেছে। কী করলাম আমি এতক্ষণ! আমি কী সুর শুনছিলাম? আমি কী সৃজনে ডুবে ছিলাম? ছি ছি! আমাদের এ্যানার্কিস্ট সাম্রাজ্যে প্রবেশাধিকার হারালাম বোধ হয়! তবে এখনও সুযোগ আছে। ওই যে গ্র্যান্ড পিয়ানোটা, একা পড়ে আছে, ওটাকে ভেঙে চুরমার করে ফেলবো! ইয়াপ্প! সেই ওল্ড আল্ট্রা ভায়োলেন্সের নেশা প্রবাহিত হচ্ছে আমার শিরায় শিরায়।
ডিসটোপিয়ান ঈশ্বর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়ে প্রসন্ন হয়ে ওঠেন। তিনি দড়িটা সম্প্রসারিত করেন। যাও বাছা, যাও বাঁচো!
পিয়ানোটার কাছে গিয়ে একটা সুন্দর প্রজাপতি দেখলাম। রিডের ওপর দিয়ে চলে ফিরছে সহজ চাপল্যে। বাহ!
*
যাহ! হতচ্ছারা প্রজাপতিটা আবার কোথা থেকে এলো। এর সূতো তো আমার কাছে বাঁধা নেই। অন্য এক প্রবল সূত্রধর বেশ জোরেসোরেই নেমেছে খেলায় বোঝা যাচ্ছে। আচ্ছা আমিও দেখাচ্ছি দাঁড়া!
*
একটা ধেরে টিকটিকি এসে জুটেছে। জুলজুল করে তাকিয়ে আছে প্রজাপতিটার দিকে। বাহ বাহ! ভেবেছিলাম আমিই পিষে ফেলবো প্রজাপতিটাকে। এখন আর সেটার দরকার পড়বে বলে মনে হয় না...
*
-এই!
-হু বল।
-কী সুন্দর বৃষ্টি পড়ছে দেখছো?
-দেখছি না। শুনছি। আজকের পিয়ানো কনসার্টের সুরে বিভোর ছিলাম এতক্ষণ। মেয়েটা কী দারুণ বাজালো, তাই না? এখন শুনছি মেঘদলের মেলোডি।
-কী অদ্ভুত সৃষ্টি এই বৃষ্টি! বিনামূল্যে এর চেয়ে ভালো সুর আর কোথাও পাওয়া যাবে না।
-কে বলেছে পাওয়া যাবে না? যেবার আমরা মাধবকুণ্ডে গেলাম, জলপ্রপাতের সুরে মুগ্ধ হও নি? অথবা কক্সবাজারের উত্তাল তরঙ্গ, বাতাস। বাতাসেরও নিজস্ব সুর আছে। শুনতে কী পাও?
-পাবো না! এই সুরের টানেই তো বেঁচে আছি। প্রকৃতির নিজস্ব সুর, আমাদের নিজেদের তৈরী সুর, সারারাত সারাদিন হৃদয় ভায়োলিন। কে বানালো এসব বলত?
-আছে নিশ্চয়ই কোন এক অবাক জাদুকর। নিপুন সূত্রধর!
*
হাহাহা! টিকটিকি আর প্রজাপতি দুটোকেই মারলাম পিষে, আমার এ্যানার্কিজমের বিষে! এখন পিয়ানোটা ভেঙে ফেলবো। জয় হোক ডিসটোপিয়ান পৃথিবীর! মুছে যাক সব সুর, সব সৃষ্টি, ধ্বংস হোক সকল সৌন্দর্য। চিয়ার্স! তার আগে একটু জিরিয়ে নিই। সারাদিন বেশ ধকল গেছে। পিয়ানোটার ওপরেই বসে পড়ি! বসার সাথে সাথে রিডগুলো আন্দোলিত হয়ে বিদঘুটে এক সুর সৃষ্টি করল। বেশ মজার তো! একটু বাজিয়ে দেখি...
*
-শোবে না?
-দাঁড়াও, মজার একটা খেলা দেখাচ্ছে টিভিতে ওটা শেষ করে নিই।
-আমিও দেখবো। কী খেলা?
-টাগ অফ ওয়ার!
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৪৯