somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঝড়বাস্তব এবং ফ্যাকাশে ভোরের গল্প

২৭ শে আগস্ট, ২০১১ সকাল ১১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


খুন করতে সাহস লাগে। অস্ত্র লাগে। টাকা থাকলেও হয়। আমি বিভিন্ন বিকল্প পন্থার কথা ভেবে দেখছিলাম। সাহসের কথা অবান্তর এখানে, যাকে খুন করার কথা ভাবছি সে এমন কোনো ডাকাবুকো, শক্তিশালী অথবা ক্ষমতাধর কেউ না। তার গলায় ছুরি চেপে ধরলে সে সুপটু যোদ্ধার মত কৌশলে কব্জি চেপে ধরে ভেঙে দেবার ক্ষমতা রাখেনা। কিন্তু ছুরি বা পিস্তল দিয়ে তাকে ঘায়েল করতে গেলে উল্টো বিপত্তি হবার সম্ভাবনা। তার আশ্রয়দাত্রীকে খুন না করে তা পারা যাবে না। সুতরাঙ আমাকে বাধ্য হয়ে সর্বশেষ পন্থার দ্বারস্থ হতে হবে। আমরা কেউ চাইনা তাকে। কেউ চাইনি। বদ্ধঘরের ঝড়বাস্তব গহীন গোপন হয়ে তলিয়ে যাক সময়ের নদীতে এটাই আমাদের কাম্য ছিলো। আমরা হয়তোবা ভয় পেয়েছিলাম। ট্যাবু ভাঙার সাহস আমরা অর্জন করতে পারিনি। আমাদের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে ছিলো ষোল কোটি মানুষ, একটি সমাজ। কিন্তু নাছোড় সে কিছুতেই আমাদের পিছু ছাড়লোনা। কী সাহস তার! এত কিছুকে তোয়াক্কা না করে চলে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে এখানে এই ভীষণ প্রতিকূলে! আমরা তার পদশব্দ শুনতে পাচ্ছি। আমরা দুইজনা তার পদশব্দে আতঙ্কিত হয়ে পরস্পরকে কখনো সাহস দিচ্ছি কখনও অনাকাঙ্খিত কিছু হবে না বলে সান্ত্বনা দিচ্ছি, কখনও রেগেমেগে একে অপরকে দোষারোপ করছি, কখনও মাথা ঠান্ডা করে পরবর্তী পরিকল্পনার কাঠামো দাঁড় করছি। কিন্তু আমার অপরাধ অংশীদার বড্ড অবুঝের মত আচরণ করছে আজকাল।
-আমি তাকে খুন করতে পারবো না।
-তাহলে!
-এখনও এক সপ্তাহ সময় আছে। এর মধ্যে আমার মেনসট্রুয়েশন শুরু হয়ে যেতে পারে। এখনই এত ভয় পেও না।
-আর যদি না হয়?
-আমি বলেছি তো, আমি তাকে খুন করতে পারবো না। তবে ভয় নেই,
অবজ্ঞার একটা হাসি হেসে বলল সে, তোমাকে কোন অসুবিধায় ফেলবো না। আমি নিজেরটা নিজেই সামলাবো।
এ কথাটা শুনে আমার স্বস্তির শ্বাস ফেলার কথা ছিলো। পলায়নপর মনের দায়মুক্ত হয়ে ঝেড়ে দৌড়ানোর কথা ছিলো। কিন্তু আমার কেমন যেন বিভ্রান্ত লাগলো। আমি তার হাতে হাত রাখলাম। সে আমার দিকে তাকালো- যে দৃষ্টিতে থাকার কথা ছিলো স্পর্শরূপকিত আশ্রয়ের আশ্বাসে নির্ভার হবার কৃতজ্ঞতা, তার বদলে সেখানে আমি দেখলাম শান্ত, কিন্তু দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, কঠিন দুটো চোখ। তার অক্ষিশরে বিদ্ধ হয়ে আমার হাতের বাঁধন আলগা হল একটু। কিন্তু তার নিক্ষিপ্ত তীরে বিষ মাখানো ছিলোনা। ছিলো প্রেরণার এবং আশাবাদের চিরকুট। আমার ইচ্ছে করে তার হাতটা আরো জোরে করে, শক্ত মুঠোয় ধরতে। কদিন আগে হলেও সে বিগলিত প্রেয়সীর মত ন্যুব্জ হয়ে ধরা দিতো কিন্তু আজ এই হাত ধরার মত সাধারন ব্যাপারের সাথে জড়িত অনেক কিছু। অঙ্গিকার, প্রতিশ্রূতি, সাথে থাকা ইত্যাদি। তাই আমার হাতের মুঠো আলগাই থেকে যায়...

আমরা প্রতিদিনের মত একসাথে বের হই না খাবারের দোকান থেকে। সে বসে থাকে একা। আমি জনস্রোতে মিশে যাই। আমি মানুষের সাথে হাঁটি। সিরাতুল মুস্তাকিম! সহজ এবং সোজা পথে। তার দিকে একবার পিছন ফিরে তাকাই, বড্ড একা আর ক্লান্ত মুখে বসে আছে টেবিলে। কেউ নেই চারিপাশে, সবাই চলে গেছে। দোকান কর্তৃপক্ষ ঝাঁপি বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাকে উঠে যাবার জন্যে তাগাদা দিচ্ছে। সে চলে আসার পরে দোকানে আবার ক্রেতা সমাগম ঘটতে থাকে। প্রচুর খাদ্য-পানীয়-নির্জন কোণ এবং চুম্বন বিকিকিনি হয়।

সে হাঁটে একা।
আমি মিশে যাই জনস্রোতে।


এখনও কোন কিছুই নিশ্চিত নয়। অবশ্য নিশ্চয়তার কথা না বলে অনিশ্চয়তার কথা বলাই মনে হয় শ্রেয়। বলা যায়, সবকিছুই খুব বেশি অনিশ্চিত। নিজের শরীরের ভেতরে অন্য একজনের অস্তিত্ব অনুভব করা, একটা প্রাণকে পৃথিবীতে নিয়ে আসার আগ পর্যন্ত তাকে সাহস জোগানো, আদর করা, খুনসুটি করা, প্রবলতম শারীরিক বেদনার মুখোমুখি হবার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাওয়া-আমি এসবকিছুর জন্যে প্রস্তুত ছিলাম না এটা ঠিক, কিন্তু এখন আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি তার জন্যে। তার আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। একটা সম্ভাব্য রক্তাক্ত সপ্তাহের প্রথম দুই দিন গেছে শুকনো খটখটে। নতুন রক্ত কি সৃষ্টি হচ্ছে আমার ভেতরে? নতুন রক্ত, মাঙস, আমি কবে পেটের ভেতরে তার চলাফেরা অনুভব করব? কবে তার ছোট্ট পা জোড়া আমাকে লাথি দেবে আর আমি মিছেমিছি বকে দেবো? কেন সে আসছে না? কেন সবকিছুই এখনও এত অনিশ্চিত? সে কী ভয় পাচ্ছে? শোনো আমার অনাগত সন্তান, তোমার মা তোমাকে চায়। খুব করে চায়। সবকিছুর চেয়ে বেশি করে চায়। তোমার জন্মের পেছনে যার অর্ধেক অবদান, তার অবজ্ঞাকে যেন সহ্য করতে না হয় সেজন্যে আমি তোমার পুরো মালিকানা নিয়ে নেব। আশেপাশের আত্মীয়রা হঠাৎ অনাত্মীয় হয়ে উঠবে প্রতিবেশীরা ছদ্মবেশী শয়তান হয়ে উঠবে, সে ভয় পাচ্ছো? তোমাকে আমি এখান থেকে অনেক দূরে নিয়ে যাবো। এটা নেহায়েৎ আমার বালিকাস্বত্ত্বার আবেগী প্রলাপ ভেবো না। এটা সত্যি যে তোমার আগমন রুধতে আমাদের সচেতন প্রয়াস ছিলো...
....কিন্তু এটা ভেবে অভিমান করলে খুব ভুল করবি বাবা! একসময় না একসময় তো তুই আসতিস! তোকে নিয়ে আসতাম স্বর্গের উদ্যান থেকে ক্রীড়ারত অবস্থায় ফুলকুঁড়ি সমেত মেঘের জাহাজে করে। তোর হঠাৎ করে খুব তাড়া হল, তুই এত দ্রুত চলে আসতে চাইলি, ভুল সময়ে, আমাদের অপ্রস্তুত করে, এজন্যে বিব্রত হচ্ছিস? এহ, ছোট্ট মাথায় কত্ত দুশ্চিন্তা! চিন্তা ভাবনার ভার আমার ওপর ছেড়ে দে না! আর কারো কথা ভাবিস না, শুধু আমার জন্যে হলেও তুই আয়, তোকে কেউ কিচ্ছু করতে পারবেনা, ফুলের টোকাটি দিতে পারবে না আমি থাকতে। তুই যদি ভাবিস পরে আসবি, আমি তোর জন্যে অপেক্ষা করে থাকবো, কিন্তু যদি ইতিমধ্যেই এসে থাকিস, আশ্বস্ত হ। ভয় পাবি না একদম।
উহ ফোন! মানুষজন কত বিচ্ছিরি দেখ, তোর সাথে একটু কথা বলার অবসরও দেয় না। অবশ্য আমি বকবক করে তোর মাথা ধরিয়ে দিয়েছি, ঘুমো। পরে কথা বলবো।

-হ্যালো!
-শোন...আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার পক্ষে খুনী হওয়া সম্ভব না। কাদের ভয়ে ভীত হয়ে আমি আমার সন্তানকে খুন করব? আই ডোন্ট ফাকিং কেয়ার এনিবডি। কে কী বলল তাতে আমার কিছুই এসে যায় না। অল আই নো ইজ, হি ইজ মাই ব্লাড, এ্যান্ড আই হ্যাভ টু সেইভ হিম। আমার অস্তিত্বের একটা অংশকে খুন করা মানে তো আমাকেই খুন করা। আমি বিকলাঙ্গ হয়ে বাঁচতে চাইনা। আই উইল বি আ গুড ফাদার আই প্রমিজ। আমার তোমাকে দরকার নাই। হু দ্যা ফাক আর ইউ? প্রেমিকা? সেক্স পার্টনার? নাকি ভাবী স্ত্রী? তুমি উচ্ছনে যাও তোমাকে আমার দরকার নাই। কিন্তু আমার সন্তান, সে পৃথিবীর মুখ দেখতে উৎসুক, তাকে তুমি নিয়ে আসবা, সে যদি আসে ডোন্ট ফাকিং ডেয়ার টু প্রিভেন্ট দ্যাট...
-তুমি কী এখন বারে?
-হাউ ডু ইউ নো!
-কালকে কথা হবে। রাখি এখন।

-তুমি গতকাল কী বলেছিলে মনে আছে?
-হু আছে।
-সে কথাগুলো এখন বলতে পারবে?
-উমম... নট শিওর!
-তুমি জানো না কালকে তুমি আমাকে কতটা নাড়িয়ে দিয়েছো। আমি কোন ঘোরের মাথায় সিদ্ধান্ত নেইনি। কিন্তু তুমি মদ্যপ অবস্থায়, ঘোরের মধ্যে কথা বলছো জেনেও, আমার খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছিলো ওগুলো সত্যি। খুব ইচ্ছে করছিলো তোমার সাপোর্ট পেতে। আমি সকল বাঁধা,ঝঞ্ঝা নিজে মোকাবেলা করতে প্রস্তুত, কিন্তু তুমি পাশে থাকলে ব্যাপারটা কত সুন্দর হত...
-স্যরি...আমি ড্রাঙ্ক ছিলাম। তবে আমিতো বলিনি যে আমি তোমার পাশে নাই। তবে আমার মনে হয় কী, সবকিছু ভেবে আমাদের উচিত একটা সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া। এ্যাবোরশন করে ফেলাই মনে হয় ভালো হয়...
-আমি পারবো না। আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি স্বীকার করছি, এটা অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি, কিন্তু আমি হত্যাকারী হতে পারবো না। টু বি স্পেসিফিক, আমি আমার সন্তানের হত্যাকারী হতে পারবো না।
-একটা ভ্রুণ, যার কোন আকার নেই সে অবস্থায় তার জন্যে এতটা আবেগ না দেখিয়ে আমার মনে হয় বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে, ঝোঁকের মাথায় কোন সিদ্ধান্ত না নেয়াই ভালো।
-আমি তো বলেছি তোমাকে, তুমি যদি আমার সাথে না থাকতে চাও আমি কোন অভিযোগ করবনা, তোমাকে দোষারোপ করবনা, শুধু দয়া করে ঐ কথাটি আর দ্বিতীয়বার উচ্চারণ করনা, আমি ঝোঁকের মাথায় কিছু বলছি না। ঝোঁকের মাথায় তরল কথাবার্তা আমি বলি না। আচ্ছা উঠি আজকে। দেরী হয়ে যাচ্ছে।
-চলো তোমাকে পৌঁছে দেই।
-চলো!

রাস্তায় অনেক মানুষজন, অনেক ভীড়, অনেক গাড়ি। এমন না যে আমরা ভীড় ভয় পাই। কিন্তু ভীড় কমার জন্যে, রাস্তা পুরোপুরি ফাঁকা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করব বলে সিদ্ধান্ত নেই। ভীড়ের মধ্যে হারিয়ে যেতে চাই না। আমরা দুজন মিলে হেঁটেই বাকিটা পথ পাড়ি দিতে পারবো। আমাদের সামনে একটা প্রায় ফাঁকা বাস থামলো। কিন্তু আমরা ওটায় উঠতে অস্বীকৃতি জানালাম। ওখানে ছিলো মিডিয়াবাজ কিছু ভন্ড সেকেলে বুদ্ধিজীবি, হাসপাতাল থেকে গর্ভপাত ঘটিয়ে আসা হাস্যজ্জ্বল এক জুটি এবং আমাদের পাড়ার প্রধান উপাসনালয়ের নেতৃবৃন্দ।
রাস্তা ফাঁকা হয়ে এলে আমরা দুজন হাত ধরাধরি করে হাঁটতে থাকি। রাস্তা অবশ্য পুরোপুরি ফাঁকা না। আমরা যেই লেন ধরে হাঁটছি সেটা ফাঁকা। বিপরীত দিক থেকে এখনও ছুটে আসছে হাজার হাজার গাড়ি লক্ষ লক্ষ মানুষ একটা আস্ত দেশ আর প্রবল বাতাস! প্রতিকূলে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। তবে কিছুক্ষণ পরেই প্রতিবন্ধকতাগুলো ভালোভাবে টের পাওয়া শুরু করলাম। বিরুদ্ধ বাতাসের প্রবল তোড়ে দাঁড়িয়ে থাকাই দুষ্কর। ওপাশ থেকে কিছু দালাল খুব ডাকাডাকি করছে আমাদের তাদের গাড়িতে ওঠার জন্যে। কেউ কেউ তো রোড ডিভাইডার টপকে এসে টানাটানি শুরু করল। মুখে তাদের প্রচ্ছন্ন হুমকি। তাদের গাড়িতেই উঠতে হবে। নাহলে সামনে যেতে দিবে না। আমি এসব দেখে একটু দমেই গেলাম।
-এই ঝড়জল, বিরুদ্ধ বাতাস আর মানুষের সাথে দুজন মিলে লড়াই করা অসম্ভব, চলো ঐ লেনে চলে যাই।
-ঠিকই বলেছো, দুজন মিলে চলা কঠিন। একলা চলাই ভালো। তাতে জটিলতা কমে। তুমি যেতে পারো ইচ্ছে করলে।
আমি তার হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকি। কিন্তু সামনে এগুবো কিনা বুঝতে পারি না!

-তোমার মেন্সট্রুয়েশন শুরু হয়নি এখনও না?
পরদিন আমাদের দেখা হলে কুশলাদি বিনিময়ের পরিবর্তে আমার এই প্রশ্নটাই প্রথমে করতে ইচ্ছে করে এবং আমি তাই করি।
-না।
-হু! তা কী করবে ভাবছো?
-শোনো, আমি কী করব সেটা একাধিকবার বলেছি। আর তুমি কী করবে সেটা জানার কোন আগ্রহও নেই আমার।
তীব্র কথাগুলো সে তার স্বভাবসুলভ শান্ত কন্ঠেই বলে।
-সাতদিনের মধ্যে যদি শুরু না হয় তাহলে আমি চেকআপ করতে যাবো।
-আমিও যাবো তোমার সাথে।
-আবারো ঝোঁকের মাথায় বাজে বকছো?
-আমি জানি না আমি জানি না! আমি কিচ্ছু জানি না।
তার মাতৃত্বজনিত স্নিগ্ধ সবলতার মুখে আমার নার্ভাস ব্রেকডাউন ঘটে। আমার নিজেকে তুচ্ছ এবং পরাজিত মনে হয়। কী সুন্দর কাটছিলো জীবন প্রেমে-কামে, তার মধ্যে কোথা থেকে এক উটকো মাংসপিন্ড এসে বাগড়া বসাতে চায়! আমি ওকে আসতে দেবো না। খুন করব খুন! আমার সাহস নেই, অস্ত্র নেই, কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। গর্ভপাতের বড়ি খাইয়ে দেবো পানীয়ের সাথে। কিন্তু তাই বা কীভাবে করি! আমার রক্ত, আমার সন্তান তাকে আমি খুন করব! এই খুনের জন্যে আমার কোন শাস্তি হবে না, আমাকে খুনী বলবেনা কেউ, কিন্তু এটা যে খুন এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। শান্ত হও, নিজেকে বলি আমি। বি আ ম্যান! তোমার প্রেমিকার কাছে যাও। তার হাত ধর। তাকে নিয়ে নতুন সংসার তৈরী কর। আমি এখন ড্রাঙ্ক না। আমি একদম স্থিত অবস্থায় সিদ্ধান্ত নিচ্ছি তাকে বলব, হ্যাঁ একদম নিশ্চিত করেই বলব তার পাশে আমি আছি সবসময়, থাকবো। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি কী বলা ঠিক হবে? আরেকটু ভাবা দরকার না? ভাবতে গিয়ে দেখি সে আবার ঝঞ্ঝামুখর বিরুদ্ধ বাতাসের ফাঁকা রাস্তায় নেমে গেছে, একা! আমি তার পেছনে ছুটতে থাকি, কিন্তু বাতাসের বেগ আরো বেশি আজকে। তার পিছে ছুটতে হাত ধরতে আমাকে অনেক সংগ্রাম করতে হচ্ছে, জানি না পারবো কী না...


এক অসম্ভব বিষণ্ণ ফ্যাকাশে ভোরে আমার ঘুম ভাঙে সেলফোনের শব্দে।
-একটা সুখবর আছে তোমার জন্যে।
-কী!
আমার মধ্যে একই সাথে শঙ্কা এবং আনন্দ কাজ করে।
-ইট হ্যাজ বিন স্টার্টেড। আর কোন চিন্তা নেই তোমার।
আমি শুনে অনেকক্ষণ চুপ করে থাকি। বলার কিছু খুঁজে পাই না। সে আমাকে খুব ভালো পড়তে পারে।
-তোমার মন খারাপ হল নাকি শুনে?
-হ্যাঁ।
মৃদুকন্ঠে বলি আমি।
-আমারও।
-আমি জানি।
-এ কয়দিন একটা স্বপ্নের ঘোরে ছিলাম যেন। নিজেকে হাজার প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সাহসী এক মেয়ে, বড় কথা- 'মা' মনে হচ্ছিলো। আর এখন! এখন আমি সেই পুরোনো সাধারণ একটা মেয়ে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে বলে, এর পরেরবার কন্ট্রাসেপটিভ ব্যবহারের সময় আরো সাবধান হতে হবে!
ওপাশ থেকে আমি ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ পাই। আমার শান্ত স্থিতধী প্রেমিকা নিজের স্বভাববিরুদ্ধ আচরণ করছে। আমার উচিত এখন তাকে কিছু সান্ত্বনা এবং ভালোবাসার কথা বলা।
কিন্তু কী বলব আমি! আমি যে খুনী হতে চেয়েছিলাম। খুনী হতে পারিনি। খুনী হতে পারবো কিনা সেটা দেখার একটা উপায় তৈরী হয়েছিলো। আমি নিজেকে দেখতে চেয়েছিলাম তার জঠরের আয়নায়। কিন্তু সে সুযোগ হলো কই! আমি এখন জানি না আমি সন্তান হত্যাকারী নাকি স্নেহবৎসল বাবা নাকি বিশ্বস্ত প্রেমিক নাকি একজন ইমপোটেন্ট পুরুষ!

আমার কী সাধ্য মাতৃত্বের সঙকল্পে অটল এক নারীর ভেঙে পড়ার সময়ে তাকে নতুন স্বপ্ন দেখানো!
ফ্যাকাশে ভোরকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিয়ে একটা নধর গোলগাল সূর্য হেসে উঠলে ওটাকে আমার উৎকট রসিকতা মনে হয়।

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১১ সকাল ৮:২৫
১২১টি মন্তব্য ১২১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×