এক্ষেত্রে প্রথমেই বলে নেই স্তনকর বা ব্রেস্টট্যাক্স কি?
এক সময় নিয়ম ছিলো শুধু ব্রাম্মণ ব্যতিত অন্য কোন হিন্দু নারী তার স্তনকে ঢেকে রাখতে পারবে না। শুধুমাত্র ব্রাহ্মণ শ্রেণীর
হিন্দু নারীরা তাদের স্তনকে একটুকরো সাদা
কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে পারতো, বাকি হিন্দু
শ্রেণীর নারীদেরকে প্রকাশ্যে স্তন উন্মুক্ত
করে রাখতে হতো। তবে যদি কোন নারী
তার স্তনকে কাপড় দ্বারা আবৃত করতে
চাইতো, তবে তাকে স্তনের সাইজের উপর
নির্ভর করে ট্যাক্স বা কর দিতে হতো। এই
নির্মম করকেই বলা হয় স্তনকর বা ব্রেস্টট্যাক্স।
এবার একটু সমালোচনায় আসা যাকঃ হিন্দুয়ানী মুখ থেকেই বোধয় আমি শুনেছি যে, এক সময় মহিশুর (দক্ষিণ ভারতের এলাকা)
শাসনকর্তা ছিলেন টিপু সুলতান।আর সবাই বলতো তিনি নাকি তরবারির ভয় দেখিয়ে অনেক হিন্দু নারীকে মুসলিম বানিয়েছিলেন।
কিন্তু ইতিহাস বলছে, ঐ সময় টিপু সুলতান হিন্দুদের একধরণের জংলী কালচার (স্তনকর) মোটেও পছন্দ করেননি।তিনি চেয়েছেন এই নগ্নতা বন্ধ হোক।তাই তিনি হিন্দু নারীদের আহবান করেছিলেন- “যদি তোমরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করো, তবে কাপড় পরার অধিকার পাবে।” এ কথা শুনে হাজার হাজার হিন্দু নারী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলো। অথচ বর্তামানে এই ইতিহাসটি এখন বিকৃত করে প্রচার করে হিন্দুরা যে, মুসলিম শাসক টিপু সুলতান জোর করে হিন্দু নারীদের তরবারি দেখিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিয়েছে। কিন্তু মাথা মোটার দলেরা একবার ও চিন্তা করেনা যে, ইতিহাস বিকৃত করার পরেও ণারীদের সাথে কেন পুরুষদের উপর জোর করে ধর্ম গ্রহণ এর কথা আসলো না। যদি টিপু সুলতান তরবারির ভয়ই দেখাতেন তবে পুরুষদের কেও দেখাতেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তা তিনি করেননি। কারন তখন পুরুষদের স্তনকর দিতে হতনা। (ব্যপারটা খুবেই পরিষ্কার)
আসলে ঐ সময় হিন্দুরা ছিলো অ্যামাজন জঙ্গলের জংলীদের মত অসভ্য ও বর্বর। মুসলিম শাসকরা এসে হিন্দুদের সভ্যতা শিক্ষা দেওয়াতে তারা কিছু সভ্যতা শিখতে পেরেছে। এ সম্পর্কে হিন্দু ইতিহাসবিদ সুরজিত দাসগুপ্ত বলে- “ঐ সময় হিন্দু নিম্নবর্ণের লোকদের উর্ধাঙ্গ অনাবৃত রাখতে হত। সে সময় ভারতবর্ষের কেরালাতে অমুক হিন্দু নারী ইসলাম গ্রহণ করেছে এটা বলার প্রয়োজন ছিলো না, বলতে হতো শুধু
‘কুপপায়ামিডুক’ শব্দখানা। এ শব্দখানার অর্থ ‘গায়ে জামা চড়িয়েছে’।
(সূত্র: বই-সুরজিত দাসগুপ্তের ‘ভারতবর্ষ ও ইসলাম’, পৃষ্ঠা:১৩০-১৩১)
হিন্দুদের বর্বরতাময় এবং জংলীদের মত সেই সময়ের ঐ স্তনকর এর পরিনতিঃ
১৮০৩ সালে নাঙ্গেলী (Nangeli) নামক এক
নারী তার স্তনকে আবৃত করে রাখে। যখন
গ্রামের ট্যাক্স কালেকটর তার থেকে স্তনকর
চাইতে আসে, তখন নালেঙ্গী তা দিতে
অস্বীকার করে এবং নিজের দুটি স্তনকে
ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে পাতা দিয়ে মুড়ে
ট্যাক্স কালেকটরকে দিয়ে দেয়। তখন কাটা
স্তন দেখে ট্যাক্স কালেকটর অবাক হয়ে যায়। স্তন কেটে ফেলার কিছুক্ষন পরেই
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্য নাঙ্গেলীর
মৃত্যু হয়। স্ত্রীর মৃত্যু শোকে নালেঙ্গীর
স্বামীও সাথে সাথে আত্মহত্যা করে। এই
ঘটনার পর থেকেই স্তনকর রোহিত হয়।তবে স্তনকর রোহিত হলেও দক্ষিণভারতে নারীদের স্তন আবৃত করার জন্য বহু সংগ্রাম করতে হয়েছে। এমনকি বিষয়টি নিয়ে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা পর্যন্ত করতে হয়েছে তাদের। ১৯ শতাব্দীর মাঝে এসে যখন কিছু হিন্দু নারী তাদের শরীরের উপরের অংশ আবৃত করার অধিকার দাবি করে, তখন হিন্দু পুরোহিতরা স্পষ্ট করে বলে দেয়, নিচু বর্ণের নারীদের শরীরের উপরের অংশ আবৃত করা
ধর্ম বিরোধী। বিষয়টি নিয়ে ১৮৫৯ সালে
দক্ষিণ ভারতে একটি দাঙ্গা সংগঠিত হয়। এই
দাঙ্গার উদ্দেশ্য ছিলো হিন্দু নারীদের
শরীরের উপরের অংশ আবৃত করার অধিকার
আদায় করা। এই দাঙ্গায় ‘কাপড়ের’ দাঙ্গা
হিসেবেও পরিচিত। আর এসব ফ্যাতনার থেকে সাধারণ হিন্দু নারীদের রক্ষা করার জন্যই মুসলিম শাসক টিপু সুলতান ইসলাম ধর্ম গ্রহনের আহবান জানিয়েছিলেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৬ সকাল ৮:০৪