লাইট পেইন্টিং কি?
এটা এক ধরনের টেকনিক যার মাধ্যমে একজন ফটোগ্রাফার ছবির দৃশ্যপটকে নিজের ক্যানভাস হিসেবে ব্যাবহার করতে পারে। অর্থাৎ, আপনি যেকোনো আলোর উৎস (যেমন, টর্চ লাইট/মোমবাতি/লেজার লাইট ইত্যাদি) দিয়ে আপনার কম্পোজিশন এর উপরেই আকবেন। এখনো ক্লিয়ার হল না? তবে চলুন উদাহরন দেখি একটা।
এই নাদান ফটোগ্রাফার এর তোলা একমাত্র জাতের লাইট পেইন্টেড ফটোগ্রাফ এটি। তো কিভাবে এটি করলাম? নিচের ধাপগুলো পড়লে একটা মোটামুটি আইডিয়া পেয়ে যাবেন। আর ডিএসএলআর না থাকলেও এই ছবি তোলা যাবে। এখন অনেক ভালো পয়েন্ট অ্যান্ড শুট ক্যামেরা পাওয়া যায় যাতে সাটার স্পীড কন্ট্রোল করা যায়। এমন একটি ক্যামেরা থাকলেই আপনি এই ছবি তুলতে পারবেন (ট্রাইপড রেকমেন্ডেড, তবে থাকতেই হবে এমন না)।
১) আমার স্নিকারস জোড়া রেখে ক্যামেরা টা প্লেস করে নিলাম প্রথমেই। ক্যামেরা টা কোন স্থিতিশীল (stable) সারফেস এর উপর রাখতেই হবে যাতে না নড়ে। ট্রাইপড ইউজ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। এই ছবি তোলার সময় আমার কাছে ট্রাইপড ছিল না। তাই একটি হার্ড কভার বই এর উপর রেখেছি ক্যামেরা।
২) এরপর ক্যামেরা নেড়েচেড়ে এমন ভাবে প্লেস করুন যাতে আপনি ফ্রেম এ আপনার মনের মতো কম্পোজিশন পান।
৩) এখন পালা কতক্ষনের এক্সপোজার নেবেন তা ঠিক করার। আমি এক্ষেত্রে ২০ সেকেন্ড রেখেছিলাম কারন এতে বেশ টাইম পাওয়া যায় এবং সাচ্ছন্দে “পেইন্ট” করা যায়। এছাড়াও অ্যাপারচার ভ্যালু ও আইএসও টাও সেট করতে হবে। এগুলোর মান আমি সেট করেছিলাম যথাক্রমে f/5.6 ও আইএসও ২০০। আপনি নিজে তোলার সময় এগুলো নিয়ে একটু এক্সপেরিমেন্ট করতে হবে পারিপার্শ্বিক লাইট এর কথা বিবেচনা করে। আমার ক্ষেত্রে রুম পুরো অন্ধকার ছিল যাতে পেইন্ট করার সময় আমার হাত দেখা না যায়। ঘর আলোকিত থাকলে আমাকেও দেখা যেত!
৪) আমি একটি ছোট নীল রঙের লাইট ব্যাবহার করেছিলাম। এবার হাতে লাইট নিয়ে প্রস্তুত হয়ে যান! সাটার বাটন এ ক্লিক করলেই কিন্তু ক্যামেরার সাটার খুলে যাবে (এক্ষেত্রে ২০ সেকেন্ড এর জন্য) এবং এর মাঝেই আপনার ছবি একে ফেলতে হবে। তাই সাটার এ একবার ক্লিক করেই হাত সরিয়ে ফেলতে হবে যাতে ক্যামেরা না নড়ে। এরপরে ক্যামেরার সামনে ফ্রেম এর ভেতর আমি লাইট টা বৃত্তাকারে ঘুরাতে থাকলাম ঠিক স্নিকারস জোড়ার উপরে। ২০ সেকেন্ড ধরে ঘুরাতেই থাকলাম। ২০ সেকেন্ড পড়ে যখন সাটার আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যাবে তখন ছবি তোলা শেষ!
তবে এই রকম ছবি তুলতে হলে ধৈর্য থাকা চাই। কারন উপরের ছবি টি কিন্তু আমার ১১/১২ তম চেষ্টায় হয়েছে। এক্ষেত্রে এক্সপেরিমেন্ট করার মানসিকতা থাকতে হবে, একবার না পারিলে দেখ শতবার টাইপ! এবং প্রথমবার ফল মনমতো না হলে অন্য অ্যাপারচার সেটিং, এক্সপোজার সেটিং দিয়ে ট্রাই করতে হবে। কারন ভিন্ন ভিন্ন লাইট কন্ডিশন এ এসব সেটিংও চেঞ্জ হবে। উপরের ধাপ গুলো শুধু গাইড লাইন হিসেবে ব্যাবহার করবেন।
কিছু টিপসঃ
~ নয়েজ এর ব্যাপারে সাবধান থাকবেন। এগুলো যেহেতু মুলত অন্ধকার অবস্থায় তোলা হয় সেহেতু ছবি তে নয়েজ থাকতে পারে। নয়েজ এরাতে ক্যামেরার বিল্ট ইন নয়েজ রিমুভার অপশন ব্যাবহার করতে পারেন। এছাড়াও আইএসও যত কম রাখা যায় ততই ভালো, ১৬০০ এর উপরে না ওঠাই উত্তম। এরপরেও পিসি তে ফাইনাল প্রসেসিং এর সময় লাইটরুম এর নয়েজ ফিলটার ব্যাবহার করুন। লাইটরুম এর নয়েজ ফিলটার কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি স্ট্যান্ডার্ড।
~ মানুষের ছবি তুলতে গেলে নরলে চলবে না। পুরোটা সময় ঠায় দাড়িয়ে থাকতে হবে! কাজতা একটু কঠিন বৈকি! তবে এক্ষেত্রে ফ্ল্যাশ ইউজ করে নড়াচড়া ফ্রিজ করা যেতে পারে।
~ আপনি সাটার টেপার সময় ক্যামেরা নড়ে জেতে পারে। তাই ক্যামেরার টাইমার অপশন ব্যাবহার করুন। এতে সাটার চাপার পর ৩/৫ সেকেন্ড পড়ে ছবি তোলা শুরু হবে এবং ক্যামেরা নড়ার কোন অবকাশ ই থাকবে না! আর টাকা থাকলে একটা রিমোট ই কিনে ফেলতে পারেন
~ এক্সপোজার টাইম ৩০ সেকেন্ড এর নিচেই রাখা উচিৎ সাধারণত। এতে নয়েজ কম হবে।
~ আবারও বলছি, ট্রাইপড ব্যাবহার করার চেষ্টা করুন। না থাকলে ক্যামেরা যাতে না নড়ে সেতার বাবস্থা করুন! এটাই সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট!
তাহলে আর দেরি কেন? শুরু করে দিন লাইট পেইন্টিং! আর ইন্সপায়ারেসন হিসেবে নিচের ছবিগুলো দেখতে পারেন। হ্যাপি ক্লিকিং!
আমার অন্যান্য ফটোগ্রাফি রিলেটেড পোস্টঃ
ডিএসএলআর কেনার কথা ভাবছেন? একটি পরিপূর্ণ ক্যামেরা বাইং গাইড (বাংলাদেশী দাম সহ!)
কোন লেন্স কিনবেন ডিএসএলআর এর জন্য?
'বোকেহ'নামা - শিখে নিন ফটোগ্রাফির একটি বহুল প্রচলিত টেকনিক
ডার্করুম থেকে চলে আসুন লাইটরুম এ
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১২ রাত ৯:৫৩