লড়াইটা শেষ পর্যন্ত সত্য বনাম মিথ্যা, বিশ্বাস বনাম প্রমান এবং প্রচারণা বনাম প্রকৃত ঘটনায় পরিনত হচ্ছে।
মিছিল করে ঢাকা উল্টে ফেলার শ্লোগান দিয়ে ঢাকায় এসেছে মাদ্রাসা ছাত্রের দল, দিনভর ঢাকা শহর তছনছ করেছে, পুলিশের ওপর হামলা করেছে। প্রতিশ্রুতি দিয়েছে শুধু এক দিনের জন্য সমাবেশ করবে। বোকা সরকার সেটা 'সত্য' ভেবে তাদের ঢুকতেও দিয়েছে।
কিন্তু মিথ্যার কারিগর, এরা সউদি পুরুষের কল্পকাহিনী আজ চৌদ্দশ বছর ধরে আবৃত্তি করতে করতে পরিনত হয়েছে এক একটা মিথ্যার মেশিনে।
তারা প্রতিশ্রুতি রাখে নাই, গেঁড়ে বসেছে দেওয়া ওয়াদার বরখেলাপ করে। সঙ্গত কারনেই শহরের বরকন্দাজ এলাকা ঝাড়ু দিতে নেমেছে রাত দ্বিপ্রহরের পরেই। প্রবল মাইকিঙের পরও এদের কানে যখন সুবচন প্রবেশ করে নাই, তখন বরকন্দাজ ধাওয়া দিয়ে তাদের পালিয়ে যাবার সুযোগ করে দিয়েছে।
কিন্তু মিথ্যে এবং বলদীয় ছাগু'র পাল কিন্তু এই সন্মানহানি থেকেও লাভ বের করে আনবার চেষ্টা করেছে। প্রথমে দুইজন ছাগু অন্ধকারে বসে বসে আলাপ করছিলো, তাদের যখন সচেতন সবাই মিলে ঠ্যাঙ্গানি দিলো, তখন তারা কিছু ছবি বিতরণ করতে শুরু করলো। মুখে ৪৩১ জন 'নিহত' হয়েছে ম্যাৎকার দিলেও আদতে ছবি দেখাতে পারলো জনা দশেকের, যাদের কারো শরীরেই গুলির দাগ নেই, সাথে যোগ করলো পুরনো এবং ভিনদেশের বিভিন্ন লাশের স্তুপের ছবি। আমদের ভেতরের বেকুব জনসাধারনও সমানে সেসব বলদারগু শেয়ার করতে লাগলো বিনা চিন্তায়।
চ্যানেল আই এর মাঝে একটা কান্ড করলো, মৃত হিসেবে চালিয়ে দেয়া কিছু শায়িত ব্যক্তির ভিডিও দেখালো, যাদের কানে ধরে টান দেবার সাথে সাথেই গায়েবী মোজেজা'র মতো তারা উঠে দাঁড়ালো। একবিংশ শতাব্দীতে এসে আমরা নতুন করে মীরাক্কেল দেখতে পেলাম। সচেতন সংবাদ এবং ব্লগার মহল ছাগুদের প্রচারনা'র ট্যাকটিক্স এখন জেনে গিয়েছে, চাঁদে সাইদীর পুটু কিংবা ভুমিকম্পে মৃতদের বাংলাদেশী বলে চালিয়ে দেয়ার হাঁড়ি এখন দু'মিনিটেই খোলা হাটে ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে। ছাগুরা বুঝে উঠছে না, কিভাবে এবার নতুন গল্প ফাঁদবে।
নতুন গল্পবাজ এসে গেলো... এই ছাগু চোখ মুখ কুঁচকে কি কি সব বলে আমাদের বোঝাতে লাগলো... রানাপ্লাজার ভেতর থেকে যে সকল পোশাক শ্রমিকের গলিত মরদেহ বের হচ্ছে, যাদের অনেকেই নারী, তারাই নাকি ৫ই মে নিহত হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারকে আরেকবার অভিনন্দন জানাই, লাশ গায়েব করে দেবার জাদু শিখে সেগুলিকে হাজার টন ধ্বংসস্তুপের নিচে গুঁজে রাখবার পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য। নিশ্চয়ই বাংলাদেশ সরকার একই সাথে অ-পদার্থবিজ্ঞাণে নোবেল এবং সেরা স্পেশাল এফেক্টের জন্য অস্কার পাবে ২০১৪ সালে।
আমরা আশ্চর্য আর হই না। কারন যারা ধর্ম নামক গাঁজাখুরীতে বিশ্বাস রাখতে পারে, ইশ্বরের কাল্পনিক অস্তিত্বে বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে, তাদের মগজ যে যুক্তি ও বৈজ্ঞাণিক প্রমাণের চাঁছাছোলা হিসাব বুঝবে না, তা আমাদের বুঝতে খুব একটা কষ্ট হয় না।
সমস্যা হলো, আমাদের এই অর্ধশিক্ষিত মোল্লাক্রান্ত রাষ্ট্রে যতোই যুক্তি আর মু্ক্তচিন্তার কথা বলা হৌক না কেন, দিন শেষে আমাদের গোবর্ধন সরকারের সেকুলার শব্দটার মানেই উল্টোবোঝার কারনে মোল্লারাই জিতে যাবার দুরাবস্থা সৃষ্টি হয় বারে বারে।
বহু প্যাঁচ কষে সরকার যদিও বিরোধীদলকে বেকায়দায় ফেলতে পারে, প্রতিবারই দেশ, শহর, মানুষ এবং নৈতিকতাকে বিপুল অংকের মাশুল দিয়েই বেঁচে থাকতে হয়।
ছাগুদের এই মিথ্যাচার অসংখ্যবার ব্লগাররা ধরিয়ে দিয়েছে গত চার বছর ধরে, হয়তো ভবিষ্যতেও করতে থাকবে।
এ যেন কাজের বুয়াকে বেতন দিয়ে নিজেই কাপর কাচার কাজে নামা। রাষ্ট্র হিসেবে বহিঃশত্রুর হাত হতে মুক্তির জন্য বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাগরিকগন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পোষে। কর দেয় তাদের বেতন ভাতা এবং সরঞ্জামাদির জন্য। কিন্তু হা-হতোষ্মি, সেই সরকার যন্ত্র বসে বসে ঘাস কাটে, আর আমাদেরই উদ্ধার কার্য চালাতে হয়, আমাদেরই আমারদেশপাকিস্তান পত্রিকার মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করতে হয়।
যতোদিন আমরা ভোট দিয়েই হাত ধুয়ে ফেলবো, এবং ভাববো সরকারে বসে থাকা অথর্ব মন্ত্রী নামের উজবুকেরা রাষ্ট্র চালাবে স্বর্গের মতোন করে, ততোদিন আমরাই আসলে বোকার স্বর্গে বাস করতে থাকবো।
আমাদের ঘুম কি আদৌ ভাঙবে? আমাদের ঘুম না ভাঙলে, সরকারও ঘুমুতে থাকবে।