ভয়ংকর সেই দানবদের পৃথিবী নামক গ্রহ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া নিয়ে যে প্রচলিত ইতিহাস আছে, তাকে জড়িয়ে বিতর্কের শেষ নেই। তবে আসুন আজ প্রথমে জেনে নেই সর্বজন স্বীকৃত ইতিহাস। এরপর বিতর্কে যাবো।
আমাদের এই পৃথিবী একদা ডাইনোসর এর অধিনে ছিল। তারা হাঁটত যেখানে আজ আমরা হাঁটছি, একই পানি তারা পান করতো যা আমরা করছি... নিশ্বাস নিতো একই বাতাসে। কিন্তু তারা এমন একটি দিনের মোকাবেলা করেছিলো যা আজ আমরা কল্পনা ও করতে পারবো না... পৃথিবীতে প্রাণের ইতিহাসের ভয়াবহতম কয়েকটি ঘণ্টা। এই গল্প সেই দিনের, যে দিন তাদের পৃথিবী শেষ হয়ে যায়... পৃথিবীতে তাদের শেষ দিন... দ্য লাস্ট ডে অব দা ডাইনোসর।
এই পৃথিবী- ৬৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে... আজকের থেকে অনেক অনেক বেশি একটি উত্তপ্ত জায়গা ছিল। পশ্চিম উপকূলের দিকে যেখানে আজকের উত্তর উত্তর আমেরিকা মহাদেশ, সুউচ্চ পর্বতের সারি ছিল বনে ঘেরা। ডাইনোসর সহ ৩৫০ পাউন্ড ওজন ও ৪০ ফুট দীর্ঘ পাকা বিশিষ্ট ক্যাযাকুয়াটলাস, যা ছিল সে সময়কার পৃথিবীর সব চেয়ে বিশাল উড়ন্ত পাখি। যা মেটাবলিজম কে রক্ষা করতে নিয়মিত তার নির্দিষ্ট আহার গ্রহন করতে হত। খাবারের খোঁজে সে পৌঁছে যায় ডাইনোসরের সদ্য ডিম ফুটে বের হওয়া T-Rex বাচ্চা দের কাছে। কিন্তু অদুরে থাকা ডাইনোসর আচ করতে পেরেছিল যে কিছু একটা তো গোলমাল, ক্যাযাকুয়াটলাস তার বাচ্চা দের পেটে ঢালতে এসেছে, সে তাড়িয়ে দেয় ক্যাযাকুয়াটলাস কে, যদিও কয়েক টি বাচ্চা তার পেটে চলে গিয়েছে এর মধ্যে। বেবি টি-রেক্স এর বাচ্চা যখন ডিম ফুতে মাটিতে পড়ে, তার উচ্চতা হয় প্রায় ১৭ ফুট, ওজন কমপক্ষে ৭ টন। কিন্তু এই সময় বাচ্চা গুলো ঠিক ভাবে প্রকৃতিকে উপভোগ করতে পারবে না, যেমন টি পারে নি টাইরানোসয়ারাস গুলোও, কারন একটি ঝড় ছিল আসন্ন।
১০০ মিলিয়ন বছর পূর্বে- মঙ্গল ও বৃহস্পতি(Mars and Jupiter) গ্রহের মাঝে একটি গ্রহানুর বেল্ট বা চাকতি ছিলো , ২০০ মিলিয়ন মাইল দূরে, বিলিওন বিলিওন টুকরো গ্রাহাণু মহাশূন্যে দ্রুতগতিতে পরিভ্রমণ করে চলছিলো, একটি দিকে, যেমনটা ঘটে থাকে কোন মহাসড়কে যখন একই দিকে অনেক গুলো গাড়ি চলতে থাকে, ট্র্যাফিক মেনে। তবে একটি গ্রাহানু ছাড়া- যে আড়াআড়ি ভাবে চলছিল সম্পূর্ণ একটি পৃথক দিকে। যেমন একটি ৪০ মাইল প্রস্থ ট্রাক হাইওয়েতে চলছে। তবে এর গতি ছিল ২২,০০০ মাইল/ প্রতি ঘণ্টায়। হঠাৎ করে একটি গ্রাহনুর সাতে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে,
যার ফলে দুটি গ্রাহানু ভেঙ্গে হয়ে যায় কয়েক বিলিওন টুকরো। কিন্তু ৬ মাইল আয়তনের এই গ্রাহনুর একটি বিশেষ গন্থ্যব্যস্থল ছিল।
১০০ মিলিয়ন বছর ওটা মহাশূন্যে ঘুরলো। এর পর তা এমন এক দিকে ধাবিত হতে লাগলো যার জন্যে ইতিহাস পরিবর্তিত হয়ে যাবে। ইহা ধাবিত হতে লাগলো সৌর জগতের ৫ম বৃহৎ গ্রহ পৃথিবীর দিকে। একমাত্র গ্রহ যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব বিদ্যমান - Planet Earth। যেখানে বসবাসরত এই প্রাণীদের একটুও খবর ছিল না যে তাদের ভাগ্যে কি দুর্দিন আসছে। তারা তাদের স্বাভাবিক জীবন চালিয়ে যাচ্ছিলো। এখানে খাবারের ও ঘাটতি ছিল, কোন কন সময় এরা এক অন্যে কেও হত্যা করে জীবন ধারন করতো। তেমনি একটি ট্রাইসেরাটপস একটি টি- রেক্স কে মেরে ভোজন করছিলো অতি সুখে, তবে হয়তো তার কাছে খেয়ে শেষ করার মতো পর্যাপ্ত সময় নেই।
এক মিলিয়ন মাইলের কিছু কম উপরে একটি শেষ প্রতিরক্ষার আশা আছে, চাঁদ- যা এর আগেও আমাদের এই পৃথিবী নামের গ্রহটিকে রক্ষা করেছে। এর বুকের এই সব গর্ত তার প্রমান।
চাঁদের বুকে এই ক্রেটারের নাম টাইকো। যা ৫০ মাইলেরও বেশি প্রসস্থ, সৃষ্টি হয়েছিলো এমনি একটি গ্রহাণুর আঘাতে যা আজকে পৃথিবীর দিকে ধাবমান। কিন্তু আজ চাঁদ তার ঠিক জায়গায়ই আছে, ঠিক সময়ে।
চাঁদ কে পাশ কাটিয়ে চলছে গ্রহাণুটি-
কোন কিছুই আজ পৃথিবীকে বাঁচাতে পারবেন না এই গ্রহাণুর আঘাত থেকে। এই গ্রহাণুটি এলিয়েন দের মতো নয়, এটি আসলে পৃথিবীর আকৃতিতে, শক্ত পাথর ও পানি দিয়ে তৈরি। স্পেসের শুন্যজায়গায় পানি অবিশ্বাস্য শক্ত রুপ ধারন করে, তার সাতে আছে পাথর ও ধুলাবালি। কিন্তু এর ভিতরের রাসায়নিক পদার্থ ছিল- কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন। জীবনের অস্তিত্ব বহনকারী কিছু উপাদান।
এখন, গ্রহাণুটি মাত্র ২০ মিনিট দূরে। ২ ট্রিলিয়ন টন পাথরের তৈরি এই চাই ধেয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে। যখন এটি পৃথিবীর কাছাকাছি আসে, অভিকর্ষীয় বলের টানে এর গতি দ্রুত থেকে আরও দ্রুততর হয়ে যায়, প্রতি ঘণ্টায় ৪০,০০০ থেকে ৪৫,০০০ মাইল বেগে ছুটছে। যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করল, বাতাসের ঘর্ষণে এটি একটি জলন্ত "আগুনের গোলা" তে রুপ নিয়ে চলছে আটলান্টিক এর উপর দিয়ে, লক্ষ্য মেক্সিকো ।
মাত্র ৪ মিনিটে পাড়ি দেয় আটলান্টিক মহাসাগর, জ্বলছে ৩৫,০০০ ডিগ্রি উষ্ণতায়, যা কয়েক মিলিয়ন সূর্যের উত্তাপকেও হার মানাবে। আকাশে মাত্র ৫ সেকেন্ড দৃশ্যমান থেকে আঘাত করে ম্যাক্সিকান উপসাগরে। ঘটনাটি মনে হলো তাৎক্ষণিক, কিন্তু এর আসল রুপ তখন ঢাকা ছিল কারন খালি চোখে তা অনুধাবন করার মতো নয় সে কি পরিমান ধ্বংস নিয়ে এসেছে।
আঘাতের ঠিক আগ মুহূর্তে-
৩০ ডিগ্রি কোণে ইহা আঘাত করে, তার মানে এর ধ্বংসাত্মক সব শক্তি সংঘর্ষ স্থানের উত্তর দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। আগুনের গোলা যখন তা আঘাত করল, আকাশ সহ সমস্ত পৃথিবীর একপাশ অকল্পনীয় আলোক ছটায় ঝলসে উঠলো। গ্রাউন্ড জিরো থেকে ৫০০ মাইল দূরে হলেও, আলোর ঝলকানি এতই তীব্র ছিল যে অ্যালামেসরার পাতলা চামড়া ট্রান্সপারেন্ট হয়ে দেখে গেলো। কিছু সময়ের জন্যে তাদের চোখ ঝলসে গেল। তাদের কাছে কোন উপায় ছিল না যা যে সামনে কি ঘটছে তা জানবে, তবে তারা এই ভয়াবহতা অনুভব করতে পারছিলো। প্রায় একশ মিলিয়ন মেগাট্রন খমতার এই বিস্ফোরণ, আজ পর্যন্ত যত পারমাণবিক অস্ত্র নির্মিত হয়েছে তার সবগুলো থেকে অধিক শক্তিশালী।
যদি এই গ্রহাণুটি মধ্য সাগরে পতিত হত, তবে এর ধ্বংসাত্মক শক্তি ও ক্ষমতা অনেক খানি কমে যেত, কেননা সাগরের গভিরতা ও পানি একে শোষণ করে নিতো। কিন্তু তা ঘটে নি, এটি আঘাত করে মেক্সিকান উপসাগরের অগভির অঞ্চলে, যেটুকু পানি ছিল তা তাৎক্ষণিক ভাবে শোষিত হয়ে যায়। ইমপ্যাক্ট স্থান থেকে ৫০০ বর্গ মাইল এলাকা, তাপমাত্রা উন্নিত হলো ৬০০ ডিগ্রি তে, ডাইনোসরের চামড়া খসিয়ে দিতে যথেষ্ট। প্যাসিফিক নর্থ ওয়েস্টে বসে ক্যাযাকুয়াটলাস গুলো এই আগুনের ফুলকি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলো যা ৩,০০ মাইল দূরে ছিল। অনুমান করতে পারেন কত বড়?
মাত্র ২ মিনিট পরে, আঘাতের প্রথম ধাক্কায়ই প্রায় সব গুলো ডাইনোসর ভূপাতিত হয়ে গেলো, তীব্র উত্তাপে। তবে এদের মাঝেও কিছু বেঁচে ছিল। কারন তারা একটি পাহাড়ের গুহায় আস্রয় নিয়েছিল।
তবে ধ্বংস শেষলীলা হয়ে যায় নি, আরও অনেক কিছু অপেক্ষা করছে তাদের জন্যে। আরও তিনটি ধ্বংসাত্মক ঝড় তাদের দিকে ধাবমান।
সুপারসনিক বেগে যে সংঘর্ষ করেছিলো, তার ফলে যা কিছু উপরের দিয়ে উঠেছিলো, তা যে নীচে নামতে হবে। তা ই হচ্ছে- এখন আকাশ থেকে পড়তে শুরু করেছে বোমার মতো ছোট বড় আগুনের গোলা, যার আঘাতে বেঁচে থাকা কয়েক শত এলামেসরা ভূপাতিত। একই সময় একটি দ্বিতীয় আঘাত আসলো নিচের দিকে- রিক্টার স্কেলে ১১.১ মাত্রার একটি ভূমিকম্প। প্রায় ৬০ গুন অধিক শক্তিশালী কোন ভূকম্পন যা আজ পর্যন্ত পৃথিবী মোকাবেলা করেছে।
তৃতীয় ঝড় বা তরঙ্গ ছিল একটি "পোস্টওয়েভ"। শব্দেরও বেশি বেগে যা ধেয়ে আসলো, উড়িয়ে নিয়ে গেলো সব গুলো ডাইনোসরকে বাতাসে। মাত্র ৫ মিনিটের মাথায় সমগ্র অঞ্ছলকে ৩ টি আঘাতে ঝাঁঝরা করে দিলো। সাতে সাতে ডাইনোসরের সব গুলো ডিমও বিনষ্ট হয়ে যায়। তবে পৃথিবীও কিন্তু অনেক শক্ত প্রতিরোধক। যার কারনে কিছু ডিম থেকে যায় অক্ষত, যার ভেতরে নতুন কিছু অ্যালামেসরার জীবনচক্র চলছিলো। একটি ক্ষীণ আশা ছিল তাদের বংশ রক্ষার।
এভারেস্ট পর্বতের আকারের একটি গ্রহাণু এই মাত্র পৃথিবীর একপাশ পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে দিয়েছে মাত্র ৫ মিনিটের ভেতরে। কিন্তু আরও ধ্বংস বাকি আছে।
এই পাশে যখন এই সব চলছে, পৃথিবীর অন্যপাশে কিন্তু এর কোন চিহ্ন নেই। মঙ্গোলিয়া - ঘটনাস্থল থেকে ৮,০০০ কিলোমিটার দূরে। সেখানে কিন্তু ডাইনোসরের অন্য একটি প্রজাতির প্রায় হাজারো ডাইনোসর বহাল তবিয়তে আছে। চলছে তাদের স্বাভাবিক জীবন।
কিন্তু পৃথিবীর অন্যপাশে একটি একটি ফায়ারবল বা আগুনের গোলা গ্রাউন্ড জিরো থেকেও ১০০ মাইল উপরে উঠে যায়। ৭০ বিলিওন টন চূর্ণ পাথর ও ধুলাবালি, গ্যাস দ্রুত ছড়ানোর কারনে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল হয়ে পড়ে দুষিত ও অন্ধকার। ১৫,০০০ ডিগ্রি তাপমাত্রার ধুলোমেঘ সব কিছুকে দ্রুত উত্তপ্ত করে তুলছে। প্যাসিফিক নর্থওয়েস্টে বসে থাকা এই দুই ক্যাযাকুয়াটলাস কিন্তু আকাশের এই অবস্থা দেখতে পারছে। কিন্তু আকাশ পুরোপুরি অন্ধকার হওয়ায় তারা অনাগত বিপদ আঁচ করতে পারেনি। কিন্তু ভুমিতে যে সব প্রানি ছিল, তারা একটি সতর্কতা ঠিকই পেয়ে গিয়েছিলো- উপর থেকে নয়, নিচ থেকে।
যখন গ্রহাণুটি আঘাত করে, এর প্রায় বেশি পরিমান শক্তিই নির্গত হয়ে পরেছিল বাইরে অথবা উপরে। মাত্র ১% শক্তি চলে যায় ভূতলে। কিন্তু তা যথেষ্ট ছিল আমাদের এই গ্রহটিকে একটি ঘণ্টার মতো বাজিয়ে দিতে। সিস্মিক ওয়েব বা তরঙ্গ পৃথিবীকে সব দিক দিয়ে কাপিয়ে তুলছিল। ঘটনার ১৬ মিনিট ৪০ সেকেন্ড পরে, তা গুলো পৌঁছে যায় প্যাসিফিক নর্থ ওয়েস্টে। ট্রাইসেরাটপস গুলো প্রাণপণে বাচার চেষ্টা করে আকাশ থেকে পতিত শিলাবৃষ্টি থেকে যার সাতে আসছিলো ১০,০০০ মাইল বেগে প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়। একটি দানবিক ব্যাটারির মতো মিলিয়ন ভোল্টের ইলেকট্রিক শক্তি মেঘকে চার্জ করে ফেলে, তৈরি করছিলো একটি বিশাল বৈদ্যুতিক ঝড়। সমগ্র পৃথিবী পরিণত হয়েছে একটি জলন্ত জাহান্নামে।
ক্যাযাকুয়াটলাস গুলো এ থেকে রক্ষা পেতে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে, কিন্তু এমন কোন জায়গা ছিল না যে তারা আস্রয় নিতে পারে এই ঝড় থেকে, আগুনের ফুলকি থেকে। ঝড়ে আর উপর থেকে পতিত আগুনের ফুল্কিতে তাদের ডানা হয়ে যায় ঝাঁজরা। আঁচড়ে পরে ভুমিতে। পুরুষ ক্যাযাকুয়াটলাস টি আর সহ্য করতে না পেরে মারা যায়, কিন্তু মেয়ে ক্যাযাকুয়াটলাস টি বেঁছে আছে এখনও।
সমগ্র উত্তর আমেরিকা এখন দাউ দাউ করে জ্বলছে।
তাপমাত্রা উন্নিত হলো ১,৮০০ ডিগ্রি তে যা সলিড অ্যালুমিনিয়াম কে গলাতে যথেষ্ট। আগুন দ্রুত প্রাসারিত হচ্ছে, ছোট প্রানি গুলো দৌড়ে সরে যেতে পারছে, কিন্তু বিশাল ডাইনোসর ও ট্রাইসেরাটোপস গুলোর কোন উপায় নেই। ঘটনার ২ ঘণ্টা এরই মধ্যে অতিবাহিত হয়ে গেছে, সমস্থ পৃথিবী ধুঁয়া আর ধুলাবালি তে আচ্ছন্ন। ডাইনোসরের জন্যে সময় আর খুব বেশি নেই।
৮,০০০ মাইল দূরে, মঙ্গোলিয়া তে কিন্তু ধিরে ধিরে তাপমাত্রা নামতে শুরু করেছে। আস্রয়ে যে সব প্রানি ছিল, তারা ভাবল হয়তো বিপদ কেটে গেছে। কিন্তু শক্তিশালি বাতাস বিলিওন টন আবর্জনা ও ধুলো নিয়ে আবার তৈরি হচ্ছিলো। যে সব প্রানি এখনও বেঁছে ছিল তাদের অনেকেই ঝড়ের তিব্রতা সহ্য না করতে পেরে মারা গেলো। কারন ৩০০ ডিগ্রির উষ্ণ বাতাস আর ধুলাবালি ওদের লাংচ পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে, যার জন্যে শেষ পর্যন্ত শ্বাসরুদ্ধ হয়েই মারা পরে সবাই। কিন্তু সর্বশেষ ক্রোনোসরাস টি বেঁচে যায় আবারো একটি গুহা তে আস্রয় নেবার ফলে। সে আসলেই ভাগ্যবান ছিল যে বেঁচে যায়, কিন্তু একটি নতুন বিপদ থেকে রক্ষা পেটে দৌড়ে পালাবার তুলনায় অনেক বেশি বিপর্যস্ত। এবং বিপদ কিন্তু এসেই পড়লো। সোরোনিটরাইড দুটি খাবারের জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছিলো, কিন্তু অনেক বেশি দুর্বল। এদের একটি সাহস করে ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্রোনোসরাসটির উপর, এইবার কিন্তু ক্রোনোসরাস এর আকার ব্যপার না, সেও অনেক দুর্বল প্রতিরক্ষার জন্যে, যার জন্যে সে সোরোনিটরাইড এর খাদ্যে পরিণত হলো।
ঘটনার এক সপ্তাহ পর, এই পৃথিবীতে চরম ভাবে খাদ্যাভাব দেখা দিলো। জীবন হয়ে পড়লো দুঃসহ। বিশাল এই প্রাণী গুলোর জনে বিপুল পরিমান খাদ্য দরকার তাদের বিশাল দেহ কে খাড়া রাখতে। কিন্তু এখানে কোন গাছপালাই নেই যে তারা খেতে পারে কিছু পাতা। তাদের একমাত্র আশা ছিল যে, কোন কিছু, কোন খানে তো নিশ্চয়ই বেড়ে উঠছে ।
এদিকে গ্রহাণুর আঘাতে সমুদ্রে একটি ধ্বংসাত্মক শক্তি ঢেলে দিয়েছে... একটি মেগাট্রন ক্ষমতার সুনামি। একটি পানির দেয়াল, ৩০০ ফুট উঁচু। মুহূর্তের ভেতর সমস্থ ভুমি প্লাবিত করে দেয়। এবং যত তাড়াতাড়ি তা আসে, চলেও যায় একই বেগে। এইবারও কিন্তু ধ্বংস হয়ে যায় দুর্বল হয়ে পড়া অসংখ্য প্রাণী।
এক মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। এরই মধ্যে ভু-গর্ভস্থ শিলা ও সমস্থ সুপ্ত আগ্নেয়গিরি জেগে উঠে যে ১% শক্তি চলে গিয়েছিলো নীচে, তার প্রভাবে।
সমগ্র পৃথিবী বিষাক্ত গেসে ভরে যায়। মঙ্গোলিয়া তে মাত্র কয়েকটি ডাইনোসরের অস্তিত্ব রয়ে যায়, কিন্তু ক্ষুধার্ত ক্রোনোসরাস গুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে এদের উপর। এদের কয়েকটি একটি গুহাতে অবস্থান করে যা তাদের এর পূর্বেও রক্ষা করেছে। কিন্তু সর্বশেষ ক্রোনোসরাস গুলো শিকারে পরিণত হয় নি, কারন আগে যেখানে একটি নর্দমার মতো যায়যায় পানি থাকতো, এখন সেখান থেকে বুদবুদ উঠছে, যার সাতে প্রকৃতিতে যোগ হছে বিষাক্ত গ্যাস- "হাইড্রোজেন সালফাইড"। ভুমির অনেক গভীর থেকে তা উরগিরিত হচ্ছে ভল্কানোর জেগে উঠায়। যা প্রানির লাংস কে অচল করে দেয়, এই অঞ্চলের শেষ ডাইনোসর টি এখন মৃত। মেক্সিকো এখন পুরোপুরি বধ্যভুমি। একের পর এক আঘাতে সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু বেঁছে গেছে একটি এলেমেসরাস এর ডিম।
এদিকে একটি এঙ্কলোসরাস, অনেক বেশি ক্ষুধার্ত। আর তার বিশাল দেহটাকে খাড়া রাখতে প্রতিদিন ৩০০ পাউন্ড খাবার খেতে হয়। সে যা করতে পারে এখন তা হলো একটি মাত্র ছোট জঙ্গল খুজে বের করা। আর যদি তাতে শুধু মাত্র তার আদিপাত্য চালতে ও আরও কিছু দিন তার জীবন টিকিয়ে রাখতে চায়, তবে যুদ্ধ ছাড়া তা সম্ভম নয় সে জানে, তার জন্যে জীবন বাজিও রাখতে পারে। সুতরাং যে ডাইনোসরটি এত সব কিছু সহ্য করে এখনও বেঁছে ছিল, শেষ পর্যন্ত সে তার শিকারে পরিণত হয়।।
বিবর্তনের এই পর্যায়ে আসতে ডাইনোসরের লেগেছিলো ১৬০ মিলিয়ন বছর। আর মাত্র একটি পাথর লাগলো আজ একে ধ্বংস করতে। সম্পূর্ণ ঘটনাটি ছিল একটি বিশাল গ্রহাণুর আঘাত, এর পরের ৩ মিনিটের মধ্যে ৫ টি বিশাল বিশাল ঝড়, আগুনের ফুলির বিস্ফোরণ, পতন, অবিশ্বাস্য শক্তির ভূমিকম্প, অতি উচ্চ তাপমাত্রার আক্রমণ, অচিন্তনীয় সুনামি, বিষাক্ত গ্যাসের আক্রমণ, আগ্নেওগিরিরি অগ্ন্যুৎপাত ইথ্যাদি। এই সব ঘটে গিয়েছিলো ৩ মিনিটের মাথায়। এর ৪৪ মিনিটের মধ্যে প্রচণ্ড ঝড় মঙ্গোলিয়া কে আঘাত করে।
কিন্তু সবকিছুর পরেও, ইহা বিশ্বাস করতে কঠিন যে এখনও কোন কিছু বেঁচে আছে। হা, কিছু এখনও এই সব কিছু মোকাবেলা করে বেঁচে আছে- একটি অ্যালামেসরা'র ডিম। যা মাটির কিছুটা অভ্যন্তরে ঢেকে গিয়েছিলো, এই সব ধ্বংসের মাঝে আরও একটি জীব বেঁচে ছিল- একটি চামচিকা।
কিন্তু এই অ্যালামেসরা'র বাচ্চা টি খুব বেশি দিন এই পরিবেশ মোকাবেলা করতে পারে নি। এক সময় যার বংশধররা এই পৃথিবীর একচ্চত্র অদিপতি ছিল ১৬০ মিলিয়ন বছর ধরে, আজ সেও চলে গেলো। কিন্তু বিশাল সমুদ্রের মাঝে তখন টিকে ছিল কিছু মাছ। কিছু উভচর ও কিছু সরীসৃপ। তারা ধিরে ধিরে পৃথিবীর নতুন রুপ দিলো। শুরু হলো বিবর্তনের নতুন অধ্যায়, নিঃশেষ হয়ে গেলো ডাইনোসরদের অস্তিত্ব এই জন্যে যে, মনুষ্য প্রজাতির বেঁচে থাকতে পারে।
--------------------------------------------------------------------
এই হলো প্রচলিত ও অধিক সংখ্যক গবেষকের স্বীকৃত তথ্য। তবে এই তথ্যকে ঘিরে আছে অনেক বিতর্ক যে আসলে ডাইনোসরদের পৃথিবী থেকে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার এটাই হয়তো প্রকৃত কাহিনী নয়। ঘটনা হতে পারে অন্য রকম, তবে এই পোস্ট বেশি বড় হয়ে যাওয়ায় বিতর্কিত কাহিনী নিয়ে অন্য কোন দিন আলোচনা করবো।
ভালো থাকা হোক সবার, নিরন্তর।
* Source: Discovery Channel / Youtube- CaptainH3R0
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:২৮