”রক্ষনশীলতার বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেড়ো” এই প্রবাদের মাধ্যমে প্রথমআলোয় প্রকাশিত গত ৪ মার্চ ২০০৮ তারিখে ড. মালেকা বেগম যা বোঝাতে চেয়েছিলেন তার সাথে আমি বা আমরা কি একমত পোষন করতে পারি? এটা কি ১৯৯০ কিংবা ১৯৯৫ সাল? এটা কি ২০০৮ সাল নয়? তিনি বলেছিলেন শিক্ষার্থীরা ক্লাসিক সাহিত্যের কোনো বই পড়ে না বা ক্লাসিক গান শোনেনা। তাহলে একুশে বইমেলার দীর্ঘ লাইনের রহস্য কি হতে পারে? আর এফএম রেডিওর যুগে কেউ ক্লাসিক গান শোনেনা, ব্যাপারটা কি যুক্তিসঙ্গত!
এখন কতকগুলো পয়েন্ট লক্ষ্য করা যাক:
১. একটা ছেলে রাত দশটা পর্যন্ত ঘরের বাইরে থেকে আড্ডা দিলে কেউ খারাপ বলবেনা, কিন্তু মেয়ে হলে . . .! এই ব্যাপারটিতে কি মেয়েদের অধিকারের প্রশ্ন আসবে? অথবা সমঅধিকারের ভিত্তিতে কোন নারীর কি প্রশ্ন করা উচিত যে, একজন পুরুষের চারটি বিয়ে করার অধিকার আছে কিন্তু নারীর নেই কেন? মনে করা হোক একজন নারীর চারজন স্বামী আছে এবং তার দ্বারা একটি মানব শিশুর জন্ম হল। এই শিশুটির বাবা হিসেবে সে নারী কাকে পরিচয় করিয়ে দেবে? চারজনকে? ধরা যাক ২০১০ সালে আইন প্রনয়ন করে অধিকারকে নারী-পুরুষের (যারা অবিবাহিত) মধ্যে ৫০-৫০ করে ভাগ করে দেওয়া হল। নারীরা এখন পুরুষের মতো চলাফেরা করতে পারে, জিন্স ও টি-শার্ট পরে। যেকোন সময় ঘরের বাইরে চলে আসে এবং ধুমপান করে। নারীরা রাস্তায় মারামারি করে, ছিনতাই করে। ২০১২ সালে এসে দেখা গেল অধিকার পাওয়া ঐ নারীদের মধ্যে কয়েকজন নারী গর্ভবতী এবং তাদের দীর্ঘ ছুটির প্রয়োজন। কিন্তু অফিসের বড় কর্মকর্তা তাদেরকে ছুটি দিচ্ছেন না। কেননা ২০১০ সালের প্রনয়ীত আইনে নারী-পুরুষকে সমঅধিকার দেয়া হয়েছে এবং তখন যদি নারীর জন্য এই বিশেষ ছুটির কথা উল্লেখ করা হতো তবে নারীকে পুরুষের চেয়ে বেশী অধিকার দেয়া হতো। এই সমস্যার সমাধান কি সমঅধিকার? নারী-পুরুষের অধিকার কি দাড়িপাল্লায় মেপে সমানভাগে ভাগ করে দেয়া সম্ভব(?) কোথাও নারীর অধিকার বেশী থাকবে কোথাও পুরুষের অধিকার বেশী থাকবে, এটাই কি স্বাভাবিক নয়(!)
২. দেশটা উন্নয়নশীল। তাই গ্রামের নিয়মকানুনে পরিবর্তন আনতে বেশখানিকটা সময় লাগবে, এটিই স্বাভাবিক। গ্রামের মেঠোপথ যেদিন পিচঢালা পথে পরিনত হবে, সেদিন হয়তো নারীর অধিকার নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা হবেনা (রূপক অর্থে)। নারীরা আসবে মূলধারায়!!! প্রথমআলোয় প্রকাশিত গত ৫ মার্চ ২০০৮ তারিখে ”নারী কবে আসবে মূলধারায়” কলামটিতে রূপকায়নের কবি বললেন সমঅধিকারের কথা। আবার তিনিই দাবি করলেন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারীদের জন্য কোটা পদ্ধতি চালু করা দরকার। নারীরাতো মেধায় পিছিয়ে নেই, তবে সমঅধিকারের প্রশ্নে কেন কোটা পদ্ধতি দাবি করা হবে? আর চাকুরিক্ষেত্রে একজন নারী ও একজন পুরুষ যদি সমমানের হয়, তবে অফিসের উর্ধŸতন কর্মর্কতা নারীকেই বেশী প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। তাছাড়া নারীরা এখন পুরুষের পাশাপাশি মধ্যরাত পর্যন্ত বাইরে চাকুরি করছে (রেডিও জকি)!!!
৩. আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় সামাজিক ও আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত একজন পুরুষ যখন পাত্রির সন্ধান করে তখন তার চাওয়া-পাওয়া থাকে একজন শিক্ষিত ও নিষ্পাপ নারী, হোক সে আর্থিকভাবে অপ্রতিষ্ঠিত। কিন্তু সামাজিক ও আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত একজন নারী যখন পাত্রের সন্ধান করে তখন তার চাওয়া-পাওয়া থাকে একজন প্রতিষ্ঠিত পুরুষ, যে কিনা তার চেয়েও প্রতিষ্ঠিত। কেননা নারীরা কখনই পুরুষের দায়ভার নিতে চায় না!! আর পুরুষরাও চায় না যে কোন নারী তার দায়ভার নিক।
৪. টিভি নাটকে আলোচিত ’নাবিলা’ চরিত্র প্রসঙ্গে একটু বলি, নাবিলার চিন্তা-ভাবনাগুলো সূদুরপ্রসারি। কিন্তু তার কিছু প্রশ্ন আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলছে। যেমন, স্বামীরা কেন স্ত্রীদের সাথে তার পরিবার পরিজন নিয়ে বিদেশে যাবে না? কেন যাবেনা, অবশ্যই যাবে, নাবিলা এমন কাউকে বিয়ে করুক যে কিনা নাবিলার কথায় উঠবে-বসবে। আর নাবিলার প্রশ্নের উত্তরটা কি ৩ নম্বর পয়েন্ট থেকে দেওয়া সম্বভ নয়? এখন সমভাবে প্রতিষ্ঠিত দু’জন নারী-পুরুষ বিয়ের পর যদি বলে, পুরুষ: আমার সাথে তোমাকে জার্মানি যেতে হবে এবং নারী: না, আমার সাথে তোমাকে ইতালি যেতে হবে, তাহলেতো কলহ সৃষ্টি ছাড়া আর কিছুই হবেনা! এই ব্যাপারটি কি নারীর অধিকার, নারীর স্বাধীনতা এবং নারী জাগরনের সাথে সম্পর্কযুক্ত? ত্যাগ স্বীকারতো নারীরাই করে, এক্ষেত্রে কি নারীদের মহত্বের পরিচয়ই ফুটে উঠেনা? নাকি নারীরা মহত্বের অধিকারিনী হতে চায় না(?)
নারীর অধিকার, নারীর স্বাধীনতা এবং নারী জাগরন তিনটি বিষয় সম্পূর্ন আলাদা এবং এটা আমাদের গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। যেসব অধিকার নারীর প্রয়োজন তা তাকে দেওয়া অত্যন্ত জরুরী এবং এই পদক্ষেপের অনেকগুলো পর্যায় ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। আর আমরা নারীকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করে কখনই উন্নত হতে পারবনা। কিন্তু যারা নারীর অধিকার নিয়ে এত কথাবার্তা বলছে তাদের কাছে কি আজও স্পষ্ট যে তারা কি চাইছে? সমঅধিকারের প্রশ্নে যেসব অধিকার নারী ও সমাজের জন্য সুফল বয়ে আনবেনা বরং সমস্যার সৃষ্টি করবে, সেসব অধিকার নারীকে দেয়ার প্রচেষ্টায় থেকে আমরা কি আমাদের রতœগর্ভা সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে পারবো, নাকি আকাশ সংস্কৃতিকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টায় থাকব(?) নারী আন্দোলনের নামে যারা অনিচ্ছাবশত নারীকে বিপথগামী করছে তাদেরকে বোঝানো অথবা তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা কি আমাদের উচিত নয়(!)(?)
সবশেষে আমি এটাই বলব যে, নারীরা মহত্বের অধিকারিনী। কেননা, শুধুমাত্র নারী-ই পারে দশমাস দশদিন গর্ভধারন করতে, নারীরাই পারে মা হতে। আমরা আমাদের মাকে খুব ভালবাসি। আমরা আমাদের দেশকেও খুব ভালবাসি। তাইতো আমরা আমাদের দেশকে মায়ের সাথে তুলনা করি।
সবাইকে ধন্যবাদ।
৮ মার্চ ২০০৮
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০০৯ রাত ১১:৪২