সেই রাতটার কথা ভাবলে আমার বড় অবাক লাগে! একজন অচেনা অজানা মানুষ যাকে চেনা জানা তো দূরের কথা এই দুচোখের সামনেও কখনও দেখিনি সেই মানুষটাই নাকি হঠাৎ মন্ত্রবলে আমার অতি আপন হয়ে গেলো! তার সাথেই নাকি কাটাতে হবে বাকী জীবনের সকল দিন ও রাত্রীগুলো। সবুজ পরী আমাকে এই পুস্পশোভিত ফুলসজ্জার উপরে বসিয়ে রেখে অনেকক্ষন হলো চলে গেছে কিন্তু বেশ খানিকটা সময় পেরুনোর পরেও কেউই এই ঘরে এলো না। ঘুমে আমার চোখ ঢুলুঢুলু। পিঠের শিরদাঁড়া ব্যাথায় ভেঙ্গে আসছিলো। মাথা ছিড়ে যাচ্ছিলো আমার সারাদিনের ধকলে। অথচ মুখ বুঁজে সবই সহ্য করছিলাম আমি। কাউকেই কিছু বলার ছিলো না। কোথাও কেউ নেই। ঐ সবুজ পরী মেয়েটাকে হয়ত কিছু বলা যেত কিন্তু কে আবার কি ভাববে তাই ভেবে ভেবেই কিছুই বলা হলো না।
সাধারনত ঐ সব দিনে বিয়ের কনের সাথে বাবার বাড়ির কাউকে না কাউকে দিয়ে দেওয়া হত। কনের নতুন বাড়িতে কিছু বলতে সমস্যা হলে সেই দায়িত্ব পালনের ভার থাকতো তার উপরেই। কিন্তু আমার সঙ্গে কাউকেই দিয়ে দেওয়া হয়নি। ১০ মিনিটের রাস্তা বলে সন্ধ্যার পর ন,চাচা আর ত চাচার ছেলেরা মানে পিচ্চি পিচ্চি দুটি ভাই এসে দেখে গেলো। ওদেরকে দেখে আমার বুকের ভেতরটা কি রকম যে মুচড়ে উঠেছিলো সে কথা আমি বলে বুঝাতেই পারবো না কখনও। তারাও রাতে রইলো না। চলে গেলো। বলে গেলো সকালেই রুনি, মীরা আপাারা এসে দেখে যাবে আমাকে। দরকার হলে সারাদিনই কাটিয়ে যাবে আমার সাথে। কালকের দিন কাটিয়ে পরদিন বাবার বাড়িতে ফিরানী নিয়ে যাওয়া হবে আমাদেরকে নতুন বর আর বউকে। তাই মাঝে তো কালকের দিনটাই।
জানিনা কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম এসব ভাবতে ভাবতেই। মাঝরাতে যখন ঘুম ভাঙ্গলো, ঘুম ভেঙ্গে ঠিক বুঝতে পারছিলাম না কোথায় আছি আমি। হালকা নীল ডিম লাইটের আলোতে মাথার উপর ঝুলে থাকা ফুলের লহরগুলো কালো কালো দেখাচ্ছিলো। এমন তো আমার বিছানা না। হঠাৎ মনে পড়তেই ধড়মড় করে উঠে বসলাম আমি। মনে পড়ে গেলো আজ আমার বিয়ে হয়েছে। আমি তো ফুলসজ্জার উপর বসে ছিলাম। অপেক্ষা করছিলাম ঠিক সিনেমার মত করেই পাগড়ি পরে বর আসার অপেক্ষায়। কিন্তু তারপর কি হলো? আমাকে অমন হুড়মুড় করে উঠতে দেখে আমার পাশ থেকে আমার জীবনের সেই নতুন নায়ক আমার স্বামীও বুঝি চমকে উঠলো। লাফ দিয়ে উঠে আমাকে ধরে ফেললো। তারপর আমাকে ইশারায় আশস্ত করলো যে ভয় বা চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমাকে দুকাঁধে ধরে ফের শুইয়ে দিলেন তিনি। আমার গায়ের উপর কম্বল টেনে দিলেন। বললেন,
- তুমি ভয় পেওনা। অনেক বেশি ক্লান্ত তুমি। ঘুমিয়ে নাও। নয়ত অসুস্থ্য হয়ে পড়বে। কোনো লজ্জা করো না, কোনো ভয় পেয়োনা।
তার গলায়, কথার সূরে এক আশ্চর্য্য নির্ভরতা এবং আশস্ততা ছিলো। আমার উদ্বিঘ্নতা, ভীতি প্রায় সবই দূর হয়ে আসলো। যদিও ক্লান্তিতে শরীর ভেঙ্গে আসছিলো আমার তবে আমার ঘুম তখন উবে গিয়েছিলো। আমি সেই স্বল্প আলোর মিটমিটে ডিম লাইটে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলাম। কিছুক্ষন পর আমাকে না ঘুমিয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে জিগাসা করলো-
-ঘুম আসছে না?
আমি নির্বাক। সে আবারও জিগাসা করলো-
- মাথা ধরেছে? বাম লাগিয়ে দেবো?
আমার হঠাৎ মনে পড়লো আরে আমার তো মাথা ধরেছিলো। আসলে আমার ভেতরে তখন আর কোনো বোধ কাজ করছিলো না। কি হচ্ছে, কোথায় আছি, মাথা ব্যথা ক্লান্তি সব মিলিয়ে ভজঘট অবস্থা তখন আমার। আমার স্বামী আমার নির্বাক হতবিহ্বল অবস্থা দেখে হেসে ফেললেন, বললেন,
- চলো বারান্দায় গিয়ে বসি। আমারও ঘুম আসছে না। আসলে কারো সাথে ঘুমানোর অভ্যাস নেই তো।
আমি মনে মনে চিন্তা করতে শুরু করলাম। আমার তো অভ্যাস আছে, দাদীমার সাথে, চাচীমার সাথে, রুনি মীরা আপু সবার সাথেই তো ঘুমাতে হয়েছে আমাকে কখনও না কখনও আমাদের সেই একান্নবর্তী বাড়িতে। আর বিয়ে হলে এক বিছানায় ঘুমাতেই তো হবে। এমনই তো নিয়ম। তবে এ এই কথা বলছে কেনো?
সে যাইহোক আমার স্বামী আবারও বললেন,
-চলো বারান্দায় গিয়ে বসি।
আমরা বারান্দায় গিয়ে বসলাম। তখন পৌষের শেষ। কনকনে ঠান্ডায় কুকড়ে গেলাম আমি। সে ভেতর থেকে কম্বল এনে আমার গায়ে জড়িয়ে দিলো।
...........
ঠিক তিনদিনের মাথায় ফিরানীতে ফিরলাম আমরা। আমার চিরপরিচিত, আজন্মলালিত সেই বাড়ি! বাড়ি ফিরে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি। ঐ উৎসব বাড়ির সহস্র জনারণ্যের ভীড়ে এ কটা দিন দমবন্ধ হয়ে আসছিলো আমার। মাত্র দুদিনেই যেন দু'যুগ পেরিয়েছিলো। চারিদিকে নতুন সব মুখ, তাদের কথাবার্তা, হাসিঠাট্টা ও বিচিত্ররকম আদেশ উপদেশে মোহবিষ্ঠ, হিপনোটাইজড হয়ে ছিলাম যেন!। বাড়ি ফিরে সবার অগোচরে, ঘোমটার আড়ালে বুক ভরে লম্বা এক শ্বাস টেনে নিলাম।
সারা বাড়িতে ছড়িয়ে পড়েছিলো বিরিয়ানী পোলাও, কোর্মা রান্নার মৌমৌ ঘ্রান। জামাই ভোজন রন্ধন চলছিলো। বিয়ের পরে সকল আত্মীয় স্বজনেরা বিদায় নেননি তখনও। বাড়িভর্তি মানুষজন গিজ গিজ করছিলো।। বড় বড় ভিয়ানে বড় বড় হাড়িতে করে রান্না চেপেছিলো। বাবুর্চী আনা হয়েছিলো ঝিনাইদহ থেকে। চারিদিকে গমগমে আয়োজনের ব্যাস্ততা! মীরা আপা, রুনি, পিংকু থেকে শুরু করে আমাদের এক পাল চাচাত মামাতো ভাইবোনেরা, ভাবী চাচী খালা ফুপুরা সকলেই ঘিরে ছিলো আমাদেরকে। আমাদের দুজনকে নিয়ে বসানো হলো সামনের বারান্দার সেই রসুনচৌকি খ্যাত কারুকার্য্যময় স্টেজটিতেই। তখনও ঘোমটা ঢাকা ছিলাম আমি। ইচ্ছে করছিলো ঘোমটা ফেলে এক ছুটে দৌড়ে পালাই সকলের সামনে থেকে নিজের ঘরটিতে। কিন্তু তার কোনো উপায় নেই। নতুন বউকে নাকি নিজের বাড়িতেও অমন করেই বসে থাকতে হবে। ঘোমটার আড়ালেই উঁকি দিলাম চারপাশে। আমার দুদিনের অবর্তমানেই বাড়িটা যেন নতুন আরেক রুপে পরিবর্তিত হয়ে গেছে তবুও যেন আমাকে ফিরে পেয়ে চারিদিক নিশব্দে, অস্ফুটে, বলছে 'স্বাগতম'।
সবার চোখ এড়িয়ে, আমার শুস্ক মৃত দৃষ্টি একবাড়ি লোকজনের মাঝে শুধু খোকাভাইকেই খুঁজে চলছিলো। বারান্দার দেওয়ালে ঝুলানো দাদুর বিশাল ছবি, কোনের ইজিচেয়ার, চা খাবার ছোট্ট টেবিল, অবিকল সব আছে। ঠিক আগের মত, অপরিবর্ত্তনীয়। শুধু কোথাও খোকাভাই নেই? চুপিচুপি নিজেকেই প্রশ্ন করলাম, খোকাভাই কোথায় আছো? কেমন আছো? বাতাসে ভেসে এলো শুধুই একরাশ হাহাকার আর শূন্যতা আর আমার বুকজুড়ে শূন্যতার শুন্যদ্যান!
বিয়ের দিনের হই হট্টগোলে নতুন জামায়ের সাথে তেমন কারো পরিচয় হয়নি। আজকে নতুন জামাইকে কাছে পেয়ে তাই ফুপু, খালা মামী চাচীদের মিষ্টি মুখ করানো, হাসি মশকরা, উপহার প্রদান শুরু হলো। ছোট ছোট শালা শালীদেরকে দিয়ে জামাইকে একটু বোকা বানানো ঘোল খাওয়ানোর ব্যবস্থাও করা হলো। সেজোচাচা এসে তাড়া দিতেই শেষ মেস রক্ষা পেলাম আমরা। সেজোচাচা এসে বললেন,
- জামাইকে একটু বিশ্রাম নিতে দাও। কিছু পরেই দুপুরের খানার আয়োজন করা হবে।
রুনি মীরা আপা আর কয়েকজন ভাইবোন ভাবীরা মিলে আমাদেরকে নিয়ে এলো আমাদের অতিথিশালে। মানে দাদুর বৈঠকখানার মত আমাদের গেস্টরুমেরও একটা নাম ছিলো অতিথিশালা। বেশ বড়সড় একটা ঘর। নীচু ইংলিশ খাট, আলমারী, চা খাবার টিপয় এসব দিয়ে সাজানো থাকতো। প্রায় সব সময় তালাবদ্ধ করে রাখা হত সেই ঘরটা। শুধু মাত্র বিশেষ অতিথি অভ্যাগতরা এলেই খোলা হত ঐ ঘর। সেই ঘরটিতেই আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। আমার মন খারাপ হয়ে গেলো। ভেবেছিলাম এতদিন পর ফের নিজের ঘরেই থাকবার সুযোগ পাবো। আমার সেই ছোট্ট নিজের বিছানা আর পড়ার টেবিল আলনার জন্য আমার প্রান কেঁদে উঠলো, আসলে সেই ঘরটির জন্য আজও আমার প্রাণ কাঁদে কিন্তু সেদিন তখনও বুঝিনি খোকাভাই এর সাথে সাথে সেই ঘর বাড়ি আসবাবেরও সাথে যে আমার চির জনমের বিচ্ছেদ ঘটেছে।
দুপুরের এলাহী আয়োজনে সকল জামাই, চাচা, মামা খালু ফুপা এক সাথে বসলেন নতুন জামাই এর সাথে খানা খেতে। আমি তখন দাদীমার ঘরে ছিলাম। মীরা আপা ফিস ফিস করে কানে কানে বললো,
- নীরু, জামাইকে পছন্দ হয়েছে তোর?
আমি হাসলাম। কোনো উত্তর দিলাম না। মনে মনে শুধু বললাম, মন্তব্য নিস্প্রয়োজন।
রুনি বললো,
-বাব্বাহ! তোকে একদম রাণীর মত লাগছে। কত্ত গয়না! কত্ত সুন্দর শাড়ি। এবারও আমি হাসলাম।
কেনো যেন আমার কোনো কথা আসছিলো না। জানিনা আমি বোধ হয় সে কটা দিন এক আশ্চর্য্য ঘোরের মধ্যেই ছিলাম।
সেদিন প্রায় সারা বেলাই কেটে গেলো এই খানা পিনা অতিথি অভ্যাগতদের বিদায়, নানা উপদেশ দোয়া শুভেচ্ছার মাঝ দিয়েই। পরদিন সন্ধ্যায় আমার ভালোমানুষ স্বামী বললেন,
- চলো, ছাদে বেড়িয়ে আসি।
ছাদ! একটু চমকেই উঠেছিলাম হয়ত আমি। খুব সন্তর্পণে দীর্ঘশ্বাসও পড়লো আমার। ছাদে উঠে আসলাম আমরা। তখন ছিলো গোধুলীলগ্ন। আমরা ছাদের ঠিক সেই কোনটাতেই গিয়ে দাড়ালাম। আমার চোখ অলখে চলে গেলো সেই দেওয়ালটাতেই। খুব অস্পষ্ট কিন্তু তবু জ্বলজ্বলে, দেখা যাচ্ছিলো অক্ষরগুলো। যেখানে একদিন খোকাভাই ইটের টুকরো তুলে লাল লাল হরফে লিখেছিলো একটি চিহ্নের বাঁধনে,দুটি নাম। খোকা+ নিরু।
আমি ভয়ে ভয়ে আড়চোখে তাকালাম সেদিকে। চাচীমার ঘড়াঘড়া জল, প্রখর রৌদ্র-তাপ আর প্রবল ঝড়ঝাপ্টাও নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারেনি সেই নাম। খুব ঝাপসা কিন্তু দেওয়ালের রুক্ষপ্রস্তর দৃঢ় কঠিনভাবে তার পাষান হৃদয়ে ধরে রেখেছে দুটি নাম খোকা + নিরু.... চোখ ভিজে আসলো আমার। ছাদের ঘরের দিকে চোখ গেলো। সন্ধ্যা নেমেছে। কেউ আলো জ্বেলে দেয়নি সেই ঘরে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ভূতের মত দাঁড়িয়ে আছে সেই ঘর। আমার সকল মনোযোগ ও আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু ছিলো যেই ঘরটি। যেই ঘরে লেখা রয়েছে দুটি কিশোর হৃদয়ের ভালোবাসার ইতিহাস। যেই ঘরটিতে পড়ে রয়েছে একজন দুঃখী মানুষের দুঃখের নিঃশ্বাস। যেই ঘরটি একদিন হেসে উঠতো দুটি হৃদয়ের ভালোবাসার স্পর্শে। সেই ঘরটি আজ মলিন বিধুর নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে। একাকী এবং নিঃস্ব হয়ে।
হঠাৎ আমার স্বামী ছাদের ঘরের দিকে চোখ পড়তে বলে উঠলেন,
- এই ঘরটিতে কেউ কি থাকে?
আমি নিশ্চুপ রইলাম। আমাকে চুপ থাকতে দেখে আবারও প্রশ্ন করলেন তিনি,
- কে থাকে এই ঘরে?
আমি অস্ফুটে বললাম,
- কেউ না... .....
.........
ঢাকায় ফেরার কদিনের মাথায় মধুচন্দ্রিমায় গেলাম আমরা কক্সেস বাজার। সেদিন বোধ হয় পূর্ণিমা ছিলো। আকাশে গোল থালার মত বিশাল চাঁদ উঠেছিলো। মাঘ মাসের সেই শীতেও সাগরের তীরে বইছিলো মন্দ মধুর হাওয়া। রাতের খাবারের পরে আমরা গিয়ে বসলাম সাগরপাড়ে। জলের উপর জ্যোস্নার আলো ঠিকরে পড়ছিলো। ঝিকিমিকি রুপোলী আলোর নাচনে এক মায়াময় মুহুর্তের সৃষ্টি হয়েছিলো। ঢেউগুলো বার বার এসে আছড়ে পড়ছিলো আমাদের পায়ের কাছে। পা ভিজিয়ে দিচ্ছিলো আমাদের। আমার ভালোমানুষ স্বামী আর তার কবিতায় ভাসছিলো সেই জ্যোৎস্নারাত। পেশায় ডক্টর হয়েও এমন দরাজ গলায় কেউ আবৃতি করতে পারে জানা ছিলো না আমার। আমার স্বামী আবৃতি করছিলো-সাগরজলে সিনান করি সজল এলোচুলে
বসিয়াছিল উপল-উপকূলে। এমন এক মায়াময় স্বর্গীয় মূহুর্তে মনে হচ্ছিলো জীবনে পাবার আর কিছু নেই..... তবুও মনে পড়ে গেলো...
কত রাত লুকিয়ে ছাদে আমাদের সেই জ্যোস্না দেখার স্মৃতি? আমাদের সেই গোপন স্বপ্নের কথা? একদিন আমরা সাগরপাড়ে জ্যোৎস্না দেখতে যাবো। শুনবো চাঁদের রুপোলী আলোয় ঠিকরে পড়া জলের কলতান! দীর্ঘশ্বাস পড়লো অলখে আমার, চুপি চুপি মনে মনে বললাম, সেই তুমি বদলে গেলে খোকাভাই। রাক্ষুসী সর্বনাশা নেশা তোমাকে নিয়ে গেলো অনেক দূরে। আমার থেকে অনেক অনেক দূরে। জানিনা কখন অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম।
হঠাৎ ঝলমলে জলের ছায়ায় আমি দেখতে পেলাম এক আবছায়া ছায়ামূর্তি। ঝাকড়াচুল, এলোমেলো শার্ট, গুটানো হাতা, ঐ ঝাপসা আলোতেও আমি দেখলাম, গভীরকালো, দুখী একজোড়া চোখের ব্যাথাতুর এক যুবক। যার দুখী চোখ জোড়া প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে তাকিয়ে আছে আমারই দিকে। আমি শিউরে উঠলাম। আকড়ে ধরলাম আমার স্বামীর বলিষ্ঠ বাহু আর তারপর ঐ সাগরের সব লোনাজল হুড়মুড়িয়ে নামলো আমার দুচোখের ধারায়। আমার স্বামী পরম মমতায় জড়িয়ে রইলেন আমাকে। জ্ঞানী বৃক্ষের মত নিশ্চুপ রইলেন তিনি,
একটি প্রশ্নও করলেন না তিনি আমাকে।
আর ব্যথাতুর ঝাকড়া চুলের এলোমেলো সেই যুবক,
উদ্দেশ্যবিহীন পদচারণায় দূর থেকে দূরে -
ক্ষুদ্র বিন্দুতে পরিনত হয়ে,
বিলীন হলো,
ঐ সাগরের নীলিমায়.....
আগের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১২