১। ভাঙচুরের ভেতর দিয়ে আমার প্রথম সৃষটির প্রচেষ্টা:
আমাকে আমার মা যত না খেলনা দিয়েছিলেন তার থেকে ১০গুন বেশী দিয়েছিলেন আমার আত্নীয় স্বজনেরা।আমার এক মামী আমাকে খুব সুন্দর একটা খেলনা টেলিভিশন দিলেন।টেলিভিশনটা ব্যাটিরীসেটিং না, হাত দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ছবি চেন্জ করতে হয়। আমি তখন ৪ কি ৫ হবো আমার চোখে তো সে টেলিভিশন পৃথিবীর অপার বিস্ময়!!!!! আধা বেলা খুব সেটা নিয়ে খেলার পরে আমার ভেতরে আবিস্কারের নেশা চেপে বসলো। আমি সবার অলক্ষে সেটা নিয়ে বাড়ি দিয়ে ভাঙলাম। তারপর আবিস্কার করলাম ভেতরে কিভাবে ছবি ওয়ালা কাগজের রিল পেচিয়ে পেচিয়ে রাখা হয়।তার পর আবার জুড়ে দেবার ব্যার্থ চেস্টায় বিফল হয়ে, মায়ের কাপড় কাটা কাঁচি টা লুকিয়ে নিয়ে সোফার আড়ালে গিয়ে বসলাম। আমি আবার আমার এসব আবিস্কারগুলোর জন্য লোকচক্ষুর অন্তরালে গোপন কোনো আড়াল বেছে নিতাম।তো সোফার পিছনে বসে বসে সযতনে কাটলাম ঐ ছবিওয়ালা কাগজের রিল থেকে প্রতিটা ছবি আলাদা করে করে। তারপর মা কিচেনে ঢুকতেই সেসব ছবি গ্লু দিয়ে কোথাও সেটে দিতে ইচ্ছে হল। গ্লু পেলাম না, তো কি হয়েছে আমার ইচ্ছে কি অবদমিত থাকবে? কখনও না। কাজেই গ্লু এর বিকল্প পানি দিয়ে ভিজিয়ে ভিজিয়ে সেসব ছবি সেটে দিলাম মায়ের সবচেয়ে সখের পলিশ করা বই এর আলমারীতে। পানি লেগে বার্নিশকরা কাঠের আলমারীর চেহারা দেখে মায়ের চেহারাও এক নিমিষে পালটে গেলো।তারপর উত্তম মধ্যম।
২। আমি যখন আগুনের ব্যাবহার শিখেছিলাম:
সবাই কি সুন্দর ফস করে দিয়াশলাই জ্বালিয়ে আগুন বের করে ।দাউ দাউ জ্বলে ওঠা কি সুন্দর রং ঐ আগুনের শিখাটার! খুব অবাক আর মুগ্ধ হতাম আমি। মোমের শিখা, চুলার আগুন, এমনকি সিগারেটের আগুনের ফুলকির সৌন্দর্য্যেও বিমোহিত ছিলাম আমি।তাই একদিন দুপুরে মা ঘুমিয়ে গেলে চুপি চুপি লুকানো দিয়াশলাই দিয়ে জ্বালিয়ে দিলাম আগুন। ঠিক ঠিক পেরেছিলাম তবে শুধু দিয়াশলাই কাঠিতেই না বুকে লেস লাগানো ডিজাইন জামার লেসটাতেও। এমন সময় কে যেন দেখে ফেললো আর আমার এত সুন্দর আবিস্কার আগুনের শিখাটা এক নিমিষে নিভিয়ে দিলো।আর গালে পড়লো সপাট চপেটাঘাৎ।
৩। মন্জরী ও মন্জরী আমের মন্জরী:
আমাদের বাসাটার সামনে ফুলবাগান ও পিছনে ছিলো ফল ও সবজী বাগান। সেখানে ফুটে উঠতে দেখলাম আমের মুকুল। মুকুল থেকে ছোট্ট ছোট্ট বাবু আম। একরাতে ঝড়ে কিছু আম ঝরে পড়লো। মা বললেন ভালো হয়েছে এসব দিয়ে আচার করা যাবে। বুয়া বলল "আপামনি কাল তোমাকে কাঁচা আমের ভর্তা খাওয়াবো। "আমি অপেক্ষা করে রইলাম পরদিনের আমভর্তার জন্য। কিন্তু পরদিন সেকথা বলতেই মা বল্লেন "এসব খেতে হবেনা এখন, দুপুরে খাবার পরে দেখা যাবে। "কিন্তু দুপুরে খাবার পরে সেকথা মা, বুয়া সবাই ভুলে গিয়ে দিবানিদ্রায় মগ্ন হল। আর আমি সে সুযোগে সোজা কিচেনে গিয়ে একটা ধারালো বটি নিয়ে আম কেটে ভর্তা বানানোর চেস্টায় রত হলাম। প্রথম প্রচেস্টাতেই আমের বদলে সোজা নিজের বুড়ো আঙুল দুভাগ করে ফেল্লাম আর তারপর আমার চিৎকারে সবার দিবানিদ্রা ছুটে গেলো।
৪। ফুলকলিরে ফুলকলি:
মালী চাচ্চুর কাছে গাছ লাগানো শিখলাম। চাচ্চু বল্লো গাছে পানি দিতে হয় , গাছের খাবার পানি। এ পানি খেয়েই ওরা ফুল ফোঁটায়।আমি খুব অবাক হলাম, আমরা এতকিছু চর্ব্য চোস্য লেহ্য পেয় খাই আর গাছেরা শুধুই পানি?? আবিস্কারের ভূত আবারও আমার মাথায় জেঁকে বসলো। মালী চাচুচর কাছ থেকে একটা ফুল গাছ চেয়ে নিলাম। উনি ছোট একটি টবে করে আমাকে দিলেন মাটি আর ছোটো একটি কুড়িসহ তারা ফুল গাছের ডাল। আমি সকাল ৯টাই সেই টবের মাটিতে গাছ পুতে পানি ঢেলে ঢেলে ১২ টা বাজিয়ে দিলাম আর সত্যিই দেখলাম আমার অতিরিক্ত খাদ্য প্রদানে কুড়ি থেকে পাপড়ী গুলো চোখ মেলে তাকালো, হেসে উঠলো জলজান্ত একটা ফুল। এই আবিস্কার আমার জীবনের এক পরম পাওয়া। আজো মনে পড়ে ছোট্ট নিলাভ, বেগুনী ধাঁচের সেই ফুল শিশুর নিস্পাপ সৌন্দর্য্য।
৫। নুপুর উপাখ্যান:
আমার যন্ত্রনায় অস্থির হয়ে মা পায়ে সোনার নুপুর পরিয়ে দিলেন। যেন কোথায় আছি বুঝে যান স হজেই। হাহাহা দুদিনেই বুঝে গেলাম নুপুরের রহস্য। আমার গতিবিধির উপরে নজরদারীর জন্যই মায়ের এই পন্থা।
কাজেই দরকার পড়লে নুপুরগুলো উপরে উঠিয়ে হাটুর কাছাকাছি আটকে দিতাম, তারপর পা টিপে টিপে চলে যেতাম নির্দিষ্ট গন্তব্যে নতুন আবিস্কারের পথে।