somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট্ট বেলায় মা আমাকে হারিয়ে যাবার ভয়ে পায়ে নুপুর পরাতো

২৯ শে নভেম্বর, ২০০৮ সকাল ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলায় আমি ছিলাম একটা ভাঙচুরওয়ালি দস্যি টাইপ বাচ্চা।আমার জ্বালায় আমার বাসার সবাই বিশেষ করে মা তটস্থ থাকতেন।যদিও আমি এখন বুঝি আমার ভাঙচুরের মধ্যে আমার কিছু সৃষ্টির নেশা ছিলো। এখনও সে কথা মা সহ বাসার কাউকে বুঝাতে গেলে তারা তো বুঝেই না, উল্টা আরো বলে, হয়েছে নিজের সাফাই গাইতে হবেনা আর। কি আর করা।

১। ভাঙচুরের ভেতর দিয়ে আমার প্রথম সৃষটির প্রচেষ্টা:
আমাকে আমার মা যত না খেলনা দিয়েছিলেন তার থেকে ১০গুন বেশী দিয়েছিলেন আমার আত্নীয় স্বজনেরা।আমার এক মামী আমাকে খুব সুন্দর একটা খেলনা টেলিভিশন দিলেন।টেলিভিশনটা ব্যাটিরীসেটিং না, হাত দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ছবি চেন্জ করতে হয়। আমি তখন ৪ কি ৫ হবো আমার চোখে তো সে টেলিভিশন পৃথিবীর অপার বিস্ময়!!!!! আধা বেলা খুব সেটা নিয়ে খেলার পরে আমার ভেতরে আবিস্কারের নেশা চেপে বসলো। আমি সবার অলক্ষে সেটা নিয়ে বাড়ি দিয়ে ভাঙলাম। তারপর আবিস্কার করলাম ভেতরে কিভাবে ছবি ওয়ালা কাগজের রিল পেচিয়ে পেচিয়ে রাখা হয়।তার পর আবার জুড়ে দেবার ব্যার্থ চেস্টায় বিফল হয়ে, মায়ের কাপড় কাটা কাঁচি টা লুকিয়ে নিয়ে সোফার আড়ালে গিয়ে বসলাম। আমি আবার আমার এসব আবিস্কারগুলোর জন্য লোকচক্ষুর অন্তরালে গোপন কোনো আড়াল বেছে নিতাম।তো সোফার পিছনে বসে বসে সযতনে কাটলাম ঐ ছবিওয়ালা কাগজের রিল থেকে প্রতিটা ছবি আলাদা করে করে। তারপর মা কিচেনে ঢুকতেই সেসব ছবি গ্লু দিয়ে কোথাও সেটে দিতে ইচ্ছে হল। গ্লু পেলাম না, তো কি হয়েছে আমার ইচ্ছে কি অবদমিত থাকবে? কখনও না। কাজেই গ্লু এর বিকল্প পানি দিয়ে ভিজিয়ে ভিজিয়ে সেসব ছবি সেটে দিলাম মায়ের সবচেয়ে সখের পলিশ করা বই এর আলমারীতে। পানি লেগে বার্নিশকরা কাঠের আলমারীর চেহারা দেখে মায়ের চেহারাও এক নিমিষে পালটে গেলো।তারপর উত্তম মধ্যম।
২। আমি যখন আগুনের ব্যাবহার শিখেছিলাম:
সবাই কি সুন্দর ফস করে দিয়াশলাই জ্বালিয়ে আগুন বের করে ।দাউ দাউ জ্বলে ওঠা কি সুন্দর রং ঐ আগুনের শিখাটার! খুব অবাক আর মুগ্ধ হতাম আমি। মোমের শিখা, চুলার আগুন, এমনকি সিগারেটের আগুনের ফুলকির সৌন্দর্য্যেও বিমোহিত ছিলাম আমি।তাই একদিন দুপুরে মা ঘুমিয়ে গেলে চুপি চুপি লুকানো দিয়াশলাই দিয়ে জ্বালিয়ে দিলাম আগুন। ঠিক ঠিক পেরেছিলাম তবে শুধু দিয়াশলাই কাঠিতেই না বুকে লেস লাগানো ডিজাইন জামার লেসটাতেও। এমন সময় কে যেন দেখে ফেললো আর আমার এত সুন্দর আবিস্কার আগুনের শিখাটা এক নিমিষে নিভিয়ে দিলো।আর গালে পড়লো সপাট চপেটাঘাৎ।

৩। মন্জরী ও মন্জরী আমের মন্জরী:
আমাদের বাসাটার সামনে ফুলবাগান ও পিছনে ছিলো ফল ও সবজী বাগান। সেখানে ফুটে উঠতে দেখলাম আমের মুকুল। মুকুল থেকে ছোট্ট ছোট্ট বাবু আম। একরাতে ঝড়ে কিছু আম ঝরে পড়লো। মা বললেন ভালো হয়েছে এসব দিয়ে আচার করা যাবে। বুয়া বলল "আপামনি কাল তোমাকে কাঁচা আমের ভর্তা খাওয়াবো। "আমি অপেক্ষা করে রইলাম পরদিনের আমভর্তার জন্য। কিন্তু পরদিন সেকথা বলতেই মা বল্লেন "এসব খেতে হবেনা এখন, দুপুরে খাবার পরে দেখা যাবে। "কিন্তু দুপুরে খাবার পরে সেকথা মা, বুয়া সবাই ভুলে গিয়ে দিবানিদ্রায় মগ্ন হল। আর আমি সে সুযোগে সোজা কিচেনে গিয়ে একটা ধারালো বটি নিয়ে আম কেটে ভর্তা বানানোর চেস্টায় রত হলাম। প্রথম প্রচেস্টাতেই আমের বদলে সোজা নিজের বুড়ো আঙুল দুভাগ করে ফেল্লাম আর তারপর আমার চিৎকারে সবার দিবানিদ্রা ছুটে গেলো।
৪। ফুলকলিরে ফুলকলি:
মালী চাচ্চুর কাছে গাছ লাগানো শিখলাম। চাচ্চু বল্লো গাছে পানি দিতে হয় , গাছের খাবার পানি। এ পানি খেয়েই ওরা ফুল ফোঁটায়।আমি খুব অবাক হলাম, আমরা এতকিছু চর্ব্য চোস্য লেহ্য পেয় খাই আর গাছেরা শুধুই পানি?? আবিস্কারের ভূত আবারও আমার মাথায় জেঁকে বসলো। মালী চাচুচর কাছ থেকে একটা ফুল গাছ চেয়ে নিলাম। উনি ছোট একটি টবে করে আমাকে দিলেন মাটি আর ছোটো একটি কুড়িসহ তারা ফুল গাছের ডাল। আমি সকাল ৯টাই সেই টবের মাটিতে গাছ পুতে পানি ঢেলে ঢেলে ১২ টা বাজিয়ে দিলাম আর সত্যিই দেখলাম আমার অতিরিক্ত খাদ্য প্রদানে কুড়ি থেকে পাপড়ী গুলো চোখ মেলে তাকালো, হেসে উঠলো জলজান্ত একটা ফুল। এই আবিস্কার আমার জীবনের এক পরম পাওয়া। আজো মনে পড়ে ছোট্ট নিলাভ, বেগুনী ধাঁচের সেই ফুল শিশুর নিস্পাপ সৌন্দর্য্য।

৫। নুপুর উপাখ্যান:
আমার যন্ত্রনায় অস্থির হয়ে মা পায়ে সোনার নুপুর পরিয়ে দিলেন। যেন কোথায় আছি বুঝে যান স হজেই। হাহাহা দুদিনেই বুঝে গেলাম নুপুরের রহস্য। আমার গতিবিধির উপরে নজরদারীর জন্যই মায়ের এই পন্থা।
কাজেই দরকার পড়লে নুপুরগুলো উপরে উঠিয়ে হাটুর কাছাকাছি আটকে দিতাম, তারপর পা টিপে টিপে চলে যেতাম নির্দিষ্ট গন্তব্যে নতুন আবিস্কারের পথে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০০৮ সকাল ৯:৫৭
৮৭টি মন্তব্য ৮৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×