আজ হিমু পাঞ্জাবিটা খুঁজে পাচ্ছিল না। গতকাল অনেক রাত অব্দি হেঁটেছে, রাত শেষে হোটেলে এসে কখন ঘুমিয়েছে বলতে পারেনা । শুধু মনে আছে পাশের রুমের ইদ্রিস সাহেবের ঘরের লাইট তখনো জ্বলছিল।
বাইরে প্রচুর রোদ।
খিদে ভাব হয়েছে, কিছু খাওয়া দরকার। বহুদিন রুপার খোঁজ নেওয়া হয় নি আর মাজেদা খালার কাছেও যাওয়া দরকার।
হিমু বুঝতে পারে না হঠাত তাঁর এত সামাজিক কেন হতে ইচ্ছে করছে, কেন ইচ্ছে করছে ঘরে আর কেউ থাকুক-তাকে চা, টা বানিয়ে দিক। চিন্তা বন্যার মত বিষয়। চিন্তারা আসতে শুরু করেছে-ঘোর ধরা ভাব আর পাঞ্জাবি ছাড়াই রুমের বাইরে বের হয় সে।
শুক্রবারে সবাই মোটামুটি হোটেলেই আছে। পেপার পড়তে দেখা গেল ইদ্রিস আর আফজাল সাহেবকে। আফজাল সাহেব ব্যবসায়ী মানুষ, পেপার টেপার পড়েন না খুব বেশি। আজ কেন পড়ছেন তা দেখে হিমুর কৌতূহল হল।
-লোকটা মারাই গেল হিমু সাহেব।
-কার কথা বলছেন?
-হুমায়ূন আহমেদ, শোনেন নি নিউইয়র্কে গিয়েছিল চিকিৎসা করাতে?
-শুনেছিলাম, লোকটা ত আমাকে মহা ফেভারীট করে দিয়ে গেল।
-এখন ত উনি নেই, কে লিখবে হিমু সাহেব আপনাকে নিয়ে?-আফজাল সাহেব বই-পত্র পড়েন না, কিন্তু তাঁর কণ্ঠও কেমন ভেজা ভেজা শোনাল।
হিমু বুঝতে পারল কান্না সংক্রামক জিনিস আর তাঁর মহামানবের ট্রেনিং দেওয়া বাবাই ত বলে গেছেন- তুমি চোখে জল আনিবে না, কারণ চোখের জলে মানুষের পরিচয় থাকে, তুমি কোনক্রমেই তোমার আসল পরিচয় সকলের সামনে দেখাইবে না, মনে রাখিবে আচ্ছাদিত জিনিস চিরকাল মজবুত থাকে।
হিমু উঠে চলে গেল রুমে। হোটেলের সব কয়টি জানালা এই দিনের বেলা বন্ধ করে জীবনের প্রথম আর শেষ কান্না কাঁদল অঝোর ধারায়।কেন কাঁদল সে এই তর্ক থাক। যে মানুষটা তাকে বাচিয়ে রেখেছিল ওর মত করে আজ তিনি নেই-ভাবতেই হিমু কবিতা লিখতে থাকলো তাঁর মাথার ভিতরেই-
চলে যাওয়া মানে একেবারে চলে যাওয়া?
রেখে গেলে কত কিছু জানো কী তা?
আমার জীবন জানে তুমি কোন সখা
ভাল থেকো হে গুরু-এই এত টুকু চাওয়া।