জীবনের পথ ধরে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এসে যখন বুঝতে পারলাম ভুল পথে চলে এসেছি, তখন ফেরার কোন উপায় ছিলোনা। ব্যাপারটা এমন যে দক্ষিনে যাওয়ার জন্য একটা জাহাজে উঠে পড়লাম, আর চার বছরের সে ভ্রমনের শেষ সময়ে এসে বুঝতে পারলাম এটা উত্তরের জাহাজ, দক্ষিনের নয়। হেসে খেলে আনন্দে কখন যে এতোটা সময় পেরিয়ে গেছে একটুও টের পাইনি। দক্ষিন ভাষাভাষী মানুষ আমি উত্তরের ভাষাওতো আমার অজানা!! দক্ষিনে যেতে হলে আবার আমাকে বন্দরে ফিরে যেতে হবে, ঠিক যেখান থেকে যাত্রা শুরু করে ছিলাম!! গিয়ে উঠতে হবে নতুন কোনো জাহাজে!! কিন্তু এ কি করে সম্ভব?? একটা উপায় অবশ্য আছে- জাহাজ উত্তরের বন্দরে ভিড়তে এখনও যে সময়টুকু বাকী আছে সে সময়ের মধ্যে নিজেকে উত্তরের জন্য তৈ্রি করে নেয়া, উত্তরের ভাষা শিখে নেয়া। কিন্তু এ আমার জন্য ভীষন কষ্টের ব্যাপার। এ কাজ আমাকে দিয়ে হবে না, হবার নয়!! হয়তো সব এভাবেই নির্ধারন করা ছিল অথবা এ আমার পূর্ব কৃতকর্মের পরিনতি। চার বছরের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের হাসি আর আনন্দে মেতে থাকা অসচেতন মুহূর্তগুলোর জন্য হয়ত আমাকে বাকীটা জীবন অনেক কষ্টে কাটাতে হবে। এই দুরন্ত মনটাকে এখনও সুস্থির করতে পারিনি, পারিনি কোনো লক্ষ্যে বেধেঁ রাখতে। নিরুপায় আমি তাই বেলা শেষে জাহাজের মাস্তুলে বসে গুণ গুণ করে আউড়াই কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ থেকে-
......................................................
শেষমেষ যে যার স্বন্ধ্যার কাছে ফিরে যায়,
যে যার অন্ধকারের কাছে।
জীবন যাপন ঘিরে আছে এক বর্ণময় খাচাঁ,
সোনালী স্বাধীনতা ডানা বেধেঁ রাখে রঙ্গিন শিকল-
শেষমেষ যে যার ক্ষত ও পচনের কাছে ফিরে যায়,
যে যার ধ্বংসস্তুপের কাছে।
হাত বাড়ালেই ফুটে থাকা রক্তিম গোলাপ-
তবু যে যার কাটার কাছে ফিরে যায় একদিন,
একদিন যে যার নিঃসঙ্গতার কাছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১০ রাত ১২:২০