একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচে একজনই (খুব বেশি হলে দু'জন) ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়। তার কৃতিত্ব ধরা হয় অন্য ২১ জনের পারফরম্যান্সের ঊর্ধ্বে। কিন্তু তাই বলে কি আড়ালে থাকা আমাদের অন্য বীরেরা সামনে আলোচিত হবে না!!! আসুন দেখি, এই জন্মভূমির সেই দামাল সন্তানদের বীরত্বগাঁথা যাদের সাফল্য, সাহস আর অর্জন কখনোই আমাদের হৃদমাঝার থেকে আড়ালে যাবে না...
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ
আমাদের The Wall, Mr Dependable হয়ে ওঠা মাহমুদুল্লাহকে তো ম্যান অব দ্য ম্যাচ করে সারা বিশ্বই আজ তুলে ধরেছে। আমি ধরলেই কি আর না ধরলেই কি... পঞ্চম উইকেট জুটিতে মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে মাহমুদুল্লাহ বিশ্বকাপে (এখন পর্যন্ত... আমি চাই এটা যেন পরের ম্যাচেই ভেঙে চুর চুর হয়ে যায়) বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপ করেছে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ানকে ধন্যবাদ দিলেও ক্যান জানি মনে হয় তাকে অপমান করা হবে...
মাশরাফি বিন মর্তুজা
একজন লিডারকে যেমন হতে হয় ও ঠিক সেমন ছিল আজকের রণক্ষেত্রে। ব্যাটিংয়ে কি করেছে আমাদের দেশসেরা এই বীর? করেছে... ঐ শেষ সময় এসেও ৪ বলে ১ চারসহ ৬ রান নিয়ে ছিল অপরাজিত... এটা কি অনেক কিছু নয়? বলেন?
আর পরবর্তীতে... ৪.৮০ ইকোনমি রেটে ১০ ওভারে ৪৮ রান দিয়ে হেলস এবং রুটকে আপরুট করে দিয়েছে। খেয়াল করেছেন নিশ্চয়ই সবাই শেষের দিকে একটু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটেও দেশের জন্য করে গেছে বল। আর ওর যে কাজ ছিল সেটার কথা কি আর বলতে হবে? আপনাদের কি কখনো মনে হয়েছে এক মুহূর্তের জন্য ইংল্যান্ড তাদের ব্যাটিংয়ের সময় নির্ভার ছিল? আমার তা মনে হয় না। দশ ওভার বল করে মাঠের বাইরে চলে গিয়ে একটু বিশ্রাম নিতে পারতো; কিন্তু তা না করে যুদ্ধক্ষেত্রে থেকেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া এই দলপতি যতই আড়ালে থাকুক ম্যান অব দ্য ম্যাচের সিলেক্টরদের কাছ থেকে... আমাদের থেকে নয় মোটেই... ম্যাচ শেষে এই জয় আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি উৎসর্গ করে দেশপ্রেমে আরো একবার প্রমাণ রাখলো আমাদের নড়াইল এক্সপ্রেস মাশরাফি
মুশফিকুর রহিম
বাংলাদেশের অন্যতম এই ব্যাটিংস্তম্ভ যখন খেলতে নামে তখন আমাদের স্কোরবোর্ডে রান ২১.৫ ওভারে ৪ উইকেটে ৯৯... হাল ধরে বাংলাদেশকে অনেক দূর নিয়ে যায় আমাদের প্রিয় মুশফিক... আপন ভায়রা মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে ৫.৯১ গড়ে ২৩.৫ ওভার খরচ করে ৫ম উইকেট জুটিতে তোলে ১৪১ রান... মাহমুদুল্লাহ সেঞ্চুরি করে বিদায় নিলেও আমাদের মুশফিক আরো কিছুক্ষণ থেকে যান ক্রিজে। শেষতক ১১৫.৫৮ গড়ে ৮ চার ও ১ ছক্কায় প্রায় ঘণ্টা দুই 'ব্যাটলফিল্ডে' থেকে ৭৭ বলে ৮৯ রান করে বিদায় নেয়। কিন্তু এখানেই শেষ নয়...
ফিল্ডিঙে নামে টিম বাংলাদেশ... উইকেটের পেছনের চিররক্ষী মুশফিক এখানেও রাখে আস্থার আতিশয্য। চারটি ক্যাচ (বেল, হেলস, রুট ও বাটলার) ও মইন আলীকে রান আউট করে ভুমিকা রাখেন এক ঐতিহাসিক জয়ে...
রুবেল হোসেন
ওর জন্য তো আমরা সবাই আজ হ্যাপি জাস্ট দুটো ওভার আর তাতেই ইংল্যান্ড ধরাশায়ী। ৯.৩ ওভারে ৫৩ রান দিয়ে যে চারটা উইকেট নিয়ে এই বাগেরহাটের কৃষ্ণরত্ন যা দেখালো তা অনেকদিন মনে রাখবে এই দেশের কোটি মানুষ; চোখে লেগে থাকবে ধাঁধাঁর মতো লক্ষ প্রাণে...
তাসকিন আহমেদ
কতই বা বয়স এই ছেলেটার! আর মাত্র দিন পঁচিশ পরে যে বিশে পা রাখছে সেই ছেলে আজ ২ উইকেট (টেইলর ও ইংল্যান্ডের শেষ আশা হিসেবে থাকা বাটলার) নিয়েছে তাঁর দেশের জন্য... এই ছেলে অনেক দূর যাবে, ইন শা আল্লাহ্
সৌম্য সরকার
সবে বাইশে পা দেওয়া এই সাতক্ষীরার ছেলে বাংলাদেশের বিপদক্ষণে রুখে দাঁড়িয়েছিল। ৫ চার আর ১ ছক্কায় ৫২ বলে ৪০ রান করে দলকে হারাতে দেয়নি পথ... আর ফিন্ডিংয়ের সময় মুশফিককে সাথে নিয়ে মইন আলীকে দিয়ে শুরু করে ইংল্যান্ডবধের অমরকাব্যের দ্বিতীয়াংশ...
শেষতক...
জাস্ট একটা পরিসংখ্যান দিই... ক্যামন?
অতিরিক্ত রানঃ
ইংল্যান্ড দিয়েছে ১৪
বাই ১, লেগ বাই ৪, ওয়াইড ৮, নো ১
আর আমাদের বাংলাদেশ...
মাত্র ৫ যার মধ্যে...
লেগ বাই ৪টি যেটা ইংলিশরা ব্যাটে লাগাতে গিয়ে পায়ে লাগায় নিছে tongue emoticon আর নো মাত্র একটি grin emoticon
আর এই নো বলটি ছিল একটা বিমার থেকে আসা। আমাদের ছোট্ট তাসকিন (১৯) এতো চাপের ম্যাচে ভুল করেই না হয় একটা বিমার দিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সাথে ২ উইকেট নিয়ে কি সেটা পুষিয়ে দেয়নি???
তোমাদের সাথে আমরা সবাই ছিলাম, আছি, এবং থাকবো... থাকবোই