ভূমিকম্প। বন্যা-খরা-ঝড়ে ক্লিষ্ট আমাদের বাংলাদেশের এই অনাহূত দুর্যোগের উপর অধুনা কোন তিক্ত অভিজ্ঞতা নেই। তাই হয়তো আমরা তেমনভাবে সচেতন হতে পারিনি আদৌ। অথচ ভূমিকম্পের অন্যতম ঝুঁকির উপর সদা কম্পমান আমাদের এই বাংলাদেশ, কমবেশি আমরা সবাই। আগে থেকে পূর্বাভাস দেওয়া যায় না বলে এর ক্ষতি করার হার অন্যান্য যেকোনো দুর্যোগের থেকে অনেক বেশি। কারণ এর বিপক্ষে পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়া প্রায় অসাধ্য। ব্যাপারটা কিছুটা সেই পরীক্ষার মতো যেখানে শিক্ষক মশাই একদিন এসে হুট করে বলবেন, “হু, হা, হা, হা... আজ তোমাদের পরীক্ষা।” তখন ছাত্রদের যে পরিস্থিতি হয় ভূমিকম্প হলে ঠিক সেরকমটাই হয় সাধারণ্যের। তো, কি উপায় এর থেকে পরিত্রাণের? একটাই কথা, সদাপ্রস্তুত সদা।
শাব্দিক বিশ্লেষণে ভূমিকম্প হল ‘ভূমি’ ও ‘কম্প’ এই দুটি শব্দের সমন্বয়। অর্থাৎ ভূমিতে কোন কারণে যখন কম্পনের সৃষ্টি হয় তাকেই ভূমিকম্প বলে। আর পুঁথিগত জ্ঞান জাহিরকরত যদি ব্যাখ্যা করে বলি তো- ভূমিকম্প হল ভূ অভ্যন্তরে দীর্ঘ সময়ে পুঞ্জিভূত অতিরিক্ত চাপ, তাপ ও বিক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট শক্তির আকস্মিক বিমুক্তির ফলে ভূপৃষ্ঠে অনুভূত কম্পন। সমুদ্রের তলদেশে যে তীব্র ও অগভীর ভূকম্পন হয় তাতে সুনামি সৃষ্টি হয়। সুনামি কি তা আশা করি বিস্তারিত বলার দরকার নাই।
ভূমিকম্প কেন হয়?
প্রধানত যেসব কারণে ভূকম্পন হয় তার ভিতর অন্যতম হল-
# টেকটোনিক প্লেটের সঞ্চালনজনিত কারণে ভূত্বকের কোন স্থানে প্রকাণ্ড শিলাচ্যুতি ঘটলে। এই প্লেটগুলি প্রতি বছর ১ সেন্টিমিটারের মতো নড়াচড়া করে থাকে;
# ভূ-গর্ভ তাপ বিকিরণ করে সংকুচিত হলে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে বহির্ভাগ ও অভ্যন্তরে ফাটল সৃষ্টি হলে;
# ভূ-অভ্যন্তরে পুঞ্জিভূত তাপ ও চাপ ভূ-গর্ভের নিম্নভাগে ধাক্কা দিলে;
# আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ফলে। এটা সবচেয়ে বেশি হয় ইন্দোনেশিয়ায়। এই দেশটিকে Laboratory of Disaster বলা হয়।
ইন্দোনেশিয়ার মাউন্ট মেরাপির বিস্ফুলিঙ্গ
# সৃষ্টিকুলের সেরাদের সেরা সেরা কর্মকাণ্ডের কারণে; এই যেমন নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বেড়ানো, যেমন খুশি তেমন করে পাহাড়ধস ইত্যাদি ইত্যাদি।
ভূমিকম্প সম্পর্কিত কিছু ভারবাহী কথাবার্তাঃ
প্রতি বছর পৃথিবীতে গড়ে প্রায় ছয় হাজার ভূমিকম্প হয় যার বেশিরভাগই মৃদু থেকে অতিমৃদু হওয়ার কারণে আমাদের গোচরবহির্ভূত থেকে যায়। একটি মাঝারী মানের ভূমিকম্প = ১৮০ মিলিয়ন মেট্রিকটন টিএনটি- এইসব জ্ঞানের কথা আমরা কমবেশি সবাইই জানি। ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ধারিত হয় দুভাবে।
তীব্রতা (Magnitude) : এটি রিখটার স্কেলে মাপা হয় এবং সংখ্যায় প্রকাশ করা হয় ১-১০ পর্যন্ত। আমেরিকান পদার্থবিদ চার্লস ফ্রান্সিস রিখটার এই পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেন।
তীব্রতা অনুসারে ভূমিকম্প কয়েক ধরণের।
ছোট মাত্রার ভূমিকম্প যা ৫ রিখটার স্কেলের নিচে হয়ে থাকে। এরকম ভূমিকম্প অহরহ হয়ে থাকে এবং হচ্ছেও। এই যে আপনি আমার লিখাটা পড়ছেন এখনই হয়তো একটা ভূমিকম্প হয়ে গেছে। কিন্তু তা না আপনি টের পেয়েছেন না আপনার আশেপাশের অন্য কেউ। এই ধরণের ভূমিকম্প ৫ মাত্রার নিচের হয় সাধারণত। এতে ভয় পাবার কোনই কারণ নেই। নাকি আছে? আছে, আছে। ছোট ছোট বিপদই কিন্তু অনেক বড় বিপদের আগমনীবার্তা নিয়ে আসে;
মডারেট মাত্রার ভূমিকম্প যা ৫-৬ রিখটার স্কেলের মধ্যে অবস্থান করে। ফি বছর প্রায় ১০০০ থেকে ১৫০০ বার এই মাত্রার ভূকম্পন হয়ে থাকে;
ব্যাপক মাত্রার ভূমিকম্প- ৬ থেকে ৭ রিখটার স্কেলের মধ্যে থাকে। এই মাত্রার একটা ভূমিকম্প আমাদের ঢাকাকে কি যে করে ফেলবে তা আর বললাম না। সিম্পলি ৭০ থেকে ৭২ হাজার বিল্ডিং ভেঙে পড়বে। প্রতি বছর সারা বিশ্বে ১০০ থেকে ১৫০ বার এই মাত্রার ভূকম্পন হয়ে থাকে। ২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি হাইতিতে ঠিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে লক্ষাধিক মানুষ মারা যায়। সাথে প্রায় আড়াই লক্ষ বাড়ি আর ত্রিশ হাজারের মতো বাণিজ্যিক ভবন হয় সম্পূর্ণ ধসে যায় নতুবা ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মেজর ভূমিকম্প যা ৭ থেকে ৭.৮ রিখটার স্কেলের মধ্যে অবস্থিত। ২০০৫ সালে ভূস্বর্গখ্যাত কাশ্মীরে ৭.৬ মাত্রার এক ভূমিকম্পে লাখের উপর প্রাণহানি হয়েছিল।
এবং শেষতক
ভয়াবহ মাত্রার ভূমিকম্প যা ৭.৮ থেকে তার উপরের রিখটার স্কেল কভার করে। পৃথিবীর এমন কোন শহর নেই (থাকলেও অত্যল্প) যা কিনা ভয়াবহ মাত্রার ভূমিকম্পেও টিকে থাকতে পারবে। আর আমাদের বাংলাদেশের কথা... থুক্কু কোন জায়গায় কি নিয়ে আলোচনা করছি। ব্যাপক মাত্রার দুঃসংবাদে সতর্ক করা যায় কিন্তু ভয়াবহ মাত্রার দুঃসংবাদে...... ওহ, একটা কথা বলতে তো ভুলেই গেছিলাম। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে তীব্র মাত্রার ভূমিকম্প রেকর্ড হয়েছে ৯.৫ মাত্রার। সংগঠিত হয়েছিল চিলিতে ১৯৬০ সালে। ইতিহাসে দ্য গ্রেট চিলিয়ান আর্থকোয়াক বা ১৯৬০ সালের ভালডিভিয়ান আর্থকোয়াক নামে কুপরিচিত (!) এটি।
'মহাকম্পের' পর ভালডিভিয়ার একটি রাস্তা
এর প্রভাবে সৃষ্ট সুনামি দক্ষিণ চিলি থেকে শুরু করে হাওয়াই, জাপান, ফিলিপাইন, নিউজিল্যান্ডের পূর্বাঞ্চল, অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এমনকি সুদূর আলাস্কার অ্যালিউশিয়ান দ্বীপপুঞ্জেও আঘাত করে। তবে এর ফলে হতাহত হয় তুলনামূলক অনেক কম। অবশেষে একটা ছোট্ট কথা, রিখটার স্কেলের মাত্রা ১ বৃদ্ধি পেলে ভূকম্পন শক্তি ৩১.৬ গুণ বেড়ে যায়!
প্রচণ্ডতা (Intensity) : এটা আরেক ধরণের স্কেল। এখানে সংশোধিত মার্কেলী স্কেল ব্যবহৃত হয়। আর প্রচণ্ডতা পরিমাপ করা হয় রোমান I থেকে XII পর্যন্ত। এটার প্রচলন তেমন একটা উচ্চারিত নয়।
ভূমিকম্প হলে কি করবেন (অথবা কি করবেন না)
প্রথমেই যেটা করবেন না তা হল- আতংকিত হয়ে কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলবেন না। ধীরস্থির থাকুন। এতে মাথা ঠাণ্ডা থাকবে কাজেও দ্রুততা আসবে। স্নাইপার কমান্ডোদের একটা আপ্তবাক্য এক্ষেত্রে কাজে আসলেও আসতে পারে। Slow is smooth, smooth is fast;
পরিবারের সবাইকে নিয়ে দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে আসুন এবং কোন খোলা জায়গায় আশ্রয় নিন। এখন কেউ আমাকে এই প্রশ্ন করলে তার উত্তর কিন্তু আমি দিতে পারবো না যে, সর্বাঙ্গ ঢাকা এই ঢাকা নগরীর ভিতর খোলা যায়গা কোথায় পাবো!
এখন মনে করুন আপনি কোন বহুতল ভবনের আট তলার বাসিন্দা। কিংবা বসুন্ধরা শপিং মলে কেনাকাটায় ব্যস্ত। তখন কি করবেন? হুড়মুড় করে সবাই মিলে নামতে গিয়ে ঠ্যাং ভাঙবেন না অন্যের পাড়া খাবেন? এসব উঁচুতলায় অবস্থানকালে সাধারণত (আমি কিন্তু বলেছি সাধারণত) দ্রুত বাইরে বের হয়ে আসা যায় না। তখন ঐ কম্পমান বহুতল ভবনেই আশ্রয় নেবেন। কিন্তু যেমন খুশি তেমন সাঁজোর মতো যেথা পেলাম সেথায় গেলাম করবেন? না, একেবারেই না। যদি ভবনে আশ্রয় নিতেই হয় তখন এইসব জায়গায় আশ্রয় নেবেন।
বীমের পাশে (নিচে নয়)
কলামের পাশে
দালানের কোণায়
আর সিঁড়িকোঠায়।
ভূমিকম্পে এইসব যায়গা কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভবন ধসে পড়লেও এইসব জায়গায় ফাঁকা জায়গা (Void Space) তুলনামূলক বেশি থাকে।
তারপরও মনে করুন আপনি উপর্যুক্ত জায়গা চতুষ্টয়ে স্থান পেলেন না। তখন কি করবেন? একেবারেই আতঙ্কগ্রস্ত হবেন না। মাথা ঠাণ্ডা রাখবেন। কোন শক্ত টেবিল বা খাটের নিচে আশ্রয় নিন। মাথার উপর চেষ্টা করবেন একটা নরম বালিশ বা কুশন দিতে। তা না পেলে মাথার উপর আপনার হাতদুটো দেবেন। এককথায় মাথাকে বাঁচাতে হবে যেকোনো মূল্যে।
তবে রেডক্রসের কথা হল, খাটে থাকলে সেখানেই সাপের মতো কুণ্ডলী পাকিয়ে থাকা এবং বালিশ দিয়ে মাথা রক্ষা করা। তবে এটা আমাদের দেশের সাপেক্ষে কিছুটা রিস্কি। কারণ আমাদের দেশের বেশিরভাগ ভবনের ছাদগুলো ঢালাইয়ের সময় সেরকম মানসম্মত উপায়ে বানানো হয় না। ফলে হুড়মুড়িয়ে সেটা আপনার শরীরের উপর ভেঙে পড়তে পারে। একটা মূল্যবান অফ টপিক নিয়ে কিয়দংশ আলোচনা করি। আমরা যতই আধুনিক হচ্ছি ততই কিন্তু আমরা বোকা হচ্ছি। কেন হচ্ছি বা কিভাবে হচ্ছি? শুনুন একটা উদাহরণ। আগের কালে যাকে বলা হয় নানা-দাদার কাল তখনকার খাটগুলো কেমন ছিল? সেসব চন্দনার পালঙ্কের নিচে অনেক জায়গা থাকতো। সময় যত গড়িয়েছে ততই খাটের উচ্চতা কমেছে, সেইসাথে কমেছে খাটের নিচের জায়গা। এখনকার যতো ব্র্যান্ডের খাট আছে সবই বক্স টাইপ। যেগুলোর নিচে কিঞ্চিৎ জায়গা থাকলেও তা চারপাশ দিয়ে ঘেরা। এখন চিন্তা করুন যে, ভূমিকম্পের সময় আপনি খাটের উপর আছেন। নিরাপদ আশ্রয়স্থল আপনার নিচেই আছে। কিন্তু আপনি সেখানে গিয়ে আশ্রয় নিতে পারছেন না। বিয়ের সময় পাওয়া তথাকথিত গিফট (!) বা শখের এই জিনিসটি কিন্তু আপনাকে বিপদের সময় একটুও সাহায্য করতে পারবে না।
বুক শেলফ, আলমারি কিংবা শোকেস জাতীয় ভারী আসবাবপত্রের থেকে নিরাপদে থাকা;
রান্নাঘরে থাকলে দ্রুত গ্যাসের লাইন বন্ধ করে বের হয়ে আসা;
যথাসম্ভব চেষ্টা করা বের হয়ে আসার সময় যাবতীয় ইউটিলিটি সার্ভিসসমূহ (গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি) বিচ্ছিন্ন বা সুইচ বন্ধ করা;
ঝুলন্ত কোন বস্তু (যেমন ঝাড়বাতি) অথবা জানালার কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকা;
কখনোই এবং কোনোভাবেই লিফট ব্যবহার না করা। বরং লিফটে থাকলে বের হয়ে আসা।
এখন মনে করেন লিফটে আছেন আপনি আর ভূমিকম্প শুরু হল, অথচ আপনি নামতেও পারছেন না। তখন কি করতে পারেন? প্রথমে কাছাকাছি ফ্লোরের বাটন চেপে বের হওয়ার চেষ্টা করবেন। পারলে সব বাটন টিপে দেবেন। যদি তাতেও কাজ না হয় তাহলে মাথার উপর হাত দিয়ে লিফটে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়বেন।
ভবনের ছাদ, জানালা কিংবা অন্য কোন স্থান থেকে লাফিয়ে পড়বেন না। দেখা গেল যে, যেই মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে তাতে দালান ভাঙেনি কিন্তু লাফ দেবার কারণে ঠ্যাং ভেঙে আপনি কাইত।
আচ্ছা, একটু আগে খোলা জায়গার কথা বলেছিলাম না। গাছপালা, বহুতল ভবন, বিদ্যুতের খুঁটি, সাইনবোর্ড বা বিলবোর্ড এগুলো কিন্তু খোলা জায়গা হবে না। গাড়ীতে থাকার সময় যদি বোঝেন ভূমিকম্প হচ্ছে তখন কি করবেন? জাস্ট গাড়ী থামিয়ে তার ভিতরই অবস্থান করবেন। গাড়ী থেকে বের হবেন না। গাড়ী তো থামাবেন কিন্তু আবার যেই জায়গাগুলোর কথা এইমাত্র বললাম সেগুলোর থেকে দূরে পার্ক করবেন। ওহ, আরেকটা কথা- ধরুন আপনি কোন সেতু পার হচ্ছেন, এমন সময় টের পেলেন যে ভূমিকম্প হচ্ছে। তখন কি করবেন? তখন কিন্তু গাড়ী থামাবেন না। দ্রুত সেতু পার হয়ে মহাসড়কে গাড়ীকে এনে তারপর পার্ক করবেন। ভূমিকম্পের সময় আপনার গাড়িটি যদি পাহাড়ি এলাকায় থাকে তবে ভূমিধ্বস এবং পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া পাথরের আঘাত এড়াতে নিরাপদ স্থানে আগে গাড়িটি নিয়ে যাবেন।
দুইটা প্রশ্ন করি। দেখি পারেন কিনা। ভয় নেই। উত্তর পরে দিয়ে দিবো।
১ ছাঁদে থাকার সময় যদি ভূমিকম্প হয় টের পান তখন কি করবেন?
২ নদীতে সাঁতার কাটার সময় যদি টের বা খবর পান যে খবর (!) হচ্ছে তখন কি করবেন?
ভূমিকম্প পরবর্তী করনীয়ঃ
এখানে একজন ভিক্টিমকে কয়েকটা দশায় রেখে তার সেই পরিস্থিতিতে কি করনীয় তার কথা বলার চেষ্টা করবো।
ভিক্টিম বিধ্বস্ত ভবনের ভিতর আটকা পড়া অবস্থায়
# এখন সবার কাছেই মুঠোফোন আছে। কিন্তু আটকা পড়া অবস্থায় মুঠোফোন বারবার ব্যবহার করবেন না। এতে চার্জ নষ্ট হবে। মুঠোফোনের চার্জ সংরক্ষণ করা এক্ষেত্রে অতি জরুরি।
# কোন বড় ভারী বস্তুর নিচে চাপা পড়া অবস্থায় থাকলে অযথা টানাহেঁচড়া করে শরীরের শক্তি নিঃশেষ করা যাবে না; সেক্ষেত্রে জরুরি বাহিনীর সাহায্য পাবার জন্য কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টা বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবে। এই ৭২ ঘণ্টাকে Golden Period of time বলা হয়।
যারা নিরাপদে বের হতে পেরেছেন তাদের জন্য
# মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী আনার জন্য পুনরায় রুমে বা ভবনে প্রবেশ করবেন না। “সম্পদের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি” এই কথা নিশ্চয়ই সবাই জানেন।
# ভূমিকম্প পরবর্তী ভূমিকম্প যাকে আফটারশক বলে সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকা। তাই একটু ধৈর্য ধরে খোলা জায়গায় (যদি পেয়ে থাকেন!) অবস্থান করবেন।
# কোন ভাঙা বৈদ্যুতিক খুঁটি বা তার পরীক্ষা না করে হাত না দেওয়া। হাত দেওয়ারই বা কি দরকার!
যারা নিরাপদে বের হয়ে সুস্থ আছেন সেইসব সচেতন মানুষের জন্যে
# আহতদের উদ্ধার করতে সাহায্য করা। তবে সাহায্যের একটা সীমা থাকা দরকার। প্রশিক্ষিত না হলে ডেব্রিস না সরানো, চাপা পড়া ভিক্টিমকে উদ্ধার করার জন্য টানাহেঁচড়া না করা। মনে রাখবেন মানুষকে সাহায্য করা আমাদের কর্তব্য কিন্তু না জেনে, অদক্ষ হাতে উদ্ধার কাজ বরং উল্টো ফল বয়ে আনে। যারা এক্সপার্ট তাদেরকে তাদের কাজ করতে দেওয়া। আমরা আমজনতা তাদের কাজে বাধা না দেওয়াটাই অনেক বড় সাহায্য। কথাটা কড়াভাবে শোনালেও বলি, যেখানে মানবতা বিপন্ন সেখানে বীরত্ব দেখানো কাপুরুষতা।
প্রস্তুত থাকি সবাই
ভূমিকম্প সহসা আসে সত্য। কিন্তু আসলে যাতে কমান্ডোদের মতো সবসময় প্রস্তুত থাকতে পারি সেটা কি ভালো নয়। কিছু টিপস দিই আমার স্বল্প জ্ঞানের আলোকে-
# কিছু জিনিস একটা বাক্স বা পুঁটলিতে রেখে দিন। টর্চলাইট, বাঁশি, হ্যামার, কুশন/হেলমেট, শুকনো খাবার, পানি, ফাস্ট এইড, শিশুযত্নের সামগ্রী ও অন্যান্য জরুরী সামগ্রী।
# জাতীয় বিল্ডিং কোড অনুযায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করা। কত আর বেশি যাবে খরচের খাতায়- কিন্তু জীবনের হিসাব মেলানো যে কঠিন হয়ে পড়বে একটুখানি কিপটেমির জন্য। নিয়ম মেনে বিল্ডিং করলে আদতে খরচটা কমই হয়। কিন্তু আমরা অনেকেই তা উপলব্ধি করতে পারি না। ক্ষণিকের লাভের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির দিকটা আমাদের অনেকেই গোচর বহির্ভূত থেকে যায়।
বিভিন্ন আকৃতিতে ভবন বিধ্বস্ত হয়ে থাকে। তবে তার বিভক্তি প্রধানত চার প্রকার।
১. কেন্টিলিভার (Cantilever): যখন কোন ভবনের একপাশের দেয়াল ভেঙে পড়ায় মেঝে বা ছাদের আংশিক বিধ্বস্ত হয় কিন্তু অবশিষ্টাংশ অপর প্রান্তের সাথে যুক্ত থাকায় জাস্ট ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। আমেরিকার ওকলাহোমায় ১৯৯৫ সালে যে বোমাহামলা হয়েছিল তাতে এই পদ্ধতিতে ফেডারেল বিল্ডিংটি বিধ্বস্ত হয়েছিল।
২. লিন টু (Lean to): এটাও কিছুটা আগেরটার মতো কিন্তু এখানে দেয়ালের সাথে যে প্রান্ত আটকে থাকে তা একটা নতি কোন তৈরি করে আনত থাকে। জাস্ট চিন্তা করুন একটা সমকোণী ত্রিভুজের কথা যার অতিভুজ হল সেই আনত বিধ্বস্ত মেঝে বা ছাদ।
৩. ভি-শেপ (V-Shape): এটা হয় তখনই যখন কোন ফ্লোরের মধ্যবর্তী কলাম ভেঙে যাওয়ার কারণে বা মাত্রাতিরিক্ত ভারী বোঝার কারণে কোন ফ্লোর মাঝখান থেকে ভেঙে পড়ে ভি-শেপ ধারণ করে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভবনগুলোতে এরকম ঘটনা বেশী ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
৪. প্যানকেক (Pancake): বহুতল ভবনের কয়েকটি ফ্লোর যখন সম্পূর্ণরূপে ভেঙে যায় এবং একটির উপর আরেকটি ফ্লোরের স্ল্যাব পতিত হয়ে স্তূপাকৃতি ধারণ করে তখনই এই অবস্থা সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে ফাঁকা স্থান (Void space) খুবই কম থাকায় প্রাণহানি হয় ব্যাপক মাত্রায়।
এখন একটা চরম মাত্রার খারাপ তথ্য দিই। প্যানকেক খেয়েছেন তো নিশ্চয়ই। বাংলাদেশে ভালো মানের যেকোনো ভুমিকম্পেই বেশিরভাগ দালানকোঠার অবস্থা এই প্যানকেকের মতো হবে। আর তার ভিতরে থাকা মানুষগুলো পিষে চ্যাপ্টা হয়ে যাবে। যেমনটা হয়েছে রানা প্লাজায়।
# নিয়মিত ইউটিলিটি সার্ভিসগুলো অর্থাৎ গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির লাইন সঠিক আছে কিনা তা চেক করা।
# আমি যেসব জায়গায় নিয়মিত যাতায়াত করি সেখানকার জরুরী নির্গমনপথটি কোথায় তা জেনে নেওয়া। মেয়েদের জন্য একটা কথা বলে রাখি। আপনারা যারা নিয়মিত মার্কেট বা শপিং মলে যান তারা সাধারণত একই জায়গায় বারবার যেয়ে থাকেন। অর্থাৎ যিনি বসুন্ধরায় নিয়মিত যান তিনি ওখানেই সবসময় যাবেন এটাই স্বাভাবিক এবং তাই হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। বলুন তো, আপনাদের ভিতর কয়জন জানেন শপিং মলের কোথায় জরুরী নির্গমন পথটি আছে? না জানাটা দোষের কিছু না। এখন এই আর্টিকেলটা পড়ার পর ওখানে পুনর্বার গিয়ে না জেনে আসাটা হবে দুঃখজনক। জেনে নেবেন সবাই, কেমন?
# ঘরের ভারী আসবাবগুলি অ্যাংকর বা হুক দিয়ে আটকে রাখা ভূমিকম্পের সময় যাতে সেটা আপনার ঘাড়ের উপর পড়তে না পারে। একইভাবে আলমারির উপর রাখা বিয়ের সময় পাওয়া কিংবা বিদেশফেরত সুটকেসটি সরিয়ে ফ্লোরে বা ভূমিতে রাখুন।
# জরুরী টেলিফোন নাম্বারগুলি মুখস্থ রাখুন। যেমন আপনার নিকটস্থ থানা, হসপিটাল, ব্লাড ব্যাংক ইত্যাদি ইত্যাদি। ইত্যাদি ইত্যাদি বললাম এই জন্য যে এগুলোর নাম্বার মনে রাখা জরুরী কিন্তু অতিজরুরী না। অতিজরুরী হল তার নাম্বার মনে রাখা যে আপনাকে এহেন বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন। আর তাঁরা হলেন ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের নিবেদিতপ্রাণ যোদ্ধাগণ।
ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের প্রয়োজনীয় নাম্বার
ফোনঃ ৯৫৫৫৫৫৫
শর্ট কোডঃ ১০২, ১৯৯
মুঠোফোন নাম্বারঃ ০১৭৩০ ৩৩৬৬৯৯
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ওয়েবসাইট
ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের আরো কিছু প্রয়োজনীয় নাম্বার
অনেকের কাছে অজানা এরকম একটা তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করি। ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের এক অফিসার আমাকে এই তথ্যটি দিয়েছিলেন। যেকোনো সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স খবর পাওয়ার উইদিন থার্টি সেকেন্ডসে গাড়ি নিয়ে ফায়ার স্টেশন ছাড়ে। এখন প্রশ্ন হল, তাহলে ঘটনাস্থলে আসতে এতো দেরি হয় কেন? উত্তর সোজা... কৌতূহলী জনতা, যানজট, চিকনা রাস্তা, ইত্যাদি, ইত্যাদি।
# আর যদি পারেন মানে যদি সময় থাকে তো বিপৎকালীন সময়ের উপর পরিবার বা যাদের সাথে আপনার নিত্য বসবাস তাদের নিয়ে একটা মহড়া করে রাখতে পারেন। অর্থাৎ বিপদের সময় কার কি কাজ থাকবে, কে কোন দায়িত্ব পালন করবে এইসব আর কি।
কেন এতো প্যাঁচাল পাড়া!
আমাদের বাংলাদেশ ভূমিকম্পের ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে আছে- এটা আমরা সবাই জানি। জিজ্ঞাসা করলে সবাই তোতাপাখির মতো বলতে পারবো। কিন্তু কেন আছে, কোন জায়গা ঝুঁকিপূর্ণ সেটা কি জানা দরকার নয়? কেন আছে আগে তার উত্তর দিই। সাধারণত প্রতি ১০০ বছর পরপর একটা ভয়াবহ ভূমিকম্প এই অঞ্চলে আঘাত হানে। শেষ যেটা হয়েছিল সেটা খুব সম্ভবত ১৮৯৭ সালে আসামে। আর সেই ভূমিকম্পে আসাম ও তার আশেপাশের অনেককিছুর খোমা পাল্টায় গেছিল। ১৮৯৭ থেকে ২০১৩ বাদ দিয়ে দেখেন তো ১০০ হয় কিনা। যদি না হয় তো ‘চিন্তার’ কোন কারণ নাই!!!
মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়াও আমার প্রাগুক্ত কথার সাথে একমত। দেখুন কি বলছে সে...
............১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের শ্রীমঙ্গলে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয় এবং ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে হয় ৬.০ মাত্রার ভূমিকম্প। এমনকি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মানমন্দিরে জানুয়ারি ২০০৬ থেকে মে ২০০৯ পর্যন্ত ৪ বছরে, রিখটার স্কেলে ৪ মাত্রার ৮৬টি ভূ-কম্পন নথিভুক্ত করা হয়। এই সময়ের মধ্যে ৫ মাত্রার চারটি ভূ-কম্পনও ধরা পড়ে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের মানমন্দিরে মে ২০০৭ থেকে জুলাই ২০০৮ পর্যন্ত কমপক্ষে ৯০টি ভূ-কম্পন নথিভুক্ত করা হয়, তন্মধ্যে ৯টিরই রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিলো ৫-এর উপরে, এবং সেগুলোর ৯৫%-এরই উৎপত্তিস্থল ছিলো ঢাকা শহরের ৬০০ কিলোমিটারের মধ্যে। অতীতের এসব রেকর্ড থেকে দেখা যায় ভূমিকম্পের মাত্রা না বাড়লেও ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে ভূমিকম্প সংঘটনের হার বেড়েছে, অর্থাৎ ঘন ঘন স্বল্প মাত্রার ভূমিকম্প হচ্ছে। মতবিরোধ থাকলেও অনেক ভূতাত্ত্বিক ছোট ছোট ভূমিকম্প সংঘটন বড় ধরণের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস বলে উল্লেখ করেন। অতীতের এসব রেকর্ডকে প্রাধান্য দিয়ে গবেষকরা জানিয়েছেন যেকোনো সময় বাংলাদেশে রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে।............এছাড়াও জাপানের টোকিও ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (টিআইটি)-র সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত এক সাম্প্রতিক (২০১০) গবেষণায় দেখা গেছে ঢাকার ভূমিতে বিভিন্ন প্রকারের মাটি (লাল মাটি, নরম মাটি ইত্যাদি) রয়েছে। ঢাকার সম্প্রসারিত অংশে জলাশয় ভরাট করে গড়ে তোলা আবাসন এলাকা রয়েছে। ভূমিকম্পের সময় নরম মাটি ও ভরাট করা এলাকার মাটি ভূমিকম্পের কম্পন তরঙ্গকে বাড়িয়ে দেয়, ফলে ভূমিকম্পের তীব্রতা বাড়ে। মাটির বৈশিষ্ট্যের সাথে যোগ হয় ভবনের বা স্থাপনার কাঠামো। এই দুইয়ের সম্মিলনে ভূমিকম্পের তীব্রতা ও ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাব্যতা বাড়ে-কমে। গবেষকরা তাই ঢাকার বর্ধিতাংশের আলগা মাটিসমৃদ্ধ জনবসতিকে যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন।.........
বাংলাদেশে ৮টি ভূতাত্ত্বিক চ্যুতি এলাকা বা ফল্ট জোন সচল অবস্থায় রয়েছে। বগুড়া চ্যুতি এলাকা, রাজশাহীর তানোর চ্যুতি এলাকা, ত্রিপুরা চ্যুতি এলাকা, সীতাকুন্ড-টেকনাফ চ্যুতি এলাকা, হালুয়াঘাট চ্যুতির ডাউকি চ্যুতি এলাকা, ডুবরি চ্যুতি এলাকা, চট্টগ্রাম চ্যুতি এলাকা, সিলেটের শাহজীবাজার চ্যুতি এলাকা (আংশিক-ডাউকি চ্যুতি) এবং রাঙামাটির বরকলে রাঙামাটি চ্যুতি এলাকা। তবে এর মধ্যে ইদানীংকালে সবচেয়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে যে ফল্টটি সেটি হল ডাউকি ফল্ট। এটি জাফলংয়ের কাছাকাছি। মূলত এই ফল্টের কারণেই আমরা ঝুঁকির মধ্যে আছি। বিজ্ঞানীরা আশংকা করছেন যেকোনো মুহূর্তে এই ফল্টে ভয়াবহ একটা নাড়া পড়তে পারে। মিথ্যা বলে লাভ কি- এটা এমন না যে এক কি দুই বছরের মধ্যে হবে; বরং যেকোনো মুহূর্তে হতে পারে। আমাদের জন্মভূমি ভারতীয়, ইউরেশীয় এবং বার্মার (মায়ানমারের) টেকটনিক প্লেটের মধ্যে অবস্থান করছে। ভারতীয় এবং ইউরেশীয় প্লেট দুটি (১৯৩৪ সালের পর থেকে) দীর্ঘদিন যাবত হিমালয়ের পাদদেশে আটকা পড়ে আছে; অপেক্ষা করে আছে বড়সড় বিপর্যয়ের বার্তা নিয়ে।
সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে আছে উত্তরবঙ্গের উত্তরাংশ, সমগ্র সিলেট বিভাগ, শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা। তারপরে আছে ময়মনসিংহ, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, পার্বত্য অঞ্চলসমূহ। আর কম ঝুঁকির মধ্যে আছে সুন্দরবনসংলগ্ন জেলাসমুহ অর্থাৎ যাকে দক্ষিণাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল বলা হয়। শেষোক্ত অঞ্চল এমনিতেই ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসে আক্রান্ত থাকে বলেই কিনা ভূমিকম্পের কম ঝুঁকির মধ্যে আছে- এটা একটা গবেষণার বিষয়! তবে এখন নাকি বাংলাদেশের সুন্দরবন অঞ্চলকেও ভুমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে রেখে রূপরেখা প্রণয়ন করা হচ্ছে।
সবশেষে, আমি অত্যন্ত দুঃখিত অনেক বড় হয়ে যাওয়া আমার এই লিখাটার কারণে। কিন্তু বিশ্বাস করুন- এখানকার প্রতিটি কথা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, জীবন রক্ষাকারী, দামী। একটু চিন্তা করে দেখুন- এক নয়তলা রানা প্লাজার ট্র্যাজেডি সামাল দিতে আমাদের কি গলদঘর্ম হতে হয়েছে। আর এরকম হাজার হাজার রানা প্লাজার বাংলাদেশকে তখন কে সামাল দেবে যার প্রতিটি ধ্বংসস্তূপের নিচে...... আর কিছু বললাম না। আমরা সবাই সবকিছু বুঝি। কিন্তু দুঃখ হল- সব বুঝেও আমরা না বোঝার ভান করি শুধু আমাদের কিছু স্বার্থপর চিন্তা-ভাবনার খাতিরে। আদতে কিন্তু সেইসব কোন চূড়ান্ত লাভ বয়ে আনে না, দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি ছাড়া। আমরা একটু বুঝবান হই। নিজের স্বার্থে, প্রিয় মানুষদের স্বার্থে, সমাজের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে- সবার স্বার্থে।
ওহ! দুইটা প্রশ্নের উত্তর তো দেওয়া হল না!
১ ছাঁদে থাকার সময় যদি ভূমিকম্প হয় টের পান তখন কি করবেন?
সিঁড়িকোঠায় আশ্রয় নেবেন অথবা বিল্ডিঙের ভিতরে যেসব জায়গা নিরাপদ বলেছি সেখানে চলে যাবেন দ্রুত। ছাঁদ থেকে লাফ দেবেন না খবরদার।
২ নদীতে সাঁতার কাটার সময় যদি টের বা খবর পান যে খবর (!) হচ্ছে তখন কি করবেন?
নদী থেকে উঠে আসবেন। কারণ, সুনামির কারণে বড় ঢেউ তৈরি হতে পারে।
♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣ ♣
এরকম একটা পোস্ট আমি ব্লগে এর আগেও দিয়েছিলাম। এবার তার সাথে আমার আরো কিছু অভিজ্ঞতা এবং অর্জিত জ্ঞান যোগ করে এই পোস্টটা দিলাম। ছবিগুলো সব ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত। কিছু তথ্য আমি অন্যান্য বিভিন্ন উৎস থেকে এখানে সন্নিবেশিত করেছি।
সেন্ট মার্টিনের হেডল্যান্ডে রিপ কারেন্টের মৃত্যুফাঁদ... হত্যা না দুর্ঘটনা?
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:৪৭