বয়সের হিসাব রাখার বয়সটাও ফুরিয়ে গেছে।
শপিং মলের ট্রলিটাকে হাটার ওয়াকারের মতন আঁকড়ে ধরে অক্ষমপ্রায় পাটা টেনে টেনে যখন ক্যাশ রেজিস্টারে পৌঁছালেন তখন শরীরের উর্ধ্বভাগের গেটিসে টেনে রাখা ভারী শীত ট্রাউজারটা অনেকটা স্থানচ্যুত, ঢিলে হয়ে যাওয়া ইলাস্টিক আর গেটিসের ব্যর্থতায় । বুড়ো মানুষদের ডায়পারটা বেশ খানিকটা বেড়িয়ে এসছে। নিয়মের বাইরেই বিক্রয়কর্মী বৃদ্ধের ঝাকায় রাখা জিনিসগুলি তুলে তুলে হিসেব করে বৃদ্ধের ঢোলা ট্রাউজার থেকে মানিব্যাগ বের করে হিসেব বুঝে নিয়ে তাতে রিসিপ্ট ভরে দিল। পেছনে লম্বা লাইন হয়ে গেছে ততক্ষণে । অনভ্যসের বসে তার ঠিক পেছনে দাড়ানো ভীনদেশীর খানিকটা ভ্রু কুচকে গেল। কিছুটা তাড়া আর বেশ কিছুটা বিস্ময়! এমন একজনকেও একা বাজার করতে হবে!
ট্রলি নিয়ে বাইরে বেড়িয়ে অন্ধকারে কিসে বাধঁতেই হুড়মুড়িয়ে পরে গেলেন বুড়ো মানুষটা। সে দেশে জীবদদশায় কেউ সাহায্য না চাইলে উপযাজক হয়ে সাহায্য করতে যাওয়া সচরাচর privacy হস্তক্ষেপ বলে গন্য হয়।
দৌড়ে গেল সেই ভীনদেশীটাই। আবারও অনভ্যসের দায়! তার দেশে প্রাইভেসীটাই শেখাইনা কেউ।
পাকাজোলা করে টেনেটুনে মানুষটাকে তুলে দাড় করিয়ে বাজার গুছিয়ে দিল।
- Are you OK?
- হ্যাঁ , আমি ঠিক আছি। অনেক ধন্যবাদ। মাফ করবেন ---
ভীষন বিব্রত, অপ্রস্তুত কণ্ঠের উত্তর। স্ত্রস্ত হাতে বাজার নিয়ে "ঠিক থাকার “ প্রমান দিতে জোর করে পথ ধরলো।
এ কেমন জীবন যা নিজের হয়েও নিজে বইতে পারা যাবেনা?
শরীর আবারো প্রতারণা করলো। অক্ষমতা আক্ষেপ ক্ষ্রোধ ছাপিয়ে অসহায়ত্ব ফূড়ে দাড়ালো। অসহায় নড়বড়ে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালেন। ক্ষীণকণ্ঠে ঠোঁটজোড়া নড়ে উঠলো,
- আমি ঠিক নেই। দু:খিত! কিন্তু -- আমি-- এক্দম ঠিক নেই।
ভীনদেশীর ফেলে আসা এমন মুখটাতে এখনো এতো বয়স হয়নি। যেদিন হবে সেদিন কি তাকেও এমন--- ?
ঝাপসা হয়ে আসা চোখ দ্রুত পলক ঝাপ্টে শুকিয়ে চেহারায় সহজ হাসি ঝুলিয়ে বুড়ো মানুষটাকে সামলে নিল।
কিছু কিছু মুহুর্তে গেঁয়ো হওয়াটাও খুব জরুরী! ভীষনরকম !
আবেগের কোন আপগ্রেডেড ভার্শন থাকতে হয়না। এটা একদম মাটির কাছাকাছি একেবারে নির্ভেজাল অনাড়ম্বরটাই সবচেয়ে ভাল।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৬ রাত ১০:৩৮