শেয়ার বাজার নিয়ে চলছে তুঘলকি কারবার।
কিছু বুঝে উঠার আগেই দেশের সাধারণ মানুষ হারিয়ে ফেলছে তাদের বিনিয়োগকৃত পুঁজি। সর্বস্বান্ত হচ্ছে অনেকেই। কেউ কেউ দিশা না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। রাজপথে মিছিল করছে কেউ কেউ, অবরোধ করছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও ছবি দেখে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। পুলিশ বিনিয়োগকারীদেরকে লাঠি পেটা করছে, রক্তাক্ত করছে। র্যাব শেষ পর্যন্ত সাংবাদিকদেরকেও হেনস্তা করছে।
প্রশ্ন জাগে, র্যাব ও পুলিশকে পরিচালনা যারা করছেন তারা কি চাচ্ছেন। কি তাদের উদ্দেশ্য?
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। পুলিশ ছিনতাইকারীকে ধরতে পারে না, সন্ত্রাসীদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়, খুনী-ডাকাত-চোরদের সাথে তাদের তুমুল সখ্যতা। কোথায় নেই পুলিশের অপকর্মের খতিয়ান। কিন্তু সাধারণ জনগণ বলুন আর বিনিয়োগকারীই বলুন, হতাশ আর প্রতারিত এই সব মানুষগুলোকে পিঠিয়ে রাস্তায় রক্তাক্ত করে ফেলে দিতে মনে হয় তারা উস্তাদ।
তাহলে কি এ বিষয়েও সরকারের নিরব সমর্থন রয়েছে? না হলে সারা দেশে এত হৈচৈ, কোটি কোটি টাকা জালিয়াত চক্রের মাধ্যমে হারিয়ে দেশের সাধারণ মানুষ দিশেহারা কিন্তু সরকার নিরব? তাদের মুখে কোন কথা নেই। বেফাস কথাবার্তায় মন্ত্রী-সাংসদরা ব্যস্ত। ব্যস্ত তাদের আখের গোচাতে।
শেয়ার বাজারে এই বিধ্বস্ত অবস্থার পেছনে কারা দায়ী, এই প্রশ্ন উঠতে বিনিয়োগকারীদের আঙ্গুল উঠছে সরকারের দিকে। সরকারের মন্ত্রী, সাংসদরা জড়িত এ কথাও প্রকাশ্যে বলতে শোনা যায়। শোনা যায়, বাংলাদেশের উন্নতি-অবনতির পেছনের কলকাঠি নাড়ছেন না-কি জয়। তারেকও এক সময় এদেশের কর্ণধার হয়ে, এদেশের মানুষের সাথে প্রতারণা করেছেন। গরীব-দুখি মানুষের এই দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাঠিয়েছেন। দুর্নীতির এমন কোন পন্থা নেই যা অনুস্মরণ করেননি। আজ মনে হয়, জয়ও সেই পিচ্চিল পথ মাড়াতে মাঠে নেমেছেন।
প্রশ্ন জাগে, জোট আর মহাজোট সরকারের মধ্যে তাহলে তফাৎ কোথায়?
আমরা কি তাহলে ধরে নেব, ওরা মুদ্রার এপিট আর ওপিট?
ক্ষমতা বাইরে সাধু, ক্ষমতায় গেলেই রাবন।
শেষ পর্যন্ত শঙ্কিত আমরাই। দেশের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা কে নির্ধারণ করছে কে জানে? কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে আমাদের আগামী প্রজন্ম? কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তারা? রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই ভূখণ্ড আর কত রক্তাক্ত হবে? স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আর কত পদদলিত হবে? আর কত সীমান্তে বিএসএফ দ্বারা বাংলাদেশি ফেলানীদের রক্ত ঝরবে? কত দেখতে হবে দুর্বল ও পরনির্ভরশীল বিদেশনীতি?
ওয়ান ইলেভেন থেকে মনে হয় কোন রাজনৈতিক দলই শিক্ষা গ্রহণ করেনি। তারা বারবার দেশকে অস্থিতশীল করছে, দেশের মানুষের সাথে প্রতারণা করে ঠেলে দিচ্ছে আরেকটি ওয়ান ইলেভেনের দিকেই। খোদা না করুক এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তার খেসারত কেবল আমাদেরকেই দিতে হবে, যারা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, যারা ক্ষমতাসীনদের দ্বারা বারবার প্রতারিত।
আমরা যারা মুক্তচিন্তার মানুষ, প্রগতির পতাকা তলে যারা সমবেত, তারা কখনই চাই না, মুক্তচিন্তার ধারক-বাহক, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তির এই সরকার ব্যর্থ সরকার হোক। আমরা সারাক্ষণই কামনা করি সফলতা। কারণ এই সরকার প্রতিষ্ঠার পেছনে আমাদের শ্রম আর ঘাম রয়েছে। কিন্তু সরকারের এমন আচরণ মনে হয়, সাধারণ জনগণকে কেবলই ক্ষুব্ধ থেকে ক্ষুব্ধতর করে তুলছে। এই বিষয়টি সরকার যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করবে ততই দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল।
ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই না--এই নীতি অনুস্মরণ করলে কেবলই সরকারের বারটা বাজবে। সাধারণ মানুষ আজ আর চোখ-কান বন্ধ রেখে পথ চলে না। কে কি করছে, সরকার কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে, কে কতটুকু দুর্নীতিবাজ এই বিষয়টি প্রতি মুহূর্তেই আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দিচ্ছে দেশের পত্র-পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া।
অতএব, সাধু সাবধান। আকাশে কালো মেঘ জমতে শুরু করেছে, সামনে কালবৈশাখী ঝড়।