তমালের অফিসে প্রচন্ড প্রেসার কখনো ED স্যারের সাথে মিটিং , কখনো ডাটাবেজে প্রবলেম , কখনো Inventory Calculation এ প্লাসের জায়গায় মাইনাস, মাইনাসের জায়গায় প্লাস । কখনো ওয়েব আপডেট হচ্ছে না , কখনো dll ফাইল কাজ করছে না । কখনো কখনো প্লানিং এ গণ্ডগোল । তমালের মাথা আজ ঠিকঠাক কাজ করছে না , তমাল তার নিজের অজান্তেই অফিসের Total ERP solution একাই দেখছে ......
এর মাঝেই তমালের মায়ের ফোন , বাবা তমাল আমার শরীর খুব খারাপ শরীরে প্রচণ্ড জ্বর । কিছুই খেতে পারছি না , তুই একটু আসবি ? তমাল কিছু না ভেবেই বলল মা আমি আসছি । তমাল কম্পিউটার শাটডাউন না দিয়েই পাগলের মতো ছুটতে লাগলো , এই ছুটে যাওয়ার কারন একটাই তমাল তমালের মা-কে পাগলের মতো ভালোবাসে , তমাল রাস্তায় এসে একটা লোকাল বাসে লাফ দিয়ে উঠে বসে , তমাল তার গন্তব্য ভুলে গেছে হেল্পার তিনবার জিজ্ঞেস করার পর তমালের উত্তর আমি উত্তরায় যাব ।
উত্তরায় নেমেই তমাল ১৮০ টাকায় এক ডজন কমলা , আর ২২০ টাকায় এককেজি বেদানা কিনে গুটিশুটি হয়ে সিএনজিতে বসে পড়লো ,কনকনে শীত আর বাতাস মিলে ভালোই ঠাণ্ডা ... ঝড়ের বেগে ছুটে চলেছে সিএনজি ...... গায়ে সুয়েটার থাকা সত্ত্বেও প্রচণ্ড ঠাণ্ডা লাগছে ।
তমাল কলিং বেল চাপতেই টুতে পড়া ভাগিনা দরজা খুলে দিল , বাসায় আর কেউ নেই তমালের ছোট আপু এখনো অফিসে । তমালের মা বিছানায় শুয়ে আছে ,তমাল কপালে হাত রাখতেই চোখ খুলে তমালের দিকে তাকালো , তমাল বলল মা কিছু খেয়েছ ? তামালের আম্মুর উত্তর সব তিতা লাগে । তমালে কমলা আর বেদেনা একটা একটা করে মুখে তুলে খাওয়াতে গিয়ে অনুভব করলো তমালের মা শীতে কাঁপছে ।
তমাল জিজ্ঞেস করলো মা তোমার সুয়েটার কোথায় ? ভুলে তোর নানুর বাড়িতে ফেলে আসছি । তমাল কিছু না ভেবেই তার গায়ের সুয়েটার খুলে তার মায়ের শরীরের পড়িয়ে দিল । তমাল নিজেই কিচেনে গিয়ে মায়ের জন্য টমেটু দিয়ে থাই স্যুপ করে নিয়ে এসে নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছে ...... এই দৃশ্যে চোখের এককোনে পানি চলে এলো তমালের । একটু পর তমালের ছোট আপু কিছু কাঁচা মরিচ আর তিন প্যাকেট বিরিয়ানি আর একটা সেভেন আপ নিয়ে বাসায় ঢুকলো ।
তমালের মা এখন একটু ভালো অনুভব করছে । একটু পর পর বলছে , তুই কাছে থাকলে এমনেই ভালো লাগে । এখন আমার খুব ভালো লাগছে , তমাল বিরিয়ানির প্যাকেট খুলে মায়ের মুখে তুলে দিচ্ছে সাথে দিচ্ছে তার বোনের মুখে , এক অন্য রকম দৃশ্য । পাগল ছেলের এই দৃশ্য দেখে তমালের মায়ের চোখেও পানি চলে আসে , এই পানি আনন্দের পানি , এই পানি ছেলের পাগলামি দেখে পানি , এই পানি নির্ভরতার পানি । এই পানি ছেলের বুকে মাথা রাখার পানি ।
ক্লান্তিতে বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে তমাল তার গায়ে থাকা পাতলা টি-শার্টটি পড়েই বের হয়ে যায় , রাতের কনকনে শীত হাড়ের ভিতরে গিয়ে লাগার কথা , কিন্তু কি অদ্ভুত!! তমালের তেমন শীত লাগছে না , চেহেরায় একটা মলিন হাসি ফুঁটে উঠেছে । চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে আনন্দের অশ্রু । কি অদ্ভুত মাগো আজকে আমার সত্যি শীত লাগছে না । তোমাকে ভালোবাসতে পেরে চোখের পানি গুলো মা চোখেই শুকিয়ে যায় , সত্যি বলছি মা .........