somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"পরিবর্তন চাই"

১৯ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

...ছোটবেলা থেকেই আমি বাবা-মায়ের বাধ্য সন্তান ছিলাম.. কখনোই আমার বাবা-মায়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করিনি.. সব সময় তারা যা বলেছে সেটাই করেছি.. বুঝতাম, হয়তো তারা যা করেন; আমার ভালোর জন্যই করেন !
.
স্কুল জীবনে বাবার ইচ্ছে ছিল "সাইন্স" নিয়ে পড়ানোর.. কিন্তু আমার ইচ্ছে ছিল "কমার্স".. মূহুর্তেই নিজের ইচ্ছাকে মাটি চাপা দিয়ে, বাবার ইচ্ছায় "সাইন্স" নিলাম.. বছর শেষে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট আসলো না.. বাবা আমাকে দোষী করলেন !
.
আমি নাকি সারাদিন ফেসবুক আর বন্ধু বান্ধব নিয়ে থাকায় পড়াশোনায় মনযোগী ছিলাম না.. ইচ্ছামত বকাঝকা করে পেটালেন আমাকে.. কিন্তু আমি যে "সাইন্স" গ্রুপটাতে মন বসাতে পারিনি, বাবা তা একবারো বুঝতে পারলো না !
.
বিশ্বাস করেন, কমার্সের সাবজেক্ট গুলো পড়লে আমার ভেতর যে ভালো লাগা কাজ করতো.. সেই অনুভুতিটা কখনোই সাইন্সের বইগুলো পড়ে পেতাম না.. কেমন জানি নিজেকে পাগল পাগল মনে হতো.. যার ফলে আমি শত চেষ্টা করেও বাবার খুশিমত রেজাল্ট করতে পারিনি !
.
কলেজে ভর্তির সময় গ্রুপ চেন্জ করতে চাইলাম.. সেখানেও বাবা বাঁধ সাধলেন; দিলেন না.. সাইন্স নিয়ে পড়লে ভবিষ্যৎ উজ্জল হয় স্বপ্ন দেখালেন.. আবার শুরু হলো ইচ্ছের বিরুদ্ধে পথ চলা !
.
কিন্তু এবার আমি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়লাম..বাহিরের জগত থেকে একদম আলাদা করে ফেললাম নিজেকে.. সারাক্ষন চারকোনা বইয়ের মধ্যে গুজে থাকতাম.. পরীক্ষায় রেজাল্টও খুব ভালো আসলো.. বলতে গেলে একদম বাবার মন মত !
.
বাবা খুশি, আমি খুশি, সবাই খুশি! কিন্তু সব খুশির ভীরেও কেন জানিনা আমার খুশিটা বড্ড নিঃপ্রান মনে হতো.. হয়তো আমার খুশিটাও সীমা ছাড়িয়ে যেত, যদি আমার পছন্দের গ্রুপ থেকে এই রেজাল্ট করতে পারতাম !
.
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় আমি চাইলাম বুয়েটে ভর্তি হতে.. কিন্তু বাবা চাইলেন মেডিকেল.. মেনে নিলাম, কারন বাবা তো আমার ভালোই চান! ভর্তি পরীক্ষায়ও টিকে গেলাম.. বাবার কাছে আদর্শ সন্তান হলাম.. কিন্তু হেরে গেলাম নিজের কাছে.. পড়তে ভালো লাগেনা তবুও পড়তে হয় !
.
হঠাৎ একদিন ব্যাচের একটা মেয়েকে প্রচন্ড ভালো লেগে গেলো আমার.. ধীরে ধীরে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেললাম মেয়েটাকে.. তাকে পেয়ে বুয়েট নিয়ে পড়তে না পারার হতাশা; এমনকি এতদিনের সমস্ত অপূর্ণ ইচ্ছা নিমিষেই মন থেকে মুছে গেলো.. বড্ড সুখী মনে হলো নিজেকে !
.
কিন্তু পড়াশোনা শেষ করে বাবাকে যখন মেয়েটার কথা জানালাম.. বাবা রাজি হলেন না.. তিনি এর চাইতেও ভালো কোনো মেয়েকে পুত্রবধু হিসেবে দেখতে চান.. ছেলে ডাক্তার, বড় ঘরের মেয়ের বাবারা লাইন দেবে বিয়ের জন্য.. সেখান থেকে কাউকে বেছে নিবেন.. থমকে গেল আমার পুরো পৃথিবী !
.
এতটা বছর যেই বাবার প্রতিটা ইচ্ছা আমি নীরবে পূরন করে এলাম.. সেই বাবা কিনা আজ আমার একটা ইচ্ছাকে পূরন করতে চাইছেন না.. আমি আমার সবটা দিয়ে তাকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু কিছুই হলোনা.. তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল থাকলেন.. একবার মনে হয়েছিল, একাই বিয়ে করে ফেলি, কিন্তু পারিনি !
.
আজ তিন বছর হলো আমি একটা মানুষের সাথে সংসার করছি.. কিন্তু জানেন, আমি যখন আমার স্ত্রীর হাতটা ধরি, শরীর ঠিকই জাগে, কিন্তু মন জাগে না.. তবুও আমি চলছি, প্রতিনিয়ত সবকিছু মানিয়ে নিচ্ছি !
.
আমি আমার চার বছরের প্রেম ভুলে গিয়েছি.. আবেগ ভুলে গিয়েছি.. ভালোবাসা ভুলে গিয়েছি.. দিনে দিনে আমি একজন পাকা অভিনেতা হয়ে গেছি !
.
মাঝে মাঝে মনে হয় বড্ড ভুল করে ফেলেছি বাবার পছন্দে বিয়ে করে.. সারাটা জীবন নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চলেছি.. ভালো না বেসেই বলেছি "ভালোবাসি".. খুশি না হয়েই বলেছি "খুশি হয়েছি".. নিজেকে এতগুলো মিথ্যে বুঝাবো কি করে?
.
আচ্ছা সব স্বপ্ন পূরণের দায় শুধু সন্তানকে নিতে হবে কেন?.. বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছি আমি.. আমার স্বপ্ন পূরণ করবে আমার সন্তান.. তার স্বপ্ন তার সন্তান.. এভাবেই কি আমরা দিনের পর দিন নিজের স্বপ্ন অন্যের কাধে চাপিয়ে দেব? বদলাবেনা কিছুই?
.
জানেন, এখন মনে হয়- আমার বাবা আমাকে পড়াশুনা করিয়ে আদর্শ সন্তান রূপে একটা আদর্শ প্রতারক বানিয়েছে.. প্রতিনিয়ত প্রতারণা করে যাচ্ছি মানুষের সাথে.. এমনকি নিজের স্বপ্নের সাথেও.. কারন আমি অভিনেতা, আমাকে সব সময় ভালো থাকার অভিনয় করে যেতে হবে..!!
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×