"খালি এই একটা মেয়ে, আর কোনো ছেলে নাই? হায় কপাল !
প্রায়'ই এমন ধরনের কিছু কথা শোনা যায় চারপাশে.. যা কোনো সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের কাছ থেকে কখনোই কাম্য নয়"!
.
তাদের কাছে মেয়ে মানেই যেন একটা বোঝার নাম.. মেয়ে মানেই যেন কোনো বিভিষীকাময় যন্ত্রনার আভাস.. সমাজের প্রতিটা মেয়েকে তারা গলায় বিধে যাওয়া বিষাক্ত কাঁটার মত মনে করে"!
.
আমি দেখেছি, নিম্নবিত্ত কোনো পরিবারে যখন একটা মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়.. পরিবারের লোকজনের চাইতেও বেশি টেনশনে করে চারপাশের মানুষগুলো.. হায়! কেমনে মানুষ করবা, কেমনে পড়াশোনা করাবা.. কেমনে বিয়া দিবা? নানান কথায় যেন দিশেহারা বানিয়ে ফেলে পুরো পরিবারকে"!
.
বছর দুয়েক আগে "জেন্ডার" নিয়ে একটা অনুষ্ঠান দেখেছিলাম চ্যানেল আইতে.. সেখানে দর্শকদের দুটি প্রশ্নের উওর লিখতে বলা হয়েছিল.. একটি হল "নারী" বলতে আমরা কী বুঝি, অপরটি "পুরুষ" বলতে আমরা কী বুঝি?
.
সবার লেখা শেষ হলে দেখা গেল "নারী" বলতে বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন- মমতাময়ী, সংসারী, গৃহিনী, প্রেমিকা, স্নেহময়ী, অবলা, মা ইত্যাদি.. আর পুরুষ সম্পর্কে- শক্তিধর, সাহসী, বুদ্ধিমান, বীর, নির্ভীক ইত্যাদি.. এর মাঝেও এমন কিছু মানুষকে পাওয়া গেল যারা "নারী-পুরুষ" বলতে বোঝেন উভয়েই "মানুষ"!
.
আমাদের সমাজ ও চারপাশের কিছু মানুষ আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি দিনকে দিন পাল্টে দিচ্ছে.. মানুষের মানবিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে নারী ও পুরুষ সিল মেরে ভাগ করে দিচ্ছে.. আমরা সেগুলো টের পাচ্ছিনা!
.
আচ্ছা আমাদের সমাজ যে বলছে- নারী সর্বদায় স্নেহময়ী আর পুরুষ বলতেই কঠোর.. কিন্তু আসলেই কি তাই? এমনও অনেক সন্তানকে খুঁজে পাওয়া যাবে, যাদের কাছে তাদের বাবা "স্নেহময় কোমল মনের একজন মানুষ".. আবার এমনও অনেক মেয়ে খুঁজে পাওয়া যাবে, যাদের সবাই অত্যান্ত কঠোর মনের মানুষ".. তাহলে যুক্তিটা থাকলো কোথায়?
.
অাসলে ভুলটা আমাদের নয়.. ভুলটা আমাদের গোটা সমাজ ব্যবস্থার.. ছোটবেলা থেকে গণিত বইয়ে পড়ে এসেছি "একজন পুরুষের কাজ সমান দুজন নারীর কাজ, বা একটি কাজ একজন পুরুষ শেষ করে দুই ঘন্টায় আর একজন নারী শেষ করে তিন ঘন্টায়".. তার মানে পুরুষের চাইতে নারীর কার্য ক্ষমতা কম.. সেটা তোমাকে শৈশবকালেই শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে মনে সিল মেরে দেয়া হলো"!
.
কিন্তু বাস্তবিক ভাবে এমন অনেক কাজ আছে, যা নারী-পুরুষ সমান গতিতে করছে.. তাই লিঙ্গ বিচারে দিনকে দিন নারীকে বোঝার নজরে না দেখে.. তাদের শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, সুযোগ দিতে হবে.. তবেই তারা পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে নিজেদের বিকাশ করে দক্ষতার প্রমান রাখতে সক্ষম হবে"!
.
আমার বিশ্বাস, সমাজের এইসব ভ্রান্ত ধারনার দৃষ্টিভঙ্গির শিকল দিয়ে আর কোনো মানুষের প্রতিভা বিকাশের পথ যদি রুদ্ধ না করা হয়.. তাহলে সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর হবে.. জয় হবে মানবিকতা ও মানুষের"!