somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৃষ্টি ভাবায়

০৭ ই এপ্রিল, ২০১২ সকাল ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রাতের অন্ধকার ঠেলে ট্রেন এগিয়ে চলেছে ঢাকার দিকে। পেছনে ফেলে যাচ্ছে একের পর এক স্টেশন... ম্রিয়মান বাড়িঘর... বিদ্যুতের পোল... আকাশের এক কোণে একটু পরপর থমকে থমকে বিদ্যুত চমকাচ্ছে। নাহ, বৃষ্টি হবে না। এমন মেঘ শুধু গর্জনেই সন্তুষ্ট থাকে, বর্ষে আর ‍না। খুব ভালো করেই জানি কাল সকালে যখন কমলাপুরে গিয়ে ট্রেনটা ভিড়বে তখন আর আকাশে কোথাও এক চিলতে মেঘও দেখতে পাবো না। বরং অর্ধেক ঘুমের রাতের পর সকালে মুখের ওপর আছড়ে পড়া রোদটা বেশ অসহ্যই লাগবে। ঘেমে না উঠলেও, তেতে উঠবে শরীরটা। এমন বিরক্তিকর ভাবনাটা মোটেও আর ভাবতে ইচ্ছে করছে না। তার চাইতে আমার ম্রিয়মান বাড়িঘরই ভালো।

দিনের বেলায় ট্রেন জার্নির একটা অনুভূতি বোধহয় খুবই কমন। অচেনা জায়গা, অচেনা শহর-গ্রামের রেলপথ দিয়ে জার্নির সময় আশেপাশের বাড়িঘরগুলোকে খুব মায়াবী বলে মনে হয়। সামান্য একটা খালি চায়ের দোকান দেখেও লোভ হয়। মনে হয় ওখানে বসে চা খাই। কিংবা ঘন গাছপালার ভেতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে একটা অর্ধেক শুকানো পুকুর আর পাশে একটা তার চাইতেও বেশি উদ্ভিদ জর্জরিত একটি বাড়ি। খুব ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগে মনটা, ফাঁকা ফাঁকা লাগে। কি যেন নেই। হয়তো ওই বাড়িটার উঠোনে দাঁড়িয়ে সবুজের মুগ্ধতা দেখার সুযোগ। হয়তো নেই সে বাড়িরই কোনো এক শোবার ঘরের বিছানায় চিটচিটে চাদরে শুয়ে জীর্ন কাঁথা গায়ে বাইরের ঝুম বৃষ্টি দেখার সুযোগ। রোদ ওঠার বালাই নেই, শুধু ওভাবে বৃষ্টি দেখা বাদে জীবনে যেন আর কোন কাজ নেই। অমন ঠাণ্ডা-ঠাণ্ডা ভেজা পরিবেশে কেউ একজন আমার পাশে ‍থাকবে বা থাকলে কি করবে – এইসব ভাবনা যতোটা না ভালো লাগায় তার চাইতেও বেশি আফসোসে পোড়ায়। একটু ভেবেই তাই আর ভাবতে ইচ্ছে করে না। চোখ চলে যায় কলাগাছে। ট্রেন লাইনের পাশে অনেক কলাগাছের সন্ধান পাওয়া যায়। গ্রামের ব্যাপার-স্যাপার বেশ অদ্ভূত। শহরে একটা গাছে ফল নামের কিছু একটা ধরলে আর দেখা লাগে না। সবারই মাথায় মধ্যে কিভাবে পেড়ে খাওয়া যায় এমন একটা চিন্তা কাজ করে। প্রতিষ্ঠানের গাছ হলে নিম্নশ্রেণীর কর্মচারীরা, বাসার গাছ হলে বাড়ির কর্তা আর নেহায়েত রাস্তার দিকে ঝুলে পড়া গাছ হলে রাস্তার মানুষজন বা এলাকার বখাটেরা। কাঁচা হোক, পাকা হোক – কোন পরোয়া নেই। কারও যেন ফল ঝুলছে এমনটা দেখার ইচ্ছে নেই। শুধু নিরন্তর খাই খাই একটা ভাব। ভাবনাটা যখন এমন হয়ে যায়, তখন আর গ্রামকে অদ্ভূত মনে হয় না। বরং শহর জায়গাটাকেই বেশ বিদঘুটে লাগে।

আচ্ছা, আমি ট্রেন নিয়ে কেন লিখছি? আপাতদৃষ্টিতে কোন কারণই নেই। বরং এ লেখাটা নিয়ে যখন লিখছি, তখন বাইরে বৃষ্টি। বাসায় কারেন্ট নেই, কিন্তু ভেজা বাতাস হঠাৎ-হঠা‍ৎ হানা দেয়ার ফলে ঘরের তাপমাত্রায় তার প্রভাব পড়ছে না। বাতাসের দমকটা ধারবাহিক হচ্ছে, তীব্রতা বাড়ছে – ঠিক যেন শীতকালের বাতাস। আমার ঘরে আর সব জায়গায় পর্দা থাকলেও বারান্দার দরজায় নেই। থাকলে সেটা এতোক্ষণে দিশেহারা হয়ে এলোপাথারি উড়তো সে ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই। জানালার লুটোপুটি খাওয়া পর্দা ফাঁক দিয়ে বাইরের মেঘাক্রান্ত আলো আসতে গিয়েও থমকে যাচ্ছে। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ানোটা ফরজ হয়ে গিয়েছে। দাঁড়াতেই বৃষ্টির চিরপরিচিত গন্ধ। ভেজা গ্রিলের সাথে মাথাটা লাগাতেই যোগ হলো জং-ধরা গ্রিলের সাথে পানি মেশা একটা গন্ধ। অনুভূতিগুলো তীব্র হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ একজন এখনই ফোন দিলো বলে। বৃষ্টি-বাতাসের হা-হুতাশের শব্দে বাধা ফেলে ফোনটা ঠিকই বেজে উঠলো, Owl City'র Fireflies টিউনটায় -

"You would not believe your eyes...
If ten million fireflies...
Lit up the world as i fell asleep..."
২৯টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×