রাজধানীর খিলক্ষেতে আবাসন প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা ও জামাত শিবির পরিচালিত পিংক সিটির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পিংক সিটি মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. জুনায়েদ (৪২) গুলিবিদ্ধ হন বলে পুলিশ জানিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে।
পিংক সিটি কর্তৃপক্ষের দাবি তাঁদের প্রকল্পের অধিকৃত ভূমি দখল করতে বসুন্ধরা গ্রুপের লোকজন এ হামলা চালায়।
তবে বসুন্ধরার পক্ষ থেকে এ অভিযোগ নাকচ করে বলা হয়, পিংক সিটির লোকজন ও জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা তাদের স্থাপনার ওপর হামলা চালিয়েছে।
, পিংক সিটির একটি প্রকল্পের ভেতরে কয়েকটি ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। ওই সব ভবনের দেয়ালে অসংখ্য গুলির চিহ্ন রয়েছে।
পিংক সিটির কর্মকর্তারা বলেন, এর আগে বসুন্ধরা গ্রুপ পিংক সিটির নামে নামজারি হওয়া জমি জবরদখল করে। ওই সব জমি দখলের জন্য গত বছরও বসুন্ধরা এই প্রকল্পে হামলা চালায়। বেশ কিছুদিন ধরে তারা রাতের বেলা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। পিংক সিটি তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্পটির প্রায় আড়াই শ দ্বিতল ভবন তারা দখল করে নিয়েছে। প্রকল্পের মাঝবরাবর রাতারাতি একটি দেয়াল তুলে দেয় বসুন্ধরা। এ কারণে প্রকল্পের অর্ধেকেরও বেশি অংশ এখন বসুন্ধরার দখলে। বাকিটুকু দখল করতে গতকাল তারা আবার হামলা চালায়।
পিংক সিটির (প্রথম পর্যায়) বাসিন্দারা জানান, গতকাল ভোরে হঠাৎ বসুন্ধরার ওপাশ থেকে পিংক সিটির ভেতরে গুলিবর্ষণ শুরু হয়। প্রায় আধঘণ্টা ধরে দেয়ালের ওপার থেকে গুলিবর্ষণের একপর্যায়ে ভেতরে ঢুকে তারা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। কয়েকটি ভবনের জানালার কাচ ভেঙে যায়। গুলির আঘাতে ভবনের বিভিন্ন কক্ষের বাতিসহ আসবাব ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গুলিবিদ্ধ হাফেজ মো. জুনায়েদ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সকালে ফজরের নামাজের পর তিনি পিংক সিটি প্রকল্প কার্যালয়ের দিকে গেলে হঠাৎ গোলাগুলি শুরু হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি শরীরে রক্ত দেখতে পান। তাঁর পেটে, কাঁধে, হাতে মোট পাঁচটি গুলি (ছররা) বিদ্ধ হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে দেওয়া তাঁর চিকিৎসা সনদে লেখা হয়েছে, বুলেট ইনজুরি।
জানতে চাইলে বসুন্ধরা গ্রুপের গণমাধ্যম উপদেষ্টা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব বলেন, পিংক সিটির বক্তব্য পুরোপুরি ভিত্তিহীন। সকাল ছয়টার দিকে পিংক সিটির লোকজন বসুন্ধরার সীমানার ভেতরে ঢুকে হামলা চালায়। পিংক সিটির মালিক সালাউদ্দীনের উপস্থিতিতে ঢাকা জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি নূর মোহাম্মদ ও রাজশাহীর ছাত্রশিবিরের নেতা বাশারের নেতৃত্বে আড়াই থেকে তিন শ যুবক অতর্কিতে বসুন্ধরার এলাকায় ঢুকে পড়ে। তারা বসুন্ধরার কর্মীদের মারধর করে, চাপাতি দিয়ে আঘাত করে। প্রচুর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তারা ভীতির সঞ্চার করে। এ সময় বসুন্ধরার তিনজন কর্মী আহত হয়। পরে বসুন্ধরার নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীরা এগিয়ে গেলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।�
গোলাগুলির বিষয়ে জানতে চাইলে আবু তৈয়ব বলেন, �গুলির বিষয়টা আমি বলতে পারব না।�
খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম আহমেদ বলেন, �পিংক সিটির কিছু লোক ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে বসুন্ধরার সীমানাদেয়াল ভাঙার চেষ্টা করে। বসুন্ধরা গ্রুপের নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের বিতাড়িত করে। এ সময় পিংক সিটির লোকজন ককটেল ও পটকার বিস্ফোরণ ঘটায়। বসুন্ধরার লোকজন এর প্রতিরোধ করে।�
পিংক সিটির ইমাম আহত হলেন কী করে, জানতে চাইলে ওসি বলেন, �বসুন্ধরার লোকজন আত্মরক্ষার্থে গুলি চালালে একজন আহত হন।� ওসি দাবি করেন, পিংক সিটির লোকজনই হামলা করে সংঘর্ষের সূত্রপাত করেছে।
পিংক সিটির বিপণন শাখার প্রধান আরিফ হাবিব বলেন, পিংক সিটির লোকজন রাত ১০টা পর্যন্ত থানায় বসে ছিলেন, কিন্তু পুলিশ তাঁদের মামলা নেয়নি। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওসি।
ভীতিকর পরিবেশ: গতকাল দুপুরে সরেজমিনে পিংক সিটির তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ইট আর কাচের টুকরো। ভবনের ভেতরের দেয়ালে ছররা গুলির চিহ্ন। গুলির আঘাতে ভেঙে গেছে কক্ষের ভেতরের বাতিগুলোও। প্রকল্প কার্যালয়সংলগ্ন রাস্তার ওপারেই পিংক সিটির তৈরি (পরে দখল হওয়া) দ্বিতল ভবনের ওপর বসে পাহারা দিচ্ছেন বসুন্ধরার নিয়োগ করা নিরাপত্তাকর্মীরা। দেয়ালসংলগ্ন মাটি কাটার যন্ত্রের ওপরও কয়েকজনকে বসে থাকতে দেখা যায়।