পূর্বের ইতিহাস
একাত্তরে চট্টগ্রাম গনহত্যার নায়ক, রাজাকার মীর কাশেম আলী এখন শত কোটি টাকার মালিক, রাবেতার কান্ট্রি ডিরেক্টর, ইবনে সিনা ট্রাস্টের কর্ণধার। ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রন তার হাতে। আজকের এই ধনকুবের রাজকারের সূচনা একেবারে দীনহীন অবস্থা থেকে। মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থানার চালা গ্রামের পিডাব্লিউডি কর্মচারী তৈয়ব আলীর চার ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় মীর কাশেম। ডাক নাম পিয়ারু, সবাই চিনে মিন্টু নামে। স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে পিতার চাকুরির সুবাদে চট্টগ্রাম গিয়েছিল পড়তে। চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র থাকার সময় জড়িয়ে পড়ে মওদুদীর মৌলবাদী রাজনীতিতে। জামায়াতের অঙ্গসংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের দায়িত্ব পায় স্বাধীনতার আগে।
৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জামায়াত পক্ষ নেয় পাকিস্তানের। রাজাকার অর্ডিন্যান্স জারির পর জামায়াতে ইসলামী তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্র সংঘের নেতাদের স্ব স্ব জেলার রাজাকার বাহিনীর প্রধান নিযুক্ত করে। সেই সুবাদে মীর কাশেম আলী চট্টগ্রাম জেলার প্রধান হয়। চট্টগ্রাম জেলার সমস্ত রাজাকারী কর্মকাণ্ডের নাটের গুরু ছিল সে। ‘৭১ এর ২ আগস্ট চট্টগ্রাম মুসলিম ইন্সটিটিউটে তার নেতৃত্বে স্বাধীনতা বিরোধী সমাবেশ আয়োজন করা হয়। সভাপতি হিসেবে সে তার ভাষণে বলে গ্রামে গঞ্জে প্রতিটি এলাকায় খুঁজে খুঁজে পাকিস্তান বিরোধীদের শেষ চিহ্নটি মুছে ফেলতে হবে।
পলাতক জীবন
স্বাধীনতার পর মীর কাশেম পালিয়ে ঢাকা চলে আসে। মিন্টু নামে নিজেকে পরিচয় দিত, বলত সে মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু চিহ্নিত হয়ে পড়ার পর আরেক ঘাতক মঈনুদ্দিনের সঙ্গে পালিয়ে চলে যায় লন্ডন। সেখান থেকে সৌদি আরব। সেখানে স্বাধীনতা বিরোধীদের সংগঠিত করতে থাকে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশে ফিরে আসে মীর কাশিম। একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো মুশতাক সরকার মুজিবের ঘাতকদের বাচাতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির পাশাপাশি প্রত্যাহার করে নেয় দালাল আইন। জিয়ার শাসনামলে নতুন করে সংগঠিত হয় ইসলামী ছাত্র সংঘ, নাম বদলে হয় ইসলামী ছাত্র শিবির। ছাত্র শিবিরের প্রথম কেন্দ্রীয় সভাপতি হয় মীর কাশেম আলী। এরপর রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের নামে রাবেতা আল ইসলামী গড়ে তুলে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর টাকায় আস্তে আস্তে বানায় ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা ট্রাস্ট ও ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিকালস। জামাতে ইসলামী ও শিবিরের আয়ের এবং কর্মসংস্থানের বড় উৎস হয়ে দাঁড়ায় এসব প্রতিষ্ঠান।
নীরবে চক্রান্তের জাল বুনে যাওয়া
বর্তমানে বিশাল ধনকুবের এই নেতা মানবতা বিরোধী বিচারের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে জামায়াতের এই নেতা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে একটি বিদেশী লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছেন। ফার্মের পাওনা মেটানোর জন্য তিনি দেশের প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে সিটি ব্যাংক-এনের মাধ্যমে ২৫ মিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন। মীর কাশেম আলী 'আমেরিকান ক্যাসেডি এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটস আইএনসি ৭০০' নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্মের সঙ্গে চুক্তি করে লবিস্টের দায়িত্ব দিয়েছেন। কলম্বিয়ার আইন অনুযায়ী ফার্মটির সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করা হয়েছে। লবিস্ট নিয়োগের ধারাবাহিকতায় মীর কাশেম আলী ২০১০ সালের ১০ মে ক্যাসেডি এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটস আইএনসি ৭০০ (ঠিকানা : থার্টিন স্ট্রীট, এনডবিস্নউ সুইট ৪০০, ওয়াশিংটন ডিসি-২০০০৫, ইউএসএ)-এর সঙ্গে ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হন। চুক্তিনামায় ফার্মটির পৰে এন্ড্রু জে. ক্যামেরম্নজ এবং লবিস্ট নিয়োগকারীর পৰে মীর কাশেম আলী স্বাৰর করেন। চুক্তি অনুযায়ী ৬ মাসের জন্য কনসালটেন্সি ফার্মটিকে নিয়োগ দেয়া হয়। ফার্মটির নিয়োগের মেয়াদ ছিল ২০১০ সালের ৬ অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের ৫ এপ্রিল পর্যনত্ম। চুক্তি অনুযায়ী ক্যাসেডি এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটসকে সিটি ব্যাংক-এনের ৩০৭১৭২৪৮ নম্বর এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা পরিশোধ করা হয়। মানি লন্ডারিং নীতিমালা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া কোন অর্থ বিদেশে পাঠানো হলে তা মুদ্রা পাচার হিসেবে বিবেচিত হবে। সেই হিসেবে মীর কাশেম আলী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার করেছেন। কনসালটেন্সি ফার্মটির মক্কেল মীর কাশেম আলীর পৰে আমেরিকান কংগ্রেস, সিনেট সদস্য এবং ইউএস প্রশাসনের প্রধান সিদ্ধানত্ম গ্রহণকারীদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের জন্য সম্পৃক্ত থাকবে। একই সঙ্গে দৰিণ এশিয়ার বৈদেশিক নীতির বিষয়ে মতামত দেবে ফার্মটি। ক্যাসেডি এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটস ফার্মটির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে মীর কাশেম আলী অতিরিক্ত আরও ৬ মাসের জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে পারবে। সে অনুযায়ী ইতোমধ্যে আরও ৬ মাসের জন্য পুনরায় ফার্মটির সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী আরও ২৫ মিলিয়ন বা ২ কোটি ৫ লাখ ডলার অবৈধভাবে দেশের বাইরে পাঠানো হয়েছে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১১ বিকাল ৩:৪২