লক্ষাধিক পর্যটক চীনের গোপন শহর দেখতে গেলে তাদের জন্য কখনই খোলা হয় নাই শহরের দরজা। এমনকি শহরের ভেতরে অবস্থিত বিশাল প্রাসাদের মাঝে গোপন বাগানেও কাউকে প্রবেশ পযন্ত করতে দেওয়া হয় নাই। বহির্দেশীয় পর্যটক দূরের কথা চীনা কোনো সাধারণ মানুষকেও প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না সে বাগানে। আঠারো শতকের শুরুর দিকে সেই প্রাসাদ সংলগ্ন গোপন বাগানটি তৈরি করা হয়েছিল।গোপন শহরের প্রাসাদে বসবাসরত সর্বশেষ সম্রাটকে এক সফল অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হঠিয়ে দিয়ে পিপলস রিপাবলিক অব চীনের সূচনা হয়েছিল।রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক এক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সেই নতুন যুগের সূচনা হয়েছিল চীনের রাজনীতিতে। সেই থেকেই বলতে গেলে সেই প্রাসাদটির দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বিপ্লব পরবর্তী চীনে সেই প্রাসাদ এবং গোপন বাগানটি অযত্ন আর অবহেলায় প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন সরকারের ঐকান্তিক চেষ্টায় শেষমেশ ওই প্রাসাদ এবং বাগানটি ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে প্রায় একশ বছর বন্ধ থাকার পর গোপন বাগানের দরজা এই প্রথমবারের মতো খুলে দিতে পারেন চীনা সরকার।
১৫ শতকের চীনে এই প্রাসাদটিই ছিল মূলত সব ক্ষমতার কেন্দ্রস্থল। মিং সাম্রাজ্যের আমল থেকে এই প্রাসাদটিকে সম্রাটের বাসস্থান হিসেবে নির্ধারণ করা হয় এবং ১৯১২ সাল পর্যন্ত সেই ধারাবাহিকতা বজায় ছিল। এতদিন পর কেন তবে প্রাসাদ এবং বাগান খুলে দেওয়া হচ্ছে এর সুষ্ঠু উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এক সূত্রে জানিয়েছেন যে চীন সরকার তাদের দেশের এক প্রাচীন দর্শনীয় স্থান যেনতেনভাবে সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারে না। তাই এতদিন অপেক্ষা করা হয়েছে এর সংস্কারের জন্য। এখানে উল্লেখ করা দরকার যে বিশ্ব স্থাপত্য শিল্পের ইতিহাসে চীনের এই প্রসাদটি একটি বিস্ময়। তৎকালীন সময়ে কোনো প্রযুক্তি খাটিয়ে এতবড় প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়েছিল তা আজও বিস্ময় জাগায় মানুষের মনে।প্রাসাদটির সংস্কারের অধিকাংশ কাজই শেষ হয়ে যায় মূলত ২০০৮ সালে। দেশটির একটি বিশেষ দল এই সংস্কারের কাজ করে যাচ্ছেন আজ অনেকগুলো বছর ধরে। ধারণা করা হচ্ছে চীনা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় প্রাসাদটিকে সাবেক রূপে ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন।
ঐতিহ্যগতভাবে যে সব উপাদানগুলো আজ সহজে পাওয়া যায় না সেগুলোও জড়ো করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কারণ বিপ্লব পরবর্তী সময়ে অবহেলা আর নতুন সাংস্কৃতির বিপ্লবের কারণে রাজা বাদশাদের অধিকৃত সম্পদের অধিকাংশই জনরোষে ধ্বংস হয়ে যায় নয়তো অবহেলায় ধীরে ধীরে ধ্বংস হতে থাকে। তাই আশা করা হচ্ছে আগামী ২০২০ সালে বিশ্বের সবার জন্য খুলে দেয়া হবে সেই গোপন ফুলের বাগান। আর তখনই কেবল জানা যাবে এত বছর ধরে ওই বাগানে কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে আমাদের জন্য।
তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:২৪